Recent Tube

সর্বোত্তম হালাল রিযিক; ৷ শামীম আজাদ।

  সর্বোত্তম হালাল রিযিক;
 ---------------------------------

   জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল উপার্জনের কোনো বিকল্প নেই। রুযী-রোজগার ছাড়া দুনিয়ার জীবনে বেঁচে থাকা অসম্ভব। বেঁচে থাকার তাগিদে অবশ্যই আমাদের হালাল রুযীর অন্বেষণ করতে হয়। ইসলাম মানুষকে এ কথা কখনো বলে নি যে, তোমরা মসজিদে বসে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ কর, তোমাদের দায়িত্ব আল্লাহই গ্রহণ করবে এবং জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য কামাই-রুযী (উপার্জন) করা, চেষ্টা ও মেহনত করার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং ইসলামের নির্দেশনা হলো, সালাত আদায় করা, সাওম পালন করা এবং হজ্জ্ব করা যেমন ইবাদত, হালাল রুযী কামাই (উপার্জন) করাও অনুরূপ ইবাদত। সালাত, সাওম ও হজ্জ্ব করা যেমন ফরয, হালাল ও বৈধ পন্থায় কামাই-উপার্জন করাও ফরয।

  আল্লাহ তা’আলা বলেছে-
فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ وَٱبْتَغُوا۟ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ وَٱذْكُرُوا۟ ٱللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
সালাত শেষ হওয়ার পর তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর ফযল (রিযিক) অন্বেষণ কর। 
(সুরা আল-জুমু’আ: ৯)

   মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির জন্য জমিনে বিভিন্নভাবে রিযিকের ব্যবস্থা করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য,ক্ষেত-খামার,ফল-মূল,চাকুরী ইত্যাদির মানব জাতির রিজিকের ব্যবস্থার বিভিন্ন উপকরণ। এ সবের মাধ্যমেই মানুষ তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে থাকে। আল্লাহর জমিন যেমন বিস্তৃত তার জমিনের কর্মেরও কোনো অভাব নেই। মানুষের ইচ্ছা ও আগ্রহ থাকলে সে অবশ্যই কোনো না কোনো কর্ম খুঁজে পাবে। 

  আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَلَقَدۡ مَكَّنَّٰكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَجَعَلۡنَا لَكُمۡ فِيهَا مَعَٰيِشَۗ قَلِيلٗا مَّا تَشۡكُرُونَ 
আর অবশ্যই আমরা তো তোমাদেরকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি বিভিন্ন ধরণের জীবনোপকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞ হও। (সূরা আল-আ’রাফ: ১০)

  আল্লাহর জমিনে কর্মক্ষেত্র আল্লাহ তা’আলা মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। যে কোনো কর্মই হোক না কেন তা মানুষের হাতের নাগালেই। মহান আল্লাহই মানুষের জন্য জমিনে রিজিকের বিভিন্ন উপকরণ দিয়েছেন। তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য রিযিকের সব মাধ্যমকে সহজ করেছেন। যাতে মানুষ সহজেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। আল্লাহর দেওয়া সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। 

  আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন-
هُوَ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ ذَلُولٗا فَٱمۡشُواْ فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُواْ مِن رِّزۡقِهِۦۖ وَإِلَيۡهِ ٱلنُّشُورُ 
তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিজিক থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান। 
(সূরা আল-মুলক: ১৫)

  আয়াতে একটি কথা স্পষ্ট করা হয়েছে, দুনিয়াতে তুমি তোমার জীবন পরিচালনার জন্য যত কিছুই করো না কেন, এ দুনিয়াই তোমার শেষ ঠিকানা নয়। যত কামাই-রুযী (উপার্জন) করো না কেন, তা তোমার স্থায়ী কোনো সম্পদ নয়। তোমাকে অবশ্যই একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে। সেদিন তোমাকে অবশ্যই তোমার কামাই-রুযী (উপার্জন) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহর সামনে হিসাব দিতে হবে কোথায় থেকে উপার্জন করলে এবং কোথায় ব্যয় করলে।

  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ 
  ইবনু মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। 

১. তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? 
২. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে; 
৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং 
৪. তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং 
৫. সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে। (জামে আত তিরমিযী ২৪১৬)

   সুতরাং মনে রাখতে হবে, তোমার উপার্জিত সম্পদ কি বৈধ নাকি অবৈধ তার উত্তর তোমাকে অবশ্যই দিতে হবে। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর তোমাকে দুনিয়াতে থাকতেই তৈরি করতে হবে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা কোনটি হালাল আর কোনটি হারাম তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। হালাল খেতে নির্দেশ দিয়েছেন আর হারাম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

  আল্লাহ তা’আলা বলেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ 
হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সর্ম্পকে আমি সম্যক জ্ঞাত। 
(সূরা আল-মুমিনূন: ৫১)

  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا أُمُورٌ مُشْتَبِهَةٌ فَمَنْ تَرَكَ مَا شُبِّهَ عَلَيْهِ مِنْ الإِثْمِ كَانَ لِمَا اسْتَبَانَ أَتْرَكَ وَمَنْ اجْتَرَأَ عَلَى مَا يَشُكُّ فِيهِ مِنْ الإِثْمِ أَوْشَكَ أَنْ يُوَاقِعَ مَا اسْتَبَانَ وَالْمَعَاصِي حِمَى اللهِ مَنْ يَرْتَعْ حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ
  নু‘মান ইবনু বাশীর (রা্দ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চার পাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। 
(সহীহ বুখারী,হাদিস নং ২০৫১)

   এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। এ হাদীসে হারাম হালাল সম্পর্কে একটি দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো হারাম কি হালাল তা অধিকাংশ মানুষ জানে না। আল্লাহ তা’আলা যাদের কুরআন ও হাদীসের গভীর ইলম (জ্ঞান) দিয়েছেন তারাই জানেন। তবে এ সব সংশয়যুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থেকে নিরেট হালাল বস্তু ভক্ষণ করার প্রতি হাদীসে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হালাল উপার্জন ছাড়া হালাল ভক্ষণ কখনোই চিন্তা করা যায় না। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন জীবিকার অন্বেষণ ছেড়ে অলস বসে না থাকে”। [কানজুল উম্মাল, খণ্ড ২।]
 
    কুরআন এবং হাদীসের বিভিন্ন ভাষ্যে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে, আল্লাহ তা’আলার বন্দেগী করার পাশাপাশি নিজের জীবিকা উপার্জনের জন্যও বৈধ সব রকমের চেষ্টা করতে হবে। অব্যাহতভাবে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শুধু তাই নয়, বৈধ উপায়ে রুযীর প্রচেষ্টাও ইবাদত।

    বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَا أَكَلَ أَحَدٌ مِنْكُمْ طَعَامًا أَحَبَّ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ
নিজ হাতে উপার্জন করে যে খাদ্য গ্রহণ করা হয়, আল্লাহ তা’আলার নিকট তার ছেয়ে প্রিয় খাদ্য আর কিছুই নয়।  
(মুসনাদে আহমদ ১৭১৮১)
আল্লাহর এক প্রিয় নবী দাউদ আলাইহিস সালাম এ জন্য প্রশংসিত হন যে, তিনি তার নিজের হাতে কামাই (উপার্জন) করে খেতেন। কারো কামাই (উপার্জন) খেতেন না।

    হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
عَنْ الْمِقْدَامِ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ وَإِنَّ نَبِيَّ اللهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَم كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ
   মিকদাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নাবী দাঊদ (আ্লাইহিস সালাম) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। 
বুখারী ২০৭২

   আল্লাহ তা’আলা দাউদ আলাইহিস সালামের জন্য লোহাকে নরম করে দেন। ফলে তিনি এ লোহা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ও উপকারী বস্তু তৈরি করে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন।

   আল্লাহ তা’আলা কুরআনে করীমে এ বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে বলেন-
وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ مِنَّا فَضۡلٗاۖ يَٰجِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُۥ وَٱلطَّيۡرَۖ وَأَلَنَّا لَهُ ٱلۡحَدِيدَ أَنِ ٱعۡمَلۡ سَٰبِغَٰتٖ وَقَدِّرۡ فِي ٱلسَّرۡدِۖ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ 

  আর অবশ্যই আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম) ‘হে পর্বতমালা, তোমরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর’ এবং পাখিদেরকেও (এ আদেশ দিয়েছিলাম)। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম, (এ নির্দেশ দিয়ে যে,) ‘তুমি পরিপূর্ণ বর্ম তৈরি কর এবং যথার্থ পরিমাণে প্রস্তুত কর’। আর তোমরা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আমি তার সম্যক দ্রষ্টা। 
(সূরা সাবা: ১০,১১)

    আল্লাহর অপর নবী নূহ আলাইহিস সালাম তিনিও কাঠ মিস্ত্রি কাজ করতেন। আল্লাহর আদেশে তিনি নিজ হাতেই কিস্তি নির্মাণ করেন, যাদ্বারা মহা প্লাবন থেকে নাজাত পেলেন।

  আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَيَصۡنَعُ ٱلۡفُلۡكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيۡهِ مَلَأٞ مِّن قَوۡمِهِۦ سَخِرُواْ مِنۡهُۚ قَالَ إِن تَسۡخَرُواْ مِنَّا فَإِنَّا نَسۡخَرُ مِنكُمۡ كَمَا تَسۡخَرُونَ 
   আর সে নৌকা তৈরি করতে লাগল এবং যখনই তার কাওমের নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত। সে বলল, “যদি তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ”। 
(সূরা হুদ: ৩৮)
   আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি আমাদের আদর্শ ও অনুকরণীয় তিনি নিজেও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতেন। হালাল রুযী উপার্জনের জন্য তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, ব্যবসায়ী কাজে বিভিন্ন দেশে-বিদেশে সফর করতেন।

    এত বড় মর্যাদার অধিকারী হওয়া আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথা নবীরা নিজ হাতে কামাইড়ড় রুযী (উপার্জন) করা এবং কর্ম করাকে নিজেদের মর্যাদাহানি মনে করতেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর অর্পিত মহান দায়িত্ব-আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা-পালন সত্ত্বেও তাদের কর্ম করা থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে নি। তারা তাদের নিজ হাতে কামাই (উপার্জন) করতেন।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরাও বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। হালাল উপার্জনের প্রতি তাদের আগ্রহের কোনো কমতি ছিল না। তারা কখনোই বেকার বসে থাকতেন না। অন্যের বোঝা হয়ে থাকতেন না। মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইতেন না। ভিক্ষা চাওয়া খুবই ঘৃণিত কাজ। ভিক্ষা করা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন।

   রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏ لأَنْ يَحْتَطِبَ أَحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى ظَهْرِهِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ أَحَدًا، فَيُعْطِيَهُ أَوْ يَمْنَعَه‏
আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ী সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেওয়া উত্তম, কারো কাছে সাওয়াল করার চাইতে। (যার কাছে যাবে) সে দিতেও পারে অথবা নাও দিতে পারে। 
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭৪)

    আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের কর্মস্থলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ গুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই উপকারে আসবে।

    ওহে যুবক ভাইয়েরা! আপনারা ঘরে বসে না থেকে বিভিন্ন ধরণের কর্ম শিখুন। বর্তমানে কর্মের অভাব নাই তেমনিভাবে যারা কর্ম করতে পারে তাদের চাহিদারও অন্ত নাই। আপনার কর্ম দ্বারা শুধু আপনি উপকৃত হবেন তা নয়, বরং আপনার দ্বারা পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি সবাই উপকৃত হবে।
কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য বর্তমানে আমাদের যুবক ভাইয়েরা কর্ম-বিমুখ। তাদের মধ্যে কর্মের প্রতি অনীহা দেখা যায়। তারা সরকারি চাকুরীর পিছনে ছুটাছুটি করে। তারা মনে করে সরকারি চাকুরী করলে সম্মান বৃদ্ধি পাবে। আসল সম্মান আখিরাতের সম্মান। প্রকৃত সম্মান তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মধ্যেই নিহিত। আমরা যে যত বেশি মেহনত করবো, তা আমার দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে কাজে লাগবে।

   সুতরাং যুবক ভাইদের প্রতি আমাদের দাওয়াত হলো, নবী ও রাসূলদের অনুকরণে হালাল উপার্জনের দিকে মনোযোগী হন। হালাল পন্থায় কামাই রুযী (উপার্জন) করে নিজেরা স্বাবলম্বী হন এবং মানুষের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করুন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। 
আমীন।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments