Recent Tube

এ জীবন আল্লাহকে মহব্বত করার জন্য-৷ রবিউল আকরাম।


 এ জীবন আল্লাহকে মহব্বত করার জন্য-


  আল্লাহ্ পাক বলেন, 

وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ ۗ  

  (আল বাকারা - ১৬৫)
"যারা মোমেন তারা আল্লাহকে প্রচন্ড মহব্বত করেন, খুব ভালোবাসেন।"

      তো যারা ঈমানদার, যারা মোমেন তারা সবকিছুর চাইতে বেশি আল্লাহ্কে মহব্বত করে; আল্লাহ্কে ভালোবাসে। দুনিয়ার সব কিছুর চাইতে আল্লাহ্ পাকের সাথে সম্পর্ককে তারা সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেন।

   *তারা নিজের ধনসম্পদ, টাকাপয়সা, বাড়ীগাড়ী, নিজের স্ত্রী-সন্তান, পিতামাতা এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও লক্ষকোটি গুণ বেশি মহব্বত করেন ও গুরুত্ব দেন আল্লাহ্ তা'আলার মহব্বতের সম্পর্ককে।* আল্লাহ্ পাক নিজ দয়ায় সেরকম নেক জিন্দেগী আমাদের প্রত্যেককেই বহুত দান করেন। আমার শায়েখ মাওলানা আবদুল মতীন বিন হুসাইন সাহেব দা.বা. বলেন, এই জিন্দেগী হল আল্লাহ্কে মহব্বত করার জন্য। 

    অনেক বেশি মূল্যবান কথা, "এই জিন্দেগী হল আল্লাহ্কে মহব্বত করার জন্য।" 
এই জিন্দেগীর প্রত্যেকটা মুহূর্ত অনেক বেশি মূল্যবান; অনেক বেশি মূল্যবান; অনেক বেশি মূল্যবান। এতটা মূল্যবান যে, এর একটা মুহূর্তও যদি নষ্ট হয়ে যায় আমাদের অবহেলার কারনে, তাহলে আমরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে এই বিষয়টা অনুধাবন করার তৌফিক দান করেন।

     এই দুনিয়ার হায়াত অনেক বেশি মূল্যবান। মুফতি আবদুল মালেক সাহেব দা.বা. বলেন, পাঁচটা মিনিট যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে মনে করা চাই যেন, একটা হাত কাটা গেল। একটা হাত কাটা গেলে যেরকম মানুষ খুব কষ্ট পায়, এরকম কষ্ট অনুভূত হওয়া দরকার, যদি পাঁচটা মিনিট আমার অবহেলার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে সময়ের মূল্যায়ন করার বহুত তৌফিক দান করেন। 

    *মুসলমানের সেই সময় কোথায় যে, সে চায়ের স্টলে বসে আড্ডা মারবে; অহেতুক কথা বার্তার মধ্যে লিপ্ত হবে; অহেতুক কাজের মধ্যে লিপ্ত হবে; সেই সময় মুসলমানের কোথায়?* হযরত মুফতি মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. বলেন, আল্লাহওয়ালাদের শান তো হল তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ নফল আমল যখন ছুটে যায়, তখন তাঁরা আফসোস করতে থাকেন যে, হায়! আমার আজ এই নফল আমলটা করা হল না। অর্থাৎ ঐ একই সময়ে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল থাকে কিন্তু একসাথে তো সকল নেক আমল করা, সকল নফল আমল করা সম্ভব হয় না।
   যেই নেক আমলগুলি ঐ সময় করার তার সুযোগ হল, সেইগুলি তো তিনি করলেন কিন্তু বাকি যে আমলগুলি তাঁর ফসকে যায়, সেই আমলগুলির জন্য তাঁর আফসোস লাগে। আল্লাহ্ পাক নিজ দয়ায় আমাদের প্রত্যেককেই এরকম অনুভুতি দান করেন।

   বান্দার ঈমানী জিন্দেগী যত বেশি মজবুত হয়, আল্লাহ্ পাকের সাথে সম্পর্ক যত গভীর ও নিবিড় হয়, এই উপলব্ধি তাঁর তত বেশি প্রচন্ড হয়; তত বেশি বলবান হয়; তত বেশি শক্তিশালী হয়; তত বেশি ধারালো হয়, তত বেশি শাণিত হয়।

   বাহার হাল আমাদের এই জিন্দেগী হলো আল্লাহ্কে মহব্বত করার জন্য। আল্লাহ্ পাকের মহব্বতের এক নেশা নিয়ে বন্দেগীতে লিপ্ত থাকা জন্য। এটা হল আমাদের জিন্দেগীর মূল মাকসাদ।

আল্লাহ্ পাক বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

(আয-যারিয়াত - ৫৬)
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।

     তাহলে ঘটনা দাড়াইলো এই, আমরা আল্লাহ্ পাকের বন্দেগী করবো মহব্বতের সাথে। *প্রথমে যে আয়াতে কারীমার অংশ তেলাওয়াত করা হলো, সেখানে আল্লাহ্ পাক বলছেন, মু'মিনরা আল্লাহ্কে প্রচন্ড মহব্বত করে।
   আর আল্লাহ্ পাক এখানে বলতেছেন, আমি জ্বীন এবং মানুষকে বানাইছি শুধুমাত্র আমার বন্দেগী করার জন্য। তো বুঝা গেল যে, আল্লাহ্ পাকের বন্দেগী করতে হবে মহব্বতের সঙ্গে। আমি সিজদাহ্ করবো; মহব্বতের সাথে সিজদাহ্ করবো। আমি যিকির করবো "লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" মহব্বতের সাথে করবো। আমি আমার জবান দ্বারা বলবো "আল্লাহ্" সেটা আমি মহব্বতের সাথে বলবো।* আল্লাহ্ পাক নিজ দয়ায় আমাদের প্রত্যেককেই বহুত তৌফিক দান করেন।

  তো এখানে যে বিষয়টা বুঝা দরকার সেটা হলো বান্দা যদি গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত না করে, তাহলে আল্লাহ্ পাক তাকে মহব্বত দেন না। *এটা একটা চূড়ান্ত কথা যে, যে বান্দা নিজেকে আল্লাহ্ পাকের নাফরমানী থেকে বাঁচায় না, আল্লাহ্ পাক তাকে মহব্বতের এত বড় দৌলত দেন না। ইমাম গাযযালী রহ. বলেন, সবচাইতে বড় মাকাম হল আল্লাহর মহব্বত। বিভিন্ন মাকাম আছে। যেমন: সবর এক মাকাম; শোকর এক মাকাম; বিনয় এক মাকাম; আল্লাহ্ পাকের মহব্বত এক মাকাম; তাওয়াক্কুল এক মাকাম। তো এইগুলা প্রত্যেকটাই মাকাম। ইমাম গাযযালী রহ. বলেন, সবচাইতে বড় মাকাম হল আল্লাহর মহব্বত।*

   তো আল্লাহর মহব্বতের মাকাম যত বেশি শক্তিশালী; যত বেশি পাহাড়ের মত অটল ও মজবুত হবে, বান্দার অন্যান্য মাকামগুলিও সেই অনুপাতেই শক্তিশালী ও মজবুত হবে। এজন্য আমাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছা জরুরী যে, আমি যদি আল্লাহ্ পাকের প্রচন্ড মহব্বত অর্জন করতে চাই, তাহলে আমার জন্য জরুরী হচ্ছে তামাম গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচানো। এটা হল প্রাথমিক কাজ।

  *এরপরে বান্দা যখন নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে সকল অহেতুক কাজকর্ম, অহেতুক কথাবার্তা, অহেতুক দৃষ্টিপাত, অহেতুক শোনা ইত্যাদি সকল অহেতুক বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচাবে, তখন সেই বান্দার কলবের মধ্যে আল্লাহ্ পাক দিন দিন মহব্বত ঢালতেই থাকবেন, ঢালতেই থাকবেন, ঢালতেই থাকবেন।* তো এইজন্য আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার যে, আমি যদি আল্লাহ্ তা'আলার খুব মহব্বত অর্জন করতে চাই, তাহলে আমার প্রথম কাজ হল আল্লাহ্ পাকের নাফরমানী ত্যাগ করা; তামাম গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়া; তামাম হারাম কাজ ছেড়ে দেওয়া।

   এরপর সকল অহেতুক কাজকর্ম কথাবার্তা থেকে নিজেকে বাঁচানো। এটা কোনোদিন কস্মিনকালেও সম্ভব না যে, বান্দা আল্লাহ্ পাকের প্রচন্ড মহব্বত প্রাপ্তির আশা রাখে আবার সে গুনাহের জিন্দেগীতেও লিপ্ত। এরকম হলে বুঝতে হবে, সে ধোকার মধ্যে আছে। কখনই সম্ভব না যে, আমি আল্লাহ্ পাকের নাফরমানীতেও লিপ্ত থাকব আবার আমি আল্লাহ্ পাকের মহব্বতও আশা করব যে, অন্তরে আল্লাহ্ পাকের মহব্বত খুব হোক। *আল্লাহ্ পাকের কামেল মহব্বত, প্রচন্ড মহব্বত অর্জন করতে চাইলে অবশ্য অবশ্যই আমাকে তামাম গুনাহ থেকে বাঁচতেই হবে।* আল্লাহ্ পাক নিজ দয়ায় আমাদের প্রত্যেককেই বহুত তৌফিক দান করেন; খুব কবুল করেন। জিন্দেগীর প্রত্যেকটা মুহূর্তকে আল্লাহ্ পাক আমাদের কদর করার খুব তৌফিক দান করেন।
3.1.2021
♥♥♥
রবিউল আকরাম

Post a Comment

0 Comments