Recent Tube

দ্বীনি প্রশ্নোত্তর।





 
    প্রশ্ন: কিয়ামতের দিন পারস্পরিক যুলুমের বদলা নেয়ার ব্যাপারে সুন্নাত থেকে দলীল দিন। হাদীছ শরীফে বদলা নেয়ার পদ্ধতি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে? 

    ত্তরঃ কিয়ামতের দিন পারস্পরিক যুলুমের বদলা নেয়ার ব্যাপারে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاءِ)

‘‘কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে’’।[1] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لَا يَكُونَ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْه)

  ‘‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে অত্যাচারের জন্য দায়ী সে যেন সেই দিন আসার আগে আজই তার কাছ থেকে মুক্ত হয়ে যায় (অথবা ক্ষমা চেয়ে নেয়), যেদিন কোন দীনার বা দিরহাম থাকবেনা। তার যদি কোন ভাল আমল থেকে থাকে তা থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কেটে নেয়া হবে। আর তার যদি কোন নেকী না থাকে তবে মজলুমের পাপ থেকে কিছু নিয়ে জালেমের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।[2] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

يَخْلُصُ الْمُؤْمِنُونَ مِنْ النَّارِ فَيُحْبَسُونَ عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُقَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ مَظَالِمُ كَانَتْ بَيْنَهُمْ فِي الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَأَحَدُهُمْ أَهْدَى بِمَنْزِلِهِ فِي الْجَنَّةِ مِنْهُ بِمَنْزِلِهِ كَانَ فِي الدُّنْيَا

  ‘‘মু’মিনগণ যখন জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাবে তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি পুলের উপর থামানো হবে। তখন দুনিয়াতে একে অপরের প্রতি যে যুলুম করেছিল, তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সেই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার বাড়ী যেমন চিনত তার চেয়ে বেশী তার বেহেশতের বাড়ীকে চিনতে পারবে।[3]

 [1] - বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত দিয়াত। [2] - বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালিম। [3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালিম। 

 
 প্রশ্নঃ (১২৭) হাউজে কাউছারের ব্যাপারে কুরআন মাজীদের দলীল কী? 

উত্তরঃ আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَر

‘‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (হাউজে) কাউছার দান করেছি’’। (সূরা কাউছারঃ ১)

 
প্রশ্নঃ (১২৮) হাউজে কাউছারের ব্যাপারে হাদীছের দলীল কী? 

উত্তরঃ হাশরের মাঠে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাউজে কাউছার থাকবে। এ ব্যাপারে সহীহ হাদীছগুলো মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ)

‘‘আমি হাউজের কাছে তোমাদের সকলের পূর্বেই পৌঁছে যাব’’।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

(إِنِّي فَرَطُكُمْ وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ وَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَنْظُرُ إِلَى حَوْضِي الْآنَ)

‘‘আমি তোমাদের পূর্বেই হাউজের কাছে পৌঁছে যাব। আমি তোমাদের উপর সাক্ষী হব। আল্লাহর শপথ! আমি এখান থেকে এখনই আমার হাউজ দেখতে পাচ্ছি’’।[2] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ الْمِسْكِ وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلاَ يَظْمَأُ أَبَدًا)

‘‘আমার হাউজের দৈর্ঘ্য হবে এক মাসের দূরত্বের সমান। যার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার সুঘ্রাণ হবে কস্তুরীর চেয়েও উত্তম। তার পেয়ালার সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমপরিমাণ। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পানি পান করবে চিরদিনের জন্যে তার পিপাসা মিটে যাবে।[3]নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

(أَتَيْتُ عَلَى نَهَرٍ حَافَتَاهُ قِبَابُ اللُّؤْلُؤِ مُجَوَّفًا فَقُلْتُ: مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ)

‘‘আমি একটি নদীর পাশে উপস্থিত হলাম। তার উভয় পার্শ্ব ছিল ফাঁপা মুক্তার তাঁবুর মত। আমি বললামঃ হে জিবরীল! এটি কোন্ নদী? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এটি হচ্ছে হাউজে কাউছার।[4] এছাড়া হাউজে কাউছার সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক। [2] - উপরোক্ত উৎস্য। [3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক। [4] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর। 
 
প্রশ্নঃ (১২৯) জান্নাত ও জাহান্নামের উপর ঈমান আনয়নের দলীল কি? 

উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ * وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ

‘‘তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন বেহেশত রয়েছে, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে’’। (সূরা বাকারাঃ ২৪-২৫) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাযের দু’আয় বলতেনঃ

(اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ والنبيون حق ومحمد صلى الله عليه وسلم حق وَالسَّاعَةُ حَقٌّ)

‘‘হে আল্লাহ! আপনার জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান-যমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যস্থিত সকল বস্ত্তর আলো। আপনার জন্য সকল প্রশংসা। আপনি আসমান-যমিনের বাদশাহ। আপনার জন্য সকল প্রশংসা। আপনি সত্য, আপনার অঙ্গিকার সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, আপনার কথা সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং কিয়ামত সত্য।[1] উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ الْعَمَلِ وفي رواية: مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ أَيَّهَا شَاءَ)

‘‘যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁর বাক্য, যা তিনি মারইয়াম পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর রূহ। আর এই সাক্ষ্য দিবে যে, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য তাকে আল্লাহ্ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তার আমল যাই হোক। অন্য বর্ণনায় আছে, জান্নাতের আটটি দরজার যে কোন একটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’।[2]

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। [2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।  নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ
অধ্যায়ঃ প্রশ্ন এবং তাঁর উত্তরসমুহ

 
প্রশ্নঃ (১৩০) জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়নের মর্মার্থ কি? 

উত্তরঃ জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়নের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে এই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টিই তৈরী করা হয়েছে এবং তা এখনও প্রস্ত্তত আছে। আল্লাহর হুকুমে এদু’টি চিরকাল থাকবে, কখনও ধ্বংস হবে না। এমনিভাবে জান্নাতের সকল নেয়ামত ও জাহান্নামের সর্বপ্রকার আযাবের প্রতি ঈমান আনয়ন জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়নের অন্তর্ভূক্ত।

Post a Comment

0 Comments