Recent Tube

দ্যা চয়েস ইজ ইউরস-১০, জিয়াউল হক।

         
 দ্যা চয়েস ইজ ইউরস-১০,
                                    -- জিয়াউল হক। 
                           
           দ্যা চয়েস ইজ ইউরস-১০,
                           
     সেই থেকে মা আমিনা নীরব হয়ে গেলেন বাড়িতে। খুবই কম কথা বলতেন। মাত্র সতোরো বছরের যুবতী মেয়ে, সবে বিয়ে হয়েছে। বাবা মা, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে মক্কার ভিন্ন পরিবেশে তাঁর উচ্ছল থাকার কোন কারণ ছিল না এক স্বামীর সান্নিধ্য ছাড়া। সেই সান্নিধ্য থেকেই তিনি বঞ্চিতা হলেন। 

    এক ধরনের নি:সঙ্গতা তাঁকে ঘিরে ধরলো। তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিলেন। কারো সাথে মিশতেন না, বেশির ভাগ সময়ই ঘরের মধ্যেই থাকতেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরুতেন না। কেউ তাকে দেখতে আসলেও তিনি তাদের সাথে খুব একটা কথা বলতেন না, মিশতেনও না। খুব কাছে থেকে তাঁর এই পরিবর্তনের নীরব কিন্তু সচেতন সাক্ষী ছিলেন আমিনার একমাত্র বিশ্বস্থ ও সবচেয়ে কাছের আস্থাভাজন দাসী; বারাকাহ উম্মে আইমান।

    এই উম্মে আইমান’ই পরবর্তিতে সারাটা জীবন এই মহিয়ষী নারীর সকল স্মৃতিকে ধারণ করে রেখেছিলেন। ইনিই সেই নারী, যাঁর মাধ্যমে বিশ্বসমাজ এই ভাগ্যবতী দূ:খিনী নারী মা আমিনার সেই কঠিন সময়ের মানসিক যন্ত্রণার চিত্র এবং, এমনকি, তাঁর শেষ দিনটির চিত্রও দেখতে পায়। 
স্বামীর বিরহে যুবতি বধু শোকে পাথর হয়ে দিন রাত পার করতে থাকেন। অধীর আগ্রহে দিন গোণেন কবে তাঁর স্বামী ফেরত আসবেন।
মক্কার সেই সমাজটাই ছিল ব্যবসায়ী সমাজ। ঐ সমাজে বেঁচে থাকা ও জীবন ধারনের জন্য পেশা হিসেবে খুব বেশি কোন পথ ও পদ্ধতি ছিল না। ব্যবসা, ছিনতাই আর ভাড়াটে সৈন্য কিংবা মরুভূমিতে গাইড হিসেবে বিদেশী কোন বাণিজ্য বহরের অধিনে সাময়িক চুক্তিভিত্তিক চাকুরি। এভাবেই আয় রোজগারের ব্যবস্থা হতো।

   হজ্জের জন্য দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসতো। মেলাও হতো। মেলা ও হজ্জে আগত লোকজনদের কারণে মক্কা নগরী গমগম করতো। নানা ধরনের ব্যবসা হতো এখানে। হজ্জের জন্য পশুর বিরাট বাজারও বসতো। দীর্ঘ চারটি মাস নিরাপদে ব্যবসা বাণিজ্য তো চলতো। 

     তদুপরি বছরের বাঁকি সময় শীতকালে তাদের ব্যবসায়িক কাফেলা যেতো দক্ষিণে ইয়েমেন আর গ্রীষ্মকালে উত্তরের শাম, ফিলিস্তিনে। কেউ হয়তো খোদ কাফেলার মালিক আর কেউবা নিতান্তই বাহক, শ্রমিক কিংবা নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ভাড়াকরা শ্রমিক। এভাবেই তাদের জীবন জীবিকা চলে যেতো।

     আব্দুল মুত্তালিবের বাবা হাশেম ও মা সালমাও ছিলেন ব্যবসায়ী। মা সালমা ছিলেন মদিনার মেয়ে। বাবা হাশেমের সাথে বিয়ের আগে থেকেই মায়ের নিজের স্বাধীন ব্যবসা ছিল মদিনায়। হাশেম মক্কা থেকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামে যাবার পথে মদিনার ‘নাবত্’ বাজার হয়ে গিয়েছিলেন, বিখ্যাত এ বাজারে নতুন মালামাল পেলে তা কিনে নিয়ে যাবেন তার রসদ হিসেবে শামে। 

    সেই ‘নাবত্’ বাজারেই তিনি হঠাৎ করে দেখা পান কেনা বেচায় কর্মব্যস্ত সালমা; খাজরাজ গোত্রের নেতা আমর নাজ্জারির মেয়ের। প্রথম দেখাতেই সালমাকে তিনি পছন্দ করে ফেলেন এবং খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ের প্রস্তাবও দেন।

     মক্কার কুরাইশ বংশের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা আব্দে মান্নাফের পুত্র হাশেমকে বাবা আ’মর খুব ভালো করেই চিনতেন। তারাও একই কুরাইশ বংশীয়, তবে ভিন্ন গোত্রের, বহুদিন আগে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এসে বসতী গেড়েছেন। 

    নিজ বাবার মাধ্যমে প্রস্তাব পেয়ে সালমা শর্ত দিয়েছিলেন, তিনি বিয়ে করতে পারেন এক শর্তে, সেটা হলো, তার ব্যবসা করা বা না করার অধিকার অক্ষুণœ থাকবে, এ ব্যাপারে হাশেম বা তার পরিবারের কেউ কোনরকম কর্তৃত্ব ও প্রভাব খাটাতে পারবেন না। তার অর্জিত সম্পদের উপরে নিজের একক কর্তৃত্ব বজায় থাকবে,  হাশেম কোনরকম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। 

   সকল শর্ত বিনাদ্বিধায় মেনে নিয়েই হাশেম সালমাকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন মক্কায়। সেই হাশেমও একবার সিরিয়ায় তার ব্যবসায়ীক বহর নিয়ে গিয়ে সেখানেই ইন্তেকাল করেন, বর্তমান ফিলিস্তিনের গাজায় তার কবর রয়েছে।

  বাণিজ্য সফরে কিংবা অন্য কোন কারণে সফরে গিয়ে এভাবে মৃত্যুবরণ করাটা সে সময় অতি সাধারণ ঘটনা ছিল। এর কারণও ছিল খুবই সাধারণ ও বোধগম্য। পথে কোন ডাকাতদলের হাতে পড়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা তো ছিলই। তবে বড় কাফেলা যেহেতু নিজেদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা রাখতো, তাই তারা ডাকাতদলের হাত থেকে নিরাপদই থাকতো। কিন্তু মরুভূমিতে পথ হারিয়ে ফেলা, কিংবা পানির উৎস হারিয়ে ফেলা বা মরুঝড়ে পড়ে পথ ভূলে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে মৃত্যু অনেকটাই অবধারিত ছিল। 

    আরও একটা বিষয়, আমরা যারা ইতোমধ্যেই মরুভূমিতে সফর করেছি, যারা করেছেন কিংবা আগামিতে যারা সফর করবেন, সকলেই সম্ভবত এ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন বা হবেন যে, যে মরুভূমিতে দিনের বেলায় প্রচন্ড উত্তাপ থাকে, সেই মরুভূমিতেই রাতের বেলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। রাতের বেলা, বিশেষ করে ভোর রাতের দিকে কখনও কখনও হঠাৎ করেই বেশ ঠান্ডা পড়ে। এরকম আকষ্মিকভাবে গরম ও ঠান্ডার মুখোমুখি হয়ে যাত্রাপথে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ নিবন্ধকার নিজেও সেরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন একাধিকবার।

   এখনও, এই আধুনিক যুগেও শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত উন্নত যান বাহন, পোশাক পরিচ্ছদ, শীত নিবারণী বস্ত্র ও তাঁবু’সহ নানারকম সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান থাকা সত্তেও এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে দেখা যায় প্রায়শই। প্রায়শই অনেকে যাত্রাপথে কিংবা যাত্রাশেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আজ কাল অত্যাধৃুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও উন্নত পথ্যের কারণে এরকম অসুস্থতার ক্রমাবনতি কিংবা অকাল মৃত্যু ঠেকানো গেলেও সেকালে এরকম কোন সুযোগই ছিল না। 

   আব্দুল্লাহ বাণিজ্যে যাবার কিছুদিনের মধ্যেই মা আমিনা টের পান যে তিনি অন্তস্বত্তা হয়ে পড়েছেন। নিজের মা তো কাছে ছিলেন না। শ্বশুর বাড়ির আরও একজন নারী ছিলেন যার সাথে মা আমিনার ঘনিষ্ঠতা ছিল, তিনি হলেন ননদ, স্বামী আব্দুল্লাহর জমজ বোন, উম্মে হাকিম বায়জা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব। কিন্তু উম্মে হকিম দূরে; তাঁর শ্বশুর বাড়িতে। আর এ দু:সময়ে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী যে কিশোরী মেয়েটা, দাসী তো নয়, যেন, আপন মায়ের পেটের বোন! খুব কাছের সেই উম্মে আইমানকেই সর্বপ্রথম খবরটা দিলেন। (চলবে, সংক্ষেপকৃত)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক।          

Post a Comment

0 Comments