Recent Tube

খারেজী বনাম মাদখালী আহলে হাদীস: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

 খারেজী বনাম মাদখালী আহলে   হাদীস: 
 ------------------------------------
  ইসলামের প্রথম বাতিল দল খারেজী ফিরকা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ওফাতের পর খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রাঃ) এর খিলফাতকালে এই দলটির উত্থান হয়। এই দলটি সম্পর্কে আল্লাহ তাঁর রাসুল (সাঃ) কে আগে ভাগেই জানিয়েছিলন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের নিকট এই দলটি সম্পর্কে বিস্তারিত ভবিষ্যত বাণী করে যান যাতে উম্মাতে মুহাম্মাদী সচেতন হতে পারে। কয়েক দশক পরেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ভবিষ্যৎ বাণী সত্য প্রমাণিত হয় এবং খারেজীদের আত্বপ্রকাশ ঘটে। এরপর যুগ যুগ ধরে এই খারেজীরা মুসলিমদের মধ্যে ফিতনা ফাসাদ করেই যাচ্ছে। হযরত আলী (রাঃ) এর জামানা থেকে আজও পৃথিবীতে খারেজী বিদ্যমান। খারেজীদের হাতেই ইসলামী খিলাফাত ধ্বংস হয়। তাদের কারণেই বর্তমানে খিলাফাতের যে সূর্য পুনরায় জেগে উঠেছিল তা অস্তমিত হওয়ার পথে। এক কথায় ইসলামী খিলাফাত তথা ইকামতে দ্বীনের সবচেয়ে বড় দুমশন খারেজী। যার কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘খারেজীরা জাহান্নামের কুকুর’। (ইবনে মাজাহ হা: ১৭৩; মিশকাত হা: ৩৫৫৪)
.
 খারেজী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কতিপয় ভবিষ্যৎবাণী: 
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন,
ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﻫْﻮَ ﻳَﻘْﺴِﻢُ ﻗَﺴْﻤًﺎ ﺃَﺗَﺎﻩُ ﺫُﻭ ﺍﻟْﺨُﻮَﻳْﺼِﺮَﺓِ، ﻭَﻫْﻮَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻲ ﺗَﻤِﻴْﻢٍ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻋْﺪِﻝْ. ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻭَﻳْﻠَﻚَ، ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻌْﺪِﻝُ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻢْ ﺃَﻋْﺪِﻝْ ﻗَﺪْ ﺧِﺒْﺖَ ﻭَﺧَﺴِﺮْﺕَ ﺇِﻥْ ﻟَﻢْ ﺃَﻛُﻦْ ﺃَﻋْﺪِﻝُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋُﻤَﺮُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﺋْﺬَﻥْ ﻟِﻲ ﻓِﻴﻪِ، ﻓَﺄَﺿْﺮِﺏَ ﻋُﻨُﻘَﻪُ. ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺩَﻋْﻪُ ﻓَﺈِﻥَّ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑًﺎ، ﻳَﺤْﻘِﺮُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺻَﻼَﺗَﻪُ ﻣَﻊَ ﺻَﻼَﺗِﻬِﻢْ ﻭَﺻِﻴَﺎﻣَﻪُ ﻣَﻊَ ﺻِﻴَﺎﻣِﻬِﻢْ، ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻻَ ﻳُﺠَﺎﻭِﺯُ ﺗَﺮَﺍﻗِﻴَﻬُﻢْ، ﻳَﻤْﺮُﻗُﻮﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻤْﺮُﻕُ ﺍﻟﺴَّﻬْﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﻣِﻴَّﺔِ-
‘আমরা রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গণীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বনু তামীম গোত্রের ‘যুল খুওয়াইছারা’ নামক এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ইনছাফ করুন’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তাহ’লে কে ইনছাফ করবে? আমি যদি ইনসাফ না করি, তাহ’লে তো তুমি ক্ষতিগ্রস্ত ও নিষ্ফল হবে। ওমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, ‘ওকে যেতে দাও। তার কিছু সঙ্গী-সাথী রয়েছে। তোমাদের কেউ তাদের সালাতের তুলনায় নিজের সালাত এবং তাদের সিয়ামের তুলনায় নিজের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নদেশে প্রবেশ করে না। এরা দ্বীন থেকে এত দ্রুত বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ৩৬১০; মুসলিম হা: ১০৬৪; মিশকাত হা: ৫৮৯৪)
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻭَﻟَّﻰ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻥَّ ﻣِﻦْ ﺿِﺌْﻀِﺊِ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻻَ ﻳُﺠَﺎﻭِﺯُ ﺣَﻨَﺎﺟِﺮَﻫُﻢْ، ﻳَﻤْﺮُﻗُﻮﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ ﻣُﺮُﻭﻕَ ﺍﻟﺴَّﻬْﻢِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﻣِﻴَّﺔِ، ﻳَﻘْﺘُﻠُﻮﻥَ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ ﻭَﻳَﺪَﻋُﻮﻥَ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻷَﻭْﺛَﺎﻥِ، ﻟَﺌِﻦْ ﺃَﺩْﺭَﻛْﺘُﻬُﻢْ ﻷَﻗْﺘُﻠَﻨَّﻬُﻢْ ﻗَﺘْﻞَ ﻋَﺎﺩٍ -
‘লোকটি চলে যাওয়ার পর রাসূল (সাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে যারা কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বের হয়ে যায়। তারা মুশরিকদেরকে ছেড়ে দিবে এবং মুসলিমদেরক হত্যা করবে। যদি আমি তাদেরকে পাই তাহলে আদ জাতির মত তাদেরকে হত্যা করব’। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪৩২; মুসলিম হা: ১০৬৪; মিশকাত হা: ৫৮৯৪)
.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ সম্পর্কে আরো বলেন,
ﺳَﻴَﺨْﺮُﺝُ ﻗَﻮْﻡٌ ﻓِﻰ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺰَّﻣَﺎﻥِ، ﺣُﺪَّﺍﺙُ ﺍﻷَﺳْﻨَﺎﻥِ، ﺳُﻔَﻬَﺎﺀُ ﺍﻷَﺣْﻼَﻡِ، ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮِ ﻗَﻮْﻝِ ﺍﻟْﺒَﺮِﻳَّﺔِ، ﻻَ ﻳُﺠَﺎﻭِﺯُ ﺇِﻳﻤَﺎﻧُﻬُﻢْ ﺣَﻨَﺎﺟِﺮَﻫُﻢْ -
‘শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্পবয়স্ক যুবক ও নির্বোধ। তারা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে
আবৃত্তি করবে। অথচ তাদের ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না...’(বুখারী হা: ৬৯৩০; মিশকাত হা: ৩৫৩৫)
.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল
(সাঃ) অন্যত্র বলেন,
ﻳَﺨْﺮُﺝُ ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﻗِﺒَﻞِ ﺍﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ ﻭَﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻻَ ﻳُﺠَﺎﻭِﺯُ ﺗَﺮَﺍﻗِﻴَﻬُﻢْ، ﻳَﻤْﺮُﻗُﻮﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻤْﺮُﻕُ ﺍﻟﺴَّﻬْﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﻣِﻴَّﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻌُﻮﺩُﻭﻥَ ﻓِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻌُﻮﺩَ ﺍﻟﺴَّﻬْﻢُ ﺇِﻟَﻰ ﻓُﻮﻗِﻪِ.
‘পূর্বাঞ্চল থেকে একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ধনুক শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারা আর দ্বীনের মধ্যে ফিরে আসবে না, যেমনভাবে ধনুক ছিলায় ফিরে আসে না। (বুখারী হা: ৭৫৬২)
.
মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মধ্যে মতানৈক্য ও ফিরক্বা সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় এমন এক সম্প্রদায় বের হবে, যারা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে আর কাজ করবে মন্দ। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমনভাবে তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং যুদ্ধে তাদের দ্বারা শাহাদত বরণ করবে। তারা মানুষকে আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকবে অথচ তারা আমার কোন আদর্শের উপরে প্রতিষ্ঠিত নয়। যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, সে অপরাপর উম্মতের তুলনায় আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হবে’। (আবু দাউদ হা: ৪৭৬৫; মিশকাত হা: ৩৫৪৩) 
.
খারেজীদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য ও আলামত :
০১. খারেজীরা ইসলামের নামে মিথ্যা দোহায় দিয়েই ইসলামী খিলাফাত তথা দ্বীন কায়েমের বিরোধীতা করে। যেমন তারা খলিফাতুল মুসলিমীন আলী (রাঃ)-এর খিলাফাতের বিরোধীতা করেছিল। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৭/৩০৫) 
মাদখালী নব্য আহলে হাদীসরাও ইসলামের দোহায় দিয়ে ইকামতে দ্বীনের বিরোধীতা করে। সার্বিকভাবে দ্বীন কায়েমকারীদের তারা 'রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী, ক্ষমতা লোভী' বলে ব্যঙ্গ করে। (গালীব, তিনটি মতবাদ। পৃঃ ৪১ ও ৫১; মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ১৪৭ খিলাফাতের বিরোধীতা করতে গিয়ে তারা নবী রাসূলদের বিরুদ্ধেও মিথ্যাচার করে বলেন, কোন নবী রাসূল একদিনের জন্যেও রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক হননি। (ইকামতে দ্বীন পথ ও পদ্ধতি, পৃঃ ১৩; ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ২১০)

০২. খারেজীরা إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ-
‘আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান নেই' (সূরা আনআম ৬/৫৭; ইউসুফ ১৩/৪০, ৬৭) এ আয়াতাংশের অপব্যাখ্যা করে মীমাংসার ক্ষেত্রে প্রতিনিধি নিযুক্ত করার অপরাধে(!) আলী (রা) ও তাঁর অনুসারীদের কাফির বলে ফতোয়া দিয়ে খিলাফাতের বিরোধীতা করে।
মাদখালী আহলে হাদীসেরাও কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের অপব্যাখ্যা করে গণতান্ত্রিক ভাবে জনগণের ভোট তথা মতামতের আলোকে শাসক নির্বাচন করাকে কুফুরী বলে ফতোয়া দিয়ে ইকামতে দ্বীনের বিরোধীতা করে। (মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ১৮৫-১৮৭)

০৩. খারেজীরা একমাত্র নিজেদেরকেই জান্নাতী বলে মনে করে। যেমন তারা নাহ্রাওয়ানের যুদ্ধের ময়দানে পরস্পরকে ‘জান্নাতমুখী’ ‘জান্নাতমুখী’ বলে ডাকছিল’। (আল-বিদায়া ১০/৫৮৭)
মাদখালী আহলে হাদীসরাও একমাত্র নিজেদের জান্নাতপ্রাপ্ত দল বলে থাকে। এ বিষয়ে তাদের অসংখ্য বক্তৃতা ও লিখনী আছে। (গালীব, ফিরকা নাজিয়াহ, পৃঃ ১৬-১৮; জিহাদ ও কিতাল, পৃঃ ৯৪; আহলে হাদীছ আন্দোলন কি ও কেন, পৃঃ ১৩-১৭; মুযাফফর, আহলে হাদীছের সংগ্রমী চেতনা, পৃঃ ২৩-২৪)

০৪. খারেজীরা তাদের মতের বিপক্ষে সকল মানুষকে প্রত্যক্ষ ভাবে কাফির বলে।
আহলে হাদীসেরারাও তাদের মতের বাহিরের লোকদের বিদয়াতী ও জাহান্নামী এমনকি আহলে হাদীস মতবাদের বাহিরের সকল ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে তাগুতের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবী করে। (মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ১৭১, ১৭৩)

০৫. তারা বাহ্যিকভাবে সুন্দর কথা বলবে কিন্ত সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ করবে। (বুখারী হা: ৫০৫৭; মুসলিম হা: ২৪৬২; আবুদাঊদ হা: ৪৭৬৭; আহমাদ হা: ২০৪৪৬)
মাদখালী আহলে হাদীসের সবচেয়ে বড় নিকৃষ্ট কাজ হল- খিলাফাত তথা ইসলামী শাসন কায়েমের বিরোধীতা করা; নিজেদের একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দল বলা এবং অন্য সকল মুসলিমদের জাহান্নামী বলে মনে করা। (গালীব, ফিরকা নাজিয়াহ পৃঃ ১৬-১৮; জিহাদ ও কিতাল, পৃঃ ৯৪; আহলে হাদীছ আন্দোলন কি ও কেন, পৃঃ ১৩-১৭; মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ১৭১, ১৭৩; আহলে হাদীছের সংগ্রমী চেতনা, পৃঃ ২৩-২৪)

০৬. তারা হবে নবীন, তরুণ ও নির্বোধ, অথচ নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী ভাববে। (বুখারী হা: ৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩৪; মুসলিম হা: ২৪৬২, ২৪৬৯)
মাদখালী আহলে হাদীসের সদস্য অধিকাংশ নবীন ও তরুণ। আর তারা এতটাই নির্বোধ যে, ইকামতে দ্বীন মানে তওহীদ কায়েম বলে দ্বীন ইসলামের অন্যান্য সকল বিধানকে অস্বীকার করে। (মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ১৪৬; গালীব, ইকামতে দ্বীন: পথ ও পদ্ধতি, পৃঃ ১১)

০৭. তাদের ঈমান ও সালাত তাদের গ্রীবাদেশ অতিক্রম করবে না। (মুসলিম হা: ২৪৬২)
মাদখালীদেরও একই অবস্থা। ঈমান ও সালাতের দাবী হল- বান্দা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট মাথা নত করতে এবং গোলামী করতে পারে না। তাই বান্দার দায়িত্ব হল- তাগুতী, কুফুরী বিধান অপসরণ করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আহলে হাদীসগণ তাগুতী, কুফুরী শাসনেই সন্তুষ্ট। তাই তারা ইকামতে দ্বীনের বিরোধীতা করে। (আব্দুর রাজ্জাক, কে বড় লাভবান, পৃঃ ১৯০-১৯১; মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ১৪৭)

০৮. তারা দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে, এমনকি দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে। (বুখারী হা: ৩৬১০; মুসলিম হা: ২৪৫১; আহমাদ হা: ৭০৩৮; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ, হা: ৯২৯-৯৩০) পথভ্রষ্ট হওয়ার পর এরা দ্বীন থেকে এত দ্রুত বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। (বুখারী হা: ২৪৬২, ৩৬১০; মুসলিম হা: ১০৬৪; মিশকাত হা: ৫৮৯৪) 
মাদখালীরাও দ্বীন নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে এবং তওহীদের বাহিরে রিসালাত, আখিরাত সহ ইসলামের অন্যান্য ইবাদত ও বিধানকে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বলে স্বীকার না করার ফলে খারেজীদের মত একই অবস্থা হয়েছে। (মুযাফফর, ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন, পৃঃ ১৪৬; গালীব, ইকামতে দ্বীন: পথ ও পদ্ধতি, পৃঃ ১১)

০৯. তারা হবে ইবাদতে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী কিন্তু নিজেদের ইবাদতের জন্য হবে অহংকারী। লোকেরা তাদের ইবাদত দেখে অবাক হবে। (আহমাদ হা: ১২৯৭২; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ হা: ৯৪৫)
ইবাদত নিয়ে বর্তমানে আহলে হাদীসের বেশি অহংকারী কেউ আছে বলে আমার জানা নাই। একমাত্র আহলে হাদীস ছাড়া কেউ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে না বলে অহংকারের সাথে ঢেকুর তোলে। (মুযাফফর, জাল হাদীছের কবলে রাসূল (সাঃ) এর ছালাত, পৃঃ ২৪; ভ্রান্তির বেড়াজালে ইকামতে দ্বীন পৃঃ ১৫৯-১৬১)

১০. খারেজীরা ইবাদতের ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করে। (আহমাদ হা: ১২৯৭২; বায়হাক্বী, মাজমা যাওয়ায়েদ ২২৯/৬)
মাদখালী আহলে হাদীসেরাও ইবাদতে কঠোরতা আরোপ করে। তারা রফউল ইয়াদাঈন,  জোড়ে আমিনের মত ইখতিলাফি বিষয়কে ফরজের মত গুরুত্ব দেয়, কিরাত পাঠ কালে যেখানে কুরআন হাদীসে শ্রবণ করা ও চুপ থাকার নির্দেশ দিয়েছে ( সূরা আ'রাফ :৭/২০৪; সহীহ মুসলিম হা: ৭৯০, ইবনে মাজাহ হা: ৮৪৬, ৮৬৭; ইবনে আবী শাইবা হা: ৩৮২০) সেখানে তারা ইমাম কিরাত পাঠ কালীন ইমামের পিছনে ফাতিহা পড়াকে ফরজ বলে, বুকের উপর হাত বাঁধার সকল হাদীস জাল বা যঈফ হওয়ায় ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে কায়্যুম সহ প্রমুখ মুহাদ্দিস ও ফকিহ বুকে হাত বেধে সালাত আদায় করা মাকরূহ বলেছেন (আবু দাউদ, মাসাইল আহমদ, পৃঃ ৩১, ইবনুল কাইয়্যুম, বাদাইউল ফাওয়ায়িদ ৩/৯১-৯২; মুকবিল ও শায়ি, আল-ইলাম, পৃঃ ১৭) আর তারা সেই মাকরূহ কে একমাত্র সুন্নাত বলে দাবী করে (দেখুনঃ তাদের সালাত বিষয়ক বইগুলো) ভাগে কুরবানী করার বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ইজমা রয়েছে এবং এ বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তারপরও তারা ভাগে কুরবানী করাকে নাজায়েজ বলে মনে করে। (গালীব, মাসাইলে কুরবানী ও আক্বীকা, পৃঃ ১৯-২০)

১১. তারা মুসলিমদের হত্যা করবে আর কাফের, মুশরিক ও মূর্তিপূজারীদের ছেড়ে
দিবে। (বুখারী হা: ৩৬১০; মুসলিম হা: ২৪৫১) 
মাদখালী আহলে হাদীসরাও মুসলিমদের বিশেষ করে যে সব মুসলিম খিলাফাত কায়েম করতে চায়, তাদের বিরোধীতা করে এবং জালিম, ফাসিক ও মুশরিকদের পক্ষাবলন করে।

১২. তারা মানুষকে কিতাবুল্লাহর দিকে আহবান করবে। কিন্তু সে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞানই থাকবে না। অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ দিয়ে দলীল গ্রহণ করবে। কিন্তু না বুঝার কারণে দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে ভুল করবে। কুরআন ও সুন্নাহ দিয়েই কথা বলবে কিন্তু অপব্যাখ্যা করবে। (বুখারী হা: ৩৪১৫; আবু দাঊদ হা: ৪৭৬৫; আহমাদ হা: ১৩৩৩৮; মিশকাত হা: ৩৫৪৩) 
আহলে হাদীসেরাও কুরআন সুন্নাহ দিয়েই কথা বলে কিন্তু অপব্যাখ্যা করে। তাদের আলোচনা ও লেখনী দেখলে সচেতন মুসলিমের নিকট তার প্রমাণ মিলবে। কাজী ইবরাহীম দীর্ঘদিন তাদের সাথে থেকে পরবর্তীতে বের হয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, আহলে হাদীস শিরকে আকবরে লিপ্ত।

১৩. ওরা এমন জাতি যাদের অন্তরে রয়েছে বক্রতা। (মুসনাদে আহমাদ হা: ২২৩১৩) বর্তমানে মতিউর রহমান মাদানীসহ আহলে হাদীসের নেতাদের প্রতি লক্ষ্য করলে এর প্রমাণ পাবেন।

১৪. তাদের উৎপত্তি পূর্ব দিক থেকে হবে। (বুখারী হা: ৭১২৩) আহলে হাদীসের উৎপত্তিও পূর্ব দিক থেকে।

১৫. তাদের আগমন ঘটবে শেষ যামানায়। (আবুদাঊদ হা: ৪৭৬৯) মাদখালী আহলে হাদীসেরও আগমন ঘটেছে শেষ জামানায়। 

১৬. অতীতের খারেজী সম্প্রদায়রা ইসলামের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) কাফির বলে মনে করত। খারেজী সম্প্রদায়ের সাথে হযরত আলী (রাঃ) বিশাল যুদ্ধে উনি খারেজীদের পরাজিত করেন। তাই খারেজীরা হযরত আলী (রাঃ) এর বিরোধীতা করে এবং যারা উনার প্রশংসা করে তাদেরকে শিয়া- সূফী মনে করে। অতীতের খারেজী সম্প্রদায়রা উনার বিরোধীতা করত directly আর এখনকার খারেজিরা করে indirectly।

১৭. ইমাম হাসান হোসেন (রাঃ) রাসুল (সঃ) এর দৌহিত্র জান্নাতের পুরুষদের সর্দার ইমাম হাসান হোসেন খারেজীদের চোখের কাটা। অতীতের খারেজীরা ডাইরেক্টলি ইমাম হাসান হোসেনের বিষাদগার করত। বর্তমান খারেজীরা তাদের বিষাদগার করার সাহস পাই না বটে তবে তাদের প্রশংসাকারীদের শিয়া বলে অভিহিত করে।

১৮. খারেজীরা ইয়াজিদকে পাক্কা মুসলিম ও খলিফা মনে করে। কারণ খারেজীদের জানের দুশমন ইমাম হাসান হোসেনকে হত্যা করার পিছনে ইয়াজিদের হাত ছিল। খেয়াল করলে দেখবেন মাদখালী আহলে হাদীসেরা ইয়াজিদকে খলিফা বলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।

১৯. ইমাম আবু হানিফা(রঃ) এর সাথে খারেজী-মুতাজিলা সম্প্রদায়ের অনেক বাহাস হয়েছিল। সে সবের একটি বাহাসেও খারেজীরা উনার সাথে পেরে উঠে নি। তাই খারেজীরা উনাকে পছন্দ করত না ও উনার নামে বানোয়াট কথা ছড়াত। আজকের আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের অনেকেই উনাকে পছন্দ করে না ও উনার নামে বানোয়াট কথা ছড়ায়।

২০. বর্তমান সৌদি রাজতন্ত্রে জন্ম হয়ছে খিলফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, মুসলিম সম্রাজ্য ভেঙ্গে খান খান করে। এছাড়াও সৌদি রাজারা কাফেরদের প্রতি কি পরিমাণ নমনীয় ও মুসলিমদের প্রতি কি পরিমাণ কঠোর তা সকলেরই জানাশুনা। মুসলিমদের জানের দুশমন আমেরিকা হচ্ছে সৌদিদের প্রভু। এরা আল্লাহর পরিবর্তে আমেরিকাকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। আর বর্তমান জামানায় মাদখালী আহলে হাদীস সৌদি রাজতন্ত্র পূজারী।
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা আলোচক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments