Recent Tube

ধূমপান নিয়ে ইসলাম যা বলে -মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

  
ধূমপান নিয়ে ইসলাম যা বলে।
   -মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ;

  ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। বিষয়টি জেনেও মানুষ নিজ হাতে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। জাতিসংঘের মাদকবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়। এর পরও মানুষ ধূমপান ছাড়তে রাজি নয়। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(তোমরা) নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

  এই আয়াতে সরাসরি ধূমপানের কথা উল্লেখ না থাকলেও ধূমপান এমন একটি কাজ, যার মাধ্যমে মানুষ নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন, ধূমপান করে সবাই তো আর মারা যায় না।  হ্যাঁ, সব ধূমপায়ী ধূমপানের প্রথম পুরস্কার মৃত্যু উপহার না পেলেও এর পরের পুরস্কারগুলো ঠিকই পান।

   বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সর্বজনীনভাবে এটি স্বীকৃত যে, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

  এ ছাড়া ধূমপানে রয়েছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। ধূমপান ত্বকের একদম বাইরের দিকের ধমনিগুলোতে রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয়। ফলে ত্বকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকুও পৌঁছায় না। যা অল্প বয়সেই মানুষকে বুড়ো বানিয়ে দেয়। এ ছাড়া সিগারেটের তামাকে থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যা মানুষের ত্বকের এলাস্টিন এবং কোলাজেনকে নষ্ট করে দেয়। সে কারণেই ধূমপায়ীদের ত্বকে বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

   সিগারেটের নিকোটিনের কারণে দাঁতের ঝকঝকে সাদা রং পালটে হলদেটে হয়ে যায়। ধূমপানের ফলে চুলেরও ক্ষতি হয়। গবেষণায় জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে যারা ধূমপান করছেন তাঁদের চুল বাকিদের তুলনায় অনেক পাতলা হয়। কারণ সিগারেট চুলের ডিএনএগুলোকে নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া ধূমপানের ফলে চোখের তলায় কালি, ‘ব্ল্যাকহেডস’-এর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অতিরিক্ত ধূমপানের ফলে হিমোগ্লোবিন বেশি পরিমাণে অক্সিজেন বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। যে কারণে শরীরের ক্ষত সারতেও অধিক সময় লাগে।

  এ কারণে ইসলামী আইনজ্ঞরা ধূমপান করাকে মাকরুহ বলে থাকেন। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/৪০৬)। তা ছাড়া এটি সর্বজনস্বীকৃত বিষয় যে, ধূমপান কোনো ভালো কাজ নয়। ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই জনসম্মুখে প্রকাশ্যে ধূমপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কারণ এর দ্বারা অধূমপায়ী ও শিশুদের যেমন কষ্ট হয়, তেমনি তারাও পড়ে যান স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! যে সমস্ত পাক-পবিত্র (উত্কৃষ্ট) জিনিস আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দিয়েছি সেগুলো খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)। এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, ধূমপান করা কোনো মুমিনের জন্য শোভা পায় না। কোনো মুমিন ধূমপান করে অন্যকে কষ্ট দিতে পারে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ অপরের ক্ষতি করলে আল্লাহ তার ক্ষতিসাধন করবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৩৫)।

   ই-সিগারেট কি বৈধ? ই-সিগারেট মূলত সিগারেটের বিকল্প। অনেকে সিগারেট ছাড়ার জন্যও ই-সিগারেট ব্যবহার করেন। এই সিগারেটের ভেতরে নিকোটিন, প্রপাইলিন গ্লাইকল অথবা ভেজিটেবল গ্লিসারিন এবং সুগন্ধি মিশ্রিত থাকে। কিন্তু তামাকের ভেতর থাকা অনেক বিষাক্ত রাসায়নিকের তুলনায় (যেমন টার ও কার্বন মনোক্সাইড) নিকোটিন তুলনামূলক কম ক্ষতি করে। অর্থাৎ ই-সিগারেটও স্বাস্থ্যের পক্ষে শতভাগ নিরাপদ নয়।

   বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক নিয়ে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শহর হিসেবে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে সান ফ্রান্সিসকো।

   বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য নতুন। একসময় ই-সিগারেট জাতীয় পণ্যকে সিগারেটের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও এখন বিভিন্ন গবেষণায় এর ক্ষতির বিষয়গুলো সামনে আসছে। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি।’ তাই বিনা প্রয়োজনে ই-সিগারেট গ্রহণ করাও মাকরুহ হবে। স্কটল্যান্ডে এক জরিপে দেখা গেছে, তরুণদের অনেকে ই-সিগারেট ব্যবহার করে পরে ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়েছে। (বিবিসি)

    কিন্তু কেউ যদি ডাক্তারের পরামর্শে সিগারেট বন্ধ করার জন্য তা গ্রহণ করে, তবে তা ‘মুবাহ’ (বৈধ) হবে। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৭/১৮২)

  প্রশ্ন : ধূমপান কি মাকরুহ নাকি হারাম? আর এর গুনাহ সম্পর্কে জানার পরও যদি কেউ ধূমপান করে, তাহলে তার পরিণতি কী হতে পারে?

 উত্তর : সিগারেট খাওয়ার বিষয়ে আলেমদের দীর্ঘ বক্তব্য রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে, সিগারেট খাওয়া হারাম। এটি মাকরুহ নয়। মাকরুহ হচ্ছে, যেটা অপছন্দনীয়, আর হারাম হচ্ছে যেটা নিষিদ্ধ। কোরআনুল কারিমে যে মূল নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার মধ্যে সিগারেট অবশ্যই পড়ে। নিকৃষ্ট জিনিসগুলো, ক্ষতিকর জিনিসগুলো ইসলামে হারাম করে দেওয়া হয়েছে।

  সুতরাং, ধূমপান হারাম হওয়ার বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো বিতর্ক নেই এবং এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেসব বন্ধু ধূমপান করেন তারা সতর্কতা আবলম্বন করুন। আপনারা নিজেরই ক্ষতি করছেন।

   আর কেউ যদি জানে ধূমপান হারাম, ক্ষতিকর তার পরও যদি তিনি সিগারেট খান, তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন।

Post a Comment

0 Comments