Recent Tube

অতএব, সাবধান হে মুসলমান!; জিয়াউল হক।


   ইউরোপসহ বিশ্ব্যবাপী মুসলিম বিদ্বেষ সৃষ্টি ও বিস্তৃতির পেছনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে স্বয়ং পোপের নেতৃত্বে খৃষ্টান যাজক সম্প্রদায়। সময়ের পরিক্রমায় আজ তাদের দলে যুক্ত হয়েছে সাধারণ খৃষ্টান জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ।

 পোপ-পাদ্রি’সহ ও খৃষ্টধর্মী খৃষ্টান রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতাদের একটা অন্যতম কৌশল হলো মুসলমানদের উস্কে দিয়ে সংঘাতের সুত্রপাত করা এবং তারপরে আত্মরক্ষার নামে আগ্রাসন চালানো। জঘন্য এ কৌশলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে নেই।

  অষ্টাদশ শতাব্দির প্রথমভাগে শুরু হওয়া (৭১১) স্পেন অভিযান দীর্ঘ চল্লিশ বসরের ক্রমাগত সেখানে প্রচেষ্টায় ইতিহাসের বিষ্ময়কর সফল এক শাসনব্যবস্থা; উমাইয়া খেলাফতের সূচনা ঘটে।
দীর্ঘ চল্লিশ বসর লাগতো না, যদি না বারবার আফ্রিকান এবং আরব গোষ্ঠী, উভয়েই মুসলমান হওয়া সত্তেও ক্ষমতা পেতে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন না করতো। যা হোক, পরিশেষে দামেশক থেকে প্রাণ নিয়ে কোনমতে পালিয়ে আসা উমাইয়্যা রাজপুত্র আব্দুর রহমানের নেতৃত্ব মেনে নিলে সেখানে মুসলমানদের আন্তকোন্দলের আপাত সমাপ্তি ঘটে এবং স্পেন মুসলমানদের দখলে আসে। ৭৫১/৭৫২ খৃষ্টাব্দ নাগাদ।
তার অনেক আগেই, তথা, তারেক বিন জিয়াদের অভিযানের অব্যবহতি পরপরই মুসলমানরা তাদের অভিযানকে স্পেনের মাটি থেকে আরও উত্তরের দিকে টেনে নেয় ৭১৯ খৃষ্টাব্দের মাঝামাঝি পাইরেনিজ পর্বতমালা পেরিয়ে আধুনিক ফ্রান্সের দক্ষিণাংশে। এবং ৭২৫ খৃষ্টাব্দ নাগাদ মধ্যফ্রান্সের বুরগুন্ডি (Burgundy) শহরে পৌছে। ৭৩১ খৃষ্টাব্দে তারা আধুনিক ফ্রান্সের দক্ষিণের শহর আর্লস-এ (Arles) গিয়ে হাজির!

  তখন অবশ্য ‘ফ্রান্স’ নামে কোন দেশই ছিল না, ছিল ‘গল’ বা ‘গউল’ (Gaul)। আধুনিক ইটালি, ফ্রান্স এবং জার্মানির বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে গঠিত এ ভুখন্ডটি হলি রোমান এ্যম্পায়ারের অন্তর্ভূক্ত, খৃষ্টবাদের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। পোপের সকল ক্ষমতা, প্রভাব ও আয়ের উৎস ছিল এই বিস্তৃত ভূখন্ড।

   মুসলমানদের এ অগ্রযাত্রা ভ্যাটিকানে পোপের হৃদকম্প জাগিয়ে ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। এক সময়তো মনে হচ্ছিল যে, মুসলমানরা রোমান স¤্রাট জুলিয়াস সিজার, সেভেরাস ও হেড্রিয়ান গংদের পদাংক অনুসরণ করে একবারে সেলেডিানিয়া (Celedonia) বা আধুনিক স্কটল্যান্ড (Scotland) অধিকার না করে থামবে না!
কিন্তু না, পোপের কপাল ভালো, তার কান্নাকাটি আর দেন দরবারে ফরাসি রাজা চার্লস মার্টেল (Charles Martel) অস্ত্র ধরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। ঐতিহাসিক যুদ্ধ ‘ব্যাটল অব ট্যুর’ বা ‘ব্যাটল অব পয়টার’-এ চার্লস মুসলমানদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয় (৭৩২ খৃষ্টাব্দে)।
পোপ আপাতত হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইলেও পারলেন না, কারণ এরমাত্র পচিশ বসরের মধ্যেই খোদ ইংল্যান্ডেই কিং ওফার নেতৃত্বে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো, সেখানে ইসলামি শাসন ও অর্থব্যবস্থাও চালু হলো। দীর্ঘ বাইশ বসরের প্রচেষ্টায় পোপ ও ফরাসি সম্রাটের চেষ্টায় সেই ক্ষুদ্র ইসলামি রাষ্ট্রটিকে মাত্র চল্লিশ বসর পরে নির্মূল করে তারা।

   এর পরে আক্ষরিক অর্থেই পোপ ও খৃষ্টবিশ্ব ইসলাম নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়ে এবং ইসলাম যেন আর কখনোই খৃষ্টবাদ ও ইউরোপকে হুমুকির মুখে ফেলতে না পারে, তার পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। এ লক্ষ্যে পোপের নেতৃত্বে খৃষ্টান ধর্মগুরুরা এক ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়। সেই কুটকৌশলের অংশ হিসেবে কিছুু খৃষ্টান পাদ্রি ও তাদের অনুসারীরা মুসলিম জনপদে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে কর্ডোভায়, ৮৫০ খৃষ্টাব্দে। পাদ্রিরা মুসলিম জনসমাগমপূর্ণ স্থানে মুসলমানদের সামনেই প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: কে কটুক্তি করতে থাকে। এক পর্যায়ে জুমআ’র নামাজের সময় মসজিদে ঢুকে বা আশে পাশেই প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: কে গালাগাল করতে থাকে। ফলে মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, কটুক্তিকারী পাদ্রিকে ধরে উত্তম মধ্যম দিয়ে কাজির সামনে নেয়া হলে সেখানেও সে একই কথার পূনরাবৃত্তি করে।

   এভাবে বেশকিছু ঘটনায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। জনৈক ফরাসি পাদ্রি ‘Perfectus’ হলো এ ধারা শুরুর পথিকৃৎ, যে এভাবে মৃত্যুদন্ডের মাধ্যমে নিজের প্রাণ দেয় এবং খৃষ্টসমাজে খৃষ্টবাদের উদ্দেশ্যে প্রাণোৎসর্গকারী একজন বীর হিসেবে বিবেচিত হয়।
 
    দিনে দিনে এ প্রবণতা বেড়ে যেতে থাকে। সেভিলে এরকম কিছু ঘটনা ঘটলে মুসলমান শাসকরা বুঝতে পারেন যে, খৃষ্টান পাদ্রিদের উদ্দেশ্যই হলো, কিছু অতি আবেগি খৃষ্টানদের দিয়ে এরকম ঘটনা ঘটিয়ে মার্টাইর বা শহীদি মর্যাদা পেয়ে তা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে পুরো ইউরোপব্যাপী খৃষ্টান জনমানসকে ক্ষেপিয়ে তুলতে চায়। এটা ছিল পোপের পরিকল্পিত সুইসাইড মিশন!
সেভিলের সুলতান এরকম অপরাধে অভিযুক্ত কিছু পাদ্রিকে মৃত্যুদন্ড না দিয়ে মরক্কোর সিয়োটা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠান। তাতেও সমস্যা সমাধান হয়নি। এইসব খৃষ্টান পাদ্রিরা সেখানেও একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি করে এবং জেনে বুঝে নিজেেেদর উপর মৃত্যুদন্ডের বিধান টেনে আনে। এভাবে স্বয়ং পোপের নেতৃত্বে এক উগ্র ও কুৎসিত উন্মাদনার উন্মেষ ঘটে পুরো ফ্রান্সজুড়ে।
ক্রমাগত দুইশত আটচল্লিশ বসর এভাবে খৃষ্টমানসকে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে শেষ পর্যন্ত পোপ আরবান চুড়ান্তভাবে বিশ্বের বুক থেকে মুসলমানদের নির্মূলে ক্রুসেডের ডাক দেন। ক্রুসেডের রাজনৈতিক, সামাজিক ও মনস্তাত্তিক ফল হয়েছে ভয়াবহ ও মারাত্মক।

     আজও বিশ্ব তার বিষময় ফল বয়ে চলেছে। ফ্রান্সসহ খৃষ্টবাদী বিশ্বের সাম্প্রতিক কার্যক্রম তারই ক্রমধারা মাত্র। সম্ভবত সামনে তাদের আরও কিছু নোংরা পরিকল্পনা রয়েছে ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে।
  ইউরোপকে তারা মুসলিম শুন্য করতে চায়। জাতিগত নির্মূল কার্যক্রমের ইতিহাস একমাত্র ইউরোপ ও খৃষ্টবাদেরই রয়েছে। ঠিক সেরকমই কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে খৃষ্টবিশ্ব’সহ বিশ্বের জনগণকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে সেই একই কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে আবারও। অতএব, সাবধান হে মুসলমান!
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক। 

Post a Comment

0 Comments