Recent Tube

দাইয়ুস কি ও কারা এবং তাদের পরিণতি কি? শামীম আজাদ।

 দাইয়ুস কি ও কারা এবং তাদের পরিণতি কি?
------------------------------------------------  

দাইয়ুস (دَّيُوْثُ) কাকে বলে ?

ঐ ব্যক্তিকে "দাইয়ুস" (دَّيُوْثُ) বলে - যে তার স্ত্রী'কে ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে বেপর্দা, অশ্লীল বেহায়াপনা কাজ ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয় বা সুযোগ করে দেয় এবং সকল শরীয়াহ বিরোধী কাজকে মেনে নেয়। 

"দাইয়ুস" জাহান্নামী এবং কবিরা গুনাহকারী।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন :
لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ
‘দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।
নাসাঈঃ ২৫৬২, আহমাদ, মিশকাতঃ ৩৬৫৫; সহীহুল জামেঃ ৩০৫২

সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)! দাইয়ূস কে? উত্তরে রাসুলূল্লাহ (সাঃ) বললেন,
الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ
“ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ূস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।” (মুসনাদ আহমদ, নাসাঈ)

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার পরিবারে আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোন তৎপরতা অবলম্বন করে না বরং উপেক্ষা করে চলে।’ 

"আপন স্ত্রী-সন্তানকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয়া" কবিরা গুনাহ।

রাসুল(সাঃ) এর বাণী 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمْ اَلْجَنَّةَ مُدْمِنُ الخَمْرِ وََالعَاقُّ وَالدَّيُوْتُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন। 
(১) সর্বদা মদপানকারী, 
(২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ও 
(৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি(দাইয়ুস) যে নিজ স্ত্রীকে বেপর্দা, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার করতে সুযোগ দেয়।
আহমাদঃ ৫৮৩৯, নাসাঈ, মিশকাত ৩৬৫৫

"দাইয়ুসদের পরিণতি"

যার স্ত্রীর নিকট পর-পুরুষ প্রবেশ করে, অথচ সে কিছুই মনে করে না বরং চুপ থাকে, সে ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয়।

   ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেছেনঃ
‘দাইয়ুস’ সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’।
যাহাবী, কিতাবুল কাবায়েরঃ ১/৫০ পৃঃ

 দাইয়ুস ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ
‘দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।
নাসাঈঃ ২৫৬২, আহমাদ, মিশকাতঃ ৩৬৫৫; সহীহুল জামেঃ ৩০৫২

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلاثٌ لا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ : الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ ، وَالدَّيُّوثُ ، وَرَجُلَةُ النِّسَاءِ
“তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস এবং পুরুষ বেশধারী নারী।” 
সহীহুল জামে ৩৬৩

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسَرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ وَالرَّجْلَةُ مِنَ النِّسَاءِ وَمُدْمِنُ الْخَمْرِ.

আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (১) যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেই। (২) পুরুষের বেশধারী নারী। (৩) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী। 
তাবরাণী, তারগীব হা/৩৩৮১)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمْ اَلْجَنَّةُ مُدْمِنُ الخَمْرِ وََالعَاقُّ وَالدَّيُوْتُ الَّذِيْ يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ.

 ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করেছেন। (১) সর্বদা মদপানকারী, (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ও (৩) পরিবারে বেপর্দার সুযোগ দানকারী (দায়ূছ)’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬৫৫)।

عَنِ ابنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم  وثَلاثَةٌ لا يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ العاقُّ لِوَالِدَيْهِ والمُدْمِنُ الخَمْرَ والمَنَّانُ بِما أعْطَى

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “---আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না; পিতা-মাতার নাফরমান ছেলে, মদপানে অভ্যাসী মাতাল এবং দান করার পর যে বলে ও গর্ব করে বেড়ায় এমন খোঁটাদানকারী ব্যক্তি।” (আহমাদ ৬১৮০, নাসাঈর কুবরা ২৩৪৩, হাকেম ২৫৬২, সহীহুল জামে’৩০৭১)  

অন্য বর্ণনায় আছে,

ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ  تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمْ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخُبْثَ 
“তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। অব্যাহতভাবে মদ পানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্যজন এবং এমন বেহায়া, যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।” (আহমাদ ৫৩৭২, ৬১১৩)
 

"দায়িত্বশীলতা"

রাসূল (সাঃ) এর বাণী 

وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: « كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ: الإمَامُ رَاعٍ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ في أهلِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مال سيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ » متفقٌ عَلَيْهِ

ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’
বুখারী ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযী ১৭০৫, আবূ দাউদ ২৯২৮, আহমাদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০, রিয়াদুস সলেহিনঃ ৬৫৮

মন্তব্যঃ
"দাইয়ুস" ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী পরিবারের অন্য সদস্যরা অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে। উপরের হাদিসটির ব্যাখ্যা ব্যাপক। এখানে মুল হল অশ্লীলতা। যে তার নিজ ঘরে ইসলাম অনুশাসনে শিথিলতা করে, মেয়েদের পর্দা করতে উৎসাহ দেয় না, আদেশ করেনা, ঘরে সিনেমা, গান-বাজনা দিব্যি চলে, এর কোন প্রতিবাদ করে না; যে এই রকম সকল শরীয়াহ বিরোধী কাজকে মেনে নেয় - সেই হল 'দাইয়ুস'।
আর 'ব্যভিচার' হল তার মাঝে একটি। আমাদের সমাজের অনেক হাজ্বী-গাজী, দাড়ি-টুপিওয়ালা পাঁচ (৫) ওয়াক্ত নামাজী লোক দেখা যায়! কিন্তু তাঁদের স্ত্রী ও মেয়েদেরকে দেখা যায় রাস্তা-ঘাটে বে-পর্দা হয়ে বের হতে! কী কাজে আসবে তাঁর এই পরহেজগারিতায়! দাইয়ুস হয়ে তাকে যেতে হবে জাহান্নামে! 

কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন:

ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ  تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمْ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخُبْثَ 
“তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। অব্যাহতভাবে মদ পানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্যজন এবং এমন বেহায়া, যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।” 
আহমাদ ৫৩৭২, ৬১১৩, সাহীহুল জামে: ৩০৪৭

দাইয়ুসের গুনঃ

অনেককেই দেখা যায়, তারা নিজেদের বউ বা স্ত্রী'র শিংওয়ালা সুন্দর ছবি আপলোড করে সবাইকে দেখার জন্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। যারা নিজেদের বউ বা স্ত্রী'কে সাজিয়ে গুজিয়ে পর পুরুষের উপভোগের জন্য খোলা ময়দানে বা রাস্তা ঘাটে বেড়াতে পাঠায় বা মনোরঞ্জনের জন্য পাঠায় তারা 'দাইয়ুস'।
অনেক মুসলিম পুরুষকে দেখা যায়, তারা তাদের বউকে হিজাব নিকাব পরিয়ে বাইরে নিয়ে যায়; কিন্তু বুকের উপরের কাপড় উঠানো থাকে, ব্লাউজের নিচে হালকাভাবে সব দেখা যায়- যার জন্য পর পুরুষেরা তাদের বউদের উচা সিং দুটো দেখে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী কে? আপনার বউ না কি আপনি?

আবার অনেক পরহেজগার পিতা/অভিভাবক তার পরিবারের অনেক অশ্লীল কাজ দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন! বা অনেকে ছোট-খাট ব্যাপার মনে করে এইগুলো কে উড়িয়ে দেন! না কক্ষনো না; যে এই গুলোকে ছোট-খাট বিষয় মনে করে সেই পরহেজগার পিতা/অভিভাবক সফলকাম হতে পারবেনা। তাই চলুন, আমরা সেই সব পিতা/অভিভাবকদের উপরোক্ত হাদীসটি জানিয়ে দেই। এবং তাদের দায়্যিত্ব সম্পর্কে সজাগ করে দেই।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত নসিব করুন। আমীন।

"দাইয়ুস" বিষয়ে কিছু কথা  

আপনি কী "দাইয়ুস" ব্যক্তি দেখেছেন ?
বেপর্দা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, ভ্যালেন্টাইন ডে, মাদকতা ও অপরাধ একসূত্রে বাধা। যুবক-যুবতীদেরকে অবাধ মেলামেশা ও বেহায়াপনার সুযোগ দিবেন, অথচ তারা অশ্লীলতা, ব্যভিচার, এইডস, মাদকতা ও অপরাধের মধ্যে যাবে না, এরূপ চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য অপরাধের সাথে অশ্লীতার পার্থক্য হলো কোন একটি উপলক্ষ্যে একবার এর মধ্যে নিপতিত হলে সাধারণভাবে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীরা আর এ থেকে বের হতে পারে না। বরং ক্রমান্বয়ে আরো বেশি পাপ ও অপরাধের মধ্যে নিপতিত হতে থাকে। কাজেই নিজে এবং নিজের সন্তান ও পরিজনকে সকল অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুন।

মহান আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
"তোমরা নিজেরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। যার ইন্দন হবে মানুষ ও পাথর; যার উপর নিয়োজিত রয়েছেন কঠোর হৃদয় সম্পন্ন ফিরিশতাগণ, তারা আল্লাহ যা নির্দেশ করেন তা বাস্তবায়নে অবাধ্যতা করে না, আর তাদের যা নির্দেশ প্রদান করা হয়, তা-ই তামিল করে।"
সূরা আত-তাহরীমঃ ৬৬:৬

অপরদিকে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন:

وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: « كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ: الإمَامُ رَاعٍ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ في أهلِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مال سيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ » متفقٌ عَلَيْهِ

ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’
বুখারী ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯, তিরমিযী ১৭০৫, আবূ দাউদ ২৯২৮, আহমাদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০, রিয়াদুস সলেহিনঃ ৬৫৮

আপনি যদি নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবী করেন তাহলে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহ মেনে চলবেন।
উপরের কুরআন ও হাদিসের কথাগুলো যদি নিজের সাথে মিলিয়ে নেন, তাহলে কি দেখতে পাবেন?
আপনি কি সঠিক ভাবে আপনার দায়িত্ব পালন করছেন??
আপনার পরিবারকে সঠিক নিয়মে পরিচালনা করছেন কি?
আমি জোর গলায় বলতে পারি, বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ আমরা নিজেরাতো সঠিক নিয়মে চলছি না বরং পরিবারকেও আমরা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছি।
আপনি শিক্ষক হয়ে কি আপনার ছাত্র ছাত্রীদের সঠিক শিক্ষা দিতে পেরেছেন?
না পারেননি!

আপনি কী "দাইয়ুস"???

আপনি কি জানেন "দাইয়ুস" কাকে বলে?
তা হলে শুনুন:
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বারংবার বলেছেন:

'তিন ব্যক্তি, যাদের জন্য মহান আল্লাহ তাআ'লা জান্নাত হারাম করেছেন; তারা হলো:

مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخُبْثَ
মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইয়ুস- যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়।'
মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯

অশ্লীলতা প্রসারের ভয়ঙ্কর পাপ ছাড়াও ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা কি শুনেছেন?
তাহলে শুনুন:
মহান আল্লাহ বলেছেন:

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ 
"যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।"
সূরা নুরঃ ২৪:১৯

অতএব, সাবধান হউন! সতর্ক হউন!
আপনি কি আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতা করবেন?
আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে আপনি কি জয়ী হতে পারবেন?
কখন কিভাবে আপনার ও আপনার পরিবারের জীবনে "যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি" নেমে আসবে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না। আপনার রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্য পথ দেখুন। অন্য বিকল্প চিন্তা করুন। তবে কখনোই অশ্লীলতার প্রসার ঘটে এরূপ কোন বিষয়কে আপনার স্বার্থ উদ্ধারের বাহন বানাবেন না। শিক্ষক সেজেছেন শিক্ষকের মত আচরণ শিখুন! বাড়ি বাড়ি ভ্যালেন্টাইন ডে এর কার্ড, একটি মিষ্টি, একটি সামুচা, একটি গোলাপ দিয়ে আপনি নিজেকে কি হিসাবে পরিচিত করতে চান?
আপনার রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক বা অন্য কোন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্য পথ দেখুন।

নিজেকে কেন "দাইয়ুস" নামে পরিচিত করতে চান?

আপনি কি জানেন না আল্লাহর রাসুল বারংবার বলেছেন:
لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ
'দাইয়ুস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না', 

তাই সময় থাকতে সাবধান হউন! সতর্ক হউন!
আপনাদের কাছে অনুরোধ, শিক্ষক হিসেবে ছাত্র- ছাত্রীদের আদব-কায়দা তথা ইসলামী শিষ্টাচার এবং দুনিয়ার সুষ্ঠ জীবন যাপনের (পরিচালনার) প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দিন; শিক্ষক হিসেবে আপনারও দায়িত্ব আছে আল্লাহর রাসূলও (সাঃ) তাই বলেছেন। তা না হলে কোন মুসলমান আপনাদের জানাজা পরবেনা।

পিতার প্রতি নসিহত:
ওহে পিতা! তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার কন্যার ব্যাপারে দুনিয়াদারীর চেয়েও বেশী গুরত্ব দাও। আর তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না, যাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেছেন:

لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ
"দাইয়ুস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"

মাতার প্রতি নসিহত:
ওহে মাতা! সাবধান থেকো, তোমার মেয়ের দিকে খেয়াল রেখো, তার বেহায়াপনার জন্য তোমাকেও জবাব দিতে হবে। আল্লাহ আপনাদের আমাদের সবাইকে সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে দূর থাকতে বলেছেন।
পর্দা করা মানে হলো আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করা। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন:

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
"আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল কোন আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।"
সূরা আহযাবঃ ৩৩:৩৬

বোনদের প্রতি নসিহত:

হে আমাদের বোনেরা! অভিশাপ থেকে বাঁচ। কারণ, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
'শেষ যুগে অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু নারী হবে, যারা কাপড় পরেও উলঙ্গ থাকবে। তারা অভিশপ্ত।

و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ مُسْلِمِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ قَالَ نِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مَائِلَاتٌ مُمِيلَاتٌ لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا وَرِيحُهَا يُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ خَمْسِ مِائَةِ عَامٍ

আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, কাপড় পরিহিতা উলঙ্গিনী এবং পুরুষদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকারিনী স্ত্রীলোকগণ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, বরং তারা বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ ঐ সুগন্ধ পাঁচশত বৎসরের দূরত্ব হতে অনুভূত হয়। 
মুসলিম ২১২৮, মুয়াত্তা ইমাম মালিকঃ ১৬৩৬

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবেনা অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। (ই.ফা.  ৫৩৯৭, ই.সে. ৫৪১৯) মুসলিমঃ ৫৪৭৫

হে বোনেরা! বেপর্দা হল ইবলীশের সুন্নাত; আর বেপর্দা ঘৃণিত জাহেলী রীতি।

মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
"তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।"
সূরা আহযাবঃ ৩৩

আর রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ
'মূর্খ যুগের সব বিষয় আমার দু'পায়ের নীচে।'
মুসলিম ১২১৮, ২৮৪০, আবু দাঊদ ১৯০৫, নাসায়ী ২৭৬১, ইবনু মাজাহ ৩০৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৪৭০৫, দারিমী ১৮৯২, মিশকাতুল মাসাবিহঃ ২৫৫৫

অতএব, সাবধান হোন! সতর্ক হোন! অশ্লীলতার প্রসার ঘটে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। শরীর দেখিয়ে সুপার স্টার হওয়াতে ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। তাই আসুন, আল্লাহর ইবাদত করি এবং আখেরাতের সুপার স্টার হই। আমি যদি নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবী করি তাহলে অবশ্যই কুরআন হাদীস মেনে চলবো। উপরের কুরআন ও হাদীস গুলো যদি নিজের সাথে মিলিয়ে নেই তাহলে কি দেখতে পাবো ? আমি কি সঠিক ভাবে আমার দায়িত্ব পালন করছি ? আমার পরিবার কে সঠিক নিয়মে পরিচালনা করছি ? আমি জোর গলায় বলতে পারি, বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ আমরা নিজেরাতো সঠিক নিয়মে চলছি না বরং পরিবারকেও আমরা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছি।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং হেফাযত করুন।
আমীন।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল,প্রবন্ধ  লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।          

Post a Comment

0 Comments