Recent Tube

মরুভূমির হাতছানি, পর্ব-২৪ মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী।

                    মরুভূমির হাতছানি 
                           পর্ব-২৪,;

  হজ্ব ভ্রমণ ১৭,

    ইতিমধ্যে শুনা গেল অামাদের সাথে থাকা মুয়াল্লিমের কন্ঠ । বললেন অাল্লাহর অশেষ শুকরিয়া যে, অামরা পবিত্রভূমি মক্কা নগরীতে প্রবেশ করছি । মক্কার অাদব এবং সুন্নাহ সম্বলিত অনেক দিক নির্দেশনাপূর্ণ কথা বললেন তিনি । 
অামরা যখন ''হুদুদে হারাম'' তথা হারামের সীমানায় প্রবেশ করলাম তখন সর্বপ্রথম চোখে পড়লো যেই অালিশান ইমারত তা হল জমজম টাওয়ার। এই টাওয়ারের উপরে স্থাপন করা হয়েছে মক্কা রয়েল ক্লক যা হারামের চতুর্দিক থেকে একই রকম দেখা যায় । এই মক্কা রয়েল ক্লক নিয়ে লিখবো অন্য পর্বে । সুবিশাল জমজম টাওয়ারটি ইসলামিক অার্কিটেকচারের সমগ্র ঐতিহ্যকে অাঁকড়ে ধরে অাছে । 

    যখন নিশ্চিত হয়ে গেলাম অামরা হারামের সীমানায় পৌছে গেছি তখন মহান অাল্লাহর শুকরিয়ায় চোখের পাপড়ি ভিজে গেল । হৃদয় জুড়ে বয়ে গেল এক পবিত্র শিহরণ । অার জবান থেকে অকপটে বেরিয়ে গেল ''লাব্বাইকা অাল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক।  লা শারীকা লাক''। 

     পাশাপাশি উঁকিঝুকি মারতে শুরু করলাম সবদিকে । দেখবো সেই পবিত্র ঘর । যে ঘরের দিকে মুখ করে স্বালাত ফরজ হওয়ার বয়স থেকে শুরু করে অাজ পর্যন্ত  প্রতিপালকের সামনে সেজদায় অবনত হয়েছি । কিন্তু না, হারামের সীমানায় পৌছা মানেই বাইতুল হারামে প্রবেশ করা নয় । সূতরাং, অামাকে অপেক্ষা করতে হবে অারো কিছুটা সময়। তবেই হতে পারবো বাইতুল্লাহর মুখোমুখি। 

   তবে হুদুদে হারামে প্রবেশের সাথে সাথে হারামের সমস্থ বিধান অাপনার উপর অারোপিত হয়ে যাবে । যা হারাম শরীফে নিষিদ্ধ তা নির্দিষ্ট সীমানার ভেতরেও নিষিদ্ধ । যেমন রক্তপাত হারাম।। এমনকি কোন প্রানী হত্যা করাও এখানে হারাম৷। 
হারাম শরীফে এক রাকায়াত নামাজ পড়লে যেমন এক লক্ষ রাকায়াতের সওয়াব হয় ।  ঠিক হারামের সীমানার ভেতরে যে কোন জায়গায় এক রাকায়াত নামাজ পড়লে অনুরূপ সওয়াব হবে। 
নবী (স) বলেন,এই শহর অর্থাৎ মক্কা নগরী আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া কেয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম। উহার গাছ কাটা, শিকারযোগ্য জানোয়ারকে বিতাড়ণ করা এবং তাজা ঘাস কাটা যাবে না; পড়ে থাকা দ্রব্য-সামগ্রীও ওঠানো যাবে না; কেবল ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে উহার হারানো বস্তু সম্বন্ধে যথারীতি প্রচার ও ঘোষণা করতে প্রস্তুত থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
এই হারামের সীমানা অাল্লাহর হুকুমে হযরত ইব্রাহীম (অা) দেখিয়ে দিয়ে গেছেন । 

    হারামের সীমানা সম্পর্কে ইমাম নববি বলেন:মদিনার দিকে মক্কার হারাম এলাকার সীমানা হচ্ছে মক্কা থেকে ৩ মাইল দূরে তানয়ীমের আগে বনি নিফার গোত্রের বাড়িঘরের কাছাকাছি। 
ইয়েমেনের দিকের সীমানা হচ্ছে- মক্কা থেকে ৭ মাইল দূরে আদাত লাবানের প্রান্তভাগ। তায়েফের দিকের সীমানা হচ্ছে- মক্কা থেকে ৭ মাইল দূরে আরাফা ময়দানের নামিরার নীচুভূমি। ইরাকের দিকের সীমানা হচ্ছে- মক্কা থেকে ৭ মাইল দূরে আল-মুকাত্তা নামক স্থানের পাহাড়ি পথ পর্যন্ত। আল-জিয়িরানার দিকের সীমানা হচ্ছে- মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে আব্দুল্লাহ বিন খালেদ বংশের গিরিপথ। জেদ্দার দিকের সীমানা হচ্ছে- মক্কা থেকে ১০ মাইল দূরে ‘মুনকাতিউল আ’শাশ’ নামক স্থান পর্যন্ত।[আল-মাজমু (৭/৪৬৩) থেকে সমাপ্ত]

সৌদী সরকার হুদুদে হারামের চতূর্দিকে সুস্পষ্ট মিনারের মত সীমানা নির্ধারনী পিলার গেড়ে দিয়েছেন । যাতে নিহায়াতুল হারাম এবং বিদায়াতুল হারাম অর্থাৎ হারামের শুরু এবং হারামের শেষ লিখা রয়েছে । 
হারাম এলাকার ভেতরে ঢুকে অামরা সর্বপ্রথম হেটেলে উঠলাম । 
তখন ঘড়ির কাঁটা জানান দিল স্থানীয় সময় সকাল এগারোটা বাজে । 
চলবে.....।
------------------------------------------------
লেখকঃ কলামিস্ট ও প্রবন্ধ লেখক।        

Post a Comment

0 Comments