Recent Tube

যাঁর প্রজ্ঞার প্রভা গগণচুম্বী- জিয়াউল হক।

 


         যাঁর প্রজ্ঞার প্রভা গগণচুম্বী-
                              

    না, তাঁকে দেখিনি। কোনদিন তাঁর সান্নিধ্যে যাবার সুযোগও হয়নি। সাহসও করতে পারি না। দূর থেকেই বুঝতে পারি তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশালতা সাগরসম গভীর, পাহাড়সম অটল, তাঁর প্রজ্ঞার আলো গগণচুম্বী। তাঁকে  চিনি দুর থেকেই। তাঁর'ই হাতে গড়া অসংখ ছাত্রকে বিশ্বের নানা দেশে দেখেছি ওস্তাদের নামটা নিতে গেলেই শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতায় যেন নুয়ে পড়েন। 

     আমি তো তাঁর ছাত্র ড: আব্দিুস সালাম আজাদি, ড: আবুল কালাম আজাদ, ড: আব্দুর রহমান মাদানি, শেখ তারিক নাসরুল্লাহ এদের জ্ঞান প্রজ্ঞাতেই মুগ্ধ, আর তিনি হলেন এইসব বিশ্ববিখ্যাত স্কলারদের শিক্ষক। মানুষ গড়ার এমন কারিগরকে শ্রদ্ধা না করে কি পারা যায়? দূর হতেই শ্রদ্ধা করি তাঁকে, কাছে যাবার সাহস করিনি।  

     বলছিলাম বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ আলেমে দ্বীন, স্কলার, গবেষক, লেখক ও আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব শাইখ যাইনুল আবেদীন হুজুরের কথা।   দেশ বিদেশে পরিচিত প্রসিদ্ধ ও সফল একজন আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি ও সফল সংগঠক, বিদগ্ধ পন্ডিত ও আল্লাহভীরু আলেমে দ্বীন তিনি। দীর্ঘ চারযুগেরও বেশি তিনি সরাসরি শিক্ষকতায় নিবেদিত রয়েছেন। ১৯৯৩ইং সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসাবে পুরস্কৃত।

     অপরাধ, দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তাঁর ভূমিকা ও কর্মতৎপরতা সকলের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক। তারই হাতে গড়া অগনিত মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশ জাতির খেদমতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এ সমাজে, এ জনপদে তাঁর অবদানে মুগ্ধ হবার মতো এরকম অনেক কারণ রয়েছে। 

    আমি আরও একটা কারণে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। সেটা হলো বিগত চারটি দশক বা কাছাকাছি সময়কালে বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রে এক ধরনের পশ্চাদপরতা লক্ষণীয়। এর জন্য আমরা সবাই দায়ী সবাই আজ খুব সহজ পথ খোঁজেন সামাজিকও জাতিগত উন্নয়নের। এটা যেন মুদি খানা থেকে এক কেজি চাল কেনার মতো ব্যাপার। চাইলেই পাওয়া যায়।  

     অথচ বাস্তবতা হলো, স্বার্থক ও অর্থবহ সামাজিক পরিবর্তনের জন্য অন্তত তিন কুরুন, বা একশত কুড়ি বসর সময় প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্রথম কুরুন বা প্রথম চল্লিশ বসর পার করেছে। দ্বিতীয় কুরুনের একেবারে প্রথম দিকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ ফুটে উঠছে। তরুণ ও যুব প্রজন্ম এবং সেই সাথে নারী প্রজন্মের মধ্যেও জ্ঞানচর্চার ধারা শুরু হতে দেখছি। 

    আল কুরআনের জ্ঞান দিয়ে বিশ্বের সকল জ্ঞান যাচাই ও বিশ্বকে চেনা বা জানার প্রবণতা লক্ষণীয়। এই ধারাটাই হলো সভ্যতার উন্নয়নের আসল ও একমাত্র কার্যকর পূর্বশর্ত। আব্বাসীয় কিংবা আন্দালুসিয়ান সমাজের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ধারা পর্যালোচনা করলে তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে কোন লোকের চোখে।
 
     বাংলাদেশে এই ধারা শুরু হয়েছে। যদি সেটা আরও বেগবান করতে পারি আমরা, তা হলে এর যথার্থ ফলটা দেখতে পাবে আগামি বিশ্ব, সম্ভবত তৃতিয় কুরুনে এসে। আজ হতে ষাট সত্তর বসর পরে। আজকের তরুণ, যুবক প্রজন্ম যখন বার্ধক্যে পৌছে যাবেন আর তাদের হাতে গড়া অনাগত প্রজন্মটি যখন সমাজের প্রতিটি স্তরে চালকের ভূমিকায় থাকবে, তখন।
   
     আমরা সেই অনাগত দিনের জন্যই কাজ করি। আর এই ধারা যাদের হাত ধরে সূচিত হয়েছে এই বদ্বীপে, তাদের অন্যতম একজন হলেন অধ্যক্ষ শাইখ যাইনুল আবেদীন। মানবজীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই তিনি এক সময় চলে যাাবেন এ পৃথিবী ছেড়ে। আমারও যাবো। আমরা কেউই সেদিনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও  মানবিক বাংলাদেশ দেখতে পাবো না নিজেদের চোখে। 

      তবে আজ আমরা ঠিকই কল্পনায় শোষণমুক্ত, আলোকিত বাংলাদেশ দেখতে পাই। প্রতিদিনই তা দেখি। প্রতিদিন কলম হাতে নেবার আগে, কলম হাতে নিলেই সেদিনের সেই স্বপ্নের বাংলাদশে চোখে ভাঁসে।  

      হাজার হাজার তরুণকে যিনি এরকম স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন, সেই বিদগ্ধ আলেমের হাতে নযরানা হিসেবে আমার 'জ্ঞান বিপ্লবের ধারা' বইটা তুলে দিতে পারাটাই হলো আমার জন্য এক কল্পনাতীত সূখ। আল্লাহ যেন এই বুজুর্গকে নেক হায়াত দান করেন। জাতির জন্য তাকে আরও বেশি খেদমত করার সুযোগ দান করেন। তাঁর কাজ কর্মে যেন বরকত ঢেলে দেন। সেই দোওয়া করি।
--------------------------------- 
লেখকঃ  ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments