Recent Tube

স্মরণীয় বরণীয় মনীষীরা: -আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৭৪) - মানোয়ার শামছি শাখাওয়াত।

স্মরণীয় বরণীয় মনীষীরা: আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৭৪),

২য় পর্ব: জ্ঞানতত্ত্বঃ

১.
আবুল হাশিমের একটি দার্শনিক মেজাজ রয়েছে। তিনি দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন বই পড়তেন। ইংরেজি সাহিত্যের বইপত্রও তিনি পড়েছেন। শেক্সপীয়রের ভক্ত ছিলেন তিনি। মার্কসের বইও তিনি পড়েছেন। এ সম্পর্কে বদরুদ্দীন উমর লিখেছেন: “মওলানা আজাদ সুবহানীর সাথে পরিচয়ের আগে থেকে এবং পরেও তিনি মার্কসবাদী সাহিত্য পড়তেন। ক্যাপিটাল থেকে নিয়ে এ্যান্টিডুরিং ইত্যাদি বই তাঁর ছিল। নিজে তিনি এসব বই কিনতেন এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশনা সংস্থা National Book Agency–র বোম্বাই কেন্দ্র থেকে তাঁর কাছে মার্কস, এঙ্গেল্স, লেনিন, স্ট্যালিনের নানা বই ডাকযোগে আসতো সৌজন্য হিসাবে। তার কিছু কিছু আমার কাছে বহুদিন ছিল, এখনো কিছু আছে। মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব আমি তাঁর কাছেই শুনেছিলাম প্রথম। তিনি এসব নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করতেন।“ [২৩] 

‘The Creed of Islam’ (১৯৫০) (বাংলা অনুবাদ: ‘ইসলামের মর্মকথা’) আবুল হাশিমের স্বকীয় চিন্তার আধার গ্রন্থ। [২৪] এই গ্রন্থের মুখবন্ধে ইসলামী চিন্তাবিদ মওলানা আজাদ সুবহানী (১৮৯৬-১৯৬৩) লিখেছেন: “আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, মৌলিক সৃষ্টির দিগন্তে এই বইখানা একটি নতুন তারকা, যা শত শত বছরের ফাঁকে ফাঁকে আবির্ভূত হয়ে প্রজ্ঞা ও মৌলিক সৃষ্টির জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।“ [২৫] আবুল হাশিমের দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার মূল উৎসস্থল ও কেন্দ্রবিন্দু ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম দর্শন। আবুল হাশিমের দর্শন চিন্তা সম্পর্কে আজাদ সুবহানী লিখেছেন: “এ দর্শন হচ্ছে রব্বানিয়াত-এর দর্শন যা জ্ঞান-চর্চার এক দুর্লভ ফল ও আল কুরআনের শিক্ষার সারমর্ম ও তাৎপর্য।“ [২৬] 

আবুল হাশিম রাজনীতিবিদ হিসাবে বেশি পরিচিত। তিনি একজন দার্শনিকও বটে। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ আবুল হাশিম সম্পর্কে লিখেছেন: “ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনায় ইসলামের রাজনৈতিক ও দার্শনিক মতবাদ সম্বন্ধে অনেক বিষয়ই আমরা তাঁর কাছে পরিস্কার ধারণা নিতে সমর্থ হয়েছি।“ [২৭] 

মওলানা আজাদ সুবহানীর চিন্তার প্রভাব আবুল হাশিমের মধ্যে দেখা যায়। তার সম্পর্কে আবুল হাশিম লিখেছেন: “তিনি আমাকে রব্বানী দর্শনে দীক্ষিত করেছিলেন। রব্বানিয়াৎ শব্দটি স্রষ্টার গুণবাচক ‘রব’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং বিবর্তক।“ [২৮] রব্বানীয় দর্শনই তিনি প্রচার করেছেন।

বিনা বিচারে কোন মতবাদই আবুল হাশিম গ্রহণ করেননি। মার্কসীয় দর্শনের বইপত্র পড়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল, কিন্তু তিনি মার্কসবাদ গ্রহণ করেননি। মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্বের প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন: “কার্ল মার্কস অর্থনীতিতে সবচেয়ে মূল্যবান মৌলিক অবদান রেখেছেন। তাঁর উদ্বৃত্ত মূল্য সম্পর্কীয় মতবাদ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী আবিস্কার। কিন্তু দর্শনের ক্ষেত্রে তিনি বা তাঁর বন্ধু ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের চিন্তা মোটেই মৌলিক নয়।“ [২৯] 

আবুল হাশিম অজ্ঞেয়বাদ, নিরীশ্বরবাদ এবং শূন্যতাবাদ প্রত্যাখ্যান করেছেন। জ্ঞানতত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, এডিসনের বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার, শেক্সপীয়ার ও কালিদাসের মহাকাব্য, ডারউইনের বিবর্তনবাদ, কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব স্বীকার করেছেন। তার মতে এসব মনীষীদের আবিস্কার বাহ্যন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এ জন্য পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরে আরো একটি ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন। এর নাম স্বজ্ঞা। তিনি এই স্বজ্ঞাকে স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞান নামে অভিহিত করেছেন।

আবুল হাশিম জ্ঞানের উৎস, পরিধি ও সীমা নিয়ে আলোচনা করেছেন। জ্ঞানের প্রাথমিক উৎস ইন্দ্রিয়। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা জ্ঞান আহরণ করি। অভিজ্ঞতাবাদীদের এই মত। পাঁচটি ইন্দ্রিয় ছাড়াও আরো একটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জ্ঞান লাভ করা যায়। এই ইন্দ্রিয়ের নাম স্বজ্ঞা। স্বজ্ঞাকে আবুল হাশিম চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বকের মতই আরেকটি ইন্দ্রিয় নামে অভিহিত করে লিখেছেন: “পাঁচটি বহিরিন্দ্রিয় এবং এগুলোর অনুরূপ অন্তরিন্দ্রিয়সমূহ - যেগুলো একত্রে স্বজ্ঞা নামে পরিচিত। সুতরাং স্বজ্ঞা সহজাত প্রবৃত্তি নয়, চক্ষু ও কর্ণের মত ইন্দ্রিয়।“ [৩০] 

স্বজ্ঞা ইন্দ্রিয় হলেও জড় বস্তুর মত স্বজ্ঞাকে জানা যায় না। স্বজ্ঞাকে উপলব্ধির সাহায্যে অনুভব করা যায়। “স্বজ্ঞা বহিরিন্দ্রিয়সমূহের আওতাভুক্ত নয়। তাই জড় দৃশ্যবস্তুর উপস্থিতি যেভাবে নির্ণয় করা যায়, সেভাবে স্বজ্ঞার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না। স্বজ্ঞাকে সাক্ষাৎভাবে অনুভব করতে হয়।“ [৩১] তিনি এই স্বজ্ঞারই নাম দিয়েছেন ‘স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞান’। স্বজ্ঞা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মত পর্যবেক্ষণ করে সঠিক জ্ঞান দিতে পারে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় জ্ঞানের উৎস, স্বজ্ঞাও তেমনি। আবুল হাশিম লিখেছেন, “বহিরিন্দ্রিয় ও যন্ত্রের সাহায্যে বস্তু ও ঘটনা প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করে মানুষ যেমন সত্যের অনুসন্ধান করে, তেমনি স্বজ্ঞা কিংবা অন্তরিন্দ্রিয়ের সাহায্যে প্রকৃতির রহস্য প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করে মানুষ সত্যের অনুসন্ধান করে।“ [৩২] 

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিস্কারগুলো স্বজ্ঞার সাহায্যে হয়েছে বলে আবুল হাশিম দাবি করেন। এসব আবিস্কারের পেছনে বুদ্ধির ভূমিকা তিনি স্বীকার করেননি। আবুল হাশিম লিখেছেন, “নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, এডিসনের বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার, শেক্সপীয়র ও কালিদাসের মহাকাব্য, ডারউইনের বির্বতনবাদ, কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব এগুলোর কোনটিই আত্মমুখী যুক্তি ও বুদ্ধির অবদান নয়, এগুলো হচ্ছে প্রত্যক্ষ উপলব্ধির ফল।“ [৩৩] এই উপলব্ধিই হচ্ছে স্বজ্ঞা। নিউটন সারা জীবন আপেল গাছ থেকে পড়তে দেখেছেন। তিনি হঠাৎই উপলব্ধি করেছেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণেই আপেল মাটিতে পড়ে।

আবুল হাশিম স্বজ্ঞাবাদ প্রতিষ্ঠা করার আগে বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতার সমালোচনা করেছেন। বুদ্ধি জ্ঞানের কোন বাহন নয়। তিনি লিখেছেন, “বুদ্ধি একটি অনুভব শক্তি নয়। বুদ্ধি বস্তু কল্পনা করে এবং অনুমানের সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।“ [৩৪] বুদ্ধি অনুমান নির্ভর বলে সঠিক জ্ঞানের বাহন নয়। বুদ্ধি বহিরিন্দ্রিয় নির্ভরশীল। বহিরিন্দ্রিয় আমাদের সবসময় সঠিক জ্ঞান দেয় না। ইন্দ্রিয় মাঝে মধ্যে আমাদের প্রতারিত করে। ইন্দ্রিয় অনেক সময় সঠিক সংবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। “বহিরিন্দ্রিয় জড় বিষয়বস্তু বা জড় দৃশ্যাবলী থেকে উপাদান সংগ্রহ করে মন ও ইচ্ছার মাধ্যমে তা বুদ্ধির কাছে প্রেরণ করে। যখন স্বজ্ঞা কার্যকরভাবে সতেজ ও সরল না থাকে, তখন এসব স্বীকৃত তত্ত্ব বুদ্ধির অনুমান ও সিদ্ধান্তের ভিত্তি রচনা করে। মন সবসময় মুক্ত নয়। অধিকাংশ সময়ই মন অহম কিংবা পরার্থিতার ইচ্ছাশক্তির দাস।“ [৩৫] একারণেই বুদ্ধি সঠিক জ্ঞানের একমাত্র মাধ্যম নয়। বুদ্ধির অক্ষমতা সম্পর্কে আবুল হাশিম লিখেছেন: “বহিরিন্দ্রিয় মনের নির্দেশানুসারে তত্ত্ব সংগ্রহ করে আর ইচ্ছার বাসনা অনুযায়ী মন এগুলোকে একত্রে গ্রথিত করে ও একটি আকৃতি দান করে। ইচ্ছা তার প্রভু অহমিকা কিংবা পরার্থিতার বাসনা অনুযায়ী তার আত্মমুখী বিবেক ও ধারণা গঠন করে এবং যেসব তত্ত্ব ও আকৃতি দ্বারা এই বিবেক ও ধারণা গঠিত হয়, সে সব উপাদানসহ এই বিবেক ও ধারণাকে বুদ্ধির কাছে প্রেরণ করে। বেচারা বুদ্ধি অনুগত ভৃত্যের মত জ্ঞানের এসব আত্মমুখী তত্ত্বের সাহায্যে বিভিন্ন মতবাদ ও নীতি সাধারণ সূত্রাকারে প্রকাশ করে।“ [৩৬] 

অভিজ্ঞতার সাহায্যে সঠিক জ্ঞান পাওয়া যায় না। অভিজ্ঞতা আমাদের পূর্ণ জ্ঞান দেয় না। অভিজ্ঞতা বহিরিন্দ্রিয় নির্ভর। এ-সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: “পাঁচটি বহিরিন্দ্রিয়ই প্রত্যক্ষ অনুভূতির একমাত্র উৎস নয়। বহিরিন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা স্থূল ও জড় বস্তুর আকার আকৃতি দেখি। কিন্তু স্বজ্ঞার মাধ্যমে আমরা পরিচিত হই বস্তু বা দৃশ্যের প্রকৃত বা আসল রূপের সঙ্গে। বহিরিন্দ্রিয়সমূহ আমাদের মনে সত্যের আপেক্ষিক ধারণা জন্মায়। কিন্তু স্বজ্ঞা আমাদের মনে বস্তুর পরম ও চরম স্বরূপের প্রতিফলন করে।“ [৩৭] 

পাশ্চাত্য দর্শনে অভিজ্ঞতাবাদীরা বুদ্ধিবাদকে বর্জন করেছেন। তাদের মতে অভিজ্ঞতাই জ্ঞান লাভের একমাত্র বাহন। কিন্তু আবুল হাশিম জ্ঞানের বাহন হিসাবে বুদ্ধিকে সম্পূর্ণ রূপে অস্বীকার করেন নি। তিনি লিখেছেন: “মন যখন স্বজ্ঞার সংস্পর্শে আসে এবং স্বজ্ঞার দ্বারা আলোকিত হয়, তখন বুদ্ধি জড় পরিবেশের প্রভাব ও শাসন থেকে মুক্ত হয়ে প্রজ্ঞা ও সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার জন্ম দান করে। সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার উপর স্বজ্ঞার সর্বময় কর্তৃত্ব।“ [৩৮] জার্মান দার্শনিক ইম্যানুয়েল কান্ট বুদ্ধিবাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বিচারবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার মতে বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা উভয়ের সমন্বয়েই আমাদের জ্ঞান হয়। 

বিংশ শতাব্দীর বাঙালি মুসলিম দার্শনিক আবুল হাশিমের মতে বুদ্ধি এবং স্বজ্ঞা এই দুয়ের সাহায্যে আমাদের জ্ঞান হয়। স্বজ্ঞা থেকে বিচ্ছিন্ন বুদ্ধির সাহায্যে পূর্ণ জ্ঞান হয় না। স্বজ্ঞা এবং বুদ্ধির সমন্বিত জ্ঞানের অনুপস্থিতিতেই মানুষের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে। পাশ্চাত্য দর্শনে জ্ঞানের উৎপত্তি, উৎস সম্পর্কে বলা হলেও পূর্ণ জ্ঞানের অভাবে মানুষের জীবনে যে দুঃখ নেমে আসে এমন উদাহরণ পাওয়া যায় না। ভারতীয় দর্শনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। ভারতীয় দর্শনে অবিদ্যাই আমাদের দুঃখ-কষ্টের মূল কারণ। আবুল হাশিম লিখেছেন: ”স্বজ্ঞা থেকে বিচ্ছিন্ন বুদ্ধি বিষয়কে জটিল করে, মানুষের দুর্দশা বৃদ্ধি করে এবং প্রকৃতির সঙ্গে অহরহ যুদ্ধরত কৃত্রিম মানবজাতি সৃষ্টি করে। স্বজ্ঞার সঙ্গে সমন্বিত বুদ্ধি প্রকৃত সুখ-শান্তি এনে দিতে পারে এবং মানুষের আদিম স্বাভাবিক প্রতিভা অনুসারে বিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। স্বজ্ঞাহীন বুদ্ধি সৃষ্টি করবে যন্ত্র আর স্বজ্ঞাযুক্ত বুদ্ধি সৃষ্টি করবে মানুষ।“ [৩৯] 

জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদ হিসাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমালোচনা করে আবুল হাশিম লিখেছেন: “স্বজ্ঞা থেকে বিচ্ছিন্ন ও বুদ্ধিভিত্তিক ভাববাদের তথাকথিত পূজারীরা হিউম, মার্কস ও এঙ্গেলসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের উপর বিশেষ জোর দেন; কিন্তু তাঁরা পয়গম্বর ও ঋষিদের নিয়ে বিদ্রূপ করেন। এই মনোভাব যুক্তি ও বুদ্ধির পক্ষে সম্মানজনক তো নয়ই বরং অপমানজনক।“ [৪০] 

আবুল হাশিম ভাববাদী দার্শনিক। তার এই ভাববাদ ইসলাম ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। একারণেই তিনি মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্বের প্রশংসা করলেও বস্তুবাদকে মেনে নিতে পারেননি। এটা আবুল হাশিমের সীমাবদ্ধতা নয়, তিনি এখানে যুক্তির চেয়ে বিশ্বাসকে নির্ভর করে জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদের ভিত্তি নির্মাণ করেছেন। আর এজন্যই বহিরিন্দ্রিয়ের চেয়ে অন্তরিন্দ্রিয়ের গুরুত্ব শুধু তাঁর কাছে বেশি নয়, বহিরিন্দ্রিয়কে অন্তরিন্দ্রিয়ের উপর নির্ভরশীল করে তুলেছেন।

জ্ঞানের উৎস হিসাবে স্বজ্ঞার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করলেও আবুল হাশিম বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অস্বীকার করেননি। জ্ঞানের উৎস হিসাবে তিনি পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সংবেদন স্বীকার করে নিয়েছেন। সংবেদন জ্ঞানের প্রধান বাহন। বস্তুর সংবেদন না হলে জ্ঞান হয় না। আমাদের মনে বস্তু সম্পর্কে পূর্ব থেকেই কোন ধারণা থাকে না। জন লক এই শূন্য মনকেই সাদা কাগজের সঙ্গে তুলনা করেছেন। [৪১] লকের মতে: ”আমাদের ধারণাসমূহের উৎস দুটি: (ক) সংবেদন এবং (খ) আমাদের নিজস্ব মনের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়ার প্রত্যক্ষণ, যাকে ‘অন্তরেন্দ্রিয়’ নামে অভিহিত করা যায়।“ [৪২] লকের এই অন্তেরেন্দ্রিয়ের সঙ্গে আবুল হাশিমের স্বজ্ঞার তুলনা করা যায়। আবুল হাশিম পাশ্চাত্য দর্শনের অনুরাগী হলেও তার জ্ঞানতত্ত্বে ভারতীয় দর্শনের জ্ঞানতত্ত্বের প্রভাব স্পষ্ট। [৪৩] তিনি বুদ্ধি এবং স্বজ্ঞার মাধ্যমে সমন্বিত জ্ঞানের সাহায্যে মানুষের সুখ-শান্তি চেয়েছেন। বুদ্ধি এবং স্বজ্ঞার সাহায্যে যে জ্ঞান হয় সেই জ্ঞানের সাহায্যেই মানুষ সত্যিকারের মানুষে পরিণত হয়।

জ্ঞানের প্রাথমিক উৎস হিসাবে আবুল হাশিম অভিজ্ঞতার কথা স্বীকার করলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি ইন্দ্রিয় সংবেদনমূলক জ্ঞানকে বর্জন করেছেন। তিনি বুদ্ধি এবং স্বজ্ঞার সংমিশ্রণ করেছেন। স্বজ্ঞাকে বুদ্ধির উপর স্থান দিয়েছেন। আবুল হাশিমের জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদের সাথে আল-গাযালীর জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদের মিল পাওয়া যায়। আল-গাযালীর মতে, অতীন্দ্রিয় সত্তার জ্ঞান হচ্ছে উচ্চস্তরের জ্ঞান। আবুল হাশিমও অতীন্দ্রিয় সত্তার জ্ঞানকে উচ্চস্তরে স্থান দিয়েছেন। আবুল হাশিমের মতে: “কুরআনের জ্ঞানই সর্বোচ্চ জ্ঞান।“ [৪৪] মানুষের ইচ্ছা শক্তির গুরুত্ব তিনি অস্বীকার করেছেন। তার দৃষ্টিতে: “মানুষ ইচ্ছা করুক আর নাই করুক তার বুদ্ধি ও স্বজ্ঞা আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হয়। স্বজ্ঞার সহযোগিতায় অকপট সত্য-সন্ধানীর বুদ্ধি, পরিশেষে সক্রিয় স্বয়ম্ভু ও চিরন্তন আল্লাহকে তার সৃষ্টির মধ্যে পেয়ে থাকে।“ [৪৫] স্বজ্ঞাকে আশ্রয় করে আবুল হাশিম বিশ্বাসে উপনীত হয়েছেন। ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যই তিনি স্বজ্ঞার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
২.
আবুল হাশিম ইসলাম ধর্মের অনুসারী বিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি মুসলিম দার্শনিক। জগতের উৎপত্তি ও পরিণতি সম্পর্কে তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচলিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণই গ্রহণ করেছেন। ইসলামী মতে আল্লাহ জগতের স্রষ্টা এবং প্রতিপালক। আবুল হাশিমও মনে করেন এই বিশ্বজগতের একজন স্রষ্টা আছেন। তিনি এই জগত সৃষ্টি করেছেন এবং তার ইচ্ছাতেই জগতের ধ্বংস হবে। বিশ্ব জগতের স্রষ্টা জগতের নিয়ন্ত্রকও। আল্লাহ এক তার কোনো শরীক নেই। আবুল হাশিম লিখেছেন: “আল্লাহ এক এবং তিনি বিশ্বের স্রষ্টা। স্রষ্টার একত্ব বিশ্বাস বিশ্ব প্রকৃতির ও বিশ্ব মানবের একত্ব ও অখন্ডের ইঙ্গিত বহন করে। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস প্রকৃতির সেই নিয়মেরই সঙ্কেত দেয়, যে নিয়ম বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সন্ধান করে ও ঐক্যের সৃষ্টি করে।“ [৪৬] 

সাদা কালো সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমেরিকান ও বাঙালি সবই আল্লাহর সৃষ্টি। ব্রিটিশ, বাঙালি, জর্মন সবই মানুষ। আর এই মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী হওয়ার কারণে আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। মানুষকে অবজ্ঞা অবহেলা করে। মানুষ মানুষকে শোষণ করে। মহান আল্লাহ শুধু মানুষ সৃষ্টি করেননি এই বিশ্ব জগতে যা কিছু আছে সবই তিনি সৃষ্টি করেছেন। তার ইচ্ছাতে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। এই বস্তুজগত এবং জগতের অন্তর্ভুক্ত পদার্থ সকল তার ইচ্ছাতেই সৃষ্টি। পানি, বায়ু, অগ্নি তিনি সৃষ্টি করেছেন। ভারতীয় দার্শনিকদের পঞ্চভূতও আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন।

বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যা আবুল হাশিম গ্রহণ করে লিখেছেন: “আল্লাহ মহাবিশ্বের স্রষ্টা। মানুষ সৃষ্টির সেরা, পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। মানুষ আল্লাহর দাসত্ব করবে ও তার নিয়ম-কানুন মেনে চলবে। এই নিয়ম-কানুনের দ্বারাই মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সৃষ্টির বাকী সবকিছু মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবে ও তার সুখশান্তি বৃদ্ধি করবে।“ [৪৭] 

মানুষের নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ আল্লাহর ইবাদত করবে। আল্লাহর প্রশংসা করবে। আল্লাহ এবং মানুষের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ। কোনো তৃতীয় পক্ষ এই সম্পর্কের মাঝে নেই। আবুল হাশিম লিখেছেন: “পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই আল্লাহর গুণাবলী অনুশীলন করে এবং নিজের মধ্যে এসবের বিকাশ ঘটিয়ে নিজেকে উর্ধ্ব স্তর থেকে ঊর্ধ্বতর স্তরে উন্নীত করার সম্ভাবনা মানুষের মধ্যে নিশ্চয়ই রয়েছে।“ [৪৮] আবুল হাশিম মনে করেন মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। মানুষ নিজের অবস্থা থেকে নিজেকে অনেক উন্নত স্তরে নিয়ে যেতে পারে। মানুষের মধ্যে অসম্ভব ক্ষমতা রয়েছে। যে ক্ষমতা মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। আবুল হাশিম মনে করেন আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে “সহজাত প্রকৃতির কারণে মানুষ সর্বদা আল্লাহর সন্ধানে রত রয়েছে।“ [৪৯] মানুষ আল্লাহর দিকেই আকৃষ্ট হয়। এ সম্পর্কে আবুল হাশিম লিখেছেন: “মানুষ ইচ্ছা করুক আর নাই করুক তার বুদ্ধি ও স্বজ্ঞা আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হয়। স্বজ্ঞার সহযোগিতায় অকপটে সত্যানুসন্ধানীর বুদ্ধি, পরিশেষে সক্রিয় স্বয়ম্ভু ও চিরন্তন আল্লাহকে তার সৃষ্টির মধ্যে পেয়েই থাকে। কিন্তু সরল অঙ্কের সম্পাদ্যের মত আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না, একে অনুভব করতে হয।“ [৫০] ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ অনুভবের সাহায্যে আল্লাহকে পেয়ে থাকে। আবুল হাশিম মনে করেন যোগ বিয়োগ করে অঙ্ক কষে আল্লাহকে পাওয়া যায় না। আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যেই আছেন। তিনি সৃষ্টি থেকে দূরে নন।

মৃত্যুর পর মানুষের অবস্থান নিয়েও নানা ভিন্নমত আছে। বস্তুবাদীরা মনে করেন মৃত্যুর পর পঞ্চভূতে মানুষ মিলিয়ে যায়। অধ্যাত্মবাদীদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। আবুল হাশিম ইসলাম ধর্মের প্রচলিত ব্যাখ্যা দিয়েই মানুষের ভবিষ্যত অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: “মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে আসে এবং পরিশেষে তাঁর কাছেই ফিরে যায়।“ [৫১] মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা আবুল হাশিম স্বীকার করেছেন। তিনি মনে করেন আল্লাহ মানুষকে সৃজনশীল ক্ষমতা দিয়েছেন। এই ক্ষমতার কারণেই মানুষ নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের সৃজনশীলতা আল্লাহর মহত্বকে ছোট করে না। মানুষ শূন্য থেকে কিছু করতে পারে না। আল্লাহর গুণেই মানুষ সৃজনশীল হয়। আবুল হাশিম লিখেছেন: “পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ সৃজনপ্রতিভার অধিকারী, কিন্তু তার সৃজনপ্রতিভা শূন্য থেকে কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, কিংবা আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকৃতির যে-সব নিয়ম-কানুন বিশ্বকে নিয়ন্ত্রিত করে সে-সব নিয়ম-কানুন তৈরি করা, পরিবর্তন করা ও সংশোধন করার ক্ষমতা তার নেই। প্রকৃতির নিয়ম-কানুন জানার এবং এই জ্ঞানের সাহায্যে উপস্থিত ও প্রাপ্তব্য পদার্থ ও উপাদান থেকে নতুন নতুন আকার-আকৃতি গঠন করার ক্ষমতার মধ্যেই তার সৃজনপ্রতিভা সীমাবদ্ধ।“ [৫২] 

মানুষ শুধু আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিকে বিকশিত করতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে জগত একটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তার একটি উদ্দেশ্য। আবুল হাশিম লিখেছেন: “বিশ্ব-সৃষ্টির একটা উদ্দেশ্য আছে এবং এটা সুস্পষ্ট যে, এই উদ্দেশ্যটি হচ্ছে ক্রমবিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টিকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করা। খেলাচ্ছলে আল্লাহ বিশ্ব সৃষ্টি করেন নি। সৃষ্টির একটা উদ্দেশ্য আছে।“ [৫৩] জগতে মানুষ স্থায়ী নয়। একটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষ এই জগতে এসেছে। মানুষের অনন্ত জগত পরকাল। আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য এই জগতে পাঠিয়েছেন। মানুষের কর্মফল দ্বারাই পরবর্তীকালে তার স্থান নির্ধারিত হবে। ইহকালের কর্মফল মানুষ পরকালে ভোগ করবে। আবুল হাশিম মনে করেন: “আল্লাহর ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণ করা পূণ্য আর আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা পাপ।“ [৫৪] আল কুরআনে বর্ণিত জীবন বিধান পালন করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান থেকে সরে যাওয়ায় পৃথিবীতে নানা অন্যায় অবিচার শুরু হয়েছে। আল্লাহ ছাড়া মানুষের অন্য কোনো উপাস্য নাই।

আবুল হাশিমের অধিবিদ্যা আলোচনায় দেখা যায় তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেছেন। মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট জীব। সেই হিসাবে আল্লাহকে স্মরণ করাই মানুষের একমাত্র কর্তব্য। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী আবুল হাশিম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। মানুষের ইচ্ছা স্বাধীনতাকে তিনি সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করেন নি। পরকাল নিয়ে আবুল হাশিমের বর্ণনা ইসলাম ধর্মে বর্ণিত পরকালের ধারণার অনুসারী। 

এই আলোচনায় দেখা যায় আবুল হাশিম যুক্তি দিয়ে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে আবুল হাশিমের দর্শন ধর্মনির্ভরশীল, একথা বলা যায়। [৫৫] 

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

রেফারেন্স:

[২৩] বদরুদ্দীন উমর, আমার পিতা, আবুল হাশিম: তাঁর জীবন ও সময়, সৈয়দ মনসুর আহমদ (সম্পাদিত), ঢাকা (২০০৮), জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, পৃষ্ঠা ২৬৩
[২৪] Abul Hashim, The Creed of Islam or the Revolutionary Character of Kalima, Dhaka (1950), Umar Brothers
[২৫] আবুল হাশিম, ইসলামের মর্মকথা, মুসলিম চৌধুরী (অনূদিত), ঢাকা (১৯৮১), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা মুখবন্ধ
[২৬] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা মুখবন্ধ
[২৭] দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, আল্লামা আবুল হাশিম, আবুল হাশিম: তাঁর জীবন ও সময়, সৈয়দ আবুল মনসুর (সম্পাদিত), ঢাকা (২০০৮), জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, পৃষ্ঠা ৩৪০
[২৮] আবুল হাশিম, আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি, শাহাবুদ্দীন মহম্মদ আলী (অনূদিত), ঢাকা (১৯৮৭), নওরোজ কিতাবিস্তান, পৃষ্ঠা ৪৩
[২৯] আবুল হাশিম, ইসলামের মর্মকথা, মুসলিম চৌধুরী (অনূদিত), ঢাকা (১৯৮১), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ১৮  
[৩০] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫
[৩১] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬
[৩২] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৭
[৩৩] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪
[৩৪] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪
[৩৫] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬০
[৩৬] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬১
[৩৭] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫
[৩৮] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫
[৩৯] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০
[৪০] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৮
[৪১] বার্ট্রান্ড রাসেল, পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস-৩, প্রদীপ রায় (অনূদিত), ঢাকা (২০০৮), অবসর, পৃষ্ঠা ১১৯
[৪২] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১৯
[৪৩] মো. আনিসুজ্জামান, বিংশ শতাব্দীতে বাঙালি মুসলমানের দর্শনচিন্তা, ঢাকা (২০১৬), দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃষ্ঠা ১৮৪
[৪৪] আবুল হাশিম, ইসলামের মর্মকথা, মুসলিম চৌধুরী (অনূদিত), ঢাকা (১৯৮১), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩৫
[৪৫] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪১
[৪৬] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৭৪
[৪৭] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫১
[৪৮] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫০
[৪৯] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪০
[৫০] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪১
[৫১] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪১
[৫২] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৮৭
[৫৩] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৪
[৫৪] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৪
[৫৫] মো. আনিসুজ্জামান, বিংশ শতাব্দীতে বাঙালি মুসলমানের দর্শনচিন্তা, ঢাকা (২০১৬), দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃষ্ঠা ১৮৮
--------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক স্কলার গ্রন্থপ্রনেতা ও গবেষক। 

Post a Comment

0 Comments