Recent Tube

মানুষের সীমাহীন অভাব ও আকুল আকুতি। ওহিদুল ইসলাম।


 

  মানুষের সীমাহীন অভাব ও আকুল আকুতি;


    মানুষের অভাব ও কষ্ট-ক্লেশের অন্ত নেই। অভাবের যাতনা ও নানাবিধ ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছে্ন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই; চাওয়ার কোনো পাত্র নেই। দারিদ্র্যের কষাঘাতে ও রোগ-শোকে ক্লিষ্ট উপায়ান্তরহীন এসব মানুষ যদি কখনো কোথাও কারও কাছে আশার আলো দেখতে পান তাহলে হন্যে হয়ে সেখানে ছুটে যা্ন। তাদের চোখ মুখে ব্যথা-বেদনার ছাপ, দূঃখ ভারাক্রান্ত চাহনি ও অনুনয়-বিনয়ের ভাষা সত্যিই অবর্ণনীয়। বিভিন্ন শ্রেণির অভাবী মানুষের কাকুতি-মিনতির ধরণটাও ভিন্ন।

 ১. একশ্রেণির প্রতিটা মানুষের চাওয়ার ভাষা কমবেশী এমন - তোমার কাছে আসলাম কয়টা কথা বলতে। আশা করি, অনুরোধ করি, মিনতি করি - তুমি আমার কথাটা রাখবে, ফেলবেনা। তুমি মাসে মাসে যেই টাকাটা দাও তা দিয়ে কতো কষ্টেমষ্টে মাস চালাই। এই খরচ সেই খরচ! খরচের কুলকিনারা নেই। (কথা বলার সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন ঝক্কি ঝামেলা, রোগ-শোক, বিপদ আপদ ও খরচের ফিরিস্তি পেশ করেন)। আমাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতেই হবে। তুমি চাইলেই পারবে। দিবে কিনা বলো? না বললে হবেনা।

 ২. আরেক শ্রেণির বক্তব্য - আজকে আসলাম তোমার কাছে একটা আবেদন নিয়ে। আমি তো আর সব সময় এসে পড়ে থাকিনা। তুমি এর আগে কখনো দেখেছো আমাকে তোমার কাছে এসে ধর্ণা দিতে? কতো মানুষ তোমার কাছে আসে, ধর্ণা দিয়ে পড়ে থাকে, চায়। আমি ঐরাম না। তুমি তো কতো মানুষের জন্য কতো কিছু করো, কতো কিছু দাও। ওসব আমি কিছু মনে করি না। আমি কোনো দিন কিছু দাবী করিনি। আমি অন্য মানুষের মতো না। তা তুমি তো কতো মানুষকেই দিচ্ছো, আমার দিকে এবার একটু তাকাতে হবে। না বলতে পারবে না। আমি অনেক কষ্টে আছি। আমার মতো এতো কষ্ট কারো নেই। আমি যে কি অবস্থায় আছি তা আমি জানি আর উপরে আল্লাহ জানে। (এসুযোগে একদমে পুরো ফিরিস্তি জানিয়ে দেন)। 

    আপনি হয়তো সকালে কোথাও যাওয়ার জন্য কাপড় চোপড় পাল্টাচ্ছেন। এমন সময় কোনো একজন আপনার রুমে না বলে না কয়ে ঢুকে এভাবে অনর্গল বলে যাচ্ছেন। আপনি হয়তো তাকে আগে থেকে চিনেনও না। আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। আপনি আপনার ব্যস্ততা বোঝানোর চেষ্টা করছেন বিভিন্নভাবে। তিনি কোনোভাবেই বুঝছেন না, বের হচ্ছেন না। সুযোগ হাতছাড়া হলে আবার কখনো একাকি এভাবে দেখা করার সুযোগ নাও মিলতে পারে। তাই মন উজাড় করে তিনি সব কিছু বলে ফেলতে চাচ্ছেন। আপনি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন এবং যথা সম্ভব বের হওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একবার দরজার ফাঁকে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন দরজার সামনে আরও ১০ জন অপেক্ষমান। কেউ কেউ নাকি আবার গত কয়েক দিনে কয়েকবার এসে আপনাকে না পেয়ে ফিরে গেছেন। আজকে আপনাকে হাতে পেয়ে কেউ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননা। কেউ আপনার আচরণে ব্যথা পান সেটা আপনি কিছুতেই চাননা। আপনি এখন কি করবেন?

    এসব দূঃখ কষ্ট ও অনটনের কথা শুনে আপনার মন যার পর নাই ভারাক্রান্ত। কিন্তু এসব নাছোড়বান্দা মানুষের সংখ্যা এবং প্রত্যকের দাবীর তুলনায় আপনার যা কিছু দেয়ার আছে তা খুবই সীমিত। আপনি এখন কি করবেন? 

   আপনি প্রবাসী। আপনার মা খুবই বৃদ্ধা। চলাচলের সক্ষমতা সীমিত হয়ে এসেছে। চূড়ান্ত ডাকের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। মায়ের পীড়াপীড়িতে অনেক দিন পরে স্বল্প সময়ের জন্য দেশে এসেছেন অনেক আবেগ নিয়ে। আবেগের বেসাতি সাজিয়ে মায়ের সাথে কয়েকটা দিন একান্তে আলাপচারিতায় সময় কাটাতে চান আপনি। আপনার মা এখন বিড় বিড় করে বলছেন যে তার ছেলে বিদেশে ছিলো ভালোই ছিলো। প্রতিদিন রুটিন করে ফোনে কথা হতো। কিন্তু দেশে এসে ছেলের এখন একদন্ড মায়ের পাশে বসে গল্প করার সুযোগ হয়না। আপনার মা হয়তো ভাবছেন তার জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে কবে হয়তো হঠাৎ চিরবিদায়ের সময় চলে আসবে যখন আপনি পাশে থাকবেন না। হয়তো এদেখাই শেষ দেখা। তিনি অনেক আবেগ নিয়ে আপনার আসার অপেক্ষায় ছিলেন। অনেক কিছু শুনবেন, অনেক কিছু শোনাবেন, অনেক কিছু নিজের মতো করে বউমাদের দিয়ে বানিয়ে আপনাকে খাওয়াবেন। কিন্তু আপনার মায়ের আবেগের পত্র-পল্লব ও ডালপালায় ভরা সে সুশোভিত বিশাল গাছটি যেনো অংকুরেই মরে যাচ্ছে। আপনি এখন কি করবেন?
--------------------------------- 

Post a Comment

0 Comments