রাসুল সাঃ এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুনের প্রতিবাদে পাকাপোক্ত ঈমানের তেজোদৃপ্ত মিছিল, মানববন্ধন এবং ম্যাক্রোর ছবিকে জুতাপেটা করা ও বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যালোচনা।
আমি ১০০% সিউর, আজকের লেখাটি পড়ে আমাকে মুরতাদ (স্ব-ধর্ম ত্যাগকারী) আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলা জায়েজ [সহিহ বুখারী/৬৮৭৮, সহিহ মুসলিম-১৬৭৬, মাওযুয়া আল ফিকহিয়্যাহ, খন্ড-২২, পৃষ্টা নং-৮১] এর আলোকে ফতোয়া দিবেন! তাহলে দেরি না করে লেখাটি পড়ে আমাকে ‘কতল’ করে ফেলুন....😝
✓ রাসুল সঃ এর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুনের প্রতিবাদে সরল-সুবোধ মানুষগুলির পাকাপোক্ত ঈমানের তেজোদৃপ্ত মিছিল, মানববন্ধন এবং ম্যাক্রোর ছবিকে জুতাপেটা করা নিঃসন্দেহে রাসুল সঃ এর প্রতি আবেগময় ভালোবাসার একনিষ্ঠ বহি:প্রকাশ।
≫ প্রশ্ন হলো, আমরা যারা মফস্বলে/গ্রামে মিছিলে আমার নেতা তোমার নেতা ‘বিশ্ব নেতা-বিশ্ব নেতা’ বলে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে দায়িত্ব শেষ ভেবে তৃপ্তির হাসি হাসছি; আদৌ কি আমাদের দায়িত্ব শেষ!!
আরে ভাই, তাহলে আমাদের এটা ছাড়া আর কি-ই বা করার আছে বলুন। রাসুলের জন্য তো অন্তত এটা করা সবার উচিত। আপনি দেখছি ফ্রান্সের দালাল, নবীর দুশমন! (প্রশ্নটা এই মুহুর্তে আপনারা আমাকেই করে বসেছেন)
≫ জ্বী, পাল্টা প্রশ্ন- ‘কি করার আপনার ক্ষমতা নেই বলুন? আপনার বিবেক কি শুধু রাস্তায় ব্যানার-প্লেকার্ড হাতে স্লোগানে শেষ? এরকম লুজ চিন্তা চেতনার জন্য তো মহান রব আপনাকে পাঠান নি। আপনাকে শ্রেষ্ঠ জাতি (সুরা আলে ইমরান-১১০) এর আলোকে পাঠানোর মধ্যে কি শুধু এটুকু চিন্তা করার ব্যাপার জড়িত? নাকি মহান রবের একচ্ছত্র প্রতিনিধিত্ব করা আপনার দায়িত্ব?(সুরা আল বাকারা-৩০)।
✓ দেখুন, সহিহ বুখারী ১৯৪ নং হাদিসের শেষাংশের ভুল ব্যাখা আলেমদের থেকে দারুণভাবে শিখে নিয়ে গড়পড়তা ‘মনে মনে ঘৃণা করা’র কাজ চালিয়ে নেওয়াটা কতটা যৌক্তিক?
আপনার সামনে একটি ঘৃণিত বস্তু পড়ে আছে, অথচ সবাই হাদিসের শেষাংশের শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে সমানে, অর্থাৎ একনাগাড়ে ঘৃণা করেই যাচ্ছে আর দুর্গন্ধে পুরো এলাকা দুষিত হচ্ছে..! ক্যারে ভাই, ‘ফ-বিক্বালবিহি’ এর অর্থ কি মনে মনে ঘৃণা করা? আফসোস রইলো। ওটার প্রকৃত অর্থটিই হলো ‘মনে মনে ঘৃণিত ব্যাপার দূরীকরণের পরিকল্পনা করা’!
✓ আসল কথা হলো, হাজার মাইল দূরের জাতিসংঘের স্থায়ী একটি সদস্য রাষ্ট্র রাসুল সঃ এর অপমানে ব্যঙ্গ কার্টুন আঁকার কারণে আপনার আমার মনে তাদের প্রতি রাগ আর গোস্বায় রক্ত টগবগিয়ে চোখ-মুখ কটমট করে বক্তৃতা দিয়ে ফেইসবুক ফাটিয়ে ফেললাম, মাইক্রোর ফটোতে জুতা মেরে পোস্টার ছিঁড়ে ফেললাম। এতে আমাদের দু'টো লাভ হলো-
👌প্রথমত, আমরা আমাদের ঈমানী জজবা মানুষের কাছে প্রকাশ করে মহা সফলতায় বাহু-বুক ফুলিয়ে হাটছি। আল্লাহ কতটুকু কবুল করেছে সেটা বড় ব্যাপার নয়; এলাকার দেশ আর দশে ভালই কবুল করেছে সেটাই বড় ব্যাপার।
আমরা এটাকে বিশাল বড় জিহাদ ভেবে মহা আনন্দ আহ্লাদে Schedule তৈরি করছি কখন কোথায় মহা সমারোহে মানববন্ধন, মিছিল আর কুশপুত্তলিকা দাহ করবো। কেউ নাকি ফতোয়াও ছেড়েছে এসব করা যাবেনা। তাদের প্রতিও গোস্বায় মুখ ফুলে টুটটুকে লাল হয়ে গেছে আমাদের, বন্দুক হাতে পেলে তাদের আগে শেষ করতাম শালার নবীর দুশমনেরা..!
অথচ এদিকে স্বয়ং রাসুলের আদর্শকে আমরা মুসলমানেরা জবাই করে দিচ্ছি সে চিন্তা আমাদের নেই। ওদিকে দৃষ্টি দিলে ঝামেলা আছে ভাই। এ যেন সুন্নাতের পাগড়ী বাঁধতে গিয়ে ফরজের লুঙ্গি খুলে ফেললুম)
👌দ্বিতীয়ত, মুক্রো কেন? অবামা, ড্রাম্প, ভংচং সুঁচি, জুতাসংঘ সহ সবাইকে আপনি জুতাপেটা করলেও আপনাকে কেউ কোনরুপ বাঁধা তো দেবেই না বরং সবাই বাহ্বা দিয়ে আপনার রুহানি তাজাল্লির ফয়েজ হাসিল করবে!
তাহলে, যেখানে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে তোড়জোড় করলে গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যাওয়ার ভয়ে এ ব্যাপারে কোন চিন্তা-ই মগজে কোনদিন আসেনি। সেখানে আপনার এই কাজ কতটুকুই বা গ্রহণযোগ্য?
ফলে, ফেসবুকে আমরা 'বয়কট' লিখে দিয়েই সমানে ফ্রান্সের প্রোডাক্ট কিনে নিচ্ছি। (অনেকে জানেন-ই না ফ্রান্সের প্রোডাক্ট কোনগুলি!)
উপরন্তু, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া কখনোই আপনি সত্যিকার বয়কট করতে পারবেন না। কেননা, দালালচক্র ইতোমধ্যে আবেগি মুসলমানদের ব্যক্তিগত বয়কট করা প্রোডাক্ট কুড়িয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে অর্ধেক প্রাইজে বিক্রি করার মত সুখের বার্তাও আমাদের কাছে এসেছে।
সর্বোপরি, শুধু মাইক্রোকে জুতাপেটা-ঝাটাপেটা করলাম, ঐদিকে মুল দায়িত্ব রিস্কি বলে বাদ দিলাম তাহলে কিসের আমি মুসলমান? আমি তো সুবিধাভোগী মুনাফিক-বেঈমান!
—(সুরা বাকারা/আয়াত নং-৮৫, সুরা নিসা/আয়াত নং-১৫০।)
✌আসুন, ইসলাম বান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করি সাধ্যমত, ইসলামবান্ধব মানুষের হাতেই ন্যস্ত করি ক্ষমতা। “সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধাজ্ঞা জারি করার মত পরিবেশ তৈরি করার লোককে চেয়ার প্রদান করি। তবেই আমরা সফল নতুবা পার্থিব জীবনে যেমন লাঞ্ছনা আখিরাতেও..!”
[—সুরা আলে ইমরান/১০৪, সুরা তাওবা/৭১]
🙏লক্ষ মানুষের এই ঢল যদি আজ দেশে ইসলামবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় হতো, তাহলে কতইনা ভালো হতো। আজ যদি রাসুলের অপমানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মত করে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্টার কাজে সকল আলেমসমাজ ঐক্যবদ্ধ হতো, তবে এই দেশ সত্যিই একটি সোনার বাংলাদেশ হতো..আমরা সে দিনের অপেক্ষায় ইনশাআল্লাহ.!
-------------------------------------------------------------লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments