Recent Tube

খুলে যাক বদ্ব দুয়ার। আব্দুল্লাহ আরমান।

     



                 খুলে যাক বদ্ব দুয়ার। 


      অনেকদিন আগে বিশেষ ‘প্রয়োজনে’ সহধর্মিণীকে নিয়ে শহরে গিয়েছিলাম। নামাজের ওয়াক্ত হলে আমি ওযু করে মসজিদে ঢুকলেও তাকে মসজিদের গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো! আমার মতো তার উপরও ওয়াক্তনুযায়ী নামাজ আদায় ফরজ কিন্তু অঘোষিত ‘নিষেধাজ্ঞার’ কারণে ওর মসজিদে ঢোকার সুযোগ হয়নি! আচ্ছা, ওর সময়মতো নামাজ পড়তে না পারার দায়ভার কার? আমার,সহধর্মিণীর,নাকি অন্য কারও?

      মসজিদ একাধারে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার স্থান,ইসলামী রাষ্টপ্রধানের কার্যালয়,মন্ত্রণালয়,সচিবালয়,সশস্ত্রবাহিনীর অফিস,বিচারালয়,মিলনায়তন,স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়,আশ্রয়কেন্দ্র,কাজী অফিস,মুসাফিরখানা,প্রশিক্ষণকেন্দ্র  আরও অনেক কিছু!

      মসজিদ শুধু এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়,এটা মুসলিম নর-নারীর আবেগ ও ভালোবাসার স্থান এবং আত্মার হসপিটাল। তাই নারীদের জন্য  সালাতের স্থান হিসেবে নিজ ঘর ‘উত্তম’ ( আবু দাউদ ৫৬৭) হলেও তাদের আবেগকে মূল্যায়ন করে রাসূল সাঃ বলেছেনঃ “আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মাসজিদে যেতে বাধা দিও না”। (সহিহ মুসলিম ৮৭৬)।
ঘর উত্তম জেনেও মহিলা সাহাবীগণ ৫ ওয়াক্ত সলাত,জুম'আ ও জ্ঞানার্জনের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। 

     অধিকাংশ মাজহাব ও স্কলারগণ পরিপূর্ণ পর্দা, সুগন্ধি ব্যবহার না করা ও স্বামীর অনুমতি গ্রহণ এই তিনটি শর্তসাপেক্ষে নারীদের মসজিদ গমন ‘জায়েজ’ বলছেন। বিস্তারিত দেখুনঃ 
★ইংরেজীঃ https://www.google.com/amp/s/islamqa.info/amp/en/answers/983
★আরবীঃ https://dorar.net/feqhia/1333
★বাংলাঃ    
   https://islamqa.info/bn/answers/49898/
তবে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বয়স্কা নারীদের জন্য ফজর,মাগরিব,এশা ও ঈদের নামাজের অনুমোদন দিলেও যুবতীদের মসজিদে গমনকে নাকচ করেছেন (হেদায়া ২/৩৫৪)। 
    
     এদেশের অধিকাংশ মানুষ হানাফি মাযহাবের অনুসারী হওয়ায় তারা নারীদের মসজিদে গমন অপছন্দ করেন।

      সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশের প্রায় প্রতিটি মসজিদে নারীদের পৃথক ওয়াশরুম ও নামাজের স্থান আছে। শুধু তাই নয় মালেশিয়া ও তুরস্কের কোন কোন মসজিদে শিশুদের জন্য খেলাঘর বা খেলনা থাকে যাতে মায়েরা নিশ্চিন্তে নামাজ পড়তে পারে (ছবি কমেন্ট বক্সে)। একই আদলে আমাদের দেশে সালাফিদের বিভিন্ন  মসজিদের দ্বিতীয় তলায় পূর্ণ পর্দার সাথে  নারীদের ওয়াশরুম,পৃথক নামাজের স্থান ও সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

     ইসলামি সীমারেখা মেনে হানাফি আলেমগণ নারীদের স্কুল, কলেজ, মাদরাসা,ইসলামি জালসা ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার অনুমোদন দিলেও “শুধুমাত্র মসজিদে” প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ  করলে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন তো জাগবেই! তাহলে কি অন্যান্য স্থানের তুলনায় মসজিদ কি কম নিরাপদ!?
    অথচ পৃথিবীর সকল স্থানে নারীরা হেনস্তার শিকার হলেও মসজিদে এমন ঘটনা ঘটেছে এমন নজির সাদা কাকের চেয়েও দুর্লভ। তবে হ্যা, পর্দার লঙ্ঘন হলে সেক্ষেত্রে মসজিদ গমন কোনভাবেই বৈধ নয়!

     হজ্জের সময় পর্দা করে কা’বায় একসাথে তাওয়াফ,আরাফার মাঠে একসঙ্গে অবস্থান ও মুযদালিফায় রাত্রিযাপন বৈধ হলেও নিজ মহল্লার মসজিদে নামাজ কেন বৈধ নয়!?

      তূলনামূলক ফিকহের অতি নগণ্য ছাত্র হিসেবে ফিকহে হানাফির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, স্বয়ং রাসূল (সাঃ) ও সর্বযুগের অধিকাংশ বিদ্বানদের অনুমোদন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও নারীদের মসজিদে প্রবেশাধিকার ক্ষুণ্ণ করা কতটুকু ‘ইনসাফ’ তা হানাফি আলেমদের ভেবে দেখার সময় হয়েছে! মাযহাবী অবস্থান থেকে সরে আসতে না চাইলে নারীরা ‘প্রয়োজন’ সাপেক্ষে বাইরে গেলে কোথায় /কিভাবে অযূ ও নামাজ পড়বে তার যুগোপযোগী নির্দেশনা থাকা চাই, শুধু “জায়েজ নেই” বলে দায় এড়ানো যাবেনা।
এছাড়া মাদরাসাগুলোতে একমুখী ফিকহ অধ্যয়ন না করে তূলনামূলক ফিকহ চর্চা এখন সময়ের দাবী! 
-------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল, প্রবন্ধ লেখক , গ্রন্থপ্রনেতা অনলাইন এক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট।

Post a Comment

0 Comments