Recent Tube

মরুভূমির হাতছানি -২৫, মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী

            মরুভূমির হাতছানি 
                                পর্ব-২৫
হজ্ব ভ্রমণ'১৭

  মাক্বাতুল মোকাররামায় পৌছে সর্বপ্রথম হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । অামাদেরকে জানানো হলো এশার নামাজের পর অামরা বাইতুল্লাহর  তাওয়াফে নামবো । পূর্বেই বলেছি অামরা যেহেতু হজ্বে তামাত্তু করবো সেহেতু অামাদের প্রথম কাজ উমরা অাদায় করে নেয়া । সে হিসেবে অামরা মদীনা থেকে অাসার পথে বি'রে অালীতে এসে ইহরামের নিয়ত করেছিলাম । 
ইতিমধ্যে জোহরের নামাজের অাজান হলো । জীবনের প্রথম বাইতুল্লাহর অাজানের ধ্বনি কানে এলো । অাজানের অভূতপূর্ব সূর লহরী ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র । 
কিছুক্ষণ পর ইক্বামাত হলো । অামরা হেটেল থেকে নেমে এলাম । নিচে নেমে হোটেলের সামনের রাস্তায় জামায়াতে দাঁড়ালাম । মক্বা শরীফে অাজানের সাথে সাথে ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে যায় । যে যেখানে অবস্থান করছেন সেখানেই সালাতে দাঁড়িয়ে যান । এক জামায়াতে শামিল হয়ে যান মুসল্লীরা কয়েক কিলোমিটার এলাকা জোড়ে । 
জোহরের সালাত পড়ে রুমে ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে বিশ্রাম নিলাম । 
ইহরাম অবস্থায় সবসময় একধরনের ভয় কাজ করে যে,কোন ধরনের ভুল হয়ে যায় কিনা । 
কারণ ইহরাম অবস্থায় অনেকগুলো কাজ নিষিদ্ধ। যেসব ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হয় । যেমন--

সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা,
(৫) নখকাটা,
(৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(৯) শিকার করা।
(১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করা, যাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(১৩) উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(১৪) কোন গুনাহের কাজ করা, ইত্যাদি।

ওমরাহর দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ
দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল
মুন্ডানো বা ছাটা।

তালবিয়া
”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”
অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
আপনার কোন অংশীদার নেই।

হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহ
প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ
ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিন্নী।
 অর্থাৎ - আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।

দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে ক্বিরান
বর্ণনা: একত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ’মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাকাব্বাল মিন্নী। অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে ক্বিরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।

তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু
বর্ণনা: একই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইহরাম’ পরিধান করে ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ আদায় করা। প্রথম ইহরাম বেঁধে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে ‘ইহরাম’ খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ ‘মক্ক শরীফ’থেকে ইহরাম বাঁধা। 

শুধু ওমরাহর নিয়্যাত
আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম’রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্বাব্বাল মিন্নী। অর্থাৎ - হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।

এভাবে অামরা হোটেলের নিচে রাস্তায় অাসর,মাগরীব এবং এশার সালাত অাদায় করে খাওয়া দাওয়া সেরে  তাওয়াফে নামলাম । (চলবে)
____________________________________

ইনশাআল্লাহ  আল্লাহর ঘর প্রথম দর্শন এবং তাওয়াফের অনুভুতি ব্যক্ত করবো ২৬ তম পর্বে।

Post a Comment

0 Comments