Recent Tube

হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান।



হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান

প্রশ্ন: হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান কি?

উত্তর:
  মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সর্বোচ্চ ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য নামাজকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। কেউ পড়লেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং পরবর্তীতেও এই নামাজ গুলো কাজা করার দরকার নেই। আর রোজা রাখা থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। কেউ রোজা রাখলেও আল্লাহর কাছে তা গৃহীত হবে না। তবে পরবর্তীতে যখন সে সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে তখন ছুটে যাওয়া রোজাগুলো সুবিধাজনক সময়ে কাজা করে নেবে।

নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো পেশ করা হল:

★ হাদিসে এসেছে:★
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أليس إذا حاضَتْ لم تُصَلِّ ولم تَصُمْ
*আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: এ কথা কি ঠিক নয় যে, কোন মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হলে সে সালাত আদায় করে না এবং সওমও পালন করে না।?” (সহিহ বুখারি, হা/১৯৫১)*

★আরেক হাদিসে এসেছে:★

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كُنَّا نَحِيضُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ نَطْهُرُ فَيَأْمُرُنَا بِقَضَاءِ الصِّيَامِ وَلاَ يَأْمُرُنَا بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ ‏
★ আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা পবিত্র হলে তিনি আমাদেরকে রোজা কাজা করার নির্দেশ দিতেন কিন্তু নামাজ কাজা করার নির্দেশ দিতেন না।” (বুখারি, মুসলিম, জামে আত-তিরমিজি, হা/৭৮৭)*

★★সন্তান প্রসবোত্তর রক্তস্রাব জনিত নাপাকির সর্বোচ্চ মেয়াদ ৪০ দিন:

  বাচ্চা প্রসবের সময় ও তার পরবর্তীতে মহিলাদের গর্ভাশয় থেকে যে রক্ত বের হয় তাই নেফাসের রক্ত। সাধারণ প্রক্রিয়ায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে গর্ভাশয় থেকে বেশ কিছু দিন রক্তস্রাব প্রবাহিত হয়। এটি মহিলাদের শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কম বা বেশি হয়। এর সর্ব নিম্ন মেয়াদ একদিনও হতে পারে। আর সর্বোচ্চ মেয়াদ ৪০ দিন।

★★ উম্মে সালামা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
كانتِ النُّفساءُ على عهدِ رسولِ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ تقعدُ بعدَ نفاسِها أربعينَ يومًا أو أربعينَ ليلةً
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিফাস তথা প্রসূতি নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত”। (সহিহ আবু দাউদ, হা/৩১১-আলবানি)

★★ অন্য বর্ণনায় এসেছে:
كانت المرأةُ من نساءِ النبيِّ تَقعُدُ في النِّفاسِ أربعين ليلةً لا يَأمُرُها النبيُّ بقضاءِ صلاةِ النِّفاسِ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের কারো নিফাস হলে চল্লিশ দিন বিরতি নিতেন। তিনি তাকে নিফাস অবস্থার সালাত কাজা করার নির্দেশ দিতেন না”। (ইরওয়াউল গালিল, হা ২০১-হাসান)

 ➤ ইমাম তিরমিজি বলেন:
قد أجمع أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعون ومَن بعدهم على أن النفساء تدع الصلاة أربعين يومًا إلا أن ترى الطهر قبل ذلك فإنها تغتسل وتصلي، وقد وقع الإجماع أيضًا على أن النفاس كالحيض في جميع ما يحل ويحرم ويكره ويندب، وقد أجمعوا على أن الحائض لا تُصلِّي، فكذلك النفساء.
  আলহামদুলিল্লাহ সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাদের পরবর্তী মনীষীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, প্রসূতি নারী ৪০ দিন পর্যন্ত সালাত পরিত্যাগ করবে। তবে যদি এর পূর্বে পবিত্রতা দেখে তাহলে ভিন্ন কথা। তাহলে এ ক্ষেত্রে গোসল করে সালাত শুরু করবে। এ বিষয়েও ঐকমত্য রয়েছে যে, প্রসূতি নারী হালাল, হারাম, মাকরূহ, মুস্তাহাব ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ঋতুমতী মহিলার অনুরূপ। আর এই বিষয়ে তারা একমত যে, ঋতুমতী মহিলা সালাত আদায় করবে না একইভাবে প্রসূতি নারীও।”

 ➤ চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কারো স্রাব বন্ধ না হলে এরপর থেকে তার উপর নামাজ-রোজার হুকুম আরোপিত হবে এবং এ ক্ষেত্রে তা ইস্তেহাযা (অসুস্থতা জনিত স্রাব) হিসেবে গণ্য হবে; নেফাস হিসেবে নয়। এটি স্বীকৃত ও স্বতঃসিদ্ধ বিষয়।
আল্লাহু আলাম

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Post a Comment

0 Comments