Recent Tube

মাদখালিরা দাজ্জালের মত ভয়ঙ্কর ফিতনা নয় কি? মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।



               মাদখালিরা  দাজ্জালের চেয়েও 

              ভয়ঙ্কর  ফিতনা নয় কি? 

               ------------------------------------
     ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,
مَا بَيْنَ خَلْقِ آدَمَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ خَلْقٌ أَكْبَرُ مِنْ الدَّجَّالِ.
"আদম (আঃ) এর জন্মলগ্ন থেকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের ফিতনা অপেক্ষা অন্য কোন বিষয় (বড় বিপদজনক) হবে না।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৯৪৬; মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৫৮২০, ১৫৮৩৩)
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড় বিপদজনক ফিতনা। কিন্তু অন্য হাদীসে দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও ভয়ঙ্কর ফিতনার বিষয় উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন, যাতে করে আমরা সেই ফিতনার কবলে না পড়ি।

    আবূ যার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, 
كُنْتُ مُخَاصِرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا إِلَى مَنْزِلِهِ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُ عَلَى أُمَّتِي مِنْ الدَّجَّالِ فَلَمَّا خَشِيتُ أَنْ يَدْخُلَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ شَيْءٍ أَخْوَفُ عَلَى أُمَّتِكَ مِنْ الدَّجَّالِ قَالَ الْأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ.
"একদা আমি নবী (সাঃ) এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাকে বলতে শুনেছি, 'এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি।’ তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম,‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মাহ্-এর জন্য দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয় করেন?’ তিনি বললেন, ‘পথভ্রষ্ট (ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়) নেতা'।" (মুসনাদ আহমাদ হাঃ ২০৭৯০)
হাদীসে বর্ণিত الْأَئِمَّة শব্দটি إمام (ইমাম) শব্দের বহুবচন, যার অর্থ নেতা। এটি সাধারণত দু'টি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ১. ধর্মীয় নেতা তথা আলিম ২. রাষ্ট্রীয় নেতা তথা শাসক। এখানে একই সাথে দু'টি অর্থই গ্রহণ করতে হবে। কেননা, পথভ্রষ্ট আলিম ও শাসকই ইসলাম ধ্বংসকারী। (দেখুনঃ-সুনান দারেমী হাঃ ২১৪; মিশকাত হাঃ ২৬৯) 

      আল্লাহ তা'য়ালা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রেরণ করেছেন দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে (সূরা শুরাঃ ৪২/১৩) এবং সকল বাতিল দ্বীনের উপর দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করতে (সূরা তওবাঃ ৯/৩৩; ফাতাহঃ ৪৮/২৮; সফঃ ৬১/৯)। ইসলাম বিজয়ের এ ধারা জারী রাখতে আলিম সমাজ ও শাসক মণ্ডলী যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তেমনি ইসলাম ধ্বংসের ক্ষেত্রেও দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে। খলিফাতুল মুসলিমীন ও আলিম ওলামার প্রচেষ্টার ফলে গোটা দুনিয়ার উপর প্রায় এক হাজার বছর যাবত ইসলামের প্রভুত্ব বিস্তৃত থাকে। কিন্তু আজ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ পরাজিত ও লাঞ্ছিত। যে জাতির উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর দাসত্ব করা, সে জাতি আজ পথভ্রষ্ট ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নেতার বদৌলতে তাদের সেই উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে তাগুতের বান্দা ও কাফিরদের গোলামে পরিণত হয়েছে। আর এই পথভ্রষ্ট শাসক ও দরবারী আলিমরাই দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কেননা, দাজ্জাল ইসলামের ক্ষতি করবে তার আসল রূপ ধারণ করে, পক্ষান্তরে এ সকল জালিম শাসক ও দরবারী আলিম ইসলামের ক্ষতি করবে তাদের দাজ্জালী রূপ গোপন করে। তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দাজ্জালের ফিতনার চেয়েও পথভ্রষ্ট শাসক ও পথভ্রষ্ট দরবারী আলিমদের বেশি ভয় করতেন।

     শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
 ﺇِﻧِّﻰ ﻻَ ﺃَﺧَﺎﻑُ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﺇِﻻَّ ﺍﻷَﺋِﻤَّﺔَ ﺍﻟْﻤُﻀِﻠِّﻴﻦَ.
“নিশ্চয়ই আমি আমার উম্মাহ্-এর জন্য কোন কিছুরই ভয় করি না, পথভ্রষ্ট (ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়) নেতা ব্যতীত।" (মুসনাদ আহমাদ হাঃ ২৭৫৯৩; সুনান দারিমী হাঃ ২১১)
অপর বর্ণনায় এসেছে: সাওবান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 
َإِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الْأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ.
"আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী (ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয়) নেতাদের বেশি ভয় করি।" (জামে তিরমিযী হাঃ ২২২৯; সুনান আবূ দাউদ হাঃ ৪২৫২; মুসনাদে আহমদ হাঃ ২১৮৮৮, ২১৮৮৯, ২১৯৪৬, ২৭৭০৩; সুনান দারিমী হাঃ ২০৯, ২৭৫২; সহীহাহ হাঃ ১৯৫৭) 

     বিঃদ্রঃ যারা আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী দেশ না শাসন করে কুফুরী বিধান দ্বারা শাসন করে তারা পথভ্রষ্ট শাসক। আর যে সকল আলিম আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার কথা বলে না, উল্টা যারা আল্লাহর দ্বীন/বিধান কায়েম করতে চায় তাদের ক্ষমতালোভী বলে ব্যঙ্গ করে এবং পথভ্রষ্ট শাসকের কুফুরী শাসন মানা ফরজ (ইবাদত) বলে ফতোয়া প্রসব করে তারাই পথভ্রষ্ট দরবারী আলেম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ভাষায় এরা দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এদের ফিতনা থেকে সাবধান থেকে ঈমান হেফাজত করা প্রত্যক মুসলিমের ঈমানী ফরজ দায়িত্ব। ইসলামী অর্থনীতি, রাজনীতি, ফৌজদারি দণ্ডবিধি, জিহাদ, কিতাল, খিলাফাত ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহ কুরআনে যা বর্ণনা করেছেন পথভ্রষ্ট শাসকের মাল খেয়ে দরবারী আলিমরা তা গোপন করার অপচেষ্টা করে। এইসব দুনিয়ালোভী আল্লাহর বিধান গোপনকারী দরবারী আলিমদের ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা বর্ণনা করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيم-
"নিশ্চয় যারা আল্লাহর নাজিল করা কিতাবের অংশবিশেষ গোপন করে রাখে এবং সামান্য বৈষয়িক মূল্যে তা বিক্রি করে দেয়, তারা এটা দিয়ে যা হাসিল করে এবং যা দিয়ে তারা নিজেদের পেট ভর্তি করে রাখে তা মূলত আগুন ছাড়া আর কিছুই নয়, শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে কথা বলবেন না, তিনি তাদের পবিত্রও করবেন না, তাদের জন্যে রয়েছে (জাহান্নামের) যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।" (সূরা আল বাকারাঃ ২/১৭৪)
-------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments