Recent Tube

মূল গ্রন্থ: মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব কর্তব্য সংকলিত, র্মুসলিম উম্মাহর বর্তমান অবস্থা;




মুসলিম উম্মাহর বর্তমান অবস্থা;
--------------------------------- 
 
    মুসলিম উম্মাহর বর্তমান অবস্থা উপনিবেশিক শাসন আমলের চেয়েও করুণ এবং ভয়াবহ। উপনিবেশিক শাসন আমলে উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালনের সুযােগ ছিল। আজকের দিনে ষাটের অধিক স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র থাকা সত্ত্বেও প্যালেস্টাইনের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে জুলুমবাজ সন্ত্রাসবাদী ইয়াহুদীদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোন উচ্চবাচ্যের সুযােগ নেই। এমনকি খােদ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রসমূহেও জায়নবাদী, ইয়াহুদীবাদী গােষ্ঠীর খবরদারী ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলমানদের স্বাধীন দেশে ইসলামের কথা বলতে, ইসলামের দাবী তুলতে অজানা অদৃশ্য শক্তির হাতের ইশারায় কৃত্রিম বাধা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইয়াহুদী খ্রীষ্টান পরিচালিত এন.জি.ও-দের অবাধ কার্যক্রমের সুযােগ দেয়া হলেও ইসলামী সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলাের কার্যক্রমে ন্যক্কারজনকভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এদের তহবিল সংগ্রহের উপরও বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত মুসলিম ধনী দেশগুলাের দানশীল ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত দানে পরিচালিত বদান্যতামূলক কাজের উপরও আন্তর্জাতিক গােয়েন্দা সংস্থার খবরদারী অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ইসলামী সংস্থাগুলাে গরীব মুসলিম জনপদে মানবিক সাহায্য সহায়তা করতে গেলেও তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমাদের ভাষায় উগ্রপন্থী ধর্মীয় মৌলবাদীদের অবস্থান আবিষ্কারের জন্যে জঘন্যতম তথ্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। বানােয়াট তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাস দমনের নামে মুসলিম দেশগুলাের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নির্লজ্জ ও নগ্ন হস্তক্ষেপ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার পরিণতি সুদূর প্রসারী হওয়ায় আজ প্রায় সর্বত্র মুসলিম জনপদ আতংকগ্রস্ত। এ পরিস্থিতিকে বলতে গেলে সকলেই উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে, সকলের মধ্যে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। কিন্তু মুখ খুলে সত্য কথাটি প্রকাশ করার সাহস-হিম্মত খুব কম লােকেরই আছে। মুসলিম বিশ্বের প্রায় সবদেশে জ্ঞানপাপী একটি ক্ষুদ্র শ্ৰেণীর রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী ছাড়া বাকি সকলেই এ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ লালন করছে। ব্যক্তিগত আলাপ চারিতায় তার প্রকাশও করছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ বিরােধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার মত সৎসাহস তাদের আছে বলে মনে হয় না। বর্তমান বিশ্বের ঘােষিত আন্তর্জাতিক আবহাওয়া ও পরিমণ্ডল মুসলিম নেতৃবৃন্দকে বিবেকের বিরুদ্ধে, উম্মাহর স্বার্থের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতেও বাধ্য করছে।

     এ পরিস্থিতির ফলে একদিকে কিছু লােক আপােষকামিতার আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ক্ষেত্র ভেদে কিছু লােক চরমপন্থা গ্রহণেও বাধ্য হচ্ছে। অবশ্য আমরা একটু আগেও বলে এসেছি যে, এ চরমপন্থা গ্রহণের পেছনেও ইসলামের চিহ্নিত দুশমনদের পরিকল্পনাই কার্যকর হচ্ছে। তাদের সৃষ্টি করা পরিস্থিতির অনিবার্য পরিণতিতে এক শ্রেণীর মানুষ চরমপন্থা বেছে নিতে বাধ্য হতে পারে এবং এটা হলে তাদের লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে এটা জেনে বুঝেই তারা এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আল্লাহর কিছু বান্দাকে এগিয়ে আসতে হবে। আপােষকামিতার শিকার হওয়াও চলবে না, চরমপন্থা অবলম্বন করা যাবে না। মধ্যম পন্থায়ই উত্তম পন্থা, ইসলামী পন্থা। দ্বিধা সংকোচ পরিহার করে আল কুরআনে ঘােষিত মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে ইসলামের সঠিক দাওয়াত, নির্ভেজাল দাওয়াত, পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত উপস্থাপনের সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। আধুনিক বিশ্ব পরিস্থিতিকে সামনে রেখে যৌক্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বাস্তবতা ও অপরিহার্যতা তুলে ধরার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাতে হবে। সত্যের সাক্ষ্য বলতে যা বুঝায় তার সার্থক বাস্তবায়নে আল্লাহর একদল বান্দাকে নিরলস ভূমিকা পালন করতে হবে। মুসলিম উম্মাহর মৌলিক পরিচয় হলাে, শেষ নবীর প্রতিনিধি হিসেবে তারা সকলেই দায়ী ইলাল্লাহ। এ দায়ী ইলাল্লাহর ভূমিকা পালনে সবাইকেই, বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে উদ্যোগী ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে। এ দাওয়াতী তৎপরতাই ইসলামী শক্তির উৎস ও মুসলিম উম্মাহর উত্থানের পথ প্রশস্তকারী।

    এতক্ষণ আমরা মুসলিম উম্মাহর অবস্থান বলতে বাইরের শক্তির চাপিয়ে দেয়া অবস্থার কথাই আলােচনা করেছি। মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও সুখকর নয়। বাইরের শক্তির সৃষ্ট পরিস্থিতির আকার আকৃতি ও প্রকৃতি থেকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আরাে ভয়াবহ। মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে যারা রাষ্ট্র, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে বিবেচিত তাদের মধ্যে রয়েছে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, ইসলামী আদর্শের প্রতি আস্থাহীনতা এবং পশ্চিমা সভ্যতা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ প্রবণতা। তাদের আশীর্বাদ নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ ও ক্ষমতায় টিকে থাকাসহ বিভিন্নমুখী সুযােগ-সুবিধা ভােগের মানসিকতা মূলত ইসলামের চিহ্নিত দুশমনদের ষড়যন্ত্র চক্রান্তের হাতকে এভাবে সম্প্রসারিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত করেছে। বিশেষ করে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বের মুসলমানদের মনে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অব্যাহত প্রচেষ্টা এ পরিস্থিতিকে আরাে ভয়াবহ করে তুলেছে। তার সাথে বাড়তি মাত্রা যােগ করেছে এক শ্রেণীর আলেমদের অযৌক্তিক মতপার্থক্য, সংকীর্ণতা এবং কুপমণ্ডুকতা। এদের মধ্যে দ্বীনের পরিপূর্ণ জ্ঞানের অপরিপক্কতা, ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্র ও কৌশল অনুধাবনে ব্যর্থতা ইসলামের দুশমনদের হাতকে শক্তিশালী করে চলেছে। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে বলতে হয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে কখনো কখনাে ক্ষুদ্র স্বার্থে এরা ইসলামের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিরােধী পক্ষের ক্রীড়নকের ভূমিকাও পালন করছে। উম্মাহর প্রকৃত সমস্যা সম্পর্কে এদের মধ্যে বাস্তব জ্ঞান বুদ্ধির যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ বিরােধী বিভিন্নমুখী তৎপরতা সম্পর্কে তাদের ন্যূনতম ধারণাও আছে বলে মনে হয় না। ব্যক্তি স্বার্থ, গােষ্ঠী স্বার্থের ব্যাপারে এরা এতটাই অন্ধ যে, জাতীয় স্বার্থ ও উম্মাহর স্বার্থ নস্যাৎ করতেও তাদের মধ্যে কোন দ্বিধাবােধ সৃষ্টি হয় না।

    দীনের উপস্থাপনের ক্ষেত্রেও কোন কোন মহলের এক দেশদর্শিতা এবং ইসলামের মৌল শিক্ষার পরিপন্থী কার্যক্রম জনমনে বিভ্রান্তি, অনৈক্য ও নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে থাকে। বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিত সমাজের কাছে অনেকের উপস্থাপনা বিরক্তি ও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। ইসলাম বিরােধী বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের হাতিয়ারকে শক্তি যােগায়। দ্বীনের ব্যাপারে ঠাট্টা-ক্রিপের উপাদানও সরবরাহ করা হয়। মুসলিম উম্মাহর ওলামায়ে হক ও মােখলেছ দীনদার ব্যক্তিদেরকে এ অবস্থার নিরসনে কার্যকর, সােফার এবং বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের মাঝে ইসলামের প্রতি আবেগ থাকলেও ইসলামের সঠিক ধারণা ও চেতনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সাধারণ মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য মানুষ তাে দূরের কথা শিক্ষিত লােকদের মধ্যে ইসলামের সঠিক ধারণার অভাব সবচেয়ে বেশী। এমনকি এক শ্রেণীর ধর্মীয় ব্যক্তিদের মধ্যেও দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ রূপ ও সঠিক ধারণা সম্পর্কে যথেষ্ট অজ্ঞতা পরিলক্ষিত হয়।
এসব লােক ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত চতুর্মুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের সুযােগ করে দিয়েছে। তাই বাইরের সৃষ্ট সমস্যার মােকাবিলার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ এ পরিবেশ পরিস্থিতির প্রতিও আমাদের মনােযােগী হতে হবে। বিশেষ করে সমাজ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিদের মাঝে দ্বীনের সঠিক দাওয়াত উপস্থাপন, ওলামায়ে কেরামের
মধ্যকার মতপার্থক্যকে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা এবং সর্বস্তরের জনমনে ইসলামের সঠিক চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটানাের কার্যক্রম যুগপত্তাবে পরিপূর্ণ গুরুত্ব সহকারে আঞ্জাম দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উন্নয়ন ছাড়া বাইরের শক্তির মােকাবেলা করা কখনাে বাস্তবসম্মত হতে পারে না।

 মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য বইয়ের 
৪১-৪৪ পৃষ্ঠা। 
---------------------------------
সংকলকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments