♨️ তাবীজ শির্ক 📛
--------------------------
ঈমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে তামা/ স্বর্ণের আংটি দেখে বললেন,
وَيْحَكَ مَا هَذِهِ ؟
” قَالَ: مِنَ الْوَاهِنَةِ، قَالَ:
” أَمَا إِنَّهَا لَاتَزِيدُكَ إِلَّا وَهْنًا، انْبِذْهَا عَنْكَ، فَإِنَّكَ لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَمَا أَفْلَحْتَ أَبَدًا
“ধ্বংস তোমার, এটা কী? সে বলল: অহেনার অংশ। তিনি বললেন: মনে রেখ, এটা তোমার দুর্বলতা ব্যতীত কিছু বৃদ্ধি করবে না, এটা তোমার থেকে ছুড়ে মার, কারণ তুমি যদি মারা যাও আর এটা তোমার উপর থাকে, তুমি কখনো সফল হবে না”
(মুসনাদে আহমদ: (১৯৫৪৯), নাসায়ী: (৯/৩৪৯),ইবনে মাজাহ: (৩৫৩১), ইবনে হিব্বান: (৬২২২),হাদীসটি সহীহ)
উকবা বিন আমির আল-জোহানি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একদল লোক উপস্থিত হল।তাদের নয়জনকে তিনি বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন, আর তাকে ত্যাগ করলেন? তিনি বললেন:
إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيمَةً “، فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا، فَبَايَعَهُ، وَقَالَ: ” مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
“তার উপর তাবীজ রয়েছে, তিনি স্বীয় হাত বের করে তা ছিঁড়ে ফেললেন, অতঃপর তাকে বায়আত করলেন, এবং বললেন যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল।
(মুসনাদে আহমদ: ১৬৯৬৯)
একদা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জনৈক ব্যক্তির হাতে জ্বরের তাগা দেখে কেটে ফেললেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:
﴿ وَمَا يُؤۡمِنُ أَكۡثَرُهُم بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشۡرِكُونَ ١٠٦ ﴾
[يوسف: ١٠٥]
“তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে,তবে শিরক করা অবস্থায়”
সূরাহ ইউসুফ আয়াত১০৬) তাফসীরে ইবনে কাসীর)
এ ঘটনা প্রমাণ করে তাগা ব্যবহার করা শিরক।
আবু বশির আনসারি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সফর সঙ্গী ছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন, -মানুষেরা তখন ঘুমের বিছানায় ছিল-,
أَنْ لَا يَبْقَيَنَّ فِي رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلَادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلَادَةٌ إِلَّاقُطِعَتْ
“কোনো উটের গলায় সুতার মালা (ধনুকের ছিলা) বা কোনো প্রকার মালা রাখা যাবে না, অবশ্যই কেটে ফেলা হবে”
(সহীহ আল বুখারী: ৩০০৫), সহীহ মুসলিম: ২১১৮)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের গলার সুতা ও মালা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাবীজ ঝুলানোর উপায় অবশিষ্ট না থাকে।
আবু ওয়াহহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
وَارْتَبِطُوا الْخَيْلَ، وَامْسَحُوا بِنَوَاصِيهَا وَأَكْفَالِهَا،وَقَلِّدُوهَا وَلَا تُقَلِّدُوهَا الْأَوْتَارَ
“তোমরা ঘোড়া বেঁধে রাখ, তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলাও এবং তাকে লাগাম পরাও, তবে সুতা/ মালা পরিয়ো না।
(সুনানে নাসায়ী সুগরা: ৩৫৬৫), মুসনাদে আহমদ: ১৮৫৫২)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী জয়নব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বলেন,এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা, এতে ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে। তিনি তা কেটে ফেললেন এবং বললেন,আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
"অবশ্যই রুকা এবং তাবীজ এবং যাদু শির্ক"
(আবু দাউদ: ৩৮৮৩),
আহমদ: (৩৬০৪),
ইবনেহিব্বান: ৬০৯০),
ইবনে মাজাহ: ৩৫৩০),
নোট: রুকা অর্থ নিষিদ্ধ ঝাড়-ফুঁক, আউনুল মাবুদ, হাদীস নং: ৩২৭২)
এসব দলিল বলে, রোগ-ব্যাধি দূর বা প্রতিরোধ করার জন্য মানুষ বা জীব-জন্তুর শরীরে, কিংবা ক্ষেত-খামারে তাবীজ, তাগা, কড়ি ও সুতা ইত্যাদি ব্যবহার করা শিরক।
কারণ, তামীমাহ যাতীয় বস্তুর উপর নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলো ব্যাপক,
তাই সবধরণের তাবীজ শিরক।
দ্বিতীয়ত যেসব দলিলে তাবিজের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাতে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি,যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুঁক বৈধ বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
اِعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ
“তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ কর, ঝাড়-ফুঁকে কোনো সমস্যা নেই, যদি তাতে শিরক না থাকে”
(সহীহ মুসলিম ২২০২),
ইবনে হিব্বান ৬০৯৪)
এ হাদিসে যেরূপ কুরআনুল কারিমের তাবিজকে পৃথকভাবে বৈধ বলা হয়নি, যেমন শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুককে বৈধ বলা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবিদের জীবনে তাবীজের কোনো প্রমাণ নেই। হাদীসের পাঠকমাত্র দেখবে, দুআ ও যিকর সংক্রান্ত সকল হাদীসের ভাষা হচ্ছে, ‘যে ইহা বলবে’,অথবা ‘ ইহা পড়বে’ ইত্যাদি; একটি হাদীসেও নেই ‘যে ইহা লিখে রাখবে’, অথবা কোমরে হাতে গলায় বাঁধবে ঝুলাবে বলা হয়নি।
শিরক ও পাপের পথ বন্ধ করার স্বার্থে সকল তাবীজের উপর নিষেধাজ্ঞা জরুরি।
তাবীজ একটি জড়-বস্তু, তার সাথে রোগ-মুক্তির কোনোসম্পর্ক নেই। তাবীজকে রোগ মুক্তির উপায় সাব্যস্ত করারজন্য অবশ্যই দলিল প্রয়োজন, তার পক্ষে কোনো শরীয় দলীল নেই। কারো রোগ-ব্যাধি হলে শরয়ী ঝাড়-ফুঁক করা সুন্নত, যেমন জিবরীল আলাইহিস সালাম নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে করেছেন, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদেরকে এই শিক্ষাই দিয়েছেন,
এটাই বৈধ ও শরীয়ত অনুমোদিত পন্থা।
বৈধ ঝাড়-ফুঁকের বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ, যদি তার দ্বারাআরোগ্য লাভ হয় এবং সুন্নত মুতাবিক ঝাড়-ফুঁক করা হয়; যেমন সাহাবীগণ বিনিময় গ্রহণ করেছেন, কিন্তু আমাদের সমাজের একশ্রেণীর আলেম তাবীজ দেন ও আরোগ্যলাভের পূর্বেই বিনিময় গ্রহণ করেন। তারাও দলীল হিসেবে বুখারী শরীফের হাদীসটি পেশ করেন, অথচ সেখানে স্পষ্টআছে সাহাবিগণ তাবীজ দেননি, বরং সূরা আল ফাতিহাহ পাঠকরেছেন এবং আরোগ্য লাভ করার পর বিনিময় গ্রহণকরেছেন, আগে নয়।
অতএব এ হাদীসকে তাবীজ দেওয়া ও তার বিনিময় গ্রহণ করার দলীল হিসেবে পেশ করা অপব্যাখ্যা ব্যতীত আর কিছুই নয় هداهم الله
0 Comments