Recent Tube

কুরআন ও হাদীসে তাগুত ‎(الطّٰغُوتُ) ‏এবং কিভাবে ‎‘কুফুর বিত্ ত্বাগুত’কে বর্জন করতে হবে? ‏ ‏ ‏ ‏ ‏শামীম ‎আজাদ ‎।

 
 কুরআন ও হাদীসে  তাগুত (الطّٰغُوتُ) এবং কিভাবে ‘কুফুর বিত্ ত্বাগুত’কে বর্জন করতে হবে?


  তাগুত কি ও কত প্রকার?

  ত্বা-গুত ( ﻃَّﺎﻏُﻮﺕِ )

   ঈমানের মূল ভিত্তি তাওহীদ। আর তাওহীদের রয়েছে দুটি রূকন। একটি কুফর বিত্ ত্বা-গুত। অপরটি ঈমান বিল্লাহ।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে 
ﻓَﻤَﻦ ﻳَﻜْﻔُﺮْ ﺑِﺎﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ ﻭَﻳُﺆْﻣِﻦ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﺳْﺘَﻤْﺴَﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌُﺮْﻭَﺓِ ﺍﻟْﻮُﺛْﻘَﻰٰ ﻟَﺎ ﺍﻧﻔِﺼَﺎﻡَ ﻟَﻬَﺎ
‘যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করলো আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারণ করলো যা কখনো ছিঁড়ে যাবার নয়’। 
সুরা বাকারা ২:২৫৬

 উপরোক্ত আয়াতে 
( ﻓَﻤَﻦ ﻳَﻜْﻔُﺮْ ﺑِﺎﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ )
হচ্ছে প্রথম রোকন,
(َ ﻳُﺆْﻣِﻦ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ )
হচ্ছে দ্বিতীয় রোকন এবং ( ﺑِﺎﻟْﻌُﺮْﻭَﺓِ ﺍﻟْﻮُﺛْﻘَﻰ ) শক্ত রজ্জু বলতে কালেমা ( ﻟَﺎ ﺇِﻟَٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎﻟﻠَّﻪ ) কে বুঝানো হয়েছে। আর এটাই মূলত: তাওহীদের কালেমা। তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা হচ্ছে এই দ্বীনের মূল ভিত্তি ও এর প্রধান মূলনীতি। সকল নবী রাসুলদের মূল আহ্বান ছিলো এটি-ই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻌَﺜْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺭَّﺳُﻮﻟًﺎ ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ
 ‘আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য।’ 
(সুরা নাহল ১৬:৩৬)

     এ আয়াতগুলো থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, ত্বা-গুতকে বর্জন করা ঈমানের একটি মৌলিক অঙ্গ। ত্বা-গুতকে বর্জন করার জন্য প্রয়োজন ত্বা-গুত সম্পর্কে জানা। অত:পর প্রধান প্রধান ত্বা-গুত গুলোকে চিহ্নিত করা। অত:পর ত্বা-গুতকে কিভাবে বর্জন করতে হবে তা জানা। অনেকের ধারণা ত্বা-গুত মানে হলো শয়তান। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। বরং শয়তান একটি ত্বা-গুত।
একমাত্র ত্বা-গুত নয়। তাই আমি আপনাদের সামনে প্রথমে ত্বা-গুতের পরিচয় তারপর প্রধান প্রধান ত্বা-গুতগুলোকে চিহ্নিত করা। অত:পর কিভাবে ত্বা-গুতকে বর্জন করতে হবে তা নিয়ে সামান্য আলোচনা পেশ করছি।

     ○ ত্বা-গুত-এর সংজ্ঞাঃ
(ত্বগা) ত্ব-গা’ শব্দটি ক্রিয়া। এর (মাসদার) (বা ক্রিয়ার মূল ধাতু) হল (তুগইয়ান); আর (তুগইয়ান) শব্দের অর্থ বন্যা। নদীর পানি প্রবাহ নদীর দুই তীর দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকাই নিয়ম কিন্তু পানি যখনই তার তীরের সীমালংঘন করে উপচে উঠে দু’কুল ভাসিয়ে নিয়ে যায় তখনই তাকে আমরা বন্যা বলি। তদ্রুপ মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁরই
আইন মেনে চলবে-এটিই আল্লাহর বিধান। কিন্তু ঐ মানুষ যখন আল্লাহর এবাদত করার পরিবর্তে নিজেই এবাদত নেয়া
শুরু করে এবং আল্লাহর আইন মানার পরিবর্তে নিজেই আইন দেয়া শুরু করে অর্থাৎ আবদিয়্যাত বা দাসত্বের সীমানা অতিক্রম করে নিজেই মাবুদ বা রবের আসনে বসে পড়ে তখনই তাকে তাগুত বলা হয়।  ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা এভাবেই তাদের ধর্মীয় নেতা ও পীর-দরবেশদের নিজেদের রব বানিয়েছিলো। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭﺍ ﺃَﺣْﺒَﺎﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺭُﻫْﺒَﺎﻧَﻬُﻢْ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে’
(সুরা তাওবাহ ৯:৩১)

    তাই (লিসানুল আরব) এ বলা হয়েছে ‘যে বা যারা আল্লাহর অবাধ্যতার ক্ষেত্রে সীমালংঘন করে তারাই ত্বা-গুত।’
সুতরাং যে কোন মানুষের ক্ষেত্রেই আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য আইনের প্রণয়ন ও অনুসরণ করাই হবে ত্বা-গুতের কাজ। আর যারা এগুলো করে তারাই ত্বা-গুত।

    ○ (ত্বা-গুত) এর পারিভাষিক অর্থঃ ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় ত্বা-গুত বলা হয় আল্লাহর পরিবর্তে যার আনুগত্য করা হয় এবং সে এটা পছন্দ করে। চাই সেটা ইবাদতের কোন অংশ বিশেষ হোক অথবা ইবাদতের বিশেষ কোন ক্ষেত্রে হোক। সুতরাং আল্লাহর ক্ষমতার পরিবর্তে কাউকে ক্ষমতাশালী মনে করে অথবা আল্লাহর ভালোবাসার মতো বা তার চেয়ে বেশী কাউকে ভালোবেসে যার আনুগত্য করা হয় সেই ত্বা-গুত। আল্লাহর আনুগত্য ও বিচার ফায়সালা মেনে নেওয়ার পরিবর্তে যাদের বিচার ফায়সালা মেনে নেওয়া হয় তারা ত্বা-গুত। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, তাকে ভয় করা, তার নামে মান্নত করা, কোরবানী করা ও পশু জবাই করা ইত্যাদির পরিবর্তে যাদের নামে এগুলো করা হয় (পীর-দরবেশ, সমাজপতি, শায়েখ, রাষ্ট্রশক্তি, মাজার, দর্গা-দুর্গা, মূর্তি-প্রতীমা ইত্যাদি) তারা ত্বা-গুত। আল্লাহর বিশেষ ক্ষমতা, বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে যাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ স্বীকার করা হয়, অথবা আল্লাহর ক্ষমতা, বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর আংশিক অধিকারী স্বীকার করা হয় তারা ত্বা-গুত (গণক, জ্যোতিষী, অদৃশ্যের জ্ঞানের দাবীদার পীর-দরবেশ)।

     এমনিভাবে মানব রচিত সংবিধান, আইন-কানুন ও আল্লাহ প্রদত্ত শরীআ’তের সাদৃশ্য মানব রচিত বিধান ও ইবাদতের পদ্ধতিও ত্বা-গুত। এমনিভাবে সকল প্রকার ফিৎনা-
ফাসাদ, গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতার নেতৃত্ব দানকারী নেতা-নেত্রীরা ত্বা-গুত। কুরআন-সুন্নাহ বিবর্জিত শির্ক ও বিদআ’ত এবং বিভিন্ন রুসুম ও রেওয়াজের
উদ্ভাবক ও পৃষ্ঠপোষক পীর-মুর্শিদ ত্বা-গুত। ত্বা-গুতের এসকল বৈশিষ্ট্য সমূহ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি
আয়াত পেশ করছি।

   ○ পবিত্র কুরআনের আরও ছয়টি আয়াতে ত্বা-গুতের বৈশিষ্ট্যঃ

   ○ প্রথম আয়াত:
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﺟْﺘَﻨَﺒُﻮﺍ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ ﺃَﻥ ﻳَﻌْﺒُﺪُﻭﻫَﺎ ﻭَﺃَﻧَﺎﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺒُﺸْﺮَﻯٰ
‘আর যারা ত্বা-গুতের উপাসনা পরিহার করে এবং আল্লাহঅভিমুখী হয় তাদের জন্য আছে সুসংবাদ; অতএব আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও।’ 
সূরা যুমারঃ ১৭

    এ আয়াত থেকে বুঝা গেলো যে,
ত্বা-গুত হল সেই غيرالله (গায়রুলাহ), যার ইবাদত করা হয়ে থাকে, যাকে মান্য করা হয়, এবং যার একনিষ্ঠ অনুসরণ করা হয়, অথচ তা হারাম এবং নিষিদ্ধ।

     ○ দ্বিতীয় আয়াত:
ﺃَﻟَﻢْ ﺗَﺮَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃُﻭﺗُﻮﺍ ﻧَﺼِﻴﺒًﺎ ﻣِّﻦَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟْﺠِﺒْﺖِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻫَٰﺆُﻟَﺎﺀِ ﺃَﻫْﺪَﻯٰ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺳَﺒِﻴﻠًﺎ
‘তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে প্রতিমা ও তা-গুতকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরা মুসলিমদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে।’ 
সূরা নিসাঃ ৫১

   এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, ত্বা-গুত হল এমন غيرالله
(গায়রুল্লাহ) যার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা হয়।

   ○ তৃতীয় আয়াত:
ﺃَﻟَﻢْ ﺗَﺮَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺰْﻋُﻤُﻮﻥَ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺑِﻤَﺎ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥ ﻳَﺘَﺤَﺎﻛَﻤُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ ﻭَﻗَﺪْ ﺃُﻣِﺮُﻭﺍ ﺃَﻥ ﻳَﻜْﻔُﺮُﻭﺍ ﺑِﻪِ ﻭَﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﻥ ﻳُﻀِﻠَّﻬُﻢْ ﺿَﻠَﺎﻟًﺎ ﺑَﻌِﻴﺪًﺍ
  ‘তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা ত্বা-গুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে।’ 
সূরা নিসাঃ ৬০

   এ আয়াতে দেখা যায় যে, ত্বা-গুত হল এমন ( غير الله) (গায়রুলাহ) যার নিকট বিচার-ফয়সালা চাওয়া হয়। অর্থাৎ মানব রচিত সংবিধানে বিচার ফয়সালাকারী বিচারকগণ।
যারা ত্বা-গুতের অর্থ শয়তান বলে থাকেন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, এ আয়াতেও কি ত্বা-গুত অর্থ শয়তান করবেন?
শয়তানের এমন কোন এজলাস আছে কি যেখানে মানুষ দলে দলে তার কাছে বিচার-ফয়সালা নিয়ে যায়?

   ○ চতুর্থ আয়াত:
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ ﻓَﻘَﺎﺗِﻠُﻮﺍ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ۖ ﺇِﻥَّ ﻛَﻴْﺪَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﻛَﺎﻥَ ﺿَﻌِﻴﻔًﺎ
‘যারা ঈমান এনেছে তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কুফরী করেছে তারা যুদ্ধ করে তাগূতের পথে। সুতরাং তোমরা যুদ্ধ কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল।’ 
সুরা নিসাঃ ৭৬

   এ আয়াতে দেখা যায় যে, ত্বা-গুত হল সেই ( غير الله) (গায়রুলাহ) বা শক্তি যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একদল লোক প্রাণন্তকর সংগ্রাম করে।

    ○ পঞ্চম আয়াত:
اللَّهُ وَلِىُّ الَّذِينَ ءَامَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوٓا أَوْلِيَآؤُهُمُ الطّٰغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمٰتِ ۗ أُولٰٓئِكَ أَصْحٰبُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خٰلِدُونَ
যারা ঈমান আনে আল্লাহ‌ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত। সে তাদের আলোক থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা আগুনের অধিবাসী। সেখানে থাকবে এরা চিরকালের জন্য।
সূরা বাকারাঃ ২৫৭

       এ আয়াতে দেখা যায় যে, ত্বা-গুত হল সেই ( غير الله) (গায়রুলাহ) বা শক্তি যাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একদল লোক সাহায্য -সহযোগিতা  প্রাণন্তকর সংগ্রাম করে।

    ○ ষষ্ঠ আয়াত:
قُلْ هَلْ أُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِّن ذٰلِكَ مَثُوبَةً عِندَ اللَّهِ ۚ مَن لَّعَنَهُ اللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ الطّٰغُوتَ ۚ أُولٰٓئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَأَضَلُّ عَن سَوَآءِ السَّبِيلِ
তাহলে বলো, আমি কি তাদেরকে চিহ্নিত করবো। যাদের পরিণাম আল্লাহর কাছে এ ফাসেকের চাইতেও খারাপ? বস্তুত যাদের ওপর আল্লাহ‌ লানত বর্ষণ করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধান্বিত, যাদের মধ্য থেকে কতককে বানর ও শুয়োর বানানো হয়েছে এবং যারা তাগুতের বন্দেগী করেছে, তারা আরো নিকৃষ্ট এবং তারা সাওয়া-উস-সাবীল- (সরল সঠিক পথ) থেকে বিচ্যুত হয়ে অনেক দূরে সরে গেছে।
সূরা মায়েদাঃ ৬০

       এ আয়াতে দেখা যায় যে, ত্বা-গুত হল সেই ( غير الله) (গায়রুলাহ) বা শক্তি যা শরীআত বিরোধী কর্মকাণ্ড করে আল্লাহর আইন /বিধান লঙ্ঘনকারী।

হাদীসে ত্বা-গুতঃ
====================
حدثني زهير بن حرب، حدثنا يعقوب بن إبراهيم، حدثنا أبي، عن ابن شهاب، عن عطاء بن يزيد الليثي، أن أبا هريرة، أخبره أن ناسا قالوا لرسول الله صلى الله عليه وسلم يا رسول الله هل نرى ربنا يوم القيامة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ‏"‏ هل تضارون في رؤية القمر ليلة البدر ‏"‏ ‏.‏ قالوا لا يا رسول الله ‏.‏ قال ‏"‏ هل تضارون في الشمس ليس دونها سحاب ‏"‏ ‏.‏ قالوا لا يا رسول الله ‏.‏ قال ‏"‏ فإنكم ترونه كذلك يجمع الله الناس يوم القيامة فيقول من كان يعبد شيئا فليتبعه ‏.‏ فيتبع من كان يعبد الشمس الشمس ويتبع من كان يعبد القمر القمر ويتبع من كان يعبد الطواغيت الطواغيت وتبقى هذه الأمة فيها منافقوها فيأتيهم الله - تبارك وتعالى - في صورة غير صورته التي يعرفون فيقول أنا ربكم ‏.‏ فيقولون نعوذ بالله منك هذا مكاننا حتى يأتينا ربنا فإذا جاء ربنا عرفناه ‏.‏ فيأتيهم الله تعالى في صورته التي يعرفون فيقول أنا ربكم ‏.‏ فيقولون أنت ربنا ‏.‏ فيتبعونه ويضرب الصراط بين ظهرى جهنم فأكون أنا وأمتي أول من يجيز ولا يتكلم يومئذ إلا الرسل ودعوى الرسل يومئذ اللهم سلم سلم ‏.‏ وفي جهنم كلاليب مثل شوك السعدان هل رأيتم السعدان ‏"‏ ‏.‏ قالوا نعم يا رسول الله ‏.‏ قال ‏"‏ فإنها مثل شوك السعدان غير أنه لا يعلم ما قدر عظمها إلا الله تخطف الناس بأعمالهم فمنهم المؤمن بقي بعمله ومنهم المجازى حتى ينجى حتى إذا فرغ الله من القضاء بين العباد وأراد أن يخرج برحمته من أراد من أهل النار أمر الملائكة أن يخرجوا من النار من كان لا يشرك بالله شيئا ممن أراد الله تعالى أن يرحمه ممن يقول لا إله إلا الله ‏.‏ فيعرفونهم في النار يعرفونهم بأثر السجود تأكل النار من ابن آدم إلا أثر السجود حرم الله على النار أن تأكل أثر السجود ‏.‏ فيخرجون من النار وقد امتحشوا فيصب عليهم ماء الحياة فينبتون منه كما تنبت الحبة في حميل السيل ثم يفرغ الله تعالى من القضاء بين العباد ويبقى رجل مقبل بوجهه على النار وهو آخر أهل الجنة دخولا الجنة فيقول أى رب اصرف وجهي عن النار فإنه قد قشبني ريحها وأحرقني ذكاؤها فيدعو الله ما شاء الله أن يدعوه ثم يقول الله تبارك وتعالى هل عسيت إن فعلت ذلك بك أن تسأل غيره ‏.‏ فيقول لا أسألك غيره ‏.‏ ويعطي ربه من عهود ومواثيق ما شاء الله فيصرف الله وجهه عن النار فإذا أقبل على الجنة ورآها سكت ما شاء الله أن يسكت ثم يقول أى رب قدمني إلى باب الجنة ‏.‏ فيقول الله له أليس قد أعطيت عهودك ومواثيقك لا تسألني غير الذي أعطيتك ويلك يا ابن آدم ما أغدرك ‏.‏ فيقول أى رب ويدعو الله حتى يقول له فهل عسيت إن أعطيتك ذلك أن تسأل غيره ‏.‏ فيقول لا وعزتك ‏.‏ فيعطي ربه ما شاء الله من عهود ومواثيق فيقدمه إلى باب الجنة فإذا قام على باب الجنة انفهقت له الجنة فرأى ما فيها من الخير والسرور فيسكت ما شاء الله أن يسكت ثم يقول أى رب أدخلني الجنة ‏.‏ فيقول الله تبارك وتعالى له أليس قد أعطيت عهودك ومواثيقك أن لا تسأل غير ما أعطيت ويلك يا ابن آدم ما أغدرك ‏.‏ فيقول أى رب لا أكون أشقى خلقك ‏.‏ فلا يزال يدعو الله حتى يضحك الله تبارك وتعالى منه فإذا ضحك الله منه قال ادخل الجنة ‏.‏ فإذا دخلها قال الله له تمنه ‏.‏ فيسأل ربه ويتمنى حتى إن الله ليذكره من كذا وكذا حتى إذا انقطعت به الأماني قال الله تعالى ذلك لك ومثله معه ‏"‏ ‏.‏ قال عطاء بن يزيد وأبو سعيد الخدري مع أبي هريرة لا يرد عليه من حديثه شيئا ‏.‏ حتى إذا حدث أبو هريرة أن الله قال لذلك الرجل ومثله معه ‏.‏ قال أبو سعيد وعشرة أمثاله معه يا أبا هريرة ‏.‏ قال أبو هريرة ما حفظت إلا قوله ذلك لك ومثله معه ‏.‏ قال أبو سعيد أشهد أني حفظت من رسول الله صلى الله عليه وسلم قوله ذلك لك وعشرة أمثاله ‏.‏ قال أبو هريرة وذلك الرجل آخر أهل الجنة دخولا الجنة ‏.‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

কয়েকজন সহাবা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামাত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবো? রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের পরস্পরের মাঝে কষ্ট হয়? সহাবাগণ বললেন, না। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের পরস্পরের কষ্টবোধ হয়? তাঁরা বললেন, না। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তদ্রূপ তোমরা তাঁকেও দেখবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ সকল মানুষকে জমায়েত করে বলবেন, পৃথিবীতে তোমাদের যে যার ‘ইবাদাত করেছিলে আজ তাকেই অনুসরণ কর। তখন যারা সূর্যের উপাসনা করতো, তারা সূর্যের সাথে থাকবে। যারা চন্দ্রের উপাসনা করতো, তারা চন্দ্রের সাথে থাকবে। আর যারা আল্লাহদ্রোহীদের (তাগূতের) উপাসনা করতো, তারা আল্লাহদ্রোহীদের সাথে জমায়েত হয়ে যাবে। কেবল এ উম্মাত অবশিষ্ট থাকবে। তন্মধ্যে মুনাফিকরাও থাকবে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের নিকট এমন আকৃতিতে উপস্থিত হবেন যা তারা চিনে না। তারপর (আল্লাহ তা’আলা) বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক (সুতরাং তোমরা আমার পিছনে চল)। তারা বলবে, না’ঊযুবিল্লাহ। আমাদের প্রভু না আসা পর্যন্ত আমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। আর তিনি যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারবো। এরপর আল্লাহ তা’আলা তাদের নিকট তাদের পরিচিত আকৃতিতে আসবেন, বলবেন : আমি তোমাদের প্রভু। তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের প্রভু। এ বলে তারা তাঁকে অনুসরণ করবে। এমন সময়ে জাহান্নামের উপর দিয়ে সিরাত (সাঁকো) বসানো হবে। [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন] আর আমি ও আমার উম্মাতই হব প্রথম এ পথ অতিক্রমকারী। সেদিন রসূলগণ ব্যতীত অন্য কেউ মুখ খোলারও সাহস করবে না। আর রসূলগণও কেবল এ দু’আ করবেন। হে আল্লাহ! নিরাপত্তা দাও, নিরাপত্তা দাও। আর জাহান্নামে থাকবে সা’দান বৃক্ষের কাঁটার মত অনেক কাঁটাযুক্ত লৌহদণ্ড। তোমরা সা’দান বৃক্ষটি দেখেছ কি? সহাবাগণ বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা সা’দান বৃক্ষের কাঁটার মতই, তবে সেটা যে কত বিরাট তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। পাপ কাজের জন্য কাঁটার আংটাগুলো ছোবল দিতে থাকবে। তাদের কেউ কেউ মু’মিন (যারা সাময়িক জাহান্নামী) তারা রক্ষা পাবে, আর কেউ তো শাস্তি ভোগ করে নাযাত পাবে। এরপর আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা হতে অবসর হলে স্বীয় রহমাতে কিছু সংখ্যক জাহান্নামীদের (জাহান্নাম হতে) বের করতে দেয়ার ইচ্ছা করবেন তখন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন যারা কালিমায় বিশ্বাসী ও শির্‌ক করেনি যাদের উপর আল্লাহ তা’আলা রহম করতে চাইবেন যে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসো। আর যাদের উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করতে চেয়েছেন তারা ঐ সকল লোক যারা ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলত। অতঃপর ফেরেশতাগণ তাদের সনাক্ত করবেন। তারা সাজদাহ চিহ্নের সাহায্যে তাদের চিনবেন। কারণ, অগ্নি মানুষের দেহের সবকিছু জ্বালিয়ে ফেললেও সাজদার স্থান অক্ষত থাকবে। আল্লাহ তা’আলা সাজদার চিহ্ন নষ্ট করা হারাম (নিষিদ্ধ) করে দিয়েছেন। মোটকথা, ফেরেশতাগণ এদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে এমন অবস্থায় যে, তাদের দেহ আগুনে দগ্ধ। তাদের উপর ‘মাউল-হায়াত’ (সঞ্জীবনী পানি) ঢেলে দেয়া হবে। তখন তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে যেমনভাবে শস্য অঙ্কুর পানিসিক্ত উর্বর জমিতে সতেজ হয়ে উঠে। তারপর আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের বিচার সমাপ্ত করবেন। শেষে এক ব্যক্তি থেকে যাবে। তার মুখমণ্ডল হবে জাহান্নামের দিকে। এই হবে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। সে বলবে, হে আমার প্রভু! (অনুগ্রহ করে) আমার মুখটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিন। কারণ জাহান্নামের দুর্গন্ধ আমাকে অসহনীয় কষ্ট দিচ্ছে; এর লেলিহান অগ্নিশিখা আমাকে দগ্ধ করে দিচ্ছে। আল্লাহ যতদিন চান ততদিন পর্যন্ত সে তাঁর নিকট দু’আ করতে থাকবে। পরে আল্লাহ বলবেন, তোমার এ দু’আ কবূল করলে তুমি কি আরো কিছু কামনা করবে? সে বিভিন্ন ধরণের ও’য়াদা ও অঙ্গীকার করে বলবে যে, জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। তার চেহারা যখন জান্নাতের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, আর সে জান্নাত দেখবে, তখন আল্লাহ যতদিন চান সে নীরব থাকবে। পরে আবার বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেবল জান্নাতের দরজা পর্যন্ত আমাকে পৌঁছে দিন। আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি না অঙ্গীকার দিয়েছিলে যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না। হে আদাম সন্তান! তুমি হতভাগা ও তুমি সাংঘাতিক ওয়া’দাভঙ্গকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! এই বলে আল্লাহর কাছে দু’আ করতে থাকবে। আল্লাহ বলবেন, তুমি যা চাও তা যদি দিয়ে দেই তবে আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, আপনার ইজ্জতের কসম! আর কিছু চাইব না। এভাবে সে তার অক্ষমতা (আল্লাহর কাছে) পেশ করতে থাকবে যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা হয়। তারপর তাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া হবে। এবার যখন সে জান্নাতের দরজায় দাঁড়াবে, তখন জান্নাত তার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। সে জান্নাতের সমৃদ্ধি ও সুখ দেখতে থাকবে। সেখানে আল্লাহ যতক্ষণ চান সে ততক্ষণ চুপ করে থাকবে। পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি না সকল ধরণের ওয়া’দা ও অঙ্গীকার করে বলেছিলে, আমি যা দান করেছি এর চাইতে বেশি আর কিছু চাইবে না? হে হতভাগা আদাম সন্তান! তুমি তো ভীষণ ওয়াদাভঙ্গকারী। সে বলবে, হে আমার রব! আমি যেন আপনার সৃষ্টির সবচেয়ে দুর্ভাগা না হই। সে বার বার দু’আ করতে থাকবে। পরিশেষে তার অবস্থা দেখে আল্লাহ তা’আলা হেসে ফেলবেন। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। (জান্নাতে প্রবেশের পর) আল্লাহ তাকে বলবেন, (যা চাওয়ার) চাও। তখন সে তার সকল কামনা চেয়ে শেষ করবে। এরপর আল্লাহ নিজেই স্মরন করায়ে বলবেন, অমুক অমুকটা চাও। এভাবে তার কামনা শেষ হয়ে গেলে আল্লাহ বলবেন, তোমাকে এ সব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেয়া হলো। 
‘আতা ইবনু ইয়াযীদ বলেন, এবং আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এ হাদীসের কোন কথাই রদ করেননি। তবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন এ কথা উল্লেখ করলেন, “আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে বলবেন, তোমাকে এ সব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেয়া হলো” তখন আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! বরং তা সহ আরো দশগুণ দেয়া হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে “এর সম-পরিমাণ” এ শব্দ স্মরণ রেখেছি। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে “আরো দশগুণ” এ শব্দ সংরক্ষিত রেখেছি। 
রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) পরিশেষে বলেন, এ ব্যক্তি হবে জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী। (ই.ফা. ৩৪৮; ই.সে. ৩৫৯)
সহিহ মুসলিমঃ ৩৪০

সুতরাং পবিত্র কোরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে ত্বা-গুত সেই ( غير الله ) (গায়রুলাহ) শক্তি, যার ইবাদত করা হয়, যার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা হয়, যার কাছে বিচার- ফয়সালা চাওয়া হয় এবং যাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাণান্তকর সংগ্রাম করা হয়। আর একমাত্র কাফিররাই এই ত্বা-গুতের ইবাদত করে।

○প্রধান প্রধান ত্বা-গুতঃ

(১) শয়তান :(غير الله) গায়রুলাহর ইবাদতের দিকে আহ্বানকারী শয়তান। যে পরোক্ষভাবে নিজেই ইবাদত নেয়।

(২) শাসক : ঐ সকল শাসক যারা নিজেরা সার্বভৌমত্বের দাবী করে এবং আল্লাহর আইন বাতিল করে মনগড়া আইন তৈরী করে। যেমন: ত্বা-গুতী রাষ্ট্রের মন্ত্রী-এমপি ও আমলাগণ।

(৩) বিচারক: আল্লাহর নাযিলকৃত আইন-বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার- ফয়সালাকারী বিচারক।

(৪) পীর-দরবেশ, শায়েখ : আল্লাহর ইবাদতের সাথে ভায়া-মাধ্যম ও অংশীদার হিসেবে ইবাদত গ্রহণকারী পীর-দরবেশ, শায়েখ, কবর- মাজার, দরগা-খানকাহ্ যাদের ইবাদত করা হয় এবং তাদের ইবাদতের দিকে আহ্বানকারী মুরীদ ও ভক্তবৃন্দ।

(৫) গণক, জ্যোতিষী, যাদুকর : ইলমূল গাইব বা ভবিষ্যত জ্ঞানের অধিকারী দাবীদার গণক, জ্যেতিষী, যাদুকর ও তাদের দিকে আহ্বানকারী ভক্তবৃন্দ।

(৬) আল-হাওয়া : আল্লাহর হুকুম পালনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী আল-হাওয়া ওয়ান নাফস্ (প্রবৃত্তি)।

(৭) তাক্বলিদে-আবা : কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে যেসকল বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষের দোহাই দিয়ে গায়রুলাহর ইবাদত করা হয় সেসকল বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষরাও ত্বা-গুত। যদি তারা এটা পছন্দ করে থাকেন।

○ কিভাবে ‘কুফুর বিত ত্বাগুত’ তথা ত্বাগুতকে বর্জন করতে হবে?
ত্বাগুতকে পাঁচভাবে বর্জন করতে হবে-

১। তাগুতের ইবাদত বাতিল এ আক্বীদা পোষণের মাধ্যমে-

মানুষ যত ধরনের ইবাদতই তাগুতের জন্য নিবেদন করুক তা সবই বাতিল এ আক্বীদা বা বিশ্বাস অবশ্যই রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
ﺫَٰﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻭَﺃَﻥَّ ﻣَﺎ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺒَﺎﻃ
ِﻞُ ﻭَﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻲُّ ﺍﻟْﻜَﺒِﻴﺮُ
‘আর এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ তো সমুচ্চ, সুমহান।’ 
সুরা হজ্জ ২২:৬২

২। তাগুতকে পরিত্যাগ ও তাগুত থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে:

এর অর্থ হচ্ছে তাগুতের ইবাদত পরিত্যাগ করা, পরিহার করা। আল্লাহ তা’আলা  বলেন-
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻌَﺜْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺭَّﺳُﻮﻟًﺎ ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি এই মর্মে যে, তোমরা আলাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকো।‘ 
সুরা নাহল ১৬:৩৬

৩। দুশমনি বা শত্রুতার মাধ্যমে:
আল্লাহ তা'আলা  ইবরাহীম (আ:) এর ঘটনা বর্ণনা করত: বলেন-
ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻓَﺮَﺃَﻳْﺘُﻢ ﻣَّﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﻥَ ‏[ ٢٦ :٧٥ ‏]
ﺃَﻧﺘُﻢْ ﻭَﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢُ ﺍﻟْﺄَﻗْﺪَﻣُﻮﻥَ ‏[ ٢٦ :٧٦ ‏]
ﻓَﺈِﻧَّﻬُﻢْ ﻋَﺪُﻭٌّ ﻟِّﻲ ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺏَّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ‏[ ٢٦ : ٧٧ ]
.
‘ইবরাহীম বললো: তোমরা এবং তোমাদের অতীত বাপ-দাদারা যে সব জিনিসের ইবাদত করে আসছো, সে গুলি কি কখনো তোমরা চোখ মেলে দেখেছো? এরা সবাইতো আমার দুশমন একমাত্র রাব্বুল আলামীন ছাড়া।’ 
সূরা শুআরা ২৬:৭৫-৭৭

যে ব্যক্তির ন্যুনতম জ্ঞান আছে এবং দাবী করে যে সে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে সে কখনো তাগুতকে বন্ধু হিসেবে নিতে পারে না। বরং তাগুতের সাথে থাকবে তার দুশমনি বা শত্রুতা।

৪। ক্রোধ ও ঘৃণার মাধ্যমে:

আল্লাহ তা’আলা  ইরশাদ করেছেন-
ﻗَﺪْ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻜُﻢْ ﺃُﺳْﻮَﺓٌ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ ﻓِﻲ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣَﻌَﻪُ ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻟِﻘَﻮْﻣِﻬِﻢْ ﺇِﻧَّﺎ ﺑُﺮَﺁﺀُ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﻭَﻣِﻤَّﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻔَﺮْﻧَﺎ ﺑِﻜُﻢْ ﻭَﺑَﺪَﺍ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻜُﻢُ ﺍﻟْﻌَﺪَﺍﻭَﺓُ ﻭَﺍﻟْﺒَﻐْﻀَﺎﺀُ ﺃَﺑَﺪًﺍ ﺣَﺘَّﻰٰ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺣْﺪَﻩُ
‘তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তাঁর সংঙ্গীগণের মধ্যে সুন্দর আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলো: তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করো, তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা যতক্ষণ না এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, ততক্ষণ তোমাদের ও আমাদের মধ্যে থাকবে চির শত্রুতা, ক্রোধ ও ঘৃণা।’
সুরা মুমতাহিনাঃ ৪

সুতরাং তাগুতকে অস্বীকারের দাবী হচ্ছে তাগুত এবং যে ব্যক্তি তার ইবাদত করে কাফেরে পরিণত হয়েছে উভয়কেই পরিত্যাগ করতে হবে এবং উভয়ের সাথে ঈমানদারদের থাকবে দুশমনি, ঘৃণা-বিদ্বেষ।

৫। অস্বীকার করার মাধ্যমে:
 
ত্বাগুতকে অস্বীকার করা। তাগুতের যারা উপাসনা করে এবং নেতৃত্বের আসনে বসায় তাদেরকে অস্বীকার করা এবং যে ব্যক্তি কুফরী মতবাদের প্রবর্তন করে অথবা কুফরীর দিকে আহবান জানায় তাকে অস্বীকার করা।
---------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক কলামিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments