Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৩১; নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

                                বিতি কিচ্ছা
                                 পর্ব-৩১;
    

মানবতা যেখানে বেহাল দশায় অনাকাংখিত!

         মানব দেহ নিয়ে বিস্তর লেখাপড়া জানা কিছু সংখ্যক মানুষকে সেই আদি থেকেই সরকার মানুষ মারার লাইসেন্স দিয়েছে- তাদেরই নাম ডাক্তার। ওরা মানুষ মারার জন্য মানুষ মারেনা, বরং মারে মানুষ  বাঁচানোর জন্য। আর এই সুবাদে এদের অনেকেই নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন মানুষ হত্যার কার্যক্রম। অপারেশন থিয়েটারে রোগী ঢোকানোর আগেই সাক্ষর নেয়া হয় রোগীর স্বজন থেকে যে, "রোগী মারা গেলে ডাক্তার দায়ী নয়"। সুতরাং পুরো সাহস ও উৎসাহ  নিয়েই অথবা বলা যায় এক প্রকার দায়ীত্বহীন ভাবেই  রোগীর ভবলীলা সাঙ্গ করতে  ডাক্তার সাহেবেরা সাহসী হয়ে উঠছেন-এটাতো আজকার নিত্য দিনের ঘটনা। এ ছাড়া মানুষ না মেরে নাকি ডাক্তার হওয়াও যায় না। তাই মানুষ হত্যার এই প্রক্রিয়াকে মানুষ  অতি সহজ ভাবেই মেনে নিয়ে যুগের পর যুগ পার করে দিচ্ছে, কোন অসুবিধা  হচ্ছে না। কিন্তু ইদানিং কালে কিছু কিছু ডাক্তাররা মানুষ হত্যার পাশাপাশি মানুষত্য তথা মানবতাকেও টুটি চেপে হত্যা করছেন-যা কখনওই কাংখিত নয়।

        মানবতা এমন একটি উপাদান যা মানুষ ভিন্ন অন্য কোথাও পাওয়ার আশা করা অযৌক্তিক বটে। যদিও ইদানিং কুকুর সহ এমন অনেক প্রাণীর মধ্যেও মানবতার গন্ধ তথা আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু  যখন এই মানুষের মধ্যেই মানবতার ছিঁটে ফোঁটা অবর্তমান থাকে তখন মনুষ্য-বিবেক স্তম্ভিত হতে বাধ্য হয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। আসলে মানুষ এমন এক প্রকার প্রাণী যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সর্ব্বোত্তম সৃষ্টি হিসাবে। তাকে দিয়েছেন জ্ঞান ও বিবেক, দিয়েছেন দয়া ও মায়া নামক গুনরাজি -যা সয়ং আল্লাহ তয়ালার নিজস্ব সত্তায় বিদ্যমান এবং যা একমাত্র আল্লাহর সত্ত্বাতেই একান্ত যুৎসই টেকে। চাই মানুষ এই গুণ বৈশিষ্ট্য ধারণ করতঃ উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করবে, এটাই ছিল কথা। কিন্তু প্রাপ্ত গুনাবলীর অপ-প্রয়োগের ফলে তথা লোভ, হিংসা ইত্যাদি মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ  আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের যার পর নাই অপ-ব্যাবহার করলো। অবশ্য শুধু ডাক্তার নয়, মানবতা আজ সর্বত্রই লংঘিত, পদদলিত মানুষ নামক দ্বি-পদ জানোয়ারদের কাছে।  

          সম্প্রতি কক্সবাজারে সরকারি হাসপাতালে দায়ীত্বরত চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর প্রতি অবহেলা, পাঁচ হাজার টাকা দাবী , নয়ত চিকিৎসা হবে না মর্মে বাদানুবাদ একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আসা রোগীর স্বজনদের অনেক আকুতির পরও গলেনি ড: সপ্তম সরকারের মন। ঘটনাতো এই একটিই নয়, ডাক্তারদের টেষ্ট বানিজ্য আজ পরোদস্তুর সর্বজন জ্ঞাত একটি বিষয়। অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রেখে লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাদানুবাদ -এগুলোতো হাজারো মহলে মশহুর বার্তা। ঔষধ হিসাবে স্বীকৃত নয় এমন দ্রব্য,  অথবা নিম্ন মানে ঔষধ কমবেশি উৎকোচের বিনিময়ে লিখা, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের প্রতি অদৃশ্য সুতার বাঁধনে থেকে  গন হয়রানি ইত্যাদি। এসব আজ কার না জানা।

            ব্যাপারগুলো কলংকিত করলো ডাক্তার সমাজকে। কলংকিত করলো মামুষ্য সমাজকে। কি এর কারণ? ইতিপূর্বে এমন তো ছিল না। বিপন্ন মানবতা কাতর কণ্ঠে, বে-চারা হয়ে হাত জোড় করে দাঁড়ায় এমন এক সমাজের সম্মুখে, যাদের কাছে মানবতার,  মহানুভবতার,আশা করা দুরাশা হবে এমন হবার নয়, কিন্তু বিপন্ন মানবতা আঁছড়ে মরে, ডুঁকরে কাঁদে হাজার বার, লাখো বার, অতঃপর ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। এই হলো আজকের বাস্তবতা।

         প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আজ থেকে মোটে অর্ধ শত বছর আগে এত রোগী ছিল না,  ছিল না এতো নাম না জানা রোগ, আর না ছিল এতো ডাক্তার। তবে ডাক্তাররা ছিল সর্বজন সম্মানিত। কিন্তু আজ আমি হলফ করে বলতে পারি ডাক্তারদেরকে মানুষ আজ নানা প্রকার অসম্মানজনক উপনামে আখ্যায়িত করছে। কেউ বলছে কসাই, কেউ বলছে ডাকাত ইত্যাদি।  কেন এই অবস্থা? বলতে পারেন কালের পরিক্রমায় এগুলো এসে স্বাভাবিক ভাবে ঘায়েল করেছে ডাক্তার সমাজকে। আমি বলব,  না,  মোটেও নয়। এগুলো আপনা আপনি এসে কারো কপাল জুড়ে বসে পড়ে নাই। এ গুলো নি:শ্চয়ই আপনাদেরই হাতের কামাই। সর্ব অবস্থা দৃষ্টে মামুষ আজ ডাক্তারদের প্রতি এতই বিতশ্রদ্ধ হয়েছে যে, কেউ কেউ এও বলেছেন, "আল্লাহ যেন আমার চৌদ্দ গোষ্টীর কাউরে ডাক্তার না বানায়"।

          বিগত অর্ধ শতাব্দীর পট-পরিক্রমায় পৃথিবীতে রাসায়নিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এর পাশাপাশি অবহেলিত আয়ুর্বেদীক, ভেষজ বিজ্ঞানকেও  মানুষ কম সমীহ করেন নাই। রাসায়নিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হাতেখড়ি নিয়ে এ যুগের আবাল চিকিৎসকগন ভেষজকে দারুণ ভাবে অবজ্ঞা করতে শিখেছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফসল হিসাবে প্রতিটি মানব দেহ পরিনত হয়েছে এক একটি ঔষধের গোদামে। ঔষধ নির্ভরশীল এই দেহ গুলো ক্রমেই হারাচ্ছে তার মৌলিক সত্তা। অবশেষে আমরা  দেখতে পাই হাজারো ভুক্তভোগী জনতা ভেষজে আকৃষ্ট হচ্ছে, আকৃষ্ট হচ্ছে আয়ুর্বেদী চিকিৎসা ব্যাবস্থার দিকে। এতে তাহারা আশাতীত ফললাভ করে রোগমুক্ত জীবন লাভে সক্ষম হচ্ছেন।

         কিন্তু আমরা সমাজের সর্বত্র তো বটে, বিশেষ করে সর্বাগ্রে চিকিৎসালয়ে মানবতার অবস্থান নিশ্চিত করতে চাই, মানবতাকে বিজিত নয় বরং বিজয়ী দেখতে চাই এখানে। বিপন্ন ও আর্ত পীড়িতের হৃদয়ে শান্তির সুবিমল আবহ জাগাতে চাই এবং চিকিৎসক গনকে আপন মর্যাদায় অধিষ্টিত দেখতে চাই। গুটিকয়েক লোভী ও নরপিশাচ মানুষরূপী জানোয়ারদের দায় মাথায় নিয়ে পুরো একটি সম্মানিত জনগোষ্ঠীকে কলংকিত হিসাবে দেখতে চাই না। আসলে মানবতা এখানে বেহাল দশায় অনাকাংখিত।
------------------------------------------------  

Post a Comment

0 Comments