Recent Tube

সুন্নাতের অনুসরণে রয়েছে হিদায়াতের নিশ্চয়তা: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

সুন্নাতের অনুসরণে রয়েছে হিদায়াতের নিশ্চয়তা:
--------------------------------
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ إِسْحَاقَ الْفَقِيهُ، أَنْبَأَ الْعَبَّاسُ بْنُ الْفَضْلِ الْأَسْفَاطِيُّ، ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي أُوَيْسٍ، وَأَخْبَرَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْفَضْلِ الشَّعْرَانِيُّ، ثنا جَدِّي، ثنا ابْنُ أَبِي أُوَيْسٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ الدِّيلِيِّ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطَبَ النَّاسَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ، فَقَالَ: «قَدْ يَئِسَ الشَّيْطَانُ بِأَنْ يُعْبَدَ بِأَرْضِكُمْ وَلَكِنَّهُ رَضِيَ أَنْ يُطَاعَ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِمَّا تُحَاقِرُونَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ، فَاحْذَرُوا يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِنَّ كُلَّ مُسْلِمٍ أَخ مُسْلِم، الْمُسْلِمُونَ إِخْوَةٌ، وَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ مِنْ مَالِ أَخِيهِ إِلَّا مَا أَعْطَاهُ عَنْ طِيبِ نَفْسٍ، وَلَا تَظْلِمُوا، وَلَا تَرْجِعُوا مِنْ بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ» . " وَقَدِ احْتَجَّ الْبُخَارِيُّ بِأَحَادِيثِ عِكْرِمَةَ وَاحْتَجَّ مُسْلِمٌ بِأَبِي أُوَيْسٍ، وَسَائِرُ رُوَاتِهِ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِمْ،

      হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. বিদায়ী হজ্বে মানুষের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ইরশাদ করলেন, শয়তান তোমাদের যমীনে তাকে পূজা করার আশা ছেড়ে দিয়েছে। তবে তোমাদের দৃষ্টিতে নগণ্য কাজের মাধ্যমে তার আনুগত্য করা হবে তাতে সে সন্তুষ্ট হয়েছে। সুতরাং হে লোক সকল তোমরা সতর্ক থেকো। আমি তোমাদের নিকট এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি যা তোমরা আঁকড়ে ধরলে কোন দিন পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহ তাআলার কিতাব এবং নবী কারীম স.-এর ছুন্নাত। প্রত্যেক মুসলমান মুসলমানের ভাই। সকল মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। কোন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমান ভাইয়ের সম্পদ গ্রহণ করা বৈধ নয়; কেবল যা সে খুশী মনে প্রদান করে তা ব্যতীত । তোমরা জুলুম করো না। আর আমার পরে কুফরী হালাতে ফিরে গিয়ে তোমরা একজন অপর জনের গর্দান উড়িয়ে দিও না। হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, হযরত ইকরামার হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী রহ. এবং আবি উআইসের হাদীস দ্বারা ইমাম মুসলিম রহ. দলীল গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া অবশিষ্ট রাবীগণের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে সকলের ঐকমত্য রয়েছে। (মুসতাদরাকে হাকেম-৩১৮)

      হাদীসটির স্তর : সহীহ। হাকেম আবু আব্দুল্লাহ এ হাদীসের বর্ণনাকারীদেরকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ইমাম জাহাবী রহ.ও  ইকরামা উআইসের ব্যাপারে হাকেমের মন্তব্য সমর্থন করেছেন।
.
مَالِكٌ؛ أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ. (رواه مالك فى الموطأ فى كتاب القدر)

      ইমাম মালেক রহ. বলেন, তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, রসূললুল্লাহ স. ইরশাদ করেছেন: আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন তোমরা এটাকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহ তাআলার কিতাব এবং তাঁর নবী স.-এর ছুন্নাত। (মুয়াত্তা মালেক, অধ্যায়: তাকদীর সম্পর্কে মন্তব্য করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা)

     হাদীসটির স্তর : হাসান। আল্লামা ঝুরকানী রহ. বলেন, أن بلاغه صحيح كما قال ابن عيينة عيينة আমার নিকট পৌছছে বলে ইমাম মালেক রহ. যা বর্ণনা করে থাকেন তা সহীহ। যেমনটি বলেছেন ইবনে উইয়াইনা। (শরহুল মুয়াত্তা লিঝ ঝুরকানী-১৬১৪) এ ছাড়া পূর্ববর্ণিত হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর হাদীস দ্বারাও এটা সর্থিত। মিশকাত শরীফের তাহকীকে শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (মিশকাত-১৮৬)

      উপরোক্ত হাদীস দুটি থেকে প্রমাণিত হয় যে, হিদায়াতের ওপর অটল থাকার জন্য রসূলুল্লাহ স. আমাদেরকে কিতাবুল্লাহ এবং ছুন্নাত মেনে চলার তাকিদ দিয়েছেন। সাথে সাথে এ নিশ্চয়তাও দিয়েছেন যে, তোমরা এটা আঁকড়ে ধরে থাকলে পথভ্রষ্ট হবে না।

      বর্তমান কালের কিছু মানুষ নিজেদেরকে ছুন্নাত থেকে সরিয়ে নিয়ে উম্মতকে হাদীস মানার আহবান করছে। অথচ হিদায়াতের নিশ্চয়তা রয়েছে ছুন্নাতে। আবার অন্যদিকে রসূল স. কর্তৃক ছুন্নাত মানার আহবানকে সংকীর্ণ করে ছুন্নাতের সাথে সহীহ হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়ে মানুষকে সহীহ ছুন্নাহ’র দিকে আহবান করছে। অথচ সাহাবায়ে কিরাম, তাবেঈন এবং তাবে তাঈেগণ এমন বহু ছুন্নাতের ওপর আমল করেছেন যা সহীহ সনদে প্রমাণিত নয়। তাঁরা এটাকে হিদায়াতের মাধ্যম হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। তাহলে উত্তম যুগের আমলের পথকে সংকীর্ণ করে ছুন্নাতের সাথে শর্তযুক্ত করা কোন্ হাদীসের অনুকরণ তা মোটেই পরিস্কার নয়।

    উল্লেখ্য: হাদীস এবং ছুন্নাতের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে যা নিম্নরূপ।

   এক. রসূল স.-এর কথা কাজ ও সমর্থনের নাম হাদীস। আর উম্মতের করণীয় বা দ্বীনের সন্তোষজনক পন্থার নাম সুন্নাত।

     দুই. সুন্নাত হলো আমল আর হাদীস হলো আমলের দলীল। সব দলীলই বিশ্বাস করতে হবে, তবে সবটাই পালনযোগ্য নয়।

    তিন. হাদীসের মধ্যে মানছূখ(রহিত)আছে কিন্তু ছুন্নাতের মধ্যে কোন মানছুখ নেই। মানছুখ কয়েক প্রকার হতে পারে :

    ক. মানছূখ তবে আমল করা জায়েয। যেমন, আগুনে পাকানো কোন কিছু খেয়ে অযু করা। (আবু দাউদ-১৯১)

   খ. এমন মানছূখ যার ওপর আমল করাও জায়েয নয়। যেমন, বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করা। (বুখারী-৪১৩৪)

   চার. হাদীসের মধ্যে রসূল স.-এর এমন বৈশিষ্টের বিবরণ রয়েছে যা অন্যদের জন্য পালন করা জায়েয নয়। যেমন, নবী কারীম স. কর্তৃক বহু বিবাহ করা। (বুখারী-৪৬৯৭) নবী কারীম স. ঘুমালেও অযু ভঙ্গ হতো না। (বুখারী-১৪০) এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলেও উম্মতের জন্য করণীয় নয়। অতএব, এটা হাদীস তবে ছুন্নাত নয়।

   পাঁচ. হাদীসের মধ্যে অনেক জায়েয কাজের বিবরণ আছে যেটা স্বাভাবিক অবস্থায় মাকরূহ। যেমন, রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক দাঁড়িয়ে পেশাব করা। (বুখারী-২৩০৯) অথবা স্বাভাবিক অবস্থায় অনুত্তম। যেমন, মাগরিবের পূর্বে নফল পড়ার অনুমতি প্রদানের সাথে সাথে মানুষ যেন এটাকে ছুন্নাত বানিয়ে না নেয় তার আশঙ্কা প্রকাশ করা। (বুখারী-১১১২) এ দু’টি বিষয় সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলেও উম্মতকে এর প্রতি আগ্রহান্বিত করা হয়নি। অথচ ছুন্নাতের প্রতি রসূলুল্লাহ স. মানুষকে ঢালাওভাবে আহবান জানিয়েছেন। রসূলুল্লাহ স. হযরত আনাস রা.কে বলেন,   «يَا بُنَيَّ وَذَلِكَ مِنْ سُنَّتِي، وَمَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي، وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الجَنَّةِ» হে বৎস! এটা আমার ছুন্নাত। আর যে আমার ছুন্নাত জিন্দা করলো সে আমাকে ভালো বাসলো। আর যে আমাকে ভালো বাসলো সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (তিমিজী-২৬৭৮) ইমাম তিরমিজী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এ ছাড়াও সহীহ হাদীসের বর্ণনায় রসূল স. উম্মতকে তাঁর নিজের ছুন্নাত এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের ছুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিজী-২৬৭৬, আবু দাউদ-৪৬০৭, ইবনে মাজা-৪২, মুসনাদে আহমাদ-১৭১৪২)

    অতএব, হিদায়াতের ওপর অটল থাকতে সকলকেই ছুন্নাতের অনুসারী হতে হবে। আর এতেই রয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments