মানুষের চিন্তাচেতনার ওপর আধিপত্য বিস্তারে অত্যাধুনিক যুদ্ধকৌশলের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে গভীর আলোচনা পর্যালোচনায় ইহুদী-খ্রীষ্টবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীরা যখন ব্যস্ত তখন মুসলমানরা ব্যস্ত একে অপরকে কাফির ফতুওয়া দেয়া নিয়ে।বড় অদ্ভুদ এবং আশ্চর্য ব্যাপার বটে।
"বর্তমান সময়ে কগনেটিভ ওয়ার ফেয়ার তথা মানুষের চিন্তাচেতনার ওপর আধিপত্য বিস্তারে এই যুদ্ধ হচ্ছে সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধকৌশল। এটি হচ্ছে পরিপূর্ণ, অত্যাধুনিক, গভীরতম ও ব্যাপকভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। এ যুদ্ধের মাধ্যমে মূলত একটি সমাজের জনগণ ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর বিশ্বাস, মূল্যবোধ, চিন্তাভাবনা, নিজস্ব স্বকীয়তা ও পরিচিতিকে টার্গেট করা হয়। এ যুদ্ধের মাধ্যমে একটি সমাজের বাস্তবতাকে ঠিক উল্টো করে দেখানো হয় যাতে ভেতর থেকে তারা ধসে পড়ে। সামরিক যুদ্ধের চাইতে এটি অনেক সাশ্রয়ী কিন্তু এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব অনেক গভীরে। বলা যায়, এটা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের উন্নত সংস্করণ। এ যুদ্ধের মাধ্যমে মানুষের চিন্তাচেতনার ওপর প্রভাব বিস্তার তথা মন ও মননকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে সমাজে বিষবাষ্প ছড়ানো।
এ ধরনের যুদ্ধের মাধ্যমে তারা নানা ঘটনা ঘটিয়ে প্রতিটি মানুষের আবেগ অনুভূতিকেও নাড়া দেয়ার চেষ্টা করে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়াদুল্লাহ জাওয়ানি।"
বেশ ক'বছর আগে পেন্টাগন থেকে প্রকাশিত 'মানুষের মন মননের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ' নামক একটি বইয়ে মানুষের মন ও হৃদয়ের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নানা উপায় ও দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে অনলাইন ভিত্তিক ইরানি পত্রিকা একটি প্রতিবেদন ছাপে।
পাঠক, বর্তমানে এ ধরণের যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করা হয়েছে প্রধানত দুটি বিষয়কে সামনে রেখে।
এক. হকপন্থী ইসলামি সংগঠনের বিরুদ্ধে।
দুই. ইহুদী-খ্রীষ্টবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে যে সমস্ত দেশ সোচ্চার তাদের বিরুদ্ধে।
এই যুদ্ধে পর্যায়ক্রমে তারা প্রধানত তিনটি অস্র ব্যবহার করে।
প্রথম পর্যায়টি হচ্ছে জনগণের মধ্যে কারো প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি করা। পাশ্চাত্য, রাজতন্ত্র শাসিত কয়েকটি আরব দেশ ও ইহুদিবাদী মহল এই তিন শয়তানি চক্র মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত প্রতিরোধ শক্তিকে টার্গেট করে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উদাহরণ স্বরূপ লেবাননের ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ,ইরাকের তালেবান,তুর্কির একে পার্টির মত অনেক দল বা সরকারের প্রতি অবলিলায় অপপ্রচারকে তারা ফরজ ইবাদত হিসাবে মনে করে।
মিশরের বৈধ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে এই শয়তানি শক্তি মিলে উৎখাত করে তাদের হাতের পুতুল সরকার সিসিকে ক্ষমতায় বসায়।এরদোগানকে উৎখাতের জন্য সামরিক ক্যু ঘটানোর মুল নায়কও ছিল ইহুদী-খ্রিষ্টবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীরা। আর মধ্যপ্রাচে এই তিন শয়তানী শক্তির অনুগত্য মুরিদ হল বিন সালমান,সিসি,ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ-তিন কুৃলাঙ্গার।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদের মধ্যে এই চুক্তিকে এক 'ঐতিহাসিক মূহুর্ত' বলে বর্ণনা করেছেন।
মানুষের চিন্তাচেতনার ওপর প্রভাব বিস্তার তথা মন ও মননকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে পরিচালিত নতুন এ যুদ্ধ কৌশলের দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে জনপ্রিয় কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতাকে এমনভাবে নষ্ট করে দেয়া যাতে মানুষ তাদের থেকে দূরে সরে যায়। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে কারো প্রতি অবিশ্বাস তৈরির পর তাদের গ্রহণযোগ্যতাকেও নষ্ট করে দেয়া হয়।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সংগঠন ও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।জামায়াতে ইসলামী সংগঠনকে বলা হয় যুদ্ধাপরাধী সংগঠন এবং সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী ও খুন ধর্ষণ লুটরাজের অভিযোগ তুলে জনগণের সামনে এই সংগঠন ও নেতা-কর্মীদের ভাবমূর্তি খুন্ন করার অপপ্রচার থেমে নেই।আর এতে পাশ্চাত্যপন্থীদের প্রধান সহায়ক হিসাবে কাজ করে দু'টি অক্ষশক্তি।
এক. ধর্মবিদ্ধেষী আওয়ামী লীগ
দুই. ইসলামী লেবাসধারী একটি সম্প্রদায়।
নতুন ধরনের এ যুদ্ধকৌশলের চতুর্থ ধাপ হচ্ছে, প্রতিরোধ শক্তিগুলোর মনোবল ভেঙে দেয়া। যেমন মাত্র অল্পকিছু অনুচর বা সমর্থককে বিক্ষোভের নামে রাস্তায় নামিয়ে তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়া হয়। কিছু সংখ্যক মানুষের ওইসব শ্লোগান বা বিভিন্ন দাবি দাওয়াকে তারা সমাজের সর্বস্তরের দাবি বলে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং বিপ্লবী সরকার কিংবা প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর মনোবল দুর্বল করার ও আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালায় যাতে তারা হতাশ হয়ে পড়ে। ঠিক একই কৌশলে ও অপপ্রচার চালিয়ে শাহবাগে আন্দোলন হয় এবং এই আন্দোলনে নাস্তিক, বাম-রাম ও বেশ্যাদে সাথে যোগ হয় ক্বওমীর বড় বড় আলেম।মানুষকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে নতুন ধরনের এ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের টার্গেট বহুমুখী।প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশে পাশ্চাত্যপন্থীদের স্বার্থে দুটি গ্রুপ কাজ করে।একটি গ্রুপ ধর্মবিদ্ধেষী এবং দ্বিতীয় গ্রুপটি ইসলামী মোড়কে মুনাফিক গোষ্ঠী।
প্রথম গ্রুপটির কাজ হল ইসলামী শক্তিকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য বিভিন্ন অজুহাতে তাদের প্রতি জুলুম নির্যাতন অব্যহত রাখা এবং ইসলামের মোড়কে দ্বিততীয় যে গ্রুপটি তাদের কাজ হল প্রকৃত ইসলামী নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে খারাপ ধারণা তৈরি করা এবং যুবক শ্রেণীকে প্রতিরোধমূলক সংগ্রাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা।
এরাই দেশ ও মুসলিম জাতির শক্র। পাশ্চাত্যপন্থীদের খরিদকৃত গোলাম।এদের কারণেই প্রতিটি মুসলিম দেশ আজ জাহান্নামে পরিনত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপি মুসলিমরা মার খাচ্ছে।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments