Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৩৫, নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

                 
                             
                                বিতি কিচ্ছা
                                  পর্ব-৩৫,

--------------------------
সফল স্বার্থপরঃ

     নুন আনতে পানতা ফুরায়, পানতা আনতে নুন। এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে কেন জানি সূখের সাগর প্রতিনিয়ত ঢেউ খেলে যায়। দেখা যায় এরা নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অন্যের প্রয়োজনকে যথেষ্ট প্রাধান্য দিয়ে সুখ পান। অভাব যেন কখনও তাদের অন্তর স্পর্শ করে না। দৃশ্যমান বাহ্যিক অনটনে নিষ্পেষিত হওয়ার পরও এরা সুযোগ মত প্রায়ই ওদের দানের হাত প্রসাারিত রাখেন ঠিকমতই। অন্যের চোখের জলই ওদের চোখকে সিক্ত করে বেশীর ভাগ। বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীর বেশীর ভাগ লোকই তাদের হাসি মাখা মুখাবয়বের আড়ালে প্রকৃত অভাবটুকু অনুধাবম করতে ব্যর্থ হন।
আমরা এদেরকে জানি প্রকৃত সমাজ কর্মী ও প্রকৃত রাজনীতিবিদ হিসাবে। বিলাস বহুল জীবন ধারণের প্রয়োজনীয়তা যেন তাদের কাছে একেবারেই গৌন। চাহিদার যোগান সৃষ্টির জন্য তারা নামকা ওয়াতে একটি পেশা গ্রহন করে থাকেন। তারপর ব্যাক্তিগত প্রয়োজনকে একটি সীমাবদ্ধ ছকের মধ্যে সামলে নিয়ে খুবই আনন্দে আতিশয্যে পার করে দেন কাল। এই সকল ব্যাক্তিগন নিজস্ব পেশার পাশাপাশি আলাদা এক নেশায় মেতে থাকেন, যাকে রীতিমত নেশা বললে ভুল হবে না। কি সেই নেশা? আসলে সমাজ তথা দেশের জন্য কাজ, দশের জন্য কাজ -যাকে আমরা রাজনীতি বলে চালিয়ে দিতে চাই, এটা এরকমই একটি নেশা। কোন পেশা নয় এটা। যাতে ডুবে থেকেই এরা জীবনের পরম তৃপ্তি লাভ করে থাকেন। এই নেশা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পায়,ফলশ্রুতিতে মানুষের উপর সমাজের দায়িত্ব অর্পিত হয়। মানুষ তার কাছে আশার আলোকবর্তিকা দেখতে পায়। তার পাশে জড়ো হয়। সৃষ্টি হয় সামাজিক সংঘটন অথবা রাজনৈতিক কর্ম তৎপরতা। এতে নির্দিষ্ট কিছু দফা থাকে, থাকে কর্মসূচী, থাকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এগুলো ইসলামী সংঘটন -সেটা সামাজিক হোক অথবা রাজনৈতিক -এদের প্রকৃত অর্থে কোন ব্যাক্তিগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এদের কোন মাথা ব্যাথা নাই। মহান রবের উদ্দেশ্যই এদের প্রত্যেকের জীবনোদ্দেশ্য।
অথচ এর বাহিরে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, এযুগে রাজনীতি রীতিমত একটি অতি লাভজনক পেশায় পরিনত হয়ে আছে। তাইতো আকণ্ঠ দূর্ণীতিতে নিমজ্জিত একটি সোনার বাংলা আজ বিশ্ব দরবারে শীর্ষ স্থান অধিকারী চুরের বাংলায় পরিনত হয়ে গেল। হাল আমলে এদের দুর্ণীতির চিত্র যে কী সাংঘাতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে তা কোন দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোককে দেখিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়ে না। একটি একটি করে দূর্ণীতির বিবরণ লিখলে লাখ লাখ কলাম লিখে শেষ হবে কি? এখানে ঈঙ্গিত সরুপ দূর্ণীতির কয়েকটি ধরণের উল্লেখ করছি।

(১) রাজনৈতিক নেতৃত্ব অথবা উর্ধতন কতৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপে, আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে,বা পৃষ্টপোষকতায় আমলাদের অর্থ আত্নসাত এ সময়ের বড় দূর্ণীতি। এ সুযোগ সরকারী তৃতীয় চতুর্থ শ্রণীর কর্মচারী পর্যন্ত কেউই হাত ছাড়া করতে নারাজ।
(২) রাজনৈতিক নেতাদের ঘুষ বাণিজ্য আজকাল মোটামোটী গোপনীয়তা ছাড়াই খোলামেলা আকার ধারণ করেছে বলা যায়। নেতাদের আয়ের উৎসের সাথে বেমানান লক্ষ হাজার কুটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, মাত্রাতিরিক্ত স্থাবর সম্পত্তি আয়ত্বে থাকা, পাশাপাশি অনৈতিক প্রভাব বলয় বিস্তার লাভ করে অন্যের সম্পদে অবৈধ দখল প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
(৩) মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীদের দালালীর হৈ-হুল্লুড় রীতিমত একটা ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে সমাজে। চাকরী দেয়ার নামে, অথবা এই নামে সেই নামে, অথবা নেতাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার নামে চামচাগিরী, সেই সাথে থানা পুলিশের দালালীর নামে চিটিং বানিজ্য।
(৪) উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাচ্ছেতাই ভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমলা আর কামলা মিলে রাষ্ট্র লোপাট কর্মসূচী।
(৫) নৈতিক চরিত্রের দারুন অবক্ষয়ের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ সর্বত্র। মাদ্রাসা শিক্ষক সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্টানে ধর্ষন, খুন, বলাৎকারের ঘটনায় দৈনিকের পাতা ভরপুর।

(৬) বিশেষ করে শিশু অপহরন, ধর্ষন, হত্যার মাত্রাতিরিক্ত ঘটনা প্রবাহ সংঘটিত হচ্ছে এমন সব মহল থেকে যাদের কাছে জাতীর প্রত্যাশা ছিল অন্য কিছু।

সম্প্রতি বেসরকারি সংঘটন "মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন "(এম জে এফ) পরিচালিত এক জরিপে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে জুন '১৯ পর্যন্ত এই ছয় মাসে সারা দেশে ৩৯৯টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে, তার মধ্যে ১৬টি শিশুকে ধর্ষন পর হত্যা করা হয়েছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে দেশে ক্রমাগত বিচারহীনতার কারণেই এই পরিস্থিতি হয়েছে।

তবে অতি লোভের শিকার এই সব নৈতিকতা বিধ্বংসী, সমাজ বিধ্বংসী মানুষ গুলোর অনেকেই নানাবিধ অশুভ পরিনতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাও জনসমক্ষে অপ্রকাশিত নয়। এদের একেক জনের মৃত্যুকালে পারিবারিক বন্ধনের করুণ চিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। কী যে দূর্বিসহ যন্ত্রনা ভোগে ওরা পৃথীবি ছাড়ছেন - যা অভাবনীয় ও অবর্ণনীয়। অথচ এই পৃথীবিটা ভোগের হক উসুল করবার জন্যই ছিল ওদের যাবতীয় কর্ম প্রচেষ্টা।
হিসাবের খাতায় ভুল হয়ে গেল বলেই আজ-- (১) প্রয়াত এস পি'র বিধবা পত্নি ঘুমান মোরগের ঘরে গো-বিষ্টার মধ্যে, আর তার সন্তানরা ঘুমায় পাশের দালানে।
(২) উচ্ছ শিক্ষিত ডাক্তার ও প্রকৌশলী সন্তানের মা থাকেন ঢাকার বৃদ্ধাশ্রমে।
(৩) পিতার মৃত্যুর আটার দিনের মাথায় মা ও একমাত্র ভাইকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিল আপন ঔরষজাত কন্যা। সংবাদ সম্মেলন করে মা বললেন এমন সন্তান যেন আল্লাহ কাউরে না দেয়। অথচ এমন সম্তান গড়ার জন্যইতো আজীবন শ্রম চেষ্টা সাধনা ছিল। চেষ্টাতো বৃথা যায়নি।
যা হবার তা ই তো হয়েছে। যা পাবার তা ই তো পেয়েছেন।তবে সমস্যা কোথায়?

হাঁ, সমস্যা কিন্তু গোডায়। সমস্যা হচ্ছে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্বাচনে। তোমার সারা জীবনের কর্ম প্রচেষ্টা তথা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল পৃথীবিকে আপন হাতের মুটোয় নিয়ে যাওয়া আর তার যথাযথ ভোগ। কিন্তু ফল হল বিপরীত। পৃথীবি দিল লাঞ্চনা আর রইলো বাকি পরপারের বিড়ম্বনা।

কিন্তু উপরে বর্ণিত ইসলামী ব্যাক্তিত্বের কাউকেই এমন বিড়ম্বনার স্বীকার হতে দেখা যায় কৈ? না তো! এরা দিব্বি নুন দিয়ে পানতা খেয়ে সর্সে তেলে ঝলমলে মুখে প্রতিবেশীর দরজায় কড়া নাড়ে আর বলে" আস্ সাললামু আলাইকুম " আপনার উপর বর্ষিত হোক মালিকের পক্ষ থেকে শান্তি। 
এরা এজন্য একাজ করে, কারণ এদের মালিক বলেছেন," বল, নি:শ্চয়ই আমার সালাত, আমার ত্যাগ, আমার জীবন,আমার মৃত্যু একমাত্র বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য" সুতরাং তাদের সকল চেষ্টা সাধনা নিবেদিত হয় স্বীয় মালিকের সন্তুষ্টির নিরিখে। আবার তাদের মালিক বলেছেন," যে ব্যাক্তিই চেষ্টা সাধনা করে, সে তো তা করে তার নিজের কল্যাণের জন্যই। 

অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি কুল থেকে প্রয়োজন মুক্ত।" এতএব তাদের এই কর্ম প্রচেষ্টা সহ যাবতীয় তৎপরতার বিনিময় তারা দুনিয়াতেও পাচ্ছে, পাবে আখেরাতেও। এতএব এই মানুষগুলোই আসলে স্বার্থ নির্বাচনে ও নির্ধারনে চরম লাভবান। বলা যায় সফল স্বার্থপর।
--------------------------------------------  

Post a Comment

0 Comments