Recent Tube

ওয়াজ মাহফিলে কী কী করণীয় এবং কী কী বর্জনীয়। শামীম আজাদ।


 ওয়াজ মাহফিলে কী কী করণীয়   এবং কী কী বর্জনীয়।
--------------------------------------------------------

    দৈনন্দিন জীবনে মহান আল্লাহ পাকের বিধি-বিধান সঠিকভাবে পালনার্থে দ্বীনের সুস্থ জযবা ও চেতনা ধারণ করা এবং এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কুরআন-হাদীসের ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের জন্য ফরযে আইন। আর দ্বীনি মাহফিলের দ্বারা আসল উদ্দেশ্য হলো দ্বীনের জযবা তৈরি করা এবং ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা। সুতরাং প্রত্যেক এলাকায় সচেতন দ্বীনদার ভাইদের উদ্যোগে বৎসরে একাধিক বার দীনি মাহফিলের আয়োজন করা উচিত।

  তবে মাহফিল দ্বারা লক্ষ্য উদ্দেশ্য যেন অর্জিত হয়- সে জন্য দ্বীনি মাহফিল করার সঠিক পদ্ধতি জানা আবশ্যক।

বক্তা ও মেহমান নির্বাচন প্রসঙ্গেঃ

১. যেহেতু ইলমে দীন শিক্ষা করা ফরযে আইন এবং দীনি মাহফিলের দ্বারা আসল উদ্দেশ্য ইলমে দীন শিক্ষা করা। সুতরাং প্রত্যেক এলাকায় আলেমসমাজ রাসূল সাঃ এর তরিকা অনুযায়ী দাওয়াতি কাজকে বেগবান করবেন। বক্তার বক্তব্য শুনার দ্বারা শ্রোতাদের অন্তঃকরণ আলোকিত হয়, দৃষ্টিভঙ্গির পরিশুদ্ধি এবং দ্বীনের সমঝ পয়দা হয়। বক্তার উদ্দেশ্য এই যে, তাতে হক-বাতিলের পার্থক্য, আকীদা-বিশ্বাসের দৃঢ়তা, দ্বীনের সঠিক ও সুস্থ চেতনা এমনভাবে সৃষ্টি হয়, নাস্তিকতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তির অন্তরও সত্যের আলোয় আলোকিত হয়, দ্বিধা- দ্বন্দ্ব এবং কল্পনা ও সন্দেহ থেকে মন মস্তিষ্ক নিস্কলুষ হয়ে যায়। শয়তানের প্ররোচনার জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বর্ণনাশৈলিতে এতটাই মুগ্ধতা থাকা দরকার যে, শ্রোতাদের অন্তর আল্লাহর মুহাব্বাতের সাগরে অবগাহন করে সিক্ত এবং তৃপ্ত হবে। বক্তার বক্তব্যের যথার্থতা পুরোপুরি দৃষ্টিগোচর হয়ে ‘অন্তর থেকে নিঃসৃত হয়ে অন্তরে গিয়ে আঘাত করা!’ কাজেই দ্বীনী মাহফিলের বক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এমন আল্লাহওয়ালা দ্বীনদার বক্তাকে দাওয়াত দেয়া উচিত, যাদের বক্তব্যে উল্লিখিত গুনাবলী বিদ্যমান থাকে।

وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً ۚ فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
আর সমস্ত মুমিনের অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না, যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে।
সূরা তাওবাঃ ১২২

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ شِنْظِيرٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ وَوَاضِعُ الْعِلْمِ عِنْدَ غَيْرِ أَهْلِهِ كَمُقَلِّدِ الْخَنَازِيرِ الْجَوْهَرَ وَاللُّؤْلُؤَ وَالذَّهَبَ ‏"‏ ‏.

আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। অপাত্রে জ্ঞান দানকারী শুকরের গলায় মণিমুক্তা ও সোনার হার পরানো ব্যক্তির সমতুল্য। 
মিশকাত ২১৮, ইবনে মাজাহঃ ২২৪

২. এমন বক্তাকে দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে প্রাধান্য দেওয়া উচিত যারা ওয়াজের বিনিময় গ্রহণ করেন না । কারণ ওয়াজ করা আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.-এর কাজ। আর এ কাজ দ্বারা তখনই উম্মতের উপকা হয় যখন তা নবীগণ আ.-এর তরীকায় করা হয়। আর কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতে আছে যে, নবীগণ আ. ওয়াজের বিনিময় গ্রহণ করতেন না। তাঁরা একমাত্র আল্লাহ থেকে বিনিময় পাওয়ার আশায় ওয়াজ করতেন। 

اتَّبِعُوا مَن لاَّ يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَ
অনুসরণ কর তাদের,যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।
সূরা ইয়াসিনঃ ২১

وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ 
আমি তোমাদের কাছে এর জন্যে প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো পালনকর্তা দেবেন
সূরা শু‘আরাঃ ১২৭

৩. কোন জাহেলকে বক্তা বানানো জায়েজ নয়। চাই সে যত সুন্দর বয়ানই করুক না কেন। কারণ এটা ক্বিয়ামতের আলামত। 

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন 
كَيْفَ إِضَاعَتُهَا قَالَ ‏"‏ إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ ‏"‏‏
যখন কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তির উপর কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করবে। ”
(৬৪৯৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৫৭) বুখারীঃ ৫৯

৪. বে-আমল আলেম কোন আলেমকে বক্তা করে দাওয়াত দেওয়া ঠিক না। কারণ এ ধরণের বক্তার বক্তব্যের দ্বারা জনগণের মধ্যে দীনের পরিবর্তে বদ দীনী সৃষ্টি হয়।

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
সূরা বাকারাঃ ৪৪

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ. كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ 
মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল?  
তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।  
সূরা সফঃ ২-৩

৫. এমন বক্তাদেরকে দাওয়াত না করা যারা ওয়াজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। একজন আলিম যখন ওয়াজকে তার জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করে তখন স্বাভাবিক ভাবে ও পেশাগত স্বার্থে তাকে এমন কিছু উপায় ও কৌশল গ্রহণ করতে হয় যা ওয়াজের প্রভাব ও সুফল নষ্ট করে দেয়। যেমন: এ ধরণের বক্তা সাধারণত চুক্তি করে টাকা নিয়ে থাকে। যা আম্বিয়া আ.-এর সুন্নাত পরিপন্থি। তাছাড়া এ সকল বক্তাগণ শ্রোতাদের মুগ্ধ করার ও আকৃষ্ট করার জন্য কথায়, সুরে ও বচন ভঙ্গীতে লৌকিকতা ও কৃত্রিমতার বেশি বাড়াবাড়ি করে থাকে। 

أُولَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُاْ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآَخِرَةِ فَلاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ
এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে। অতএব এদের শাস্তি লঘু হবে না এবং এরা সাহায্যও পাবে না।
সূরা বাকারাঃ ৮৬

হাদীসে এসেছে যে, 
حَدَّثَنَا أَبُو الأَشْعَثِ، أَحْمَدُ بْنُ الْمِقْدَامِ الْعِجْلِيُّ الْبَصْرِيُّ حَدَّثَنَا أُمَيَّةُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ يَحْيَى بْنِ طَلْحَةَ، حَدَّثَنِي ابْنُ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِيَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِيَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللَّهُ النَّارَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَإِسْحَاقُ بْنُ يَحْيَى بْنِ طَلْحَةَ لَيْسَ بِذَاكَ الْقَوِيِّ عِنْدَهُمْ تُكُلِّمَ فِيهِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ ‏.‏

কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে লোক ‘আলিমদের সাথে তর্ক বাহাস করা অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে বাকবিতণ্ডা করার জন্য এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশে ‘ইল্‌ম অধ্যয়ন করেছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
মিশকাত (২২৩-২২৫)
জামে' আত-তিরমিজিঃ ২৬৫৪

৬. যে সকল বক্তা মাজার-ওরসকেন্দ্রিক সুন্নাহ বিরোধি বিভিন্ন বিদআতের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করে এবং আলেম উলামায়ে কেরামের প্রতি জনসাধারণকে ‘আস্থাহীন’ করার লক্ষ্যে তাদেরকে গালমন্দ করে-তাদেরকে দাওয়াত না দেওয়া।

৭. প্রকাশ্য ফাসেক বে-আমল, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী,  কোন লোককে ইসলামী মাহফিল বা মসজিদের সভাপতি বা পরিচালক কিংবা বিশেষ অতিথি ইত্যাদি না বানানো। এতে খোদাদ্রোহীদের সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এতে আল্লাহর আরশ কম্পিত হয়। 
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ 
নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।  
সূরা তাওবাঃ ১৮
 
এটা হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। 
وَعَنْهُ، قَالَ: بَيْنَمَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي مَجْلِسٍ يُحَدِّثُ القَومَ، جَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: مَتَى السَّاعَةُ ؟ فَمَضَى رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم يُحَدِّثُ، فَقَالَ بَعْضُ القَومِ : سَمِعَ مَا قَالَ فَكَرِهَ مَا قَالَ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ : بَلْ لَمْ يَسْمَعْ، حَتَّى إِذَا قَضَى حَدِيثَهُ قَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ عَنِ السَّاعَةِ ؟» قَالَ: هَا أَنَا يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ: «إِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ» قَالَ: كَيفَ إِضَاعَتُهَا ؟ قَالَ: «إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ» . رواه البخاري

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [মসজিদে] লোকদের নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ইতোমধ্যে এক বেদুঈন এসে প্রশ্ন করল, ‘কিয়ামত কখন হবে?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্ণপাত না করে আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বলল যে, ‘তার কথা তিনি শুনেছেন এবং তার কথা তিনি অপছন্দ করেছেন।’ কেউ কেউ বলল, ‘বরং তিনি শুনতে পাননি।’ অতঃপর তিনি যখন কথা শেষ করলেন, তখন বললেন, ‘‘কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়?’’ সে বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই যে, আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘যখন আমানত নষ্ট করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।’’ সে বলল, ‘কিভাবে আমানত বিনষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘অনুপযুক্ত লোকের প্রতি যখন নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।’’
বুখারী ৫৯, ৬৪৯৬, আহমাদ ৮৫১২, রিয়াদুস সালেহিনঃ ১৮৪৬

৮. টাকা-পয়সা কালেকশনের জন্য কোনো বক্তাকে দাওয়াত না দেওয়া। কেননা, মাহফিলের নাম দিয়ে টাকা কালেশন করা জাতির সাথে প্রতারণার শামিল।

ওয়াজের বিষয়বস্তু

১. কুরআনে কারীমে আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার জন্য কী আদেশ-নিষেধ রয়েছে? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন ও কর্ম কেমন ছিলো? সাহাবায়ে কেরামের জীবনচরিত কী ছিলো? 
ইসলামী দর্শন বলতে কী বুঝায়? নফস এবং শয়তান মানুষের জীবনের উপর কীভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়? মুসলমানদের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতির সঠিক কর্মপন্থা কী? দুনিয়াবী ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিনোদন-ভ্রমনের ক্ষেত্রে ইসলামী রীতি-নীতি কী? জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে মুসলমানদের আবিষ্কার কী ছিলো? মুসলমানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে মুসলমানদের জন্য হিদায়াত ও পথনির্দেশকে পরিণত হয়েছিলো? পারিবারিক ও সামাজিকভাবে একজন মুসলমানের জীবনধারা কেমন হওয়া উচিত? সামাজিক প্রথা এবং বিদআ'ত মুসলমানদের কতটা দ্বীনী ক্ষতি সাধন করেছে? পশ্চিমা কৃষ্টি-কালচার দ্বারা মুসলমানদের স্বভাব-চরিত্র কতটা অধঃপতন হয়েছে। আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে মানুষের তৈরী বিধানের কুফল। ইসলাম তথা রাসূল সাঃ এর দেখানো বাদ দিয়ে ডারউইন, কার্লমার্ক্স, লেলিন, হেগেল, এরিস্টটল, মাওসেতুং, গর্বাচভের দেখানো পথের কুফল। 

কাজেই আলেমদের উচিত দ্বীনের জরুরী সকল বিষয়ে প্রামাণ্য আলোচনা করা। অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে বিরত থাকা। ওয়াজের মধ্যে ভিত্তিহীন কিসসা-কাহিনী বলে শ্রোতাদের হাসানো বা কাঁদানোর বদ রসম থেকে বিরত থাকা উচিত। 
মুসলিমঃ ৫০৫

২. বক্তব্যের মধ্যে তারগীবী কথার সাথে যে পাঁচটি বিষয়ের ইলম অর্জন করা ফরযে আইন তথা: আক্কাইদ, ইবাদাত, মু‘আমালাত (লেন-দেন), মু‘আশারাত (সামাজিকতা) এবং আখলাক (আত্মশুদ্ধি) তার উপর আলোচনা করা উচিত। এরজন্য ওয়ায়েজীনদের মধ্যে ওয়াজের বিষয়বস্তু বণ্টন করে দেয়া ভাল। 
সূরা বাকারাঃ ১৭৭, বুখারীঃ ৫০, মুসলিমঃ ৭

৩. মাহফিলের মধ্যে ফরজের আলোচনা করা। আল্লাহ তাআ'লা কি বলেছেন এবং রাসূল সাঃ কি করেছেন 
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولاً مِّنكُمْ 
يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا 
وَيُزَكِّيكُمْ 
وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ 
وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ
যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রাসূল, যিনি তোমাদের নিকট 
১। আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন 
২। এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; 
৩। আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান 
৪। এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না। 
সুরা বাকারাঃ ১৫১

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ ۖ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ ۚ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
সূরা মায়েদাঃ ৬৭

اتَّبِعُوا مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ
হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো।
সূরা আরাফঃ ৩

وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [النجم: ٣، ٤]
‘‘প্রত্যাদেশকৃত ওহী ভিন্ন তিনি মন থেকে কোনো কথা বলেন না।” 
সূরা আন-নাজম: ৩-৪

فَذَكِّرْ إِن نَّفَعَتِ الذِّكْرٰى
কাজেই তুমি উপদেশ দাও, যদি উপদেশ উপকারী হয়।
সূরা আ’লাঃ ৯

৪. মাহফিলের মধ্যে বক্তা শ্রোতাদের যিকিরের মশক করাতে চাইলে মাইক ছাড়াই করানো উচিত। মাইকে যিকির করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়। এতে আশপাশের মসজিদে এবং লোকদের অনেক সমস্যা হয়। আজকাল কিছু পীর দাবীদার নিজের খেয়াল-খুশী মত যিকির করাতে আরম্ভ করে। ওয়াজ মাহফিলে উচ্চস্বরে চিৎকার ও লাফালাফি করে যিকিরের নামে। এটাও ঠিক নয়। 

وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلاَ تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ 
আর যিকির করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না।  
সুরা আ‘রাফ: ২০৫

প্রচলিত ওয়াজ মাহফিলের বর্জনীয় বিষয়:

১. যেহেতু দীর্ঘ সময়ব্যাপী ওয়াজ সাধারণ মানুষ মনে রাখতে পারে না। এজন্য রাত ১০/১১টার মধ্যেই আলোচনা করে মাহফিল শেষ করা উচিত। আজকাল অনেক স্থানে সারা রাত ওয়ায করার নিয়ম চালু হয়ে গেছে। এটা বন্ধ করা উচিত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ততক্ষণ ওয়ায করতে বলেছেন যতক্ষণ লোকদের আগ্রহ থাকে। আর সাধারণত মানুষের কমজোরীর কারণে সারা রাত আগ্রহ থাকে না। উপরন্তু এ দীর্ঘ রাতজাগা ওয়াজ প্রত্যুষে অধিকাংশ শ্রোতারই মনে থাকে না। 

يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ أَبُو حَبِيبٍ حَدَّثَنَا هَارُونُ الْمُقْرِئُ حَدَّثَنَا الزُّبَيْرُ بْنُ الْخِرِّيتِ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ حَدِّثْ النَّاسَ كُلَّ جُمُعَةٍ مَرَّةً فَإِنْ أَبَيْتَ فَمَرَّتَيْنِ فَإِنْ أَكْثَرْتَ فَثَلَاثَ مِرَارٍ وَلَا تُمِلَّ النَّاسَ هَذَا الْقُرْآنَ وَلَا أُلْفِيَنَّكَ تَأْتِي الْقَوْمَ وَهُمْ فِي حَدِيثٍ مِنْ حَدِيثِهِمْ فَتَقُصُّ عَلَيْهِمْ فَتَقْطَعُ عَلَيْهِمْ حَدِيثَهُمْ فَتُمِلُّهُمْ وَلَكِنْ أَنْصِتْ فَإِذَا أَمَرُوكَ فَحَدِّثْهُمْ وَهُمْ يَشْتَهُونَهُ فَانْظُرْ السَّجْعَ مِنْ الدُّعَاءِ فَاجْتَنِبْهُ فَإِنِّي عَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابَهُ لَا يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ يَعْنِي لَا يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ الِاجْتِنَابَ.

ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন যে, তুমি প্রতি জুমু'আহ্‌য় লোকেদের হাদীস শোনাবে। যদি এতে তুমি ক্লান্ত না হও তবে সপ্তাহে দু' বার। আরও অধিক করতে চাও তবে তিনবার। আরও অধিক নাসীহাত করে এ কুরআনের প্রতি মানুষের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করো না। লোকেরা তাদের কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তুমি তাদের কাছে এসে তাদের নির্দেশ দেবে- আমি যেন এমন হালাতে তোমাকে না পাই। কারণ এতে তাদের কথায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এবং তারা বিরক্ত হবে। বরং তুমি এ সময় নীরব থাকবে। যদি তারা আগ্রহ নিয়ে তোমাকে নাসীহাত দিতে বলে তাহলে তুমি তাদের নাসীহাত দেবে। আর তুমি দু'আর মধ্যে ছন্দযুক্ত কবিতা বর্জন করবে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণকে তা বর্জন করতে দেখেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৮৫)
বুখারীঃ ৬৩৩৭

২. দুর-দুরান্ত পর্যন্ত না দিয়ে মাহফিলের মাইক ব্যবস্থা প্যান্ডেলের সীমার মধ্যে রাখা আবশ্যক। যেন আগ্রহীরা ময়দানে চলে আসে এবং ব্যস্ত, অসুস্থ, ইবাদাতে মগ্ন ব্যক্তিদের কাজে, বিশ্রামে কিংবা ইবাদাতে বিঘ্ন না ঘটে। কেননা, কথা কিংবা কাজে ব্যস্ত লোকাদেরকে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় দ্বীনী নসীহত করতে হাদীসে পাকে নিষেধ করা হয়েছে। যেহেতু এর দ্বারা সে বিরক্ত হবে এবং তার কাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি হবে। 
বুখারীঃ ৬৩৩৭

৩. ওয়াজের মাঝে স্থানীয় মসজিদসমূহের সময়সূচী অনুযায়ী ইশার নামায জামা‘আত করে নেওয়া কর্তব্য।কেননা, আগে-পরে ইশার নামায আদায় করলে মাহফিলের মাইকের দ্বারা পার্শ্ববর্তী এলাকার মসজিদের জামা‘আতের সমস্যা হয় এবং মাহফিলে উপস্থিত মুসল্লীগণ ইশার জামা‘আতের ব্যাপারে পেরেশান হয়। অনেক স্থানে দীর্ঘ রাতব্যাপী ওয়াজ হওয়ার পর ইশার নামায মাকরুহ ওয়াক্তে পড়া হয়। যা অবশ্য পরিত্যাজ্য। 

فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلاَةَ فَاذْكُرُواْ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا 
অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায ঠিক করে পড়। নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। 
সুরা নিসাঃ ১০৩

৪. লোকদের ওয়ায মাহফিলের দাওয়াত দিয়ে তাদের থেকে চাঁদা কালেকশন করা অনুচিত। কারণ প্রচারপত্রে ওয়াজ শুনানোর ঘোষনা বা ওয়াদা করা হয়। চাঁদার প্রয়োজন হলে জনসাধারণদের ডেকে পরামর্শ সভা করবে। এবং সাহায্যের আবেদন করবে। 

৫. মাহফিলের রাস্তার মধ্যে কোন গেইট বা তোরণ বানাবে না। রঙ বেরঙের পতাকা লাগাবে না। নিছক বিলাসিতা ও শৌখিনতার জন্য রঙবেরঙের বাহারি বাতি জ্বালানো বা তোরণ নির্মাণ করার দ্বারা ধর্মীয় গাম্ভীর্যতা এবং আধ্যাত্মিকতা নষ্ট হয়। এ ধরণের আয়োজন অগ্নীপূজক ও মূর্তিপূজকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। উপরন্তু তা অপচয়ের শামিল। বিজাতীয় অনুকরণ আর অপচয় সম্পূর্ণ হারাম! 
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا 
নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। 
সূরা বনী ইসরাইল: ২৭

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ ثَابِتٍ، حَدَّثَنَا حَسَّانُ بْنُ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي مُنِيبٍ الْجُرَشِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‏"‏ ‏.

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।
আবু দাউদঃ ৪০৩১

৬. অনেক বক্তা চা পানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে লোকদেরকে দুরূদ লাগিয়ে সে সুযোগে চা পান করেন । এটা দৃষ্টিকটু কাজ। দীনী উদ্দেশ্যবিহীন এ ধরণের দরূদ পড়াও নিষেধ। 
يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ أَبُو حَبِيبٍ حَدَّثَنَا هَارُونُ الْمُقْرِئُ حَدَّثَنَا الزُّبَيْرُ بْنُ الْخِرِّيتِ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ حَدِّثْ النَّاسَ كُلَّ جُمُعَةٍ مَرَّةً فَإِنْ أَبَيْتَ فَمَرَّتَيْنِ فَإِنْ أَكْثَرْتَ فَثَلَاثَ مِرَارٍ وَلَا تُمِلَّ النَّاسَ هَذَا الْقُرْآنَ وَلَا أُلْفِيَنَّكَ تَأْتِي الْقَوْمَ وَهُمْ فِي حَدِيثٍ مِنْ حَدِيثِهِمْ فَتَقُصُّ عَلَيْهِمْ فَتَقْطَعُ عَلَيْهِمْ حَدِيثَهُمْ فَتُمِلُّهُمْ وَلَكِنْ أَنْصِتْ فَإِذَا أَمَرُوكَ فَحَدِّثْهُمْ وَهُمْ يَشْتَهُونَهُ فَانْظُرْ السَّجْعَ مِنْ الدُّعَاءِ فَاجْتَنِبْهُ فَإِنِّي عَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابَهُ لَا يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ يَعْنِي لَا يَفْعَلُونَ إِلَّا ذَلِكَ الِاجْتِنَابَ.

ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন যে, তুমি প্রতি জুমু'আহ্‌য় লোকেদের হাদীস শোনাবে। যদি এতে তুমি ক্লান্ত না হও তবে সপ্তাহে দু' বার। আরও অধিক করতে চাও তবে তিনবার। আরও অধিক নাসীহাত করে এ কুরআনের প্রতি মানুষের মনে বিরক্তি সৃষ্টি করো না। লোকেরা তাদের কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকা অবস্থায় তুমি তাদের কাছে এসে তাদের নির্দেশ দেবে- আমি যেন এমন হালাতে তোমাকে না পাই। কারণ এতে তাদের কথায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এবং তারা বিরক্ত হবে। বরং তুমি এ সময় নীরব থাকবে। যদি তারা আগ্রহ নিয়ে তোমাকে নাসীহাত দিতে বলে তাহলে তুমি তাদের নাসীহাত দেবে। আর তুমি দু'আর মধ্যে ছন্দযুক্ত কবিতা বর্জন করবে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণকে তা বর্জন করতে দেখেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৮৫)
বুখারীঃ ৬৩৩৭

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীনী মাহফিল করার তাওফীক দান করুন এবং এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমিন
ইয়া রাব্বাল আলামিন।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments