Recent Tube

তুমি কি জানো জাহান্নাম কি? শামীম আজাদ।

          
      
             তুমি কি জানো জাহান্নাম কি?


  মহান আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। যারা আল্লাহর বিধিবিধানকে দেয়ালে ছুড়ে মেরে পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দেয়, নিশ্চয়ই জাহান্নাম হবে তাদের আবাসস্থল। পক্ষান্তরে, যারা স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কষ্টকর হলেও আল্লাহর দ্বীনের উপর অটল থাকে, তাদের আবাসস্থল হবে জান্নাত। ইহা আল্লাহর ওয়াদা। আর নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।

   আমরা যদি আজকের সমাজের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই যে, দূর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমান দ্বীনের বিধিবিধানের তোয়াক্কা করেন না। মুসলমানই ইসলামী বিধি-নিষেধ সমূহ সম্পর্কে এমন আচরণ করেন, যেন এগুলো ‘দৈনন্দিন-ক্লান্তিকর কাজ’। যেমন : নামায পড়েন না, পর্দা মেইনটেইন করেন না, সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন-যাপন করেন না, হারাম রিলেশন কিংবা হারাম উপার্জনে লিপ্ত রয়েছেন,গান নাচে, ডিজে পার্টি-তে রাতের পর রাত কাটাচ্ছেন, বন্ধুবান্ধব এর পাল্লায় পরে মাদক নিচ্ছেন, সর্বপরি, চরম হেয়ালিপনায় জীবন পার করছেন।

   আবার এইলোকগুলিই নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিচ্ছেন যে, কালিমাহ যখন পড়েছি, খাত্না যখন করিয়েছি, একদিন জান্নাতে যাবো-ই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা জাহান্নামে কিছুকাল বা কিছুদিন পুড়িয়ে অত:পর জান্নাত দিয়ে দিবেন! সুবহান আল্লাহ! এই লোকগুলি জাহান্নাম এর আগুনকে এত তুচ্ছ করছে? সেই ভয়াবহ আগুনে কিছুদিন বা কিছুকাল থাকার মত দু:সাহস দেখাচ্ছে?

   হে প্রিয় ভাই! তুমি কি জানো জাহান্নাম কি!? ঐ শুনো মহান আল্লাহর বাণী,

আমাদের রব আল্লাহ তাআ'লা বলেন, 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে নির্মম ও কঠোর প্রকৃতির ফেরেশতা, যারা আল্লাহর কোনো আদেশ অমান্য করে না বরং যা আদেশ করা হয় তাই তারা পালন করে। (সুতরাং তারা আল্লাহর হুকুমের বাইরে কোনো অপরাধীর প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করবে এমনটা আশা করা যায় না।" 
সূরা তাহরীমঃ ৬

অন্যত্র বলেন, 
وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ فَمَن شَاء فَلْيُؤْمِن وَمَن شَاء فَلْيَكْفُرْ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاء كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءتْ مُرْتَفَقًا
"বলে দিন, এ সত্য (দ্বীন) তোমাদের প্রভুর নিকট থেকেই এসেছে। এখন যার ইচ্ছা ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা অমান্য করুণ। আমি (অমান্যকারী) জালিমদের জন্য এমন আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদেরকে ঘিরে ধরবে। তারা পানি চাইলে তাদেরকে তেলের তলানি সদৃশ পানি দেওয়া হবে, যা তাদের চেহারা ঝলসে দিবে। কত না মন্দ সে পানীয়, কত নিকৃষ্ট (সে ঠাঁই) সেই আশ্রয়।" 
সূরা কাহাফঃ ২৯

আল্লাহ তাআ'লা আরো বলেন, 
 وَسُقُوا مَاء حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءهُمْ
"তাদেরকে এমন গরম পানি পান করানো হবে, যা তাদের নাড়িভূড়ি ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে।" 
সূরা মুহাম্মদঃ ১৫

অন্যত্র বলেন, 
الَّذِينَ كَذَّبُوا بِالْكِتَابِ وَبِمَا أَرْسَلْنَا بِهِ رُسُلَنَا فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ. إِذِ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلَاسِلُ يُسْحَبُونَ. فِي الْحَمِيمِ ثُمَّ فِي النَّارِ يُسْجَرُونَ
"যারা এই কিতাবকে এবং রাসুলগণকে যা দিয়ে আমি প্রেরণ করেছি তা অস্বীকার করেছে, তারা শীঘ্রই টের পাবে। যখন তাদের গলায় বেড়ি ও শিকল পরানো হবে, গরম পানিতে হেঁচড়ানো হবে। এরপর আগুনে দগ্ধ করা হবে।" 
সূরা মুমিনঃ ৭০-৭২

আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ করেন, 
هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُؤُوسِهِمُ الْحَمِيمُ. يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ. وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ. كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ
"কাফেরদের পরানোর জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করা হবে। তাদের মাথার উপর ঢালা হবে ফুটন্ত পানি। ফলে পেটের নাড়িভূড়িসহ শরীরের চামড়া গলেগলে পড়বে। তাদের শাস্তির জন্য আরো থাকবে লোহার মুগুর। যখনই তারা এই দুঃখ-কষ্ট থেকে বের হতে চাবে, তখনি তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে আর বলা হবে, তোমরা দহন-যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকো।" 
সূরা হজ্জ্বঃ ১৯-২২

অন্যত্র বলেন, 
إِنَّ شَجَرَةَ الزَّقُّومِ. طَعَامُ الْأَثِيمِ . كَالْمُهْلِ يَغْلِي فِي الْبُطُونِ. كَغَلْيِ الْحَمِيمِ. خُذُوهُ فَاعْتِلُوهُ إِلَى سَوَاء الْجَحِيمِ. ثُمَّ صُبُّوا فَوْقَ رَأْسِهِ مِنْ عَذَابِ الْحَمِيمِ
"নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ হবে বড় পাপীদের খাবার। এটা হবে তেলের তলানির মতো। আর তা পেটে গিয়ে উথলাতে থাকাবে গরম পানির মতো। ফেরেশতাদের বলা হবে। একে পাকড়াও করে জাহান্নামের মধ্যখানে নিয়ে যাও। এরপর তার মাথায় ঢেলে দাও গরম পানির শাস্তি।" 
সূরা দুখানঃ ৪৩-৪৮

আরো বলেন, 

"পুঁজ-গলা পানি তাকে পান করতে দেওয়া হবে। সে পানি তার গলা দিয়ে নামতে চাবে না, তবু সে গিলে গিলে পান করবে। আর সব দিক থেকে মৃত্যুর বিভীষিকা তার সামনে আসতে থাকবে, কিন্তু সে মরবে না, ক্রমেই কঠিনতর আযাব আসতে থাকবে।" 
সূরা ইবরাহীমঃ ১৬-১৭

আল্লাহ তাআ'লা আরও ইরশাদ করেন, 
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُم مِّنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ. وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَا أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَاءكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ مِن نَّصِيرٍ
"যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। সেখানে তাদের উপর এমন ফায়সালা করা হবে না যে, মরে শেষ হয়ে যাবে। আবার তাদের উপর থেকে জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না। প্রত্যেক অকৃতজ্ঞদেরকে আমি এরূপেই শাস্তি দিয়ে থাকি। তারা সেখানে আর্তনাদ করে বলতে থাকবে, হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) বের করে নিন। আমরা আগে যে কাজ করতাম তার পরিবর্তে ভালো কাজ করবো। (বলা হবে) আমি কি তোমাদেরকে এ পরিমাণ আয়ু দান করিনি, যখন তোমাদের যে কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারতো? তা ছাড়া তোমাদের কাছে সতর্ককারীও তো এসেছিলো! সুতরাং এখন শাস্তি ভুগতে থাকো। এমন অনাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।" 
সূরা ফাতিরঃ ৩৬-৩৭

অন্যত্র বলেন, 
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ. لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ. وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَكِن كَانُوا هُمُ الظَّالِمِينَ
"যারা (কুফর-শিরকের অপরাধে) অপরাধী, তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না, ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়বে। তাদের উপর আমি জুলুম করিনি, বরং তারা নিজেরাই ছিলো জালিম।" 
সূরা যুখরুফঃ ৭৪-৭৬

আল্লাহ তাআ'লা আরো বলেন, 
وَمَا أَدْرَاكَ مَا سَقَرُ. لَا تُبْقِي وَلَا تَذَرُ. لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَر 
“তুমি কি জানো জাহান্নামের আগুন কী? তা কাউকে জীবিতও রাখবে না, আর মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দিবে না। চামড়া ঝলসে দিবে।” 
সূরা আল মুদ্দাসসিরঃ ২৭-২৯

প্রিয় ভাই! জাহান্নামে কিছুকাল থাকা তো দূরের কথা, কিছুক্ষণ থাকাও আমাদের পক্ষে সম্বব নয়। ঐ আগুনের লেলিহান উত্তাপ কলিজা হালাক করে দিবে। তবুও কি আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসার সময় হয়নি?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদেরকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করুন যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। আমীন।
----------------------------------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments