Recent Tube

মরুভূমির হাতছানি -২৭। মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী

                          হজ্জ ভ্রমণ '১৭

              মরুভূমির হাতছানি  ;
                                   পর্ব-২৭;

এখানে বলে রাখি হজ্জ বা উমরার তাওয়াফের সময় ইজতেবা করতে হয় ।  ইজতেবা হল ইহরামের গায়ের চাদরকে ডান বগলের নিচে দিয়ে চাদরের উভয় মাথাকে বাম কাঁধের ওপরে ফেলানো। এটা করা সুন্নাত। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত।

পাশাপাশি তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করতে হয় ।  রমল হল তাওয়াফের সময় মুজাহিদের মতো বীরদর্পে দুই কাঁধ দুলিয়ে একটু দৌড়ানোর ভঙ্গিমা করা।

  রমলের একটি অন্তর্নিহিত কারণ রয়েছে । 
আর তা হল মক্কার মুশরিকরা বলাবলি করতে লাগলো যে, ইয়াসরিবের (মদিনার) আবহাওয়া মুসলমানদেরকে দুর্বল ও রুগ্ন করে ফেলেছে। মুশরিকদের এই অপবাদ মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নির্দেশ দেন এবং তা নিয়মে পরিনত হয়ে যায় । 

   তবে নফল  তাওয়াফ করার সময় রমল বা ইযতিবার প্রয়োজন নেই। 
আলহামদুলিল্লাহ, সহী সুন্নাহ অনুসরণের ভিত্তিতে তাওয়াফ পূর্ণ করে মাক্কামে ইব্রাহীমের পেছনে দুই রাকায়াত ওয়াজিবুত তাওয়াফ সালাত শেষ করে মহান অাল্লাহর শুকরিয়া অাদায় করলাম  । এই দুই রাকায়াত সালাত মাক্বামে ইব্রাহীমের পেছনে পড়া ভাল । মাক্বামে ইব্রাহীমে জায়গা না পেলে হারাম শরীফের যে কোন জায়গায় পড়া যায়।  তবে অবশ্যই তা পড়তে হবে । 
ওয়াজিবুত তাওয়াফের সালাত অাদায় করে চলে গেলাম জমজম কূপের কাছে । এখন অার জমজম কূপ দেখা যায়না । অাগেকার দিনে হাজীরা জমজম কূপ দেখতে পারতেন।  বর্তমানে এই কূপের মুখ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

কা'বাঘরের পাশেই জমজম কূপে সাথে লাইন করে দেয়া আছে।  স্থাপন করা হয়েছে পর্যাপ্ত টেপ। 

    বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন সৌদের হাতে  জমজম কূপ আধুনিক রূপ নিয়েছে। কূপের পূর্ব ও দক্ষিণে পানি পান করানোর জন্য দুটি স্থান নির্মাণ করেন তিনি। দক্ষিণ দিকে ছয়টি এবং পূর্ব দিকে তিনটি ট্যাপ লাগান। কাবাঘরের ২১ মিটার দূরে অবস্থিত কূপটি থেকে ২০ লক্ষাধিক ব্যারেল পানি প্রতিদিন উত্তোলিত হয়। কূপটি বর্তমানে আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে। কূপের পানিবণ্টনের জন্য ১৪০৩ হিজরিতে সৌদি বাদশাহর এক রাজকীয় ফরমান অনুযায়ী হজ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ইউনিফায়েড ‘জামাজেমা দপ্তর’ গঠিত হয়। এই দপ্তরে একজন প্রেসিডেন্ট, একজন ভাইস প্রেসিডেন্টসহ মোট ১১ জন সদস্য ও পাঁচ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন।

     জমজমের টেপের পাশে দাঁড়িয়ে পরম তৃপ্তি সহকারে ইচ্ছামত পেট ভরে জমজমের পানি পান করলাম । 
আর মনে মনে পড়তে থাকলাম '' ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ, ওয়া রিজকান ওয়াসিয়া, ওয়া শিফাআন মিন কুল্লি দা-ইন।’

     হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’ (দারা কুতনি : ৪৬৬)

   মা-য়ে জমজম. পান করার নিয়ম হল উপরে বর্ণিত দোয়া পড়া, দাঁড়িয়ে পান করা ও তিন শ্বাসে পান করা। 

 জমজমের পানির ফজিলত এবং তাঁর উৎস সম্পর্কে 
 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান করো, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৩)
অলৌকিকতায় ভরা জমজম কূপের পানি নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের বিষ্ময়েরও কোন কমতি নেই। 
বিজ্ঞানী মাশারো ইমোটো জমজমের পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছেন, ‘জমজম পানির মতো গুণ ও বিশুদ্ধতা পৃথিবীর অন্য কোনো পানিতে পাওয়া যাবে না।’

তিনি জমজমের পানি পরীক্ষা করতে নানো নামের প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এর দ্বারা জমজম পানির ওপর গবেষণা করে দেখতে পান যে যদি জমজম পানির এক ফোঁটা সাধারণ পানির এক হাজার ফোঁটায় মিশ্রিত হয়, তবু সাধারণ পানি জমজম পানির সমান গুণ লাভ করতে পারবে না। জমজম পানির প্রতি ফোঁটায় এই পরিমাণ খনিজ পদার্থ রয়েছে, যা অন্য কোনো পানিতে পাওয়া যাবে না। তিনি অন্য আরো কিছু পরীক্ষা করে দেখতে পান, জমজম পানির গুণ বা উপকরণ পরিবর্তন করা যায় না। এমনকি তিনি জমজম পানির পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করেন। কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি, সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ ছিল পানি।

  তিনি আরো দেখতে পান, যদি নিয়মিত এই পানির ওপর কোরআন পাঠ করা হয়, তাহলে এটি সব ব্যাধির চিকিৎসার ক্ষমতা লাভ করে। সুবহান আল্লাহ! নিশ্চয়ই আল্লাহর এটি একটি বিশেষ কুদরত।
(গবেষণা তথ্য -কালের কন্ঠ) 
  
 কিভাবে সৃষ্টি হলো এই বিষ্ময়ভরা জমজম কূপ তা নিয়ে লিখবো আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ
---------------------------------------------------------------  
লেখকঃ  ইসলামিক আর্টিকেল  লেখক  ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।    

Post a Comment

0 Comments