Recent Tube

হযরত ঈসা (আঃ) এর খিলাফাত ও ইকামতে দ্বীন: কুফুরী অভিযোগ ও দলিলভিত্তিক জবাবঃ ০২; মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।




হযরত ঈসা (আঃ) এর খিলাফাত ও ইকামতে দ্বীন: কুফুরী অভিযোগ ও দলিলভিত্তিক জবাবঃ ০২;
-------------------------------------


  ইকামতে দ্বীনের বিরোধী শক্তি, রাজ দরবারী, তাগুতপন্থী ওলামায়ে-সু বলেন থাকেন, দ্বীন কায়েমের অর্থ হল- তাওহীদ কায়েম, দ্বীন ইসলামের সকল বিধি-বিধান কায়েম করা নয়। তাই তারা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার কাজকে 'ক্ষমতা দখল' বলে ব্যঙ্গ করে। আর যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর বিধান কায়েমের সংগ্রাম করে, এসব তাগুতপূজরীরা তাঁদের (যাঁদের মধ্যে নবী-রাসূলগণও রয়েছে) ক্ষমতালোভী বলে অপবাদ দেয়। এভাবে তারা নবী-রাসূলদের ক্ষমতালোভী বলে এবং তাওহীদ ব্যতীত দ্বীন ইসলামের অন্যান্য সকল বিধান অস্বীকার করে নিজেদের সাথে মুসলিম জাতিকে কুৃফুরীর পথে ঠেলে দিচ্ছে। তারা তাগুতের কুফুরী শাসন জারী রেখে মুসলিম জাতিকে তাদের ন্যায় তাগুতের বান্দায় পরিণত করতে চায়। যারা আল্লাহকে কেবল সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মানে কিন্তু আইন ও বিধানের ক্ষেত্রে দাসত্ব করে তাগুতের, তাদের তওহীদ হলো আবু জাহেলদের তওহীদের ন্যায়। আর এই আবু জাহেলদের তওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা নবী-রাসূলগণের প্রতি মিথ্যাচার করতেও দ্বিধাবোধ করে না। 

    আহলে হাদীস আন্দোলনের আমীর           ড.গালীব নবী-রাসূলদের নামে মিথ্যারোপ করে বলেন, "হুকুমত (আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান) কায়েম করাই যদি নবী আগমণের উদ্দেশ্য হত, তাহলে তো বলতেই  হয় যে, লক্ষাধিক নবীর মধ্যে কেবল মাত্র হযরত দাউদ (আ), সুৃলাইমান (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ব্যতীত আর সকলেই তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহ)।... মোর্দাকে যিন্দা করার অলৌকিক ক্ষমতা দান করা সত্ত্বেও আল্লাহ পাক কেন হযরত ঈসা (আঃ) কে তৎকালীন সম্রাট তোতিয়ানূসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশ না দিয়ে তাকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন? (তিনটি মতবাদ, পৃঃ ২৬; ২য় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০১০) 

   ড.গালীবের প্রশ্নের জবাবে বলল,
১. লক্ষাধিক নবীর মাত্র তিন জন নবী ব্যতীত আর কোনো নবী খিলাফাত করতে পারেননি, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান কায়েম করতে পারেননি- এ কথা ড. গালীব কোথায় পেলেন, না কি শয়তান ওহী করে জানিয়েছে? কেননা, কুরআন হাদীসে তো এমন কোনো কথা নেই। বরং কুরআন হাদীস থেকে জানা যায়, অসংখ্য, অগণিত নবী রাসূল খিলাফাত কায়েম করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করেছেন। (দেখুনঃ- সূরা নিসাঃ ৪/৫৪; সূরা মায়িদাঃ ৫/২০, ৪৪-৪৭ ;সূরা আ'রাফঃ ৭/১২৯, ১৪২; সূরা নূরঃ ২৪/৫৫; সূরা কাসাসঃ ২৮/৪-৬; সহীহ বুখারী, হাঃ ৩৪৫৫; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাঃ ৭৯৪৭; ইবনে মাজাহ হাঃ ২৮৭১; ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৯৫, ৮/১১০, ১০/৫৭৭) 
২. ঈসা (আঃ) কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে তাঁর ইকামতে দ্বীনের মিশন শেষ হয়ে যায় নি। দ্বীনের কায়েমের স্বার্থে প্রায় সকল বড় বড় নবীই হিজরত করেছেন। পৃথিবী থেকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া, অতঃপর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করা- এটা ঈসা (আঃ)-এর জন্য এক ধরনের হিজরত। পার্থক্য এই যে, অন্যান্য নবীগণ দুনিয়াতেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে হিজরত করেছেন। পক্ষান্তরে ঈসা (আঃ) দুনিয়া থেকে আসমানে হিজরত করেছেন। অতঃপর আসমান থেকে দুনিয়াতে ফিরে আসবেন এবং সকল তাগুতী ও কুফুরী বিধান উৎখাত করে আল্লাহর বিধান কায়েম করবেন। কিয়ামত প্রাক্কালে ইমাম মাহদী ও হযরত ঈসা (আ) এর নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিজয় সংঘটিত হবে এবং সারা পৃথিবী শান্তির রাজ্যে পরিণত হবে। (আহমাদ হাঃ ২৩৩০২; মিশকাত হাঃ৪২; তিরমিযী, মিশকাত হাঃ৫৪৭৫, আবূ দাউদ, মিশকাত হাঃ৫৪৫৩-৫৪; মুসলিম, মিশকাত হাঃ৫৫০৭) দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করতে এবং সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামী রাজত্ব কায়েম করার জন্য মহান আল্লাহ তা'য়ালা হযরত ঈসা (আ) কে আবার পৃথিবীতে পাঠাবেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ২২২২, ৩৪৪৮; সহীহ মুসলিম হাঃ ২৯৩৭; তিরমিযী হাঃ ২২৪০, ৪০০১; আবূ দাউদ হাঃ ৪৩২১; ইবনে মাজাহ হাঃ ৪০৭৫; আহমদ হাঃ ৭৬৮৩, ১৭১৭৭)

      ড.গালীব আরো বলেন, "ইমাম মাহদীর আগমনের ফলে ও ঈসা (আ) এর অবতরণ কালে পৃথিবীর কোথাও 'ইসলাম' ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। ইসলামের এই অগ্রযাত্রা তার রাষ্ট্রশক্তি (যুদ্ধ-জিহাদ) এর বলে হবে না, বরং এটা হবে তার তাওহীদী দাওয়াতের কারণে।" (ইক্বামতে দ্বীন: পথ ও পদ্ধতি, ১ম প্রকাশ, মার্চ ২০০৪; পৃঃ ৩৭) 
এখানে ঈসা (আ) এর ন্যায়পরায়ণ শাসক হওয়া ও তাঁর যুদ্ধ-জিহাদ করাকে সরাসরি ভাবে অস্বীকার করেছেন। হযরত ঈসা (আ) 
এর অবতরণ, দাজ্জাল নিধন, পৃথিবীতে ইসলামী রাজ্য স্থাপন এবং রাষ্ট্রশক্তি ও যুদ্ধ-জিহাদের বলে সমগ্র পৃথিবীতে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়ে সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদীস সমূহ বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং কাফির, মুনাফিক, তাগুতের বান্দারাই ঈসা (আ) এর 'রাষ্ট্রশক্তি' ও যুদ্ধ-জিহাদকে অস্বীকার করতে পারে, কোন মুমিন বান্দা নয়।

    আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﻴُﻮﺷِﻜَﻦَّ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺰِﻝَ ﻓِﻴﻜُﻢْ ﺍﺑْﻦُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﺣَﻜَﻤًﺎ ﻣُﻘْﺴِﻄًﺎ ﻓَﻴَﻜْﺴِﺮَ ﺍﻟﺼَّﻠِﻴﺐَ ﻭَﻳَﻘْﺘُﻞَ ﺍﻟْﺨِﻨْﺰِﻳﺮَ ﻭَﻳَﻀَﻊَ ﺍﻟْﺠِﺰْﻳَﺔَ ﻭَﻳَﻔِﻴﺾَ ﺍﻟْﻤَﺎﻝُ ﺣَﺘَّﻰ ﻻَ ﻳَﻘْﺒَﻠَﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ .
শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। অচিরেই তোমাদের মাঝে ন্যায়পরায়ণ (রাষ্ট্রপ্রধান) শাসকরূপে মারইয়ামের পুত্র ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন। তারপর তিনি (শুধু দাওয়াতের মাধ্যমে নয় বরং রাষ্ট্রশক্তির বলে) ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযিয়া কর রহিত করবেন এবং ধন- সম্পদের এরূপ প্রাচুর্য হবে যে, কেউ তা গ্রহণ করবে না। (সহীহ বুখারী হাঃ ২২২২, ২৪৭৬, ৩৪৪৮; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৫৫, ২৪৩; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৭৬৮৩; আরো দেখুনঃ তিরমিযী হাঃ ২২৩৩, আবূ দাউদ হাঃ ৪৩২৪, ইবনে মাজাহ হাঃ ৪০৭৮, আহমাদ হাঃ ১০০৩২, ১০৫৬১)

     হযরত ঈসা (আ) আগমন করে মুহাম্মদ (সা) এর শরীয়ত অনুসরণ করে সমগ্র পৃথিবী শাসন করবেন। সে সময় তিনি রাষ্ট্রশক্তির বলে যুদ্ধ-জিহাদ করে ইসলাম ছাড়া বাকী সমস্ত ধর্ম ও বিধান মিটিয়ে দিবেন। এই জন্যই তিনি খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত ক্রুশ চিহ্ন ভেঙে ফেলবেন, কাফিরদের নিকট থেকে জিযিয়া গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করবেন ইসলাম অথবা হত্যা ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করবেন না। মোটকথা আল্লাহর দ্বীনকে নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং সর্বশেষ নবীর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি পৃথিবীতে আগমণ করবেন। (ইমাম কুরতুবী, তাযকিরা ২/৭৯২) এভাবে ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে হযরত ঈসা (আ) ৪০ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যুবরণ করবেন। (মুসনাদে আহমদ ২/৪০৬; আবূ দাউদ, হাঃ৪৩২৪; সহীহুল জামে হাঃ৫২৬৫) মদীনায় নবী (সা) কবরের পাশে তাঁর কবর হবে। (লাওয়ামেউল আনওয়ার ২/১১৩) 

     তবে কিয়ামত পর্যন্ত একদল হক্বপন্থী লোক তাগুতী শাসনের বিরুদ্ধে এবং আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকাশ্যে নবীদের ন্যায় সংগ্রামী মিশন চালিয়ে যাবেন। অবশেষে ইমাম মাহদী ও ঈসা (আ) তাদের নেতৃত্ব দিবেন। হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ لَا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الْأُمَّةَ.
  "কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল লোক প্রকাশ্যে (দ্বীনে) হক্ব (তথা আল্লাহ প্রদত্ত সত্য বিধান) প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাবে। অবশেষে হযরত ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন। তখন তাদের আমীর (ইমাম মাহদী) বলবেন: আসুন! সালাতে আমাদের ইমামত করুন। তিনি বলবেন: না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম। এটি হল এ উম্মাতের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত  সম্মান।" (সহীহ মুসলিম, হাঃ১৫৬; ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাঃ ২৯২; বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, হাঃ ৩০৩)
 
    আল্লাহ তা'আলা আমাদের সেই দলে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করুক, যারা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন। (আমিন)
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা আলোচক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। ,

Post a Comment

0 Comments