Recent Tube

আবারো অস্হির পাকিস্তানের রাজনীতি; ইবনে যুবাইর

  
 আবারো অস্হির পাকিস্তানের রাজনীতি;

 পাঠক ছবির দিকে লক্ষ্য করুন।বিগত বছরের খলনায়ক যিনি ইমরান খানের পতনের ডাক দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিলেন। তিনি আজও আছেন।
যদি সময় থাকে তবে পুরো লেখাটি পড়ুন,মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে অস্হিরতা সৃষ্টিকারি অনেক মহারথির কথা জানতে এই লেখা হয়তো আপনাকে সাহায্য করতে পারে।  

 রোববার পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো একজোট হয়ে সারা দিন ধরে সারাদিন ধরে আলোচনা করল। সেই সম্মেলন থেকেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ইস্তফা দাবি করা হয়। ঠিক হয়েছে, বিরোধী দলগুলো রাজনীতিতে সেনা প্রভাব ও প্রাধান্যের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন করবে। আগামী মাস থেকে শুরু হবে আন্দোলন।এই বিরোধী জোটের নাম হলো পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট। 

তাদের দাবি, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনার প্রভাব চলবে না। নতুন দায়বদ্ধতা আইন আনতে হবে এবং ইমরান খানকে ইস্তফা দিতে হবে। ইমরানের ইস্তফা চাওয়ার কারণ,তিনি নির্বাচনে জালিয়াতি করে জিতেছিলেন। আর সেই জালিয়াতিতে সাহায্য করেছিল সেনা বাহিনী।

২০১৯ সালের কথা।সে সময় আমি একটি লেখা লিখেছিলাম।যা বর্তমান পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক বলে তা নিম্নে তুৃলে ধরলাম,-

২০১৯-এর প্রথম দিক থেকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি অস্হির পরিবেশ সৃষ্টি করেন মাওলানা ফজলুর রহমান।
একই সালে ২৭ মার্চ ইসলামাবাদে আজাদি মার্চের ডাক দিয়ে আলোচনায় আসেন জমিয়ত উলামায়ে-ই ইসলাম প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান। 
সে সময় 'সরকার পতনের আগ পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
সাবেক ক্রিকেট কিংবদন্তি ইমরান খানের সরকার সব দিক দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই নতুন নির্বাচন দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।তাই তাকে পদত্যাগ করতেই হবে,-এই দাবি ফজুলুর রহমানের।
পাঠক,মাওলনা ফজলুর রহমান ইমরানকে 'সবদিক দিয়ে ব্যর্থ'-আখ্যা দিয়ে তার পতন ঘটাতেই হবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।কিন্তু কেন? 
আরো লক্ষ্য করুন,ফজলুর রহমান ইমরানের বিরুদ্ধে  এই অভিযোগ তুললেন তখন,যখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইমরান খান কাশ্মির তথা বিশ্ব মুসলিমদের অধিকার নিয়ে সরব হলেন।সাম্প্রতিক কাশ্মিরে ভারত সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিল করা নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চরম একটা উত্তেজনাকর পরিস্হিতি বিরাজ করছে।
কাশ্মিরিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগে পিছুপা হবেন না বলে ইমরান খান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এবং আফগানিস্তান থেকে বহিঃশক্রু তথা ন্যাটোর সামরিক বাহিনী দেড় যুগ ধরে তালেবানদের সাথে কথিত সন্ত্রাস দমন নামে যুদ্ধরত ছিল,সেখানে একটি শান্তিচুক্তি মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটিতে স্হিতিশিল পরিবেশ ফিরিয়ে আনাতে সর্বাত্নক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেখুন,যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ও ইসরাইলের ধারণা ছিল, তালেবানকে পরাজিত করে আফগানিস্তানে একটি নামমাত্র দেশীয় বাহিনী গঠন করে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য থাকবে ভারতের সামরিক ছত্রছায়া।
তেমনি যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর একটি বাহিনী এখানে সব সময় উপস্থিত থাকবে। ফলে এক দিকে চীনকে সামাল দেয়া যাবে, অন্য দিকে পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানকে চাপে রাখা যাবে। পাকিস্তান তখন চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হবে। কখনো অন্যথায় করতে চাইলে ভারতের মাধ্যমে তা সামাল দেয়া যাবে এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ভূমিকা পালনের ইচ্ছা বাদ দেবে এবং নিজেদের সীমান্তের মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ হয়ে থাকবে। এক দিকে ভারত, অন্য দিকে আফগান সীমান্ত নিয়েই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে ব্যস্ত থাকতে হবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো পাকিস্তানের সামরিক সহায়তা পাবে না এবং ইসরাইলের সামনে হয়ে থাকবে অসহায়। এ দিকে, গোয়াদর বন্দর পর্যন্ত চীনের পৌঁছানোর স্বপ্ন থেকে যাবে স্বপ্নই। আর আফ্রিকায় বিনিয়োগের কোনো সুফল পাবে না চীন।
অন্য দিকে, রাশিয়া ককেশাসের দিক থেকে সিরিয়া পর্যন্ত নিজের স্বার্থ নিরাপদ করলেও আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতির কারণে পিছু হটতে বাধ্য হবে এবং ভবিষ্যতে ইসরাইল যখন মুসলিম ‘উগ্র’পন্থীদের দমনের বাহানায় মধ্যপ্রাচ্যে নিজের সীমানা সম্প্রসারিত করতে থাকবে, তখন রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা তার থাকবে না। এ ছাড়া, চীনের জ্বালানি চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগ মেটানো উপসাগরীয় দেশগুলোর তেলসম্পদ চলে যাবে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে; ফলে চীন বেকায়দায় পড়বে। অপর দিকে, মধ্যপ্রাচ্যে আস্তে আস্তে প্রভাব বিস্তারকারী তুরস্কের পক্ষে শুধু নিজের সীমান্তের মধ্যে সীমিত হয়ে থাকা নয়, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক আগের মতোই স্বাভাবিক করা ছাড়াও উপায় থাকবে না। অথবা কোনো ‘সামরিক বিপ্লবের মাধ্যমে’ সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে। এই পরিকল্পনা নিয়েই আফগানিস্তানে এসেছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর আড়ালে জায়নবাদীদের সামরিক জোট। 
ভারতের হিসাব ছিল অতি সাম্প্রতিক আফগানিস্তান হয়ে যাওয়া নির্বাচনে -তালেবানরা সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে,-  কারচুপি করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং তার গ্রুপ আগামী চার বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে পারবে। ভারতের ক্ষমতাসীন আর ঘানির গ্রুপের চিন্তায় যেই মিল রয়েছে, সেটা হলো তারা উভয়েই তালেবানদেরকে ক্ষমতা কাঠামো থেকে দূরে রাখতে চায়। এ জন্য দরকারী সবকিছুই তারা করতে রাজি। ভারত সাম্প্রতিককালে ঘানির সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ঘানির গ্রুপে আছেন দেশের নিরাপত্তা জার আমরুল্লাহ সালেহ – যার নীতি সিদ্ধান্ত সবকিছুই ইসলামাবাদ(পাকিস্তান)বিরোধী, যেটার কারণে নয়াদিল্লী কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাপারে কঠোর অবস্হান নিতে পেরেছে।

ভারত,ইসরাইল,আমেরিকার মদদপৃষ্ঠ মাওলানা ফজলুর রহমানের এই কথিত আজাদি তথা ইমরান পতনের আন্দোলনে যদি ইমরান খানের পতন হয় তবে কাশ্মিরিদের প্রতি জুলুম নির্যাতনের ভয়াবহতা নতুনভাবে রুপ নেবে,তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে চিরদিনের মত,তালেবান শান্তি আলোচনার সমাপ্তি ঘটবে এবং সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল ফিলিস্তিনের উপর আগ্রাসী-সম্প্রসারণনীতি ভয়াবহ রুপ নেবে,রক্তে রঞ্জিত হতে থাকবে ফিলিস্তিনের মাটি ,কাতার,তুরস্ক,ইরানের প্রতি ইসরাইল ও আমেরিকার দাদাগিরি বহুগুণে বেড়ে যাবে।
আজকে আবার ইমরান পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়ার কথা কোত্থেকে আসল?
অতি সাম্প্রতিক পাকিস্তানের সেনা প্রধান সৌদি সফরে যান।বিন সালমানের পক্ষ থেকে সেনা প্রধানকে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়ার অফার করা হয়।বিনিময় শুধু ইমরানের পতন নিশ্চিত করতে বলা হয় তাকে।সেনা প্রধান সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।তারপরই মাওলনা ফজলুর রহমানগং পুরোনো কাসুন্দি নিয়ে ময়দানে হাজির।হ।
---------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।        

Post a Comment

0 Comments