Recent Tube

কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব ফজিলত না করার পরিনতি এবং করণীয়-বর্জনীয়। --- শামীম আজাদ।


 কুরআনহাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব ফজিলত না করার পরিনতি এবং করণীয়-বর্জনীয়। 
                                                         পর্ব-১০ম;


যৌতুক সম্পর্কে ইসলামী বিধান;
--------------------------------- 

 যৌতুক একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। সংস্কৃত থেকে আসা বাংলা শব্দ ‘যৌতুক’-এর প্রতিশব্দ পণ। হিন্দিতে দহিজ, ইংরেজিতে Dowry, আরবিতে বায়িনাতুন, দুত্বাতুন মাহরুন প্রভৃতি। বাংলাদেশের আইনে এটা নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ সালে যৌতুকবিরোধী আইন পাস করে। এই ধরনের ব্যাধি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোনো কোনো ধর্মমতে, মেয়ে সন্তান পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী হয় না। তাই বিয়ের সময় মেয়ে যত বেশি নিতে পারে ততই তার লাভ। একপর্যায়ে তা বাড়াবাড়িতে পর্যবসিত হয়। এই কারণে অনেক কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতার কষ্টের সীমা থাকে না। কিন্তু মুসলিম ধর্মের বিধান অনুযায়ী পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী হয় কন্যা। তাই মুসলিম সমাজে যৌতুকের প্রচলন থাকার কথা নয়।

  যৌতুকের বিষয়ে সরাসরি কুরআন ও হাদীসে কোন বাণী নেই কারণ এটা ইসলামে নেই। 

জোরপূর্বক অন্যায্য দাবি আদায় করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, 

وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَانًا وَظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيهِ نَارًا وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللّهِ يَسِيرًا
‘আর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন ও জুলুম করে, অচিরেই আমরা তাকে আগুনে দগ্ধ করবো। এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।’
সূরা নিসাঃ ৩০

  কন্যার জীবনধারা দুটো ভাগে দু’জনের দায়িত্বে অর্পিত। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত পিতার ওপর মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে। 
সূরা বাকারাঃ ২৩৩

   আর বিয়ের পর থেকে আজীবন স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর। বিয়ের সময় স্ত্রীকে মোহর তথা উপঢৌকন দেয়ার দায়িত্বও স্বামীর। কেননা মহান আল্লাহ তা'আলার বাণী, 

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ
‘পুরুষগণ স্ত্রীলোকদের অভিভাবক, কেননা আল্লাহ তাদের কতককে কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণেও যে, তারা নিজেদের ধন-সম্পদ থেকে স্ত্রীলোকদের জন্য খরচ করেন।’ 
সূরা নিসাঃ ৩৪

  শরীয়তে বিবাহের লেনদেন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, স্বামী স্ত্রীকে মোহর বাবদ কিছু সম্পদ দেবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা হলো, 

وَآتُواْ النَّسَاء صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
‘আর তোমরা নারীদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।’ 
সূরা নিসাঃ ৪

   কনের প্রাপ্য দেনমোহর কোনো দয়ার দান নয়, বরং তা তাদের ন্যায্য অধিকার। তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেনমোহর পরিশোধ করা মুসলমানদের কর্তব্য। সূরা নিসার ২৫নং আয়াতেও তা ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রদান করার নির্দেশ প্রদান করেছেন আল্লাহ তায়ালা।
ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী অবৈধভাবে বা অনির্ধারিত পথে ধন-সম্পদ অর্জন করা চলবে না। অর্থনৈতিক লেনদেনের মৌলিক বিধান সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, 

وَلاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُواْ بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُواْ فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের কাছে পেশ করো না।’ 
সূরা বাকারাঃ ১৮৮

  অন্য এক আয়াতে আছে, 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ
‘হে মোমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ 
সূরা নিসাঃ ২৯

অর্থাৎ যা তোমার নয় তা দাবি করা যাবে না, এটা অন্যায়।
মূলত বিবাহ হলো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। এতে খুশি হয়ে ও নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার প্রদান জায়েজ, তবে যৌতুক বা নিপীড়নমূলক দান নয়। প্রিয় নবী (সাঃ) তার মেয়ে হযরত ফাতেমার (রা) বিয়েতে মেয়ের সংসারের জন্য একটি জাঁতা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। 

অন্য বর্ণনায় আছে, 

عَنْ عَلِيٍّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَتَى عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَهُمَا فِي خَمِيلٍ لَهُمَا - وَالْخَمِيلُ الْقَطِيفَةُ الْبَيْضَاءُ مِنَ الصُّوفِ - قَدْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ جَهَّزَهُمَا بِهَا وَوِسَادَةٍ مَحْشُوَّةٍ إِذْخِرًا وَقِرْبَةٍ ‏.‏

  আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী ও ফাতিমা (রাঃ) -এর নিকট এলেন। তখন তারা তাদের একটি সাদা পশমী চাদরে আবৃত ছিলেন। তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বিবাহের উপঢৌকন স্বরূপ দিয়েছিলেন। তিনি আরও দিয়েছিলেন ইযখির ঘাস ভর্তি একটি বালিশ এবং পানির একটি মশক। 
 নাসায়ী ৩৩৮৪, তাখরীজুল মুখতার ৪৪২-৪৪৪, ইবনে মাজাহ ৪১৫২

 হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেন, ‘সর্বাপেক্ষা বরকতময় হলো ওই বিবাহ, যা কম খরচে নির্বাহ করা হয়।’ (বায়হাকি)। 

وَعَن عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ النَّبِىُّ ﷺ : «إِنَّ أَعْظَمَ النِّكَاحِ بَرَكَةً أَيْسَرُهُ مُؤْنَةً».
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম বিবাহ হলো স্বল্প খরচে সম্পন্ন করা।
আহমাদ ২৪৫২৯, শু‘আবুল ঈমান ৬৫৬৬, মিশকাতুল মাসাবিহ ৩০৯৭

  হযরত ওমর (রা) বলেন, ‘হে মুসলমান সম্প্রদায়! তোমরা বিয়েতে মোটা অংকের মোহর, আড়ম্বরতা এবং যৌতুক দাবি করো না, কেননা আল্লাহর কাছে এটার কোনো মর্যাদা বা মূল্য নেই। যদি থাকতো তাহলে রাসূল (স) তাঁর কন্যা ফাতেমার (রা) বিয়েতে করতেন।’ 
তিরমিজি

 যৌতুক ইসলামে নিষেধ বা হারাম। যৌতুক নিলে বা দিলে সংসারে অশান্তি হয়। তাই এটা পরিত্যাজ্য।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments