Recent Tube

আসবেই, বিজয় আসবেই। ড. এম আব্দুস সালাম আজাদী।



     আসবেই,বিজয়    
   আসবেই।

--------------------------------- 

       আল্লাহকে যে ভালোবাসে, আল্লাহর প্রতি যার ঈমান আছে, আল্লাহর শক্তির সাথে যার পরিচয় তাজা, আল্লাহর প্লানের সাথে যার মাথা বিক্রি করা, আল্লাহর রহমাতের ব্যাপারে যার মন বাঁধা, আল্লাহর মা’ইয়্যাত (সাথে থাকা) ও কুরবাত (নৈকট্য) যার অভিজ্ঞতায় আছে, সে আমার সাথে কোরাস তুলতে বাধ্য, আসবেই, বিজয় আসবেই। 

       সুমাইয়ার শাহাদাত, তাঁর স্বামীর মৃত্য, তাঁর একমাত্র ছেলের নির্যাতনের দৃশ্য যার চোখে আজো লেগে আছে। আবু তালেবের ক্ষীনকায় দেহ আস্তে আস্তে নিস্তেজ হওয়া যারা দেখেছে বা শুনেছে, খাদিজার (রা) না খাওয়া শরীরে মৃত্যুর আনাগোনা যারা দেখেছে, তায়েফে পাহাড়ে লাগা রক্তের দাগ যারা আজো শুঁকতে পারে, আধা বেহুঁশ মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুয়ার ভাষা যারা বুঝেছে, আল্লাহর কসম তারা মেনে নিতে বাধ্য আল্লাহর বিজয় আসবেই, আসবেই। 

   শর্ত একটাই আমরা আবার মুসলিম হই। ইলাল ইসলামি মিন জাদীদ।
 
      আমরা যখন মুসলিম ছিলাম, তখন একবার রোমের সম্রাট মুয়াওয়িয়াহ (রা)কে একটা চিঠি লিখেন। বলেন, আপনার ও আলীর (র) মাঝে দ্বন্দ আমরা জেনেছি। আমরা মনে করি আপনিই খেলাফতের বেশি যোগ্য, আপনি চাইলে আমি সেনাবাহিনি পাঠিয়ে আলীর (রা) কল্লা কেটে এনে আপনার কাছে পাঠাতে পারি।  মুয়াওয়িয়াহ (রা) এই চিঠির জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দুইভাই আমরা গন্ডগোল করেছি, এর মাঝে তোমার হস্তক্ষেপ কেন?  
، إن لم تخرس أرسلت إليك بجيش أوله عندك وآخره عندي يأتونني برأسك أُقدِّمه لعلي
 তুমি যদি চুপ না হও, তাহলে তোমার কাছে এমন এক বাহিনি আমি পাঠাব যার সামনের সারি হবে তোমার ঐখানে, আর পেছন হবে আমার পর্যন্ত বিস্তৃত, ওরা তোমার মাথা কেটে আনবে, আর আমি তা পাঠাবো আলীর (রা) কাছে। 

    আমরা যখন মুসলিম ছিলাম, সে সময়ে খালিদ বিন অলিদ (রা) একটা চিঠি লিখেন ইরানের বাদশাহের কাছে। বলে দেন, ইসলাম গ্রহন করো, তো শান্তিতে থাকবে। না হলে এমন একদল মানুষ নিয়ে তোমার বিরুদ্ধে আমি আক্রমন করবো যারা মৃত্যুকে তেমনি ভালোবাসে, জীবনকে তোমরা যেমন ভালোবাসো। ইরানের বাদশাহ চীনের রাজার কাছে সাহায্য চেয়ে প্ত্র লেখেন। তার জবাবে চীনের রাজার বক্তব্য ছিলো,
ياكسرى لاقوة لي بقوم لو أرادوا خلع الجبال لخلعوها
 “বাদশাহ, আমার এমন জাতির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার শক্তি নেই, যারা পাহাড় উপড়াতে চাইলেও তা উপড়িয়ে ছাড়ে।“

     আমরা যখন মুসলিম ছিলাম, সেদিনের সালাহুদ্দিন রাতে ঘুরছেন। পরের দিন হিত্তিনে ফয়সালাকারী যুদ্ধ। ফিলাস্তিনের বায়তুল মাকদাস জয় হবে কি শত্রুদের হাতে রয়ে যাবে তার সিদ্ধান্ত হবে কাল। তিনি তাঁবুতে তাঁবুতে ঘুরছেন। এই তাঁবুতে সবাই সালাতে রত। ঐ তাঁবুতে সবাই কুরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত। পাশের তাঁবুতে একদল আল্লাহর কাছে রোনাজারিতে মুখ ও দাড়ি ভিজাচ্ছেন। তিনি দেখতে পেলেন একটা মাত্র তাঁবুতে কিছু সেনা ঘুমাচ্ছে। বলে দিলেন, লিখে রেখো, এই খান থেকেই আক্রমনটা আসবে, ও আমাদের পরাজয় হতে পারে। 

     আমাদের যখন ঈমানে ধার ছিলো তখন আমাদের ভাষা দুমড়ে মুচড়ে শিয়ালের হুক্কা হুয়ার মত হতো না। উমার মুখতারকে যখন ফাঁসি দেয়া হচ্ছিল তিনি ইটালির রক্ত চক্ষুকে হার মানিয়ে বলেছিলেনঃ 
صاحب الحق يعلو وإن أسقطته منصة الإعدام.
সত্যের পথিক উঁচুতে ওঠে, যদিও তাকে ফাঁসির মঞ্চ নিচে ফেলে দেয়।

       আসবেই, বিজয় আসবেই, যদি আমাদের মুসলিম দলগুলো এক হয়ে যায়। মুসলিম দেশগুলো কাছাকাছি আসে। মুসলিম উলামারা ছেলেমি ছেড়ে কুরআনের ব্যাখ্যাতা হয়, নবীর (সা) অরিস হয়। যদি তাদের গুলির আওতায়, গালির শব্দে, রাগের আগুনে, কিংবা শত্রুতার ক্ষোভে শুধু ইসলাম বিরোধিরাই মরে। 

      দলাদলি আজ কোথায় যে ঠেকেছে তা বলে শেষ করা যাবেনা। প্রতিটি জনপদে মুসলিম থাকা মানে সেখানে নানা রকম মসজিদের উত্থান, নানা প্রকার মাদ্রাসার প্রাদুর্ভাব, নানা রঙের গ্রন্থের সয়লাব, নানা ভাবের টিকা ও টিপ্পনি। কেও কাওকে আর মুসলিম মনে করেনা। 

     মুসলিমদের এই একটা রোগ যদি ভালো হয়ে যায় তাইলে বিজয় আমাদের আসবেই, আসবেই। 

     আল্লাহ আযয ও জাল্ল কি সুন্দর করে ডাক দিয়েছেনঃ 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‎﴿٤٥﴾‏ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ ‎﴿٤٦﴾

    হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কোন বাহিনীর সামনা সামনি হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

     আর আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা ব্যর্থ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে। (আনফাল ৪৫-৪৬)
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ আলোচক গ্রন্থপ্রনেতা দাঈ গবেষক ও প্রবন্ধ লেখক। 

Post a Comment

0 Comments