Recent Tube

আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার অনুমতি ইসলাম কখনোই দেয়না। সাদিক সিকন্দর।

আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার অনুমতি ইসলাম কখনোই দেয়না।


 বাপের ভাই চাচা! কি হয়েছে তাতে? 
চাচাদের সাথে কোন সম্পর্ক নাই আমাদের। 
উনারা কতো কিছু করেছেন,এইটা করেছেন,ঐটা করেছেন,হাজারো কারণ দেখিয়ে বলা হয় চাচার সাথে,চাচাতো ভাইবোনের সাথে কোন সম্পর্ক নাই। আপন ভাইর সাথেও বনিবনা নাই। একই উঠোনের দু'পাশে দু'জনের বসবাস,দেখা হয়,কথা হয়না,এভাবে বছরের পর বছর চলে যায়।অজুহাতের পাহাড় দেখিয়ে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। এভাবে আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার অনুমতি ইসলাম কখনোই দেয়না।

  এ ব্যাপারে বিশ্বনবীর বক্তব্য একেবারে পরিস্কার।তিনি বলেন- «صِلْ مَنْ قَطَعَكَ، وَاعْطِ مَنْ حَرَمَكَ، وَأَعْرِضْ عَمَّنْ ظَلَمَكَ “আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো ওর সঙ্গে যে তোমার সঙ্গে সে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, দাও তাকে যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে   এবং যালিমের পাশ কেটে যাও তথা তাকে ক্ষমা করো”।

  অনুযোগের পাহাড় দেখিয়ে আত্নীয়দের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কোন সুযোগ নাই। দু'পক্ষ সমান ভাবে সুন্দর সম্পর্ক রাখতে পারলে আত্নীয়তার সৌন্দর্য সুন্দর ভাবে  বিকশিত হয়।কিন্তু কেউ নিজের সীমাবদ্ধতার কারণে আত্নীয়তার হক আদায়ে অক্ষম হলে আপনি এগিয়ে আসুন এবং তার অধিকার আদায় করুন।এভাবেই অন্যজনের ঘাটতি পুষিয়ে উঠবে।প্রিয় নবী (সা:) বলেন- «لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْـمُكَافِئِ، وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِيْ إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا» “সে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে না যে কেউ তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করলেই সে তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে। বরং আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী সে ব্যক্তি যে কেউ তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলেও সে তার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে”।

   এরকম অনুযোগ-অভিযোগ নতুন কিছু নয় এগুলো ছিলো এবং থাকতেই পারে। মানবতার বন্ধুর কাছে এরকম অনুযোগ এলে তিনি কি বলতেন শুনুন-
    আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে যাদের সাথে আমি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করি; অথচ তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি; অথচ তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের সাথে ধৈর্যের পরিচয় দেই; অথচ তারা আমার সাথে কঠোরতা দেখায়। অতএব, তাদের সাথে এখন আমার করণীয় কী? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- «لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ، وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيْرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ»
“তুমি যদি সত্যি কথাই বলে থাকো তা হলে তুমি যেন তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাইয়ে দিচ্ছো।  আর তুমি যতদিন পর্যন্ত তাদের সাথে এমন ব্যবহার করতে থাকবে ততদিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাদের ওপর তোমার জন্য একজন সাহায্যকারী নিযুক্ত থাকবে”।

  কাজেই অনুযোগের পাহাড় দেখিয়ে আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার সামান্যতম সুযোগ কোন মুসলিমের জন্য নাই।রাসুল (সা:) বলেছেন- «ثَلاثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ: مُدْمِنُ الْـخَمْرِ وَقَاطِعُ الرَّحِمِ وَمُصَدِّقٌ بِالسِّحْرِ» “তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও যাদুতে বিশ্বাসী”।

  আত্নীয় তার সম্পর্ক বিচ্ছিন কারীরা কেবল জান্নাত হারাবে ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়,এদের জন্য দুনিয়াটাও জীবন্ত জাহান্নাম হয়ে যায়।নিকটাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক নাই এর চেয়ে মানসিক কষ্ট এর চেয়ে ব্যার্থতা কি হতে পারে? 

  আত্নীয়তার মজবুত বন্ধনে আবদ্ধ মানুষরা আসলেই সফল এবং সুখি মানুষ।আসুন রক্ত সম্পর্কের আত্নীয় কুটুমিতার সম্পর্কের আত্নীয় সকলের সাথে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হই।
--------------------------------------------------------------
লেখকঃ শিক্ষক, ইসলামি চিন্তাবিদ, আলোচক দাঈ ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments