মীরজাফরের চুক্তিঃঃ
“আমি আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের নামে প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, আমার জবীনকালে আমি এই চুক্তিপত্রের শর্তাবলী মানিয়া চলিব।
ধারা-১: নবাব সিরাজউদৌলার সঙ্গে শান্তিচুক্তির যেইসব ধারা সম্মতি লাভকরিয়াছিল, আমি সেইসব ধারা মানিয়া চলিতে সম্মত হইলাম।
ধারা-২: ইংরেজদের দুশমন আমারও দুশমন, তারা ভারতবাসী হােক অথবা
ইউরােপীয় ।
ধারা-৩ : জাতিসমূহের স্বর্গ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় ফরাসীদের সকল সম্পত্তি এবং ফ্যাক্টরীগুলি ইংরেজদের দখলে থাকিবে এবং আমি কখনাে তাহাদিগকে (ফরাসীদেরকে) এই তিনটি প্রদেশে আর কোন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করিতে দিব না।
ধারা-৪ : নবাব সিরাজ কর্তৃক কলিকাতা দখল ও লুণ্ঠনের ফলে ইংরেজ কোম্পানী যেইসব ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছে তাহার বিবেচনায় এবং তন্নিমিত্ত মােতায়েনকৃত সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয় নির্বাহ বাবদ আমি তাহাদিগকে এক ক্রোড় তঙ্কা প্রদান করিবাে ।
ধারা-৫: করিকাতার ইংরেজ অধিবাসীদের মালামাল লুণ্ঠনের জন্য আমি তাহাদিগকে পঞ্চাশ লক্ষ তঙ্কা প্রদান করিতে সম্মত হইলাম।
ধারা-৬ : কলিকাতার জেন্টু (হিন্দু) মূর (মুসলমান) এবং অন্যান্য অধিবাসীকে প্রদান করা হইবে বিশ লক্ষ তঙ্কা। (ইংরেজরা হিন্দুদেরকে ‘জেন্ট’ এবং মুসলমানদেরকে মূর’ ও ‘মেহােমেটান' বলে চিহ্নিত করত।)
ধারা-৭: কলিকাতার আর্মেনীয় অধিবাসীদের মালামাল লুণ্ঠণের জন্য তাহাদিগকে প্রদান করা হইবে সাত লক্ষ তঙ্কা। ইংরেজ, জেন্টু, মূর এবং কলিকাতার অন্যান্য অধিবাসীকে প্রদেয় তঙ্কার বিতরণ-ভার ন্যস্ত রহিল এডমিরাল ওয়াটসন, কর্ণেল ক্লাইভ, রজার ড্রেক, ইউলিয়াম ওয়াটস, জেমস কিলপ্যাট্রিক এবং রিচার্ড বীচার মহােদয়গণের উপর। তাঁহারা নিজেদের বিবেচনায় যেমন প্রাপ্য তাহা প্রদান করিবেন।
ধারা-৮ : কলিকাতার বর্ডার বেষ্টনকারী মারাঠা ডিচের মধ্যে পড়িয়াছে কতিপয় জমিদারের কিছু জমি; ওই জমি ছাড়াও আমি মারাঠা ডিচের বাইরে ৬০০ গজ জমি ইংরেজ কোম্পানীকে দান করিব।
ধারা-৯ : কল্পি পর্যন্ত কলিকাতার দক্ষিণস্থ সব জমি ইংরেজ কোম্পানীর জমিদারীর অধীনে থাকিবে এবং তাহাতে অবস্থিত যাবতীয় অফিসাদি কোম্পানীর আইনগত অধিকারের থাকিবে।
ধারা-১০: আমি যখনই কোম্পানীর সাহায্য দাবি করিব, তখনই তাহাদের বাহিনীর যাবতীয় খরচ বহনে বাধ্য থাকিব।
ধারা-১১ : হুগলীর সন্নিকট গঙ্গা নদীর নিকটে আমি কোন নতুন দুর্গ নির্মাণ করিব না।
ধারা-১২: তিনটি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হইবা মাত্র আমি উপরি উক্ত সকল তঙ্কা বিশ্বস্তভাবে পরিশােধ করিবে।
---------------------------------
দুই পলাশী দুই মীরজাফর বইয়ের ২৮২-২৮৩ পৃষ্ঠা।
লেখক : কে এম আমিনুল ইসলাম।
পাবলিশিং, ঃঃ শামীম আজাদ।
0 Comments