Recent Tube

তৃতীয় শক্তির ভূত এবং বাংলাদেশে সম্ভাব্য আগামী রাজনীতি!? --ইবনে যুবাইর।


তৃতীয় শক্তি’র উত্থান আসন্ন:
তৃতীয় শক্তির ভূত এবং বাংলাদেশে সম্ভাব্য আগামী রাজনীতি!?

  মাঝে মধ্যে আমরা ব্যক্তি বিশেষকে নিয়ে  আশার আলো দেখি--একটি ডু্বন্ত জাতিকে কূলে তুলবে এই আশা।আবার একটি সময় আশা জাগানো ব্যক্তিটি জাতির পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয়।এরকম নযির এ দেশে কম নেই।

নুরুল হক নুরুকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন কম নেই।তাই তাকে নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।দেশের সমসাময়িক অবস্হার পেক্ষিতে আমার দেশ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে,
"নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমরা কিছুটা ভিন্ন রূপ দেখি। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কিংবা জামায়াত-শিবির সমর্থিত আন্দোলন বলে এই আন্দোলনগুলোকে বিভক্ত ও অবদমিত করার চেষ্টা হলেও সেই চেষ্টা সফল হয় নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে আমরা কিছু তরুণ নতুন নেতৃত্বের নাম শুনছি। প্রশ্ন উঠতে পারে এরা জাতীয় রাজনীতিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারবে কি?
আলোচনার খাতিরে আমরা ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরকে উদাহরণ হিশাবে নেব। নুরুল হক জাতীয় রাজনীতিতে আসবার ইচ্ছা অনেকদিন আগে থেকেই ব্যক্ত করছেন। সম্প্রতি তার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বাম ও ডানপন্থার বাইরে একটা মধ্যপন্থা উন্নয়ন’ করবার তিনি চেষ্টা করছেন।
রাজনীতি সম্পর্কে নুরুল হকের চিন্তা তার কয়েকটি কথায় স্পষ্টই ধরা পড়ে। তিনি বলছেন, ‘সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে এখন বঞ্চিত। যিনি ধর্মকর্ম করবেন, তাঁর ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। একজন সাংবাদিক লিখবেন, তাঁর সেই স্বাধীনতা নেই। এমনকি চিকিৎসা করানোর অধিকার নেই। তাই আমরা স্লোগান ঠিক করেছি, ‘জনগণের অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’। নাগরিক অধিকার, পরমতসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিষয়গুলোতে আমরা জোর দেব। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারের বিষয় রয়েছে” (দেখুন, ‘তাঁরা বললেন সামনে আরও ঝামেলা হবে’, দৈনিক প্রথম আলো, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০)। এটা পরিষ্কার তিনি প্রথাগত লিবারেল ডেমোক্রেসির অধিক কিছু ভাবতে পারছেন না। তবে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মপন্থী ও সেক্যুলার রাজনীতির যে বিভাজন রয়েছে তিনি দুইয়ের সেই ফাটা জায়গায় দাঁড়িয়ে কিছু একটা করতে চান। আসলে দুই পক্ষ থেকেই সমর্থন চান। এটা কৌশল হিশাবে ভাল, কিন্তু দুই হাজার তেরো সালে হেফাজতে ইসলামের উত্থানের ফলে এর সম্ভাবনা এখন সীমিত হতে বাধ্য। এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলাম এখন জাতীয় রাজনীতির বাস্তবতা। তাকে ‘ডান পন্থা’ আখ্যা দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী এবং তথাকথিত সেক্যুলারদের মধ্যে আপোষ করানো রীতিমতো অসম্ভব। দুই নৌকায় পা দেওয়া যাবে না। ডুববার আশংকা আছে।
নুরুল হকের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে, তিনি বলছেন, “আমরা চেষ্টা করছি। অনেকেই চাইছেন এখানে একটা পরিবর্তন আসুক। কারণ, তাঁরা দেখছেন, দুই প্রধান দল জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছে। আমরা ছাত্র তরুণ-যুবা, পেশাজীবী ও চিকিৎসক, তাঁদের জন্য আলাদা অধিকার পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছি। নামসর্বস্ব কোনো রাজনৈতিক দল করতে চাই না। আগে পোক্ত ভিত্তি তৈরি করে যাত্রা শুরু করবো। অক্টোবরে একটা নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করার পরিকল্পনা ছিল, যা পরে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দলের স্রোতোধারায় মিশে যাবে। বিভিন্ন সংস্থা বা সংগঠনের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে”।
রাজনৈতিক দল গঠনের এই মডেল আমরা ডক্টর কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার দল গঠনের প্রক্রিয়াতেও দেখেছি। সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতিতে কোলাহল সৃষ্টি করা ছাড়া বড় দুই দলের রাজনীতির বাইরে তাঁরা যেতে পারেন নি, নতুন কোন কথা বলতেও তারা সক্ষম হন নি। লিবারেল ডেমোক্রেসির অতি নিম্নস্তরের দাবিদাওয়ার মধ্যে তাঁরা খাবি খেয়েছেন। দল গঠনের উদ্দেশ্যের মধ্যেই তাদের ব্যর্থতার বীজ নিহিত ছিল। অর্থাৎ বড় দুই দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বাইরে একই রকম আরেকটি রাজনৈতিক দল খাড়া করা এবং জাতীয় সংসদের আসনের জন্য কম্পিটিশনে নামার অধিক তাদের আর কোন রাজনৈতিক বাসনা ছিল না। তাঁদের আশা অতোটুকুই যে তাঁরা বৃহৎ দুই দলের সঙ্গে দর কষাকষি করবেন এবং জাতীয় সংসদের সদস্য হতে পারলে বা মন্ত্রিত্ব জুটিয়ে নিলে তাঁদের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনকে সার্থক গণ্য করবেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের গঠনতন্ত্র, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা ইত্যাদির কোন গুণগত রূপান্তর দূরে থাকুক কোন সংস্কার সাধনও তাঁদের লক্ষ্য ছিল না, কিংবা এখনও নয়।
অতএব নুরুল হকের চিন্তাভাবনা দ্বারা আমরা এই মুহূর্তে আপ্লূত হতে পারলামনা। এই ধরণের রাজনীতি চরিত্রের দিক থেকেই আদর্শ বর্জিত হয়। কারণ দুটি বৃহৎ ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের ‘অ-জনপ্রিয়তা’কে সুযোগ গণ্য করে আরেকটি নির্বাচনপন্থী রাজনৈতিক দল বানাবার বাসনা ছাড়া এই ধরণের চেষ্টার আর কোন তাৎপর্য নাই। তারপরও আমরা নুরুল হকের ইচ্ছা ও চেষ্টাকে আপাতত সমর্থন দেব। তাঁর দলের গঠনতন্ত্র এবং রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রণয়ন অবধি অপেক্ষা করাটাই সঠিক হবে। তবে এটা তাকে জানিয়ে রাখা দরকার যে প্রথম আলোয় তার সাক্ষাৎকার আমাদের বিশেষ অনুপ্রাণিত করে নি। প্রথম আলো তাকে যে গুরুত্ব দিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার মার্কা লিবারেল ডেমোক্রেসি- যা মূলত বহুজাতিক কর্পোরেশন বা সাম্রাজ্যবাদের ভাড়া খাটে- সেই কাজটা তারা নুরুল হককে দিয়েও করাতে চাইছে।
নুরুল হক মনে করেন, ‘বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাইরের একটা হস্তক্ষেপ থাকে’। বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ নয়, তাই ‘হস্তক্ষেপের ধরণ’ নিয়ে আলোচনা করলে আমরা বুঝবো তিনি আসলে হস্তক্ষেপ বলতে কি বোঝেন এবং কিভাবে তা মোকাবিলা করবেন। বাইরের হস্তক্ষেপের প্রশ্নে বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রধান বিষয় হচ্ছে দিল্লীর আগ্রাসী ভূমিকা, সীমান্তে নিয়মিত হত্যা এবং একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কার্যত বাংলাদেশকে ‘টাটানগর’ বানানো, পরাধীন দেশের চেয়েও হীনাবস্থায় নিক্ষেপ করা। মনে হচ্ছে নুরুল হকের কাছে দিল্লী কোন রাজনৈতিক ইস্যু না। শুধু অতোটুকুই যে “বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে”। তিনি শুধু সেই মনোভাবের সুযোগ নিতে চান। অথচ ইসলাম বাংলাদেশে ‘মনোভাব’-এর ব্যাপার না। হিন্দুত্ববাদী ভারত ইসলাম ও বাংলাদেশের জনগণের শত্রু রাষ্ট্র, বাংলাদেশের জনগণ বুঝে গিয়েছে দিল্লীর বিরুদ্ধে লড়াই আজ হোক বা কাল হোক অনিবার্য। অতএব বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং দুষমন মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি। এই ক্ষেত্রে টালবাহানা করে নুরুল হক বাংলাদেশের জনগণের চোখে ধূলা দিতে পারবেন মনে হয় না।
প্রথম আলো যথারীতি ইসলামি আন্দোলনকে ‘উগ্রপন্থা’ আখ্যা দিয়ে নুরুল হকের কাছে জানতে চেয়েছে তিনি তথাকথিত ‘উগ্রপন্থার উত্থানের আশঙ্কা’ করেন কিনা? নুরুল হক মনে করেন না দাবি করলেও পরক্ষণেই বলেছেন, “তবে রাজনৈতিক ইসলাম আগের থেকে অনেক বাড়ছে। হেফাজতের কথাই ধরুন। দলীয় স্বার্থে এ সরকার হেফাজতের প্রতি তাদের আগের বৈরী নীতি উল্টে দিয়ে তাদের বরণ করল। হেফাজতের ভেতরের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তারা তাদের শক্তি বাড়ালো। এভাবে দেশে পলিটিক্যাল ইসলামাইজেশন এক ধাপ এগিয়ে গেছে। ক্ষমতায় টিকতেই তারা এটা করলো। তারা পশ্চিমা বিশ্বকে দেখাচ্ছে যে ইসলামি শক্তি নিয়ন্ত্রণে তারাই সক্ষম। অথচ হেফাজত এখন আর আওয়ামী লীগের কবজায় নেই, বরং সরকারের জন্য তারা ইতোমধ্যে বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ক্ষতিটা হলো বাংলাদেশের”।
তথাকথিত সরকারী পরিভাষার ‘জঙ্গী’ ইসলাম’ আর ‘রাজনৈতিক’ ইসলামের ফারাকটা কি? সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের সামরিক ও রাজনৈতিক-সামাজিক কৌশলপত্রে পরিষ্কার যে, ইসলাম যদি মসজিদে নামাজ কালামে ব্যস্ত থাকে, তাবলীগ করে, এবাদত-বন্দেগি করতে থাকে তাহলে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু ইসলাম যদি ‘রাজনৈতিক’ হতে চায়, পাশ্চাত্যকে মোকাবিলার কথা বলে তাহলে তা ‘জঙ্গী’। মুসলমানদের উচিত পাশ্চাত্যের লিবারেল ডেমোক্রেসি নত মস্তকে মেনে নেওয়া, দিল্লীকে উপমহাদেশের নেতা হিশাবে মানা এবং তাদের আনুগত্য স্বীকার করা। অতএব বাংলাদেশের জনগণের কাজ হোল সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং বহুজাতিক কর্পোরেশন ও মাফিয়া চক্রকে বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাটে সহায়তা করা। নুরুল হক, দেখা যাচ্ছে, রাজনীতি বর্জিত ‘গুড মুসলিম’ প্রকল্পেরই প্রডাক্ট হতে চান। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলাম’ বা পলিটিক্যাল ইসলাম বাড়ছে এতে তিনিও উদ্বিগ্ন।
এটা ঠিক না। বাংলাদেশে এর অন্যথা হবার কথা ছিল কি? তাঁকে একটু পড়াশুনা করতে হবে। হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে তার মধ্যে ভীতি বা আতংক কাজ করে। কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক হলেও হেফাজতে ইসলামের মধ্যে নানান ধারা রয়েছে, এটা একাট্টা ইসলামি রাজনীতির কোন ধারা না। তবে তাদের আভ্যন্তরীণ লড়াই সংগ্রামে কারা শেষাবধি নেতৃত্বের জায়গায় উঠে আসছে এবং কাদের পতন ঘটছে সেটা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের প্রতি নুরুল হকের অভিযোগ হচ্ছে হেফাজতের প্রতি তারা ‘তোষণ’ নীতি গ্রহণ করেছে। এই তোষণনীতির ফলে জাতীয় রাজনীতিতে হেফাজতে ইসলামকে আওয়ামী লীগ কার্যত একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে দিয়েছে। অতএব নুরুল হকের দাবি, “এর ফলে ইসলামি রাজনীতির প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে দিন দিন আরও বাড়বে। সামনের দিনগুলোতে যারাই বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে, তাদের এ শক্তির সঙ্গে আপস করতে হবে”। তার মানে বেচারা নুরুল হককেও করতে হবে। আগামী রাজনীতিতে জাতীয় ক্ষেত্রে শক্তিশালী ধারা হিশাবে তাহলে কওমি মাদ্রাসার দেওবন্দী ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তাঁর এই বিশ্লেষণের সঙ্গে আমরা পুরাপুরি একমত না। ইসলামী রাজনৈতিক ধারার মধ্যে আভ্যন্তরীণ লড়াই সংগ্রাম চলছে, তার ফলাফল এখনও পরিষ্কার নয়। নুরুল হক অন্যান্য ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল সম্পর্কে কিছুই বলেন নি। হেফাজতের অভ্যন্তরের বিভিন্ন ধারা বাদ দিলেও জামায়াতে ইসলামী, হিজবুত তাহরীর, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ইসলামি ঐক্য জোটসহ বিস্তর দল উপদল রয়েছে। অতএব ঠিক কোন্ ইসলামের আধিপত্য জনগণ মেনে নেবে আমরা এখনও নিশ্চিত নই।
এবার আমরা ‘তৃতীয় শক্তি’ নামক ভূতের কথা নুরুল হকের বয়ানে শুনবো। তিনি বলছেন, “দুর্বল নেতৃত্বের কারণে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, জনগণ থেকে তারা ক্রমাগত দূরে সরছে। দুই বড় দলের প্রতি মানুষ আর আস্থা রাখতে পারছে না। সে কারণেই তারা একটি তৃতীয় শক্তির অগ্রগতি দেখতে চাইছে। আমি মনে করি, ইসলামপন্থীদের সঙ্গে মিশ্রণে হোক বা না হোক, দেশে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান আসন্ন”।
ইসলামপন্থীদের সঙ্গে মিশ্রণে হোক বা না হোক বাংলাদেশে ‘তৃতীয় শক্তির উত্থান আসন্ন’। আমরা মানি। তবে সেই পরিপ্রেক্ষিতে নুরুল হকের অবস্থান কি হবে আমরা তা স্পষ্ট নই। বুঝতে পারছি তিনি ইসলামকে স্রেফ একটি ‘ভাবাবেগ’ মনে করেন। তাই তিনি জানেন না ইসলামপন্থিদের সঙ্গে তার সম্পর্কের সুনির্দিষ্ট ধরণ কেমন হবে। তিনি জোট করবেন কি করবেন না সেটা পরের ব্যাপার। তবে এটা টের পেয়ে গিয়েছেন যে, “ ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে তাদের ভাবাবেগকে তো একটা অগ্রাধিকার দিতে হবে। ৯০ ভাগ মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে তো রাজনীতি করা সম্ভব নয়”। নুরুল হক ইসলামকে নিছকই ভাবাবেগের অধিক কিছু দেখেন না, এটা তার অজ্ঞতা। অবশ্য প্রথম আলো-ডেইলি স্টার এতে খুশি হবে। তবে তার সিদ্ধান্ত যে ভাবাবেগে আক্রান্ত বাংলাদেশের জনগণের ‘মতামত’ উপেক্ষা করা সম্ভব না-এটা তাদের অতোটা উৎফুল্ল করবে না।
আমরা নুরুল হককে বোঝার চেষ্টা করছি। তাকে আমরা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নাকচ করতে চাই না। তবে সত্য কথা হচ্ছে তার রাজনৈতিক চিন্তা আমাদের আশ্বস্ত করে না, সন্দেহ থেকে যায়। তবে নুরুল হক যেহেতু ঠিকই আন্দাজ করেছেন বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতির উত্থান আসন্ন, আমরা সেটা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আগামী কিস্তিতে ‘উসামা মোহাম্মদ’ নিয়ে আলোচনা করব। নুরুল হকের মতো উসামা কোন প্রকাশ্য রাজনীতি করছেন না, তাঁর ভূমিকা এখন অবধি কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনে সক্রিয়। অবশ্য জাতীয় রাজনীতিতে তার ঢেউ পড়তে শুরু করেছে হাটহাজারির মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক ছাত্র বিদ্রোহের কারণে। উসামার রাজনীতিও আগামী দিনের সম্ভাব্য রাজনীতির একটি মডেল হতে পারে। নুরুল হককে কিছুটা জানলাম আগামী কিস্তিতে যতোটুকু আমরা দূর থেকে বুঝেছি উসামা মোহাম্মদের রাজনৈতিক মডেলের ব্যবচ্ছেদ করব।
দেখা যাক আসন্ন ইসলামি আন্দোলনের উত্থান কতদূর। তবে নিশ্চিত বলা যায় সেটা ‘তৃতীয় শক্তি’ হবে না। প্রধান শক্তি হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশী। তাই ‘তৃতীয় শক্তি’র ভূত আমাদের মাথা থেকে তাড়াতে হবে। নইলে আমরা বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণে ব্যর্থ হব।
---------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।          

Post a Comment

0 Comments