Recent Tube

খাঁটি তাকওয়া অর্জনের অনুপ্রেরণা পেতেই এই তুলনা!






খাঁটি তাকওয়া অর্জনের অনুপ্রেরণা পেতেই এই তুলনা!

প্রিয় ভাই ও বোন!
★★★★
এই ধরাধামে কত মানুষ এলো! কত মানুষ গেলো! আরও কত-শত মানুষ আসবে! কিন্তু ইতিহাস লিখে রাখে না সবার নাম, ইতিহাস তার বুকে ধারণ করেনা সবার শ্লোগান, কিছু মানুষের নাম মুছে যায় তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে, কিছু মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় কালের গর্ভে, আবার কিছু মানুষের মৃত্যু কেবল একটা ক্ষুদ্র ঘটনার নাম। তারা কিংবদন্তি হয়ে থাকে মানুষের মাঝে। সোনার হরফে তাদের নাম টুকে রাখা হয় ইতিহাসে।

চরম বাস্তবতা..;
ইতিহাস লিখে রাখে জীবন ও কর্মের নথি। যাদের জীবনাদর্শ মানুষকে দেখায় পথ, যাদের কর্মপদ্ধতি অনুস্বরণে ঋদ্ধ হতে পারে আরও লাখো মানুষের হৃদয়, যাদের কথা ইতিহাসে চিরন্তন হয়ে থাকে, ইসলামি ইতিহাসের পাতায় এমন অমর কিছু মানুষকে আমরা চিনি আত্মত্যাগী নামে।

    ইসলামের যে সিলসিলা রাসূলের হাতে শুরু হয়েছিলো সহস্র বছর আগে, সেই সিলসিলা ধরে রাখার মিশনে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন এ মহান ব্যক্তিগণ। তাদের জ্ঞানভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছে নিত্য-নতুন রত্ন। কুরআন ও সুন্নাহর পাত্র {{ সয়ং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম}} থেকে যা পেরেছেন তাই তুলে নিয়েছেন আজলা ভরে। দুনিয়ার জীবনকে পায়ে ঠেলে দিয়ে আখিরাতের আলোয় আলোকিত হয়েছেন। আলোকিত করেছেন অন্যদেরও।

  হে প্রিয় ভাই!
  ★★★
 নিশ্চয় আপনার মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে যে, কী এমন কারণ আছে যা আত্মত্যাগীদের অমর করে দিলো ইতিহাসের পাতায়? কোন বিশ্বাস, কোন সাধনা, কেমন জীবনবোধ, কেমন মননসই, কোন লড়াই তাদের ব্যক্তি ও ধর্মীয় জীবনকে অনন্য করে তুললো? কী এমন বিশেষত্ব ছিল তাদের জীবন ও কর্মে?—এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে চোখ রাখুন নিচের ছোট্ট ছোট্ট প্যারাগুলোতেঃ-

★★★
 এক.
 হযরত বিলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু। প্রচণ্ড গরমে মরুভূমির রৌদ্রতপ্ত বালিতে খালি গায়ে শুইয়ে দেয়া হতো, কণাবালিতে টানা হেচরা করা হতো, কংকর ছুঁড়ে মারা হতো, পাথরচাপা সহ্য করার পরেও ‘আহাদুন আহাদ’ আল্লাহ এক! আল্লাহ এক! বলতেই থাকতেন। 

   তিনি এ চিৎকার করার শক্তি পেলেন কোথায়? এ কষ্ট সহ্য করার সাহস পেলেন কোথায়? কেন তিনি নত স্বীকার করতে রাজি হননি?কেন তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাতে অনড় ছিলেন? অথচ চোখের সামনেই রং বে-রংয়ের শাস্তি আবার ইমান ও কুফরের গোলকধাঁধা!!

   প্রিয় ভাই ও বোন! এটাই হলো রাসূল প্রেমের সত্যতা, এটাই হলো নবী প্রেমের পরাকাষ্ঠা। লাব্বাঈকা ইয়া রাসূলুল্লাহ এ শ্লোগানে সার্থকতা। 

★★★
দুই.
হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহু। উনাকেও উত্তপ্ত মরুভূমির কণাবালিতে ছুঁড়া হলো, উটের নারি-ভুরি মাথায় দেওয়া হলো, জ্বলন্ত লোহা দিয়ে পেট-পিঠ ঝলসে দেওয়ার পরও ঈমানের ওপর অটল ছিলেন।
শরীরকে তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অন্তর বিলিয়ে দেননি, শরীরের শরীরকে তারা রক্তাত্ব করতে পেরেছে, দেহের দেহকে তারা ক্ষতবিক্ষত করতে পেরেছে, কিন্তু মনের শরীর আর মনের দেহকে কিছুই করতে পারেনি। 

   তার মন বলছিলো, হে আমার সহচররা!
এ মন শুধু রবের জন্য, এ দিল শুধু প্রিয় হাবিবের জন্য,
   এ মন আর এ দিল রবের ভালোবাসা পাবার আশায় আসক্ত, প্রিয় নবীজীর সংস্পর্শ পাবার নেশায় এখনো পরিত্যক্ত। সুতরাং তোমরা এ আত্মার আকুতি বুঝবে কি করে, তোমরা এ হৃদয়ের মিনতি অনুভব করবে কীভাবে?

    এ নির্যাতন সহ্য করার শক্তি কে দিয়েছিল তাঁকে?কেনইবা তিনি এত কষ্ট সহ্য করেছেন? ইচ্ছে করলে তো তাদের {{কাফেরদের}} দেয়া পুরষ্কারগুলো লুফে নিতে পারতেন,, 

    নারী,, ইশ! কত স্বাদের, কত ভোগের। বাড়ী,,আহ! কত আরামের, কত বিলাশিতার। নেতা,, উহ! কত সম্মানের, কত মর্যাদার। তবুও কেন তারা ইমানের বিপরীতে এ জিনিসগুলো নিতে সাহস দেখালেন না? 

  প্রিয় ভাই ও বোন! এটাই হলো রব প্রেমের সত্যতা, এটাই হলো রব প্রেমের পরাকাষ্ঠা। এটাই হলো রবের মহব্বতের চূড়ান্ত সীমা। 

★★★
 তিন;
 হযরত জুরারা ইবনু আউফা রাযিয়াল্লাহু আনহু। একবার ফজরের সালাতের ইমামতি করার সময় তিলাওয়াতের একপর্যায়ে তার সামনে সূরা মুদ্দাসসিরের এই আয়াতখানা এলো—'যেদিন শিংগায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে; সেদিন হবে কঠিন দিন! সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত নং ৮-৯ 

   তিনি এই আয়াত পাঠ করতেই ভয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন!

     কেন! আমরাও তো কুরআন পড়ি, কুরআন শুনি। আমরাও মুসলমান, তারাও মুসলমান। এ পড়া ও শুনার মধ্যে পার্থক্য কী? তারা কি দেখে কি বুঝে এত ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন?

   প্রিয় ভাই ও বোন! শুনবে পার্থক্য কী?
আর তা হলো, নেক সেহবত ও নেক সংস্পর্শের, তাকওয়া ও আনুগত্যের, তাদাব্বুর ও তাফাক্কুরের। 
   তারা যুক্তির উপর বিশ্বাস করে ইমান আনেননি বরং ইলমে ওহীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ইমান এনেছেন আর এটাই হলো ইসলামের স্বকীয়তা। যুক্তি খুঁজতে গিয়ে কখনো মনের উল্টো হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক কিন্তু ইলমে ওহীর বিশ্বাসে আমল করলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে আসবে, যা কুরআনের প্রথমাংশে রয়েছে, মুমিনবান্দা গায়েবের প্রতি বিশ্বাসী আর সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুম এর উপর পরিপূর্ণ বায়াত দিয়েছেন। এ জন্য মেধা সম্পন্ন, বুদ্ধিবিদ্ধার অধিকারী, দূরদৃষ্টি ভাবাপন্ন, সুক্ষ্ম, কৌশলী উমর, আবু-বক্কর-আবু হুরায়রার মত বড় বড় সাহাবীরাও ইসলামের কোন বিধানে যুক্তি খুঁজার দুঃসাহস দেখায়নি, কারণ তারাও জানতেন এখানে কোন যুক্তি দেখানোর সুযোগ নেই। 
যেই যুক্তি খুঁজতে দুঃসাহস দেখিয়েছে তার পরিণাম ইবলিশের মতই হয়েছে। পানাহ চাই! পানাহ চাই!!


   আমাদের অবস্থা_____,,
যা আমরা মুহূর্তে মুহূর্তে দেখিয়ে ফেলি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন! 

★★★
চার;
হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু । তিনি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এত কান্নাকাটি করতেন যে, তার দাঁড়ি মোবারক ভিজে একাকার হয়ে যেতো! রক্তিম আভায় চেহারা লাল বর্ণের আকার ধারণ করতো! যেন কাঁচা লোহাকে জলন্ত অঙ্গারে ঠেলে দেওয়া হলো, মুহূর্তেই তাঁর অবস্থা এমন হয়ে যেতো। আমি যখন সূরা তূর তিলাওয়াত করি তখন প্রিয় সাহাবী হযরত উসমান রাদিআল্লাহু আনহুর কান্নার কথা মনে পড়ে যায়। তাঁর এ অদৃশ্যের দৃশ্য এর কথা ভেবে কিছুটা হলেও অন্তরে প্রশান্তি খোঁজে পাই। 

    এ ছিলো তাদের দিনাতিপাত। এ ছিলো তাদের রুহের খোরাক, পরক্ষনেই যখন শত্রুর সম্মুখে নিপেতিত হতেন, উচ্চ হয়ে যেতো কন্ঠের আওয়াজ, বলিষ্ঠ হয়ে যেতো জিহ্বার নাড়াচাড়া, নিস্তেজ শরীরে আসমানী শক্তির সতেজতা ফুটে উঠতো, হাতের পুষ্টিহীন কব্জিতে রুহানি যোগ্যতা বেড়ে যেতো, এ মুহূর্তে যা কিছু হাতের মুঠোয় আসতো সবকিছুই জ্বলসে উঠতো, শত্রুর দেহ ও মনে কাঁপুনি ধরে যেতো, সাহসী ও বীরেরা তাদের বীরত্বের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলতো। 

★★★
পাঁচ;
উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু জামাআতে সালাত আদায়ের সময় কুরআন তিলাওয়াতে এমনভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতেন যে, একেবারে পেছনের কাতারগুলো থেকেও তার কান্নার আওয়াজ শোনা যেতো! যার দরুন অন্যান্য কঠিন দিলের সাহাবীদের অন্তরও বিগলিত হয়ে যেতো,
   চাপাকান্নায় ভেঙে পড়তেন, বেহুশ হয়ে যেতেন, হুশ ফিরে আসলে লজ্জায় পড়ে যেতেন এই ভেবে, না জানি এই সময়ে কি উল্টাপাল্টা করে ফেলেছি আমি, প্রিয় বন্ধু আল্লাহর রাসূল, ঘনিষ্ঠ সাথী সাহাবীরা দেখে ফেলেছেন নাতো! আবারো ঠিকঠাক হয়ে বসে পড়েতেন, এই কল্পনা-জল্পনা করতে না করতেই আরেক সাহাবীর এ দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠতো। 

      আহ! তাদের আত্মা কতটা প্রশান্ত ছিলো, তাদের হৃদয় কতটা বিগলিত ছিলো, রুহে কি পরিমাণ হালাল গিযা ছিলো, যা কিছু করতো, সবকিছুতেই পেতো ইমানের স্বাদ, যা কিছু দেখতো, সবকিছুতেই পেতো পুরষ্কারের সাবাব।
--------------------------------- 

     আমাদের অন্তরের মত তাদের এ অন্তরগুলোও ছিলো রবের পক্ষ হতে দান। কিন্তু তারা রবের করুণা, রহমত, বরকত, আর তাকওয়ার প্রতিযোগিতায়, ইমানের প্রতিযোগিতায়, আত্মত্যাগের প্রতিযোগিতায় ছিলেন প্রথমসারির প্রতিযোগি । তাই পরক্ষণই রব ঘোষণা দিয়েছেন তোমাদের আত্মা হলো আমার পক্ষ হতে বিশেষ দান, আমি এ আত্মার উপর পরিতৃপ্ত। তাই তোমাদের জাসাদের উপরও সন্তুষ্ট। 

★★★ 
ছয়.
 হযরত মুসআব ইবনে উমাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু। উহুদের রক্তাক্ত প্রান্তরে একহাতে মুসলিম বাহিনীর পতাকা নিয়ে অন্য হাতে তলোয়ারের ঝনঝনানির সাথে সাথে যুদ্ধ করতে লাগলেন। একপর্যায়ে, এক মুশরিক সৈন্যের তরবারির হ্যাঁচকা টানে তার ডান হাতটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো । তিনি তখন আরেক হাত দিয়ে পতাকা ধরে রাখলেন। ইতিমধ্যে সেই হাতটিও শত্রুসৈন্য একইভাবে কেটে দিল। এরপরও তিনি রক্তাক্ত দুই বাহু দিয়ে তাওহিদের ঝান্ডা উঁচু করে ধরে রাখলেন এবং চিৎকার করে মুসলিম সৈন্যদের সাহস দিতে লাগলেন। তবুও ঝান্ডা হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না। 

 ★★★ 
   তার মনের অবস্থা ছিলো,,
শরীর না হয় আঘাতে টুকরো টুকরো হয়েছে, মন তো আর আঘাতে টুকরো টুকরো হয়নি বরং রাসূলের ভালোবাসায় ভরপুর। সুতরাং এ শরীর একদিন মাটিতে মিশে পঁচে যাবে, তারচেয়ে ভালো রাসূলের ভালোবাসায়, রবের মহব্বতে শরীরটিকে বিলিয়ে দেই। তাহলে ধন্য হবো আমি, সফল হবে আমার জীবন । 

   প্রিয় ভাই ও বোন! তাকওয়া এবং ঈমানের জোর যে এতই মজবুত! এতই ঝাঁঝালো! তা তাদের কথা না শুনলে হয়ত অনুভবই করতে পারতাম না, অনুধাবনই করতে পারতাম না। 

   সুতরাং হে আমার যুবক ভাই! এবার 
আসুন, সেই সূর্য সন্তানদের সাথে আমাদের তাকওয়ার তুলনা করি। হতাশ হওয়ার জন্যে এই তুলনা নয়, তিরস্কার করার জন্য এই উপমা নয়, বরং নতুন উদ্যমে, সচ্ছ হৃদয়ে, খাঁটি তাকওয়া অর্জনের অনুপ্রেরণা পেতেই এই তুলনা! 
---------------------------------

Post a Comment

0 Comments