Recent Tube

অন্য কোন ধর্ম বা ধর্ম প্রচারক নয়, তাদের টার্গেট কেবল ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ সাঃ কেন? নুরুল ইসলাম।

অন্য কোন ধর্ম বা ধর্ম প্রচারক নয়, তাদের টার্গেট কেবল ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ সাঃ কেন?


 প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু কেনো? 
বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, মুসলিম-অমুসলিম, সবার মনেই এই প্রশ্ন, কেন নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নামে এত বদনাম করা হয়? কেন তাকেই অপমান করার চেষ্টা করা হয়? কেন বর্তমানে সবার কমন টার্গেট ইসলাম?

  যখন উগ্রবাদী শিবসেনা, আরএসএস, বজরং এবং বিজেপি নেতাদের ইন্ধনে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করা হয়, কিংবা রাষ্ট্রীয় মদদে কেউ অন্যায়ভাবে কাশ্মীরিদের হত্যা করে, তখন কেউ কিন্তু হিন্দু ধর্ম বা তাদের ধর্ম প্রচারককে এর জন্য দায়ী করেনি। যখন বার্মায় রাষ্ট্রীয় মদদে বৌদ্ধদের দ্বারা রোহিঙ্গাদের ওপর এমন পাশবিক গণহত্যা চালানো হলো, তখন কেউ এই গণহত্যার জন্য গৌতম বুদ্ধকে বা বৌদ্ধ ধর্মকে অপমান করার চেষ্টা করেনি!

  একই ভাবে- ১.৫ মিলিয়ন ইরাকীদের হত্যার দায় যীশুর বা খ্রীস্টান ধর্মের নেই। ফিলীস্তিনীদের ওপর ৭৫ বছর ধরে চালানো বর্বরতার দায় কিন্তু ইহুদী বা তাদের ধর্মগুরুর ওপর বর্তাচ্ছে না! 

  তো এখন প্রশ্ন হলো, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ও ইসলামের এর এত বদনাম কেন? তাঁর কি অপরাধ? কারণ হলো, নবী মুহাম্মদ (সাঃ)  অন্যদের মত শুধুমাত্র একজন ধর্ম প্রচারক ছিলেন না, পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন মহান সংস্কারক ও নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, অসহায় মানুষের মহা মুক্তি দূত। তিনি ছিলেন একজন মহা বিপ্লবী এবং অন্যায় ও জুলুমের মূলোৎপাটনকারী। তিনি আঁধার কালিমা লিপ্ত এই পৃথিবীতে এক ধরণের আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন। 

   এই কথাটি কেন বলেছি, সেই বিষয়ে কিছু তথ্য দেই , তারপর আমরা আবার মূল প্রশ্নে চলে আসবো। আপনি কি জানেন, নবী হওয়ার পর এই মানুষটি, সমাজে কি পরিবর্তন চেয়েছিলেন?

   তিনি চেয়েছিলেন, অবলা নারীর অধিকার, কন্যা শিশুর অধিকার, সমাজে জেঁকে বসা কায়েমী স্বার্থবাদীদের দ্বারা নিগৃহীত মানুষের অধিকার, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের অধিকার। সমাজ পরিবর্তনের জন্য কোরআনের আয়াতগুলিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাজালে প্রথম আয়াতটির মূল বিষয় ও আদেশ ছিল, "নারী শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া যাবে না।" 

    এরপর কিছুদিন পরই তিনি বললেন, একজন নারী তার পিতার, স্বামীর ও সন্তানের সম্পদের অংশীদার হবে।
রাসূল (সাঃ) যখন এই ঘোষনা দিলেন, তখনই তিনি সমাজপতিদের রোষানলে পড়ে গেলেন। এতো দিনের মেনে চলা এই সংস্কৃতি ও আইনের বিরুদ্ধে, এই মত তারা মেনে নিতে পারল না। জন্মগতভাবে কোন মানুষ কালো-ধলো, ধনী-গরীব, সবল-দুর্বল হলেও অধিকারগতভাবে সকল মানুষ এক সমান- এই ঘোষনাও মেনে নিতে পারল না। মানুষের গড়া মূর্তির ইবাদত করা যাবেনা এবং মানুষের তৈরী আইনের পরিবর্তে আল্লাহর আইন দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র চলবে- এই ঘোষণাও তারা মেনে নিতে পারল না।

   (কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়ার মত অপরাধ এই পৃথিবীতে এখনো আছে, আধুনিক ভারতে এখনো প্রতিদিন দুই হাজার কন্যা শিশুর এবরশন হয়। কিন্তু কত জন নারীবাদী এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন?) 

   তারপর আসলো ক্রীতদাসের কথা। তিনি জানালেন, একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ক্রীতদাস হতে পারে না। মৃত পিতার রেখে যাওয়া ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী উম্মে আইমানকে নিজের মা, আর উপহার হিসাবে পাওয়া জায়েদকে নিজের ছেলে হিসাবে যখন সমাজে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখন সারা পৃথিবীতে আলোচনা শুরু হয়ে গেলো, এই লোক আসলে কি চায়?

   ক্রীতদাস ছাড়া সমাজ ব্যবস্থা কেমন করে চলবে? অর্থনীতি কি করে আগাবে? ক্রীতদাসের দল মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করলে কি অবস্থা হবে? ব্যাস, তিনি হয়ে গেলেন সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু!

   (আজকের আধুনিক ইউরোপীয়ানদের হাজার বছরের ক্রীতদাস প্রথা অন্য ফরম্যাটে এখনো বহাল তবিয়তেই আছে। আজকের আমেরিকা আর ইউরোপ আফ্রিকার কালো ক্রীতদাসদের অস্থি-মজ্জার স্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ব্ল্যাক লাইভস ষ্টীল ডাজ নট মেটার!)

   ম্যালকম অ্যাক্সের মত বিপ্লবীরা, মুহাম্মদ আলীর মত শক্তিমান পুরুষরা যখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ভালোবাসতে শুরু করলো- তখনই তাদের মনে হলো, সব অপরাধ ঐ আরব লোকটিরই। তিনি বললেন, ধনীদের সম্পদের সুষম বন্টন হতে হবে। তাদের সম্পদের উপর গরীবদের অধিকার আছে। তিনি ঘোষণা দিলেন, সক্ষম সকল ধনীকে যাকাত দিতেই হবে। এমন কি যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যুদ্ধও ঘোষণা করা হয়েছিল।

   সমাজের ধনী ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাবানরা ভাবলো, মুহাম্মদ (সাঃ) একজন সমাজ বিপ্লবী, তাঁকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। শ্যাক্সপিয়রের শাইলকের মত লোভী সব ইহুদি মুদ্রা ব্যবসায়ীদেরকে সুদ বন্ধ করা আদেশ দিলেন তিনি। ক্ষ্যেপে গেল সমাজের জোচ্চোর ও সুদখোর মহাজনরা। নবীয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ) ধনী-গরিবের অর্থনৈতিক বৈষম্যকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেন। সবাই ভাবলো, মুহাম্মদ (সাঃ) একজন সোশ্যালিস্ট, তাঁকে মেরে ফেলতে হবে। তিনি নিজের অনুসারীদেরকে বললেন- তোমরা আর মদ পান করবে না, সমাজে অন্যায়-অবিচার কমে গেল। চুরি-ডাকাতি কমে গেল।

  মাতাল স্বামীর সংখ্যা কমে যাওয়ায়, নারী নির্যাতন প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করা ও সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ওপর তিনি কুরআনের নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। অসভ্য পুরুষের মনে হিংসা শুরু হল, এ লোক পাগল নাকি? মদ খাবে না, নারীকে নিয়ে ফুর্তি করবে না! সে কোন ধরণের সমাজ চায়? মাদক ব্যবসায়ী ও নারীবাজরা একজোট হয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে ঠেকানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করলো। 

   অসহায় মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ নিয়ে জুয়ার আসরে নিষেধাজ্ঞা আসল। মুহাম্মদের (সাঃ) আর কোন রক্ষা নেই। সে বড় বেশি বাড়াবাড়ি করছে। জুয়ার ব্যবসা ছাড়া সমাজে বিনোদনের আর কি রইলো? মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ঘর ছাড়া করতে হবে। তার সব আয় রোজগার বন্ধ করতে হবে। 

   তো এখন কি বুঝতে পারছেন, কেন মুহাম্মদের (সাঃ)-এর এতো অপরাধ? এই যে এখন, নবী মুহাম্মদকে (সাঃ)-কে এতো বছর পর অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে ও হচ্ছে তার কি কারণ? শুধুই কী "ফ্রীডম অব স্পীচ?" নো, নেভার! এর পেছনে লুকিয়ে আছে বাতিল, ত্বগুত ও শয়তানের অ্যাজেন্টদের ঘৃণিত জিঘাংসা ও রিরাংসা।  

    যে মানুষটির অনুসারীরা শুধু ভালোবাসা দিয়ে এক সময় আফ্রিকা বিজয় করেছিল সেই আফ্রিকার ২৪টি দেশের মধ্যে শত বছরের কলোনিয়াল নির্যাতন, নিপীড়ন ও শোষণ থেকে যখন আলজেরিয়া ও তিউনেশিয়ার মত দেশগুলি অর্থনৈতিক ও রাজনৌতিক মুক্তি চেয়েছে, তখনই নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কলোনিয়ালিস্টদের নিকট হয়ে গেলেন বড় অপরাধী। অন্যায়, জুলুম, অন্যায্যতা ও বে-ইনসাফীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখানোই হল নবী (সাঃ)-এর অপরাধ।

    অন্যায়ভাবে লক্ষ-লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার পর অবশিষ্ট অসহায় ও নিরপরাধ মানুষগুলোকে নিজের ক্রীতদাস করে রেখে যে সম্পদের পাহাড় তারা এক সময় গড়েছে, সেটি যখন পুনরায় হুমকির মুখে তখনই সব রাগ ও ক্ষোভ এসে জমা হয়েছে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসারীদের ওপর। এখন নবীকে অপমান করতে হবে, তাঁর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করতে হবে। কারণ নবী তো তাঁর অনুসারীদেরকে বে-ইনসাফীর বিরুদ্ধে লড়াই করা শিখিয়ে গেছেন।

   তারপর আফ্রিকাতে আবার জঙ্গী দমানোর জন্য ন্যাটো বাহিনীকে পাঠাতে হবে। কিন্তু তারা পারবে না। পিউ রিসার্চের গবেষণা অনুযায়ী, শুধু ইউরোপেই প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। আপনি দেখবেন কিছু দিন পর এই সংখ্যা হবে দশ হাজার।

    কারণ হলো- এই ঘটনার পর মানুষ জানতে চাইবে, কে এই মুহাম্মদ (সাঃ)? প্রথমেই সে জানবে মানুষটি শুধু আমাদেরকে মনে প্রাণে একজন মাত্র সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসতে বলেছেন, মানুষরূপী কোন খোদার নিকট মাথানত করতে কঠোরভাব বারণ করেছেন।

    একজন মানুষের জন্য শুধু এ টুকু জানাই যথেষ্ট। এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে সূর্যের আলোকে দেখতে না চায়, তাহলে কি সূর্য তার আলো দেয়া বন্ধ করে দিবে, নাকি সূর্যের আলো হারিয়ে যাবে? নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন এই পৃথিবীতে সেই আলো- যার রোশনাই চিরকাল অমর, অজয়, অব্যয় ও অক্ষয় হয়ে থাকবে। 

   এই আলোকে কেউ লুকিয়ে রাখতে পারবে না। "Truth is Truth" ইউ ডিনাই অর ইউ অ্যাকসেপ্ট। এই নূরকে নির্বাপিত করতে চাওয়ার দল নিজেরাই এক সময় অনিবার্যভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

 [বি দ্রঃ- মূল লিখাটি কার জানি না, এক্ষণে লিখাটি বিশদ আকারে পরিমার্জন ও সংযোজন করে নিজের ওয়ালে দিলাম।]
---------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments