Recent Tube

কুরআন ভুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে উত্তরণের ১০টি কার্যকরী উপায়। আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।



কুরআন ভুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে উত্তরণের ১০টি কার্যকরী উপায়।
-----------------◆◯◆------------------- 

প্রশ্ন:
আমি একজন কুরআনের হাফেজ। আমার একটা দুর্বলতা হল, এতো ভালোভাবে কুরআন মুখস্থ করার পরও নামাজে ইমামতি করার সময় আয়াত ভুলে যাই। যার কারণে অত্যন্ত পেরেশানির মধ্যে আছি। যদি এ থেকে বাঁচার কোন উপায় বলতেন তাহলে উপকৃত হতাম।

উত্তর: 
 নি:সন্দেহে কুরআনে হাফেজ হওয়া তথা ৩০ পারা কুরআন অন্তরে ধারণ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর একটি বিশাল অনুগ্রহ। দুআ করি, মহান আল্লাহ আপনাকে হৃদয় পটে কুরআন ধরে রাখার পাশাপাশি, তদনুযায়ী আমল করার এবং তার খেদমত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
 
 যাহোক নিম্নে কুরআন ভুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে উত্তরণের ব্যাপারে সংক্ষেপে ১০টি উপায় বর্ণনা করা হল:
 
 ১) মনে রাখতে হবে, ভুলে যাওয়া মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। বিশ্বের বড় বড় হাফেজ-ক্বারিদেরও ভুল হয়। সুতরাং মাঝে-মধ্যে ভুল হলে বেশি অস্থিরতার কোন কারণ নেই। এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং ভুলে যাওয়া সূরা ও আয়াতগুলো পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করতে হবে।
 
  ২) স্মৃতিপটে কোন সূরা বা আয়াত অস্পষ্ট হয়ে গেলে বা মন থেকে পুরোপুরি মুছে গেলে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হল, পুনরায় কুরআন দেখে মুখস্থ করে নেয়া, তা বারবার পড়া, এর পেছনে পর্যাপ্ত সময় ও শ্রম দেয়া এবং স্মৃতিপটে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করা। কেননা হাদিসে এসেছে,
 
عَن أَبِي مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَتَعَاهَدُوا هَذَا القُرْآنَ فَوَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَهُوَ أَشَدُّ تَفَلُّتاً مِنَ الإِبِلِ فِي عُقُلِهَا متفقٌ عليه
 
 আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“এই কুরআনের প্রতি যত্ন নাও। (অর্থাৎ নিয়মিত পড়তে থাক ও তার চর্চা অব্যহত রাখ।) কেননা সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, উট যেমন তার রশি থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক দ্রুত কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে যায়।” (অর্থাৎ কুরআন মুখস্থ করার পর তার প্রতি নিয়মিত যত্ন না নিলে দ্রুত ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।) [বুখারী ৫০৩৩ ও মুসলিম ১৮৮০]
 
 ৩) সম্ভব হলে আপনি ইমামতি করার সময় যে সূরা বা আয়াতগুলো পড়ার নিয়ত করেছেন সেগুলো নিজে নিজে তাহাজ্জুদ সালাতে আওয়াজ করে পড়বেন। সেই সাথে সুন্নত বা নফল সালাতেও সেগুলো পড়ার চেষ্টা করবেন। অনুরূপভাবে সালাতের বাইরেও যখন সময় পাবেন স্বরবে পড়ার চেষ্টা করবেন।
 
  ৪) অন্য কাউকে মুখস্থ কুরআন শুনানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে না পেলে মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে তারপর নিজে নিজে শুনবেন এবং কোথাও ত্রুটি ধরা পড়লে সংশোধন করে নিবেন।
 
  ৫) মুখস্থ শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক সুস্থতা, মানসিক স্থিরতা এবং পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মধু, আদা ও কিশমিশ-এ তিনটি খাবার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। (কিতাবুত তিব-ইবনুল কাইয়েম রহ.)
 
  ৬) স্মৃতিশক্তি ধ্বংসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল, পাপাচার। কেননা মানুষ যখন পাপাচারে ডুবে থাকে তখন তার মধ্যে মানসিক দুর্বলতা, চাপ ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং শারীরিকভাবে বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতি ও সমস্যার সম্মুখীন হয়। এসব সমস্যার মধ্যে স্মৃতিশক্তি হ্রাস অন্যতম। বিশেষ করে কুরআন-হাদিসের জ্ঞান পাপিষ্ঠ হৃদয়ে স্থায়ীত্ব লাভ করে না।
 
   ইমাম শাফেয়ী রহ. (জন্ম: ১৫০ মৃত্যু: ২০৪ হিজরি) বলেন (কবিতা),
شَكَوتُ إِلى وَكيعٍ سوءَ حِفظي
فَأَرشَدَني إِلى تَركِ المَعاصي
 ****** 
وَأَخبَرَني بِأَنَّ العِلمَ نورٌ
وَنورُ اللَهِ لا يُهدى لِعاصي
 অর্থ:  “আমি (আমার উস্তাদ) ওয়াকী এর কাছে স্মরণশক্তির দুর্বলতার অভিযোগ করলাম। তিনি আমাকে পাপ ছেড়ে দেয়ার আদেশ করলেন এবং বললেন, ইলম (কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান) হল নুর (আলো)। আর কোন পাপীকে আল্লাহর নুরের সন্ধান দেয়া হয় না।” (আল জাওহারুন নাফীস, পৃষ্ঠা নং ২৫)
অন্য বর্ণনায় উক্ত কাসিদা (কবিতা) এর ২য় পঙতিটি এভাবে আছে:
وذاك لأن حفظ المرء فضل *** وفضل الله لا يعطي لعاص 
 অর্থ: এর কারণ মানুষের স্মৃতিশক্তি হল, একটি (আল্লাহর) অনুগ্রহ। আর আল্লাহর অনুগ্রহ কোন পাপিষ্ঠকে দেয়া হয় না।” 
 
  ৭) সমস্যার সমাধান চেয়ে আল্লাহর নিকট সেজদা ও অন্যান্য দুআ কবুলের সময়গুলোর প্রতি লক্ষ রেখে দুআ করা। কেননা মহান সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক আল্লাহর দরবারে দুআই হল, যে কোন সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
 
  ৮) কুরআন মুখস্থ রাখার অন্যতম সেরা উপায় হল, কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জেনে-বুজে তদনুযায়ী আমল করা। অর্থাৎ ‘থিওরিক্যাল’ জ্ঞানের সাথে ‘প্র্যাক্টিক্যাল’ কর্মের মিশ্রণ ঘটলে তা হৃদয়ে ধারণের ক্ষেত্রে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠতম পন্থা আর হতে পারে না।
 
  ৯) বিশেষ কোন সূরা বা আয়াত ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা করলে ইমামতি করার সময় সেগুলো বাদ দিয়ে আপনার সবচেয়ে পছন্দনীয় সূরা বা যে সব সূরা ও আয়াত ভালোভাবে মুখস্থ আছে সেগুলো পড়বেন। অস্পষ্ট ও দুর্বল মুখস্থ সূরা বা আয়াতগুলো পড়া থেকে বিরত থাকবেন।
 
   ১০) তিলাওয়াত করার সময় ‘মনে হয় ভুলে যাব...মনে হয় পারব না’ এমন মানসিক দুর্বলতা ও টেনশনে ভুগলে মুখস্থ সূরাগুলো পড়ার সময় মুখে জড়তা সৃষ্টি হয় এবং অবশেষে সত্যি সত্যি ভুল হয়ে যায়। সুতরাং প্রশান্ত মনে সাবলীলভাবে পড়ার চেষ্টা করবেন।
  দয়াময় আল্লাহ কুরআনের প্রতি আমাদের অলসতা, দুর্বলতা ও অবহেলা প্রদর্শনকে ক্ষমা করুন এবং কুরআন বেশি বেশি তিলাওয়াত করা, মুখস্থ করা, তদনুযায়ী আমল করার এবং সার্বিক ক্ষেত্রে এর প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন
------------------◆◯◆-----------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড সেন্টার, সৌদি আরব

Post a Comment

0 Comments