Recent Tube

জামায়াত, চরমোনাই ও দেওয়ানবাগীর আকিদাঃ;

জামায়াত, চরমোনাইদেওয়ানবাগী আকিদাঃ
-------------------------------------
 দেওয়ানবাগীর পীর মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে তোলপার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে চরমোনাই পীর আকিদার আদালতে জামায়াতকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়ে বলেছে পৃথিবীর সবাই জামায়াত করলেও চরমোনাই জামায়াত করবে না। সবাই জামায়াতের সাথে ঐক্য করলেও চরমোনাই করবে না। এর প্রধাণ কারণ হল- জামায়াত চরমোনাই আকিদা লালন করে না। আমরাও জানি বাতিলশক্তি ইকামতে দ্বীনকে ঠেকাতে জামায়াতের বিপক্ষে যত দলকে মাঠে নামিয়েছে তার প্রধান দল চরমোনাই। তাই জামায়াতের সাথে চরমোনাই ঐক্য অসম্ভব বলা যেতে পারে। যাইহোক, চরমোনাই যেহেতু আকিদার প্রশ্ন তুলেছে এবং আমাদের অনেক লোক ধারণা করে যে, এদেশে সবচেয়ে বড় ভণ্ডপীর দেওয়ানবাগী আর বড় হক্কানী পীর চরমোনাই; সেহেতু এ দুই পীরের কতিপয় আকিদা ও কারামতির সাথে জামায়াতের আকিদা তুলে ধরা জরুরী মনে করছি। 

১. 
দেওয়ানবাগী:  দেওয়ানবাগী পীর তার আকিদা পেশ করে বলেন, আপনারা যে মুরশিদ ধরেছেন, আরশ মোকামে গিয়ে দেখবেন সেই (দেওয়ানবাগী) মুরশিদই বসা। অর্থাৎ দেওয়ানবাগী পীরই আল্লাহ বা আল্লাহর সমকক্ষতা অর্জন করেছে। (নাউযূবিল্লাহ) 

 চরমোনাই: চর্মনাই এই সমকক্ষতা অর্থাৎ "আনাল হক" আমি খোদা- হওয়ার ক্ষমতা বহু দিন আগেই অর্জন করেছেন। (আশেক মাশুক বা এস্কে এলাহী, পৃঃ ৪১-৪৩)
এছাড়াও চর্মনাই আল্লাহর নিকট থেকে জোরপূর্বক রূহ ছিনতাই করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। (ভেদের মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ১৫) অর্থাৎ চরমোনাই আকিদা হল- শক্তির দিক দিয়ে চর্মনাই আল্লাহরও এক ধাপ উপরে। আল্লাহকে চর্মনাই পীরগং পরাজিত করতে সক্ষম (নাউযূবিল্লাহ)। 

জামায়াত: জামায়াতের আকিদা বিশ্বাস হল-
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻴُﻌْﺠِﺰَﻩُ ﻣِﻦْ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﻟَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ۚ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠِﻴﻤًﺎ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ.
আল্লাহ তো এমন নন যে, আসমান ও
জমিনের কোন কিছু তাকে অক্ষম বা পরাজিত করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতিরঃ৩৫/৪৪)
.
২. 
দেওয়ানবাগী: দেওয়ানবাগী পীর সরাসরিভাবে আল্লাহর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে কথাবার্তা বলার দাবী করে থাকে। 

চরমোনাই: চর্মনাই পীরেরা আল্লাহর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেই ক্ষান্ত হয় না বরং তারা আল্লাহর সাথে নাকি মিলন দেয় সেভাবে উত্তেজিত হয়ে, যেভাবে তারা স্ত্রী মিলনের সময় উত্তেজিত হয়। (নাউযূবিল্লাহ) (ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ৬৯)

জামায়াতের আকিদা হল- 
مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِنْ يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا.
এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও না। বড় মারাত্মক কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হয়। মিথ্যা ছাড়া তারা কিছুই বলে না! (সূরা কাহ্ফঃ১৮/৫)
জামায়াত আরো বিশ্বাস করে,
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ.
তারা যা ব্যক্ত করে তোমার রব তা থেকে পবিত্র মহান, সম্মানের মালিক। (সূরা সাফফাতঃ৩৭/১৮০)

৩. 
দেওয়ানবাগী: দেওয়ানবাগী পীরের আকিদা তিনি তার মুরীদের জন্য সুপারিশকারী।

চরমোনাই: চোরমনায়ী আকিদা হল- চর্মনাই পীরগং যাকে খুশী তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। এমন কি চোরকেও চোরমনাই পীরেরা জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে। (ভেদের মারেফাত বা ইয়াদে খোদা পৃঃ ২৭-২৮) 

জামায়াত: এ জামায়াতের আকিদা বিশ্বাস সেটাই যেটি আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, 
وَاتَّقُوا يَوْمًا لَا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنْصَرُونَ.
আর তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না। আর কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারও কাছ থেকে কোন বিনিময় নেয়া হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। (সূরা বাকারাঃ ২/৪৮) 
তবে আল্লাহ তা'য়ালা যাকে অনুমতি দিবেন, তিনি সুপারিশ করতে পারবেন। (বাকারাঃ ২/২৫৫)

৪. 
দেওয়ানবাগী: দেওয়ানবাগী তার মুরীদদের জান্নাতে নেওয়ার লোভ দেখালেও কিয়ামতের ময়দানে বড় বড় জাহাজে করে তার মুরীদদের জান্নাতে নেওয়ার আকিদা তার দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

  চরমোনাই: চোরমনাই আকিদা হল- কিয়ামতের ময়দানে কঠিন মসিবতের সময় যখন নবী রাসূলগণ পর্যন্ত নাফসি নাফসি বলতে থাকবে তখন চর্মনাই পীরেরা বড় বড় জাহাজে করে মুরীদদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। 

  জামায়াত: এ বিষয়ে জামায়াতের পরিষ্কার আকিদা বিশ্বাস সেটাই যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, 
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ ۖ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ.
তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমরা এমনি এমনি (যেমন- পীর ধরে জাহাজে চড়ে) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো তোমাদের নিকট তাদের মত কিছু আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছিল কষ্ট-নির্যাতন ও দুঃখ-দুর্দশা এবং তারা (জালিমের নির্যাতনে) কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথি মুমিনগণ বলছিল, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে’? জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। (সূরা বাকারাঃ২/২১৪)

  সংক্ষিপ্ত আলোচনায়, এ কথা পরিষ্কার হয়েছে দেওয়ানবাগী চোরমনাই পীরদের সাথে জামায়াতের আকিদার অনেক তফাৎ রয়েছে। জামায়াত এসব ভণ্ডপীরের শিরকি ও কুফুরী আকিদা বিশ্বাস করা তো দূরের কথা বরং তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রতিষ্ঠিত আকিদা লালন করে। আজব ব্যাপার হল- যাদের আকিদা শিরক কুফুরীতে ভরা তারা জামায়াতের আকিদার বিরুদ্ধে কথা বলে। বস্তুত তারা অর্থের লোভে বাতিলশক্তির এজেন্ট হয়ে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ের পথে বাধা দান করে। আল্লাহ তা'আলা তাদের ব্যাপারে মুমিনদের সতর্ক করে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۗ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيم.ٍ.
 হে মুমিনগণ, নিশ্চয় পীর-পাদরি ও ধর্মযাজকদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর (দ্বীন বিজয়ের) পথে বাধা দেয় এবং যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। (সূরা তওবাহঃ৯/৩৪)।

Post a Comment

0 Comments