Recent Tube

খেলাফত ও রাজতন্ত্র ৫ম পর্ব সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী রহঃ, ৷ সম্পাদনায়: শামীম আজাদ ।

খেলাফত রাজতন্ত্র 
         ৫ম পর্ব

ষোলঃ বৈদেশিক রাজনীতির মূলনীতি

ইসলামী রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি (Foreign Policy) সম্পর্কে কুরআন মাজীদে যেসব হেদায়েত দেয়া হয়েছে, তা এইঃ

(ক) চুক্তি -অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। চুক্তি ভঙ্গ করা একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়লে সে ব্যাপারে দ্বিতীয় পক্ষকে পূর্বাহ্নে অবহিত করতে হবেঃ

-----------------------------------  

চুক্তি-অঙ্গীকার পুরো করো, চুক্তি সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
------------------------------------------  

আল্লার সাথে কৃত অংঙ্গীকার পূর্ণ করো, যখন তোমরা অংঙ্গীকার করো। পাকা-পোক্ত শপথ করার পর তা ভঙ্গ করো না। …. সে মহিলার মতো হয়ো না যে আপন শ্রম-মেহনত দ্বারা সূতা কেটে পরে তা টুকরো টুকরো করে ফেলে। এক জাতি অন্য জাতির চেযে বেশী ফায়দা হাসিল করার জন্য তোমরা নিজেদের কসমকে নিজেদের মধ্যে প্রতারণার মাধ্যম করো না। আল্লাহ এদ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন। কেয়ামতের দিন তিনি অবশ্যই তোমাদের মত বিরোধের রহস্য উন্মেচন করবেন।
--------------------------------------------  

দ্বিতীয় পক্ষের লোক যতক্ষন তোমাদের সাথে অঙ্গীকারে অটল থাকে, তোমরাও অটল থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকী-পরহেযগারদের পছন্দ করেন। -আত-তাওবাঃ ৭
-----------------------------------------  

মুশরিকদের মধ্যে তোমরা যাদের সাথে অঙ্গীকার করেছো, অতঃপর তোমাদের সাথে ওফাদারীতে তারাও ত্রুটি করেনি, তোমাদের বিরুদ্ধে কারো সাহায্যও করেনি, তবে তাদের অঙ্গীকার মেয়াদ পর্যন্ত পূর্ণ করো। -আত-তাওবাঃ৪

------------------------------------------------  

(আর যদি শত্রুর এলাকায় বসবাসকারী মুসলমানরা) তোমাদের কাছে সাহায্য চায়, তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। অবশ্য এমন কোন জাতির বিরুদ্ধে এ সাহায্য করা যাবে না, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে। -আল-আনফালঃ৪২
------------------------------------------  

কোন জাতির পক্ষ থেকে তোমাদের যদি খেয়ানত (চুক্তিভঙ্গ) এর আশংকা হয়, তা হলে (তাদের চুক্তি) তাদের প্রতি ছুড়ে মারো। অবশ্য সমতার প্রতি লক্ষ্য রেখে (তা করবে)। [অর্থাৎ তোমাদের এবং তাঁদের মধ্যে যে চুক্তি বা সন্ধি হয়েছিল, তা বাতিল হয়ে যাওয়ার খবর তাদেরকে দিয়ে দাও, যাতে তা বাতিল হওয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সমান হয়। আর তোমরা যদি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ কর, তখন অপর পক্ষ যেন এ ধারণায় না থাকে যে, তোমরা তাদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছ। (আল-জাসসাস, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৮৩] আল্লাহ নিশ্চয় খেয়ানতকারীকে পছন্দ করেন না। -আল আনফালঃ৫৮

(খ) কাজ-কর্মে বিশ্বস্ততা এবং সততাঃ
------------------------ 

তোমাদের শপথকে নিজেদের মধ্যে প্রতারণা-প্রবঞ্চনার মাধ্যম করো না। [অর্থাৎ প্রতারণা করার নিয়তে চুক্তি করবে না, যাতে অপর পক্ষ তো তোমাদের কসমের ভিত্তিতে তোমাদের পক্ষ হতে নিশ্চিত হয়ে যায় আর তোমাদের ইচ্ছা এই হয় যে, সুযোগ পেলে তোমরা লংঘন করবে। -ইবনে জারীর, ১৪শ খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১১২]

(গ) আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচারঃ
------------------------------------  

এবং কোন দলের শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটুকু ক্ষিপ্ত না করে, যাতে তোমরা না ইনসাফ করে বসো। ন্যায় বিচার করো, তা তাকওয়ার নিকটবর্তী। -আল-মায়েদাঃ ৮

(ঘ) যুদ্ধে নিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমূহের সীমারেখার মর্যাদাঃ
--------------------------------  

যদি তারা (অর্থাৎ দুশমনের সাথে মিলিত মুনাফেকেরা) না মানে, তাহলে তাদেরকে পাকড়াও করো; যেখানে পাও, তাদেরকে হত্যা করো। …. তাদেরকে বাদে, যারা এমন কোন জাতির সাথে মিলিত হয়েছে, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে। -আন-নিসাঃ ৯০

(ঙ) সন্ধিকামিতাঃ
----------------------------------- 

তারা যদি সন্ধির প্রতি ঝুঁকে পড়ে, তবে তোমরাও ঝুঁকে পড়।

(চ) দুনিয়ার বিপর্যয় সৃষ্টি এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্তিঃ

------------------------ 
যমীনে যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব-বাহাদুরী (প্রতিষ্ঠা করতে) চায় না বিপর্যয় সৃষ্টি করতে ; পরকালের নিবাস তো আমরা শুধু তাদের জন্যই নির্দিষ্ট করবো শুভ পরিণাম পরহেযগারদের জন্য।-আল-ক্বাসাসঃ৮৩

(ছ) শত্রুভাবাপন্ন নয়, এমন শক্তির সাথে বন্ধু সুলভ আচারণঃ

----------------------------------  

যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, তোমাদের নিবাস থেকেও তোমাদেরকে বের করেনি, তাদের সাথে সদাচরণ এবং ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে বারণ করেন না। ইনসাফকারীদেরকে আল্লাহ নিশ্চিত পছন্দ করেন।  আল-মুমতাহানাঃ৮

(জ) সদাচারীদের সাথে সদাচারঃ---  
-----------------------------------------  
এহসানের বিনিময় এহসান ছাড়া অন্য কিছু কি হতে পারে ?

(ঝ) যারা বাড়াবাড়ি করে, তাদের সাথে ততটুকু বাড়াবাড়ি করো- যতটুকু তারা করেছে।

---------------------------------------  

সুতরাং যারা বাড়াবাড়ি করে, তোমরাও তাদের সাথে ততটুকু বাড়াবাড়ি করো, যতটুকু তারা করেছে। এবং আল্লাকে ভয় করো নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। -বাকারাঃ ১৯৪

------------------------------------------------  

আর যদি প্রতিশোধ নিতেই হয় তবে ততটুকু, যতটুকু তোমাদেরকে উত্যক্ত করা হয়েছে। আর যদি ধৈর্য ধারণ করো, তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য তাই উত্তম। -আন-নাহালঃ ১২৬

------------------------------------------------  

আর অন্যায়ের বিনিময়ের ততটুকু অন্যায়, যতটুকু অন্যায় করা হয়েছে। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং শুদ্ধি করে নেয়, তার বিনিময় আল্লার যিম্মায়। আল্লাহ যালেমদের পছন্দ করেন না। নির্যাতিত হওয়ার পর যারা প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর যুলুম করে। যমীনে না-হক ঔদ্ধত্য করে। এসব লোকেদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। -আশ-শুরাঃ ৪০-৪২ যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব-বাহাদুরী (প্রতিষ্ঠা করতে) চায় না বিপর্যয় সৃষ্টি করতে ; পরকালের নিবাস তো আমরা শুধু তাদের জন্যই নির্দিষ্ট করবো শুভ পরিণাম পরহেযগারদের জন্য।-আল-ক্বাসাসঃ৮৩

(ছ) শত্রুভাবাপন্ন নয়, এমন শক্তির সাথে বন্ধু সুলভ আচারণঃ
------------------------ 

-যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, তোমাদের নিবাস থেকেও তোমাদেরকে বের করেনি, তাদের সাথে সদাচরণ এবং ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে বারণ করেন না। ইনসাফকারীদেরকে আল্লাহ নিশ্চিত পছন্দ করেন।  আল-মুমতাহানাঃ৮

(জ) সদাচারীদের সাথে সদাচারঃ

-------------------- 

এহসানের বিনিময় এহসান ছাড়া অন্য কিছু কি হতে পারে ?

(ঝ) যারা বাড়াবাড়ি করে, তাদের সাথে ততটুকু বাড়াবাড়ি করো- যতটুকু তারা করেছে।
------------------------ 
সুতরাং যারা বাড়াবাড়ি করে, তোমরাও তাদের সাথে ততটুকু বাড়াবাড়ি করো, যতটুকু তারা করেছে। এবং আল্লাকে ভয় করো নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। -বাকারাঃ ১৯৪

------------------------ 
আর যদি প্রতিশোধ নিতেই হয় তবে ততটুকু, যতটুকু তোমাদেরকে উত্যক্ত করা হয়েছে। আর যদি ধৈর্য ধারণ করো, তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য তাই উত্তম। -আন-নাহালঃ ১২৬,

------------------- 
 আর অন্যায়ের বিনিময়ের ততটুকু অন্যায়, যতটুকু অন্যায় করা হয়েছে। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং শুদ্ধি করে নেয়, তার বিনিময় আল্লার যিম্মায়। আল্লাহ যালেমদের পছন্দ করেন না। নির্যাতিত হওয়ার পর যারা প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর যুলুম করে। যমীনে না-হক ঔদ্ধত্য করে। এসব লোকেদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। -আশ-শুরাঃ ৪০-৪২

ইসলামী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

কুরআনে এ ষোলটি দফায় রাষ্ট্রের যে চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে, তার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো এইঃ

একঃ একটি স্বাধীন জাতি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণেদিত হয়ে মহান আল্লাহ রাবুল আলামিনের সামনে আত্মসমর্পন করবে, তাঁর অধীনে কর্তৃত্ব-সার্বভৌমত্বের পরিবর্তে খেলাফতের ভূমিকা গ্রহণ করে সে সব বিধি-বিধান এবং নির্দেশাবলী কার্যকরী করবে, আল-কুরআন এবং রাসূলের মাধ্যমে তিনি যা দান করেছেন। একটি স্বাধীন জাতির পক্ষ থেকে বুঝে শুনে এহেন ঘোষণার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র অস্তিত্ব লাভ করে।

দুইঃ সার্বভৌমত্বকে আল্লার জন্য বিশেষিত করার সীমা পর্যন্ত সে রাষ্ট্র থিয়াক্রেসী (Theacracy)-এর বুনিয়াদী দর্শনের সাথে একমত। কিন্তু সে দর্শন কার্যকরী করার ব্যাপারে থিয়াক্রেসী থেকে তার পথ ভিন্ন হয়ে যায়। ধর্মীয় যাজকদের কোন বিশেষ শ্রেণীকে আল্লার বিশেষ ক্ষমতার ধারক বাহক করা এবং ‘হিল ও আকদ’ এর সমস্ত ক্ষমতা এ শ্রেণীর হাতে ন্যাস্ত করার পরিবর্তে ইসলামী রাষ্ট্র দেশের সীমানার মধ্যে বসবাসকারী সমস্ত ঈমানদারকে (যারা স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে আত্মসমর্পণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ) আল্লার খেলাফতের ধারক-বাহক প্রতিপন্ন করে। ‘হিল ও আকদ’-এর চূড়ান্ত ক্ষমতা সামগ্রিক ভাবে তাদের হাতে ন্যস্ত করে।

তিনঃ রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠা, পরিবর্তন, পরিচালন, সম্পূর্ণভাবে জনগণের রায় অনুযায়ী হতে হবে- জমহুরিয়াতের এ নীতিতে ইসলামী রাষ্ট্র গণতন্ত্র (Democracy)-র সাথে একমত। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রের জনগণ লাগামহীন নয়। রাষ্ট্রের আইন-কানুন, জনগণের জীবন-যাপনের মূলনীতি, আভ্যন্তরীন এবং বৈদেশিক নীতি, রাষ্ট্রের উপায়-উপকরণ সব কিছুই জনগণের ইচ্ছানুযায়ী হবে, এমন নয়। এমনও হতে পারে না যে, যেদিকে জনগণ ঝুকে পড়বে, ইসলামী রাষ্ট্রও সেদিকেই নুয়ে পড়বে। বরং আল্লাহ-রাসূলের উর্ধ্বতন আইন তার নিজস্ব নিয়ম-নীতি, সীমারেখা, নৈতিক বিধি-বিধান এবং নির্দেশাবলী দ্বারা জনগণের ইচ্ছা-বাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে থাকে। রাষ্ট্র এমন এক সুনির্দিষ্ট পথে চালিত হয়, তার পরিবর্তন সাধনের ক্ষমতা-ইখতিয়ার, শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ- কারোই নেই। সামগ্রিকভাবে গোটা জাতিরও নেই সে ক্ষমতা-ইখতিয়ার। হ্যাঁ, জাতি যদি তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ঈমানের বৃত্ত থেকে দূরে সরে যেতে চায়, তা স্বতন্ত্র কথা।

চারঃ ইসলামী রাষ্ট্র একটি আদর্শভিত্তক রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্র পরিচালনা স্বভাবতই তাদের কাজ হতে পারে, যারা তার মৌলিক দর্শন এবং বিধি-বিধান স্বীকার করে। কিন্তু তা স্বীকার করে না- এমন যতো ব্যক্তিই সে রাষ্ট্র সীমায় আইনের অনুগত হয়ে বাস করতে রাজী হয়, তাদেরকে সে সব নাগরিক অধিকার পুরোপুরিই দেয়, যা দেয় রাষ্ট্রের আদর্শ এবং মূলনীতি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নাগরিকদেরকে।

পাঁচঃ তা এমন এক রাষ্ট্র, যা বংশ, বর্ণ, ভাষা এবং ভৌগলিক জাতীয়তার পরিবর্তে শুধু নীতি আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের মানবজাতির যে কোন সদস্য ইচ্ছা করলে সে সব মূলনীতি স্বীকার করে নিতে পারে; কোন প্রকার ভেদ-বৈষম্য ছাড়াই সম্পূর্ণ সমান অধিকার নিয়ে সে ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। এ আদর্শের ভিত্তিতে বিশ্বের যেখানেই কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে, নিশ্চিত তা হবে ইসলামী রাষ্ট্র, তা আফ্রিকায় হোক বা এশিয়ায়; সে রাষ্ট্রের পরিচালকমন্ডলী কালো হোক বা সাদা বা হরিদ্র। এধরনের একটি নিরঙ্কুশ আইনভিত্তিক রাষ্ট্রের বিশ্ব-রাষ্ট্রে (World state) রুপান্তরিত হওয়ায় কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলেও যদি এ ধরনের অনেক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাও হবে ইসলামী রাষ্ট্র। কোন জাতীয়তাবাদী দ্বন্দ-সংঘাতের পরিবর্তে সে সব রাষ্ট্রের মধ্যে পরিপূর্ণ ভ্রাতৃসুলভ সহযোগিতা সম্ভব। কোনও এক সময় তারা একমত হয়ে বিশ্ব-ফেডারেশন (World-federation) -প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

ছয়ঃ রাজনীতিকে স্বার্থের পরিবর্তে নীতি নৈতিকতার অনুগত করা এবং আল্লাভীতি-পরহেযগারীর সাথে তা পরিচালনা করা সে রাষ্ট্রের মৌল প্রানশক্তি (Real Spirit)। নৈতিক-চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্বই সেখানে শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র ভিত্তি-একক মানদন্ড। সে রাষ্ট্রের পরিচালকমন্ডলী এবং ‘আহলুল হিল ওয়ার আকদ’-এর নির্বাচনের ব্যাপারেও শারীরিক মানসিক যোগ্যতার সাথে নৈতিক পবিত্রতাও সর্বাধিক লক্ষ্যণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার সকল আভ্যান্তরীণ প্রশাসন বিভাগকেও পরিচালিত হতে হবে দিয়ানাত আমানত-সততা-বিশ্বস্ততা পক্ষপাতমুক্ত নির্ভিক ইনসাফ-সুবিচারের ভিত্তিতে। আর তার বৈদেশিক নীতিকেও প্রতিষ্ঠিত হতে হবে সম্পূর্ণ এবং সদাচরণের ভিত্তির ওপর।

সাতঃ নিছক পুলিশের দায়িত্ব পালন করার জন্য এ রাষ্ট্র নয়। শুধু আইন-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশের সীমান্ত রক্ষা করা তার কাজ নয়; বরং তা হচ্ছে একটি আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র। সামাজিক সুবিচার, ন্যায়ের বিকাশ আর অন্যায়ের বিনাশ সাধনের নিমিত্ত তাকে নেতিবাচকভাবে কাজ করতে হবে।

আটঃ অধিকার, মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধার সাম্য, আইনের শাসন, ভাল কাজে সহযোগিতা, খারাপ কাজে অসহযোগিতা, আল্লার সম্মুখে দায়িত্বের অনুভূতি, অধিকারের চেয়েও বড় করে কর্তব্যের অনুভূতি, ব্যক্তি সমাজ এবং রাষ্ট্র-সকলের এক লক্ষ্যে ঐক্যমত, সমাজের কোন কোন ব্যক্তিকে জীবন যাপনের অপরিহার্য উপাদান-উপকরণ থেকে বঞ্চিত থাকতে না দেয়া এসব হচ্ছে সে রাষ্ট্রের মৌলিক মূল্যমান (Basic Values)।

নয়ঃ এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রের মধ্যে এমন এক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, রাষ্ট্র লাগামহীন এবং সামগ্রীক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ব্যক্তিকে নিরীহ দাসে পরিণত করতে পারে না, আর ব্যক্তিও সীমাহীন স্বাধীনতা পেয়ে ঔদ্ধত্যপরায়ন এবং সামাজিক স্বার্থের দুশমন হতে পারে না। এতে ব্যক্তিকে একদিকে মৌলিক অধিকার দিয়ে এবং রাষ্ট্রকে উর্ধ্বতন আইন এবং শুরার অনুগত করে ব্যক্তি সত্ত্বার উদ্ভব-বিকাশের সকল সুযোগ-সুবিধা দান করা হয়েছে; ক্ষমতার অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ থেকে ব্যক্তিকে করা হয়েছে নিরাপদ; কিন্তু অপরদিকে ব্যক্তিকে নৈতিক নীতিমালার ডোরে শক্তভাবে বেঁধে দেয়া হয়েছে। তার ওপর এ কর্তব্যও আরোপ করা হয়েছে যে, রাষ্ট্র আল্লার বিধান অনুযায়ী কাজ করলে মনে-প্রাণে রাষ্ট্রের আনুগত্য করবে, ভাল কাজে তার সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে, রাষ্ট্র শৃংখলায় ফাটল ধরানো থেকে বিরত থাকবে, তার সংরক্ষণ কাজে জানমাল দিয়ে যে কোন ধরনের ত্যাগ স্বীকারে যেন বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধও না করে।
চলবে...
------------------------
লেখকঃ ইসলামিক স্কলার গ্রন্থপ্রনেতা গবেষক বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেম ও দাঈ ।       
সম্পাদনায়ঃ শামীম আজাদ। 

Post a Comment

0 Comments