আল্লাহকে দেখার মাস'আলায় সালাফে সালেহীনদের
অভিমত কি❓
যারা বলে যে, চর্মচক্ষু দিয়ে আল্লাহকে দেখা সম্বব নয় এবং আল্লাহকে দেখার অর্থ পরিপূর্ণ ঈমানের নামান্তর, তাদের হুকুম সম্পর্কে আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)
[মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]
বলেন ----,
"মহান আল্লাহ ক্বুর'আনুল কারীমে কিয়ামাতের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣
[القيامة: ٢٢، ٢٣]
“সেদিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে আর তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে”--- [সূরাহ কিয়ামাহ, আয়াত: ২২-২৩]
উক্ত আয়াতের মধ্যে সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায় যে, কিয়ামাত দিবসে জান্নাতের মধ্যে আল্লাহকে চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা যাবে। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর সমগ্র সত্ত্বাকে দর্শন করা সম্বব। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেছেন,
﴿وَلَا يُحِيطُونَ بِهِۦ عِلۡمٗا﴾ [طه: ١١٠]
“তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ব করতে পারে না।”
[সূরাহ ত্বাহা, আয়াত: ১১০]
জ্ঞানের মাধ্যমে কোনো জিনিসকে আয়ত্ব করার বিষয়টি চোখের মাধ্যমে দেখে আয়ত্ত্ব করার চেয়ে অধিকতর ব্যাপক। যখন জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে জানা সম্ভব নয় তাহলে প্রমাণিত হচ্ছে যে, চর্মচক্ষু দ্বারা পরিপূর্ণভাবে দর্শন করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
﴿لَّا تُدۡرِكُهُ ٱلۡأَبۡصَٰرُ وَهُوَ يُدۡرِكُ ٱلۡأَبۡصَٰرَۖ﴾ [الانعام: ١٠٣]
“দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন।”
[সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৩]
প্রকৃতপক্ষেই মানুষ আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখবে; কিন্তু পরিপূর্ণভাবে তাঁকে বেষ্টন করতে পারবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এর অনেক ঊর্ধ্বে। এটাই সালাফে সালেহীনের মাযহাব। তারা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকা জান্নাতীদের জন্য হবে সবচেয়ে বড় নি‘আমত। এ জন্যই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দো‘আয় বলতেন
«وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ»
"হে আল্লাহ! আমি আপনার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার পরিতৃপ্তি প্রার্থনা করছি।” --- [নাসাঈ দ্রঃ]
আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানোর স্বাদ খুবই বিরাট। যে ব্যক্তি আল্লাহর নি‘আমত ও অনুগ্রহ লাভ করেছে, সেই কেবল তা অনুভব করতে সক্ষম হবে। আল্লাহর কাছে দো‘আ করি তিনি যেন আমাকে এবং আপনাদেরকে তাঁর দিদার লাভে ধন্য করেন।
যারা ধারণা করে যে, আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব নয়; বরং আল্লাহকে দেখার অর্থ পরিপূর্ণভাবে অন্তর দিয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করার নামান্তর, তাদের কথা বাতিল এবং দলীল বিরোধী। প্রকৃত অবস্থা এ-ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। কারণ, অন্তরের পরিপূর্ণ বিশ্বাস দুনিয়াতেই বর্তমান রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহসানের ব্যাখ্যায় বলেন,
«أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»
“ইহসান হলো তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।”
[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান দ্রঃ]
"তুমি এমন ঈমান নিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ" এটিই পরিপূর্ণ ঈমানের পরিচয়। যে সমস্ত আয়াত ও হাদীসে আল্লাহকে দেখার কথা আছে, সেগুলোকে অন্তরের বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্পূর্ণ ভুল এবং কুরআনের আয়াতকে তার আসল অর্থ হতে পরিবর্তন করার শামিল। যে ব্যক্তি এ-ধরণের ব্যাখ্যা করবে তার প্রতিবাদ করা ওয়াজিব।"
গৃহীত: --- [ ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম : ১৩৮ -১৩৯ ]
0 Comments