Recent Tube

মতিউর রহমান মাদানী কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে মিথ্যাচার: আমাদের দলিল ভিত্তিক জবাবঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।




মতিউর রহমান মাদানী কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে মিথ্যাচার: আমাদের লি ভিত্তিক জবাবঃ
--------------------------------------

     যুগে যুগে গরু পূজারী ও ইসলাম বিদ্বেষীরা গরু জবাহ করা ও গরুর গোশত খাওয়ার বিরোধীতা করে এসেছে এবং ইসলামের সমালোচনাও করেছে। কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে মিথ্যাচার করার সাহস পায়নি। 'গরুর গোশত খাওয়া জাহেলিয়াত' প্রমাণ করতে গিয়ে এই প্রথম রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামে মিথ্যাচার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন আহলে হাদীসের এসি শায়েখ মতিউর রহমান মাদানী ওরফে কাজ্জাব হিন্দুস্থানী। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) না কি গরুর গোশত খাননি। কারণ, সে সময় আরব দেশে গরু ছিল না! তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, 
"নবী (সাঃ) গরুর গোশত খেয়েছেন- এমন হাদীস দেখাতে পারবেন? যেমন, খাসি আর উট দেখাতে পারবেন, ঐ রকম পারবেন কি? আরব দেশে গরুই ছিল না।" (নাউযুবিল্লাহ! লিংক কমেন্টে)
এই কাজ্জাব যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামে মিথ্যারোপ করেছেন, তার প্রমাণ নিন।

   প্রথমে হাদীস থেকে জেনে নেই, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জামানায় আরব দেশে গরু ছিল কি না।
১. মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
 بَعَثَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم إِلَى الْيَمَنِ «وَأَمَرَنِي أَنْ آخُذَ مِنْ الْبَقَرِ مِنْ كُلِّ أَرْبَعِينَ مُسِنَّةً وَمِنْ كُلِّ ثَلَاثِينَ تَبِيعًا أَوْ تَبِيعَةً».
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে ইয়ামন পাঠালেন এবং আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন প্রতি চল্লিশ গরুতে পূর্ণ দু’ বছর বয়সের একটি মাদী বাছুর এবং প্রতি ত্রিশ গরুতে একটি নর বা মাদী বাছুর (যাকাত হিসাবে) গ্রহণ করি। (ইবনে মাজাহ হাঃ ১৮০৩, জামে তিরমিযী হাঃ ৬২৩, আবূ দাউদ ১৫৭৬,  আহমাদ ২১৫৭৯, ২১৬২৪, মুয়াত্তা মালেক ৫৯৮, দারেমী ১৬২৩, ইরওয়াহ হাঃ ৭৯৫)
আবর দেশে যদি গরু না থাকে, তাহলে গরুর যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হল কেন? 

 ২. আবূ হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন,
افْتَتَحْنَا خَيْبَرَ وَلَمْ نَغْنَمْ ذَهَبًا وَلاَ فِضَّةً إِنَّمَا غَنِمْنَا الْبَقَرَ وَالْإِبِلَ وَالْمَتَاعَ وَالْحَوَائِطَ ثُمَّ انْصَرَفْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى وَادِي الْقُرَى-
"খাইবার যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি কিন্তু গনীমত হিসেবে আমরা সোনা, রূপা কিছুই পাইনি। আমরা গানীমাত হিসেবে পেয়েছিলাম গরু, উট, বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী এবং ফলের বাগান। তারপর (যুদ্ধ শেষে) আমরা আল্লাহর রসূল ﷺ-এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা পর্যন্ত ফিরে এলাম।" (সহীহ বুখারী হাঃ ৪২৩৪, সহীহ মুসলিম হাঃ ১১৫)
আরব দেশে গরু না থাকলে সাহাবাগণ গনীমত হিসাবে গরু পেলেন কিভবে?

 ৩. আল-মুনযির ইবন জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, 
كُنْتُ مَعَ جَرِيرٍ بِالْبَوَازِيجِ فَجَاءَ الرَّاعِي بِالْبَقَرِ وَفِيهَا بَقَرَةٌ لَيْسَتْ مِنْهَا فَقَالَ لَهُ جَرِيرٌ مَا هَذِهِ قَالَ لَحِقَتْ بِالْبَقَرِ لاَ نَدْرِي لِمَنْ هِيَ ‏.‏ فَقَالَ جَرِيرٌ أَخْرِجُوهَا فَقَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يَأْوِي الضَّالَّةَ إِلاَّ ضَالٌّ ‏"‏ ‏.‏
আমি বাওযীজ নামক স্থানে আমার পিতা জারীর (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। এক রাখাল গরুর পালসহ উপস্থিত হলে তার মধ্যে বাইরের একটি গরুও ছিল। জারীর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, এটা কোথা থেকে এলো? রাখাল বলল, আমাদের গরুর সাথে এসে যোগ দিয়েছে, কে তার মালিক জানিনা। জারীর (রাঃ) বলেন, গরুর পাল থেকে এটা বের করে দাও। আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ পথভ্রষ্ট ব্যক্তিই হারানো পশুকে আশ্রয় দেয়। (সুনান আবু দাউদ, হাঃ ১৭২০, ইবনে মাজাহ হাঃ ২৫০৩, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৮৭০২, ১৮৭২৫) 
 এ হাদীস তো প্রমাণ করে আরব দেশে দু' চারটা না বরং অনেকের দলে দলে গরু ছিল, গরুর পাল ছিল। 

  এবার আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরুর গোশত খেয়েছেন- এমন কতিপয় সহীহ হাদীস পেশ করছি, যে হাদীসগুলো আরব দেশে গরু থাকারও অকাট্য দলিল।
১. জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 نَحَرْنَا بِالْحُدَيْبِيَةِ مَعَ النَّبِيِّ ﷺ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ.
আমরা হুদাইবিয়া নামক স্থানে নবী (সাঃ) এর সাথে একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি গরুও সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছি।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ১৩১৮, জামে তিরমিযী হাঃ ৯০৪, ১৫০২, সুনান নাসায়ী হাঃ ৪৩৮৩, আবূ দাউদ হাঃ ২৮০৭, ২৮০৮, ২৮০৯, ইবনে মাজাহ হাঃ ৩১৩২, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৩৭১৩, ১৩৯৮৯, ১৪৩৯৪, ১৪৪৯৮,১৪৫০৬, ১৪৬২১, ১৪৮৩৫, মুয়াত্তা মালেক হাঃ ১০৪৯, দারেমী হাঃ ১৯৫৫, ১৯৫৬) 
দেখুন, সাহাবাগণ রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে সাত ভাগে গরু কুরবানী করেছেন। এ হাদীস যেমন আরব দেশে গরু থাকার অকাট্য দলিল, তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরুর গোশত খাওয়ারও প্রমাণ। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাথে থেকে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ছেড়ে গরুর গোশত খাবেন, তা কল্পনাও করা যায় না।

 ২. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَحَرَ عَنْ آلِ مُحَمَّدٍ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ بَقَرَةً وَاحِدَةً ‏.‏
"রাসূলুল্লাহ ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেন।" (আবূ দাউদ হাঃ ১৭৫০, ইবনে মাজাহ হাঃ ৩১৩৫, মুয়াত্তা মালিক হাঃ ১০৫১)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন গরু কুরবানী করেছেন, তখন পরিবারের সাথে গরুর গোশতও খেয়েছেন, এটাই স্বাভাবিক। 

 ৩. আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 
‏فَلَمَّا كُنَّا بِمِنًى أُتِيتُ بِلَحْمِ بَقَرٍ، فَقُلْتُ مَا هَذَا قَالُوا ضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَزْوَاجِهِ بِالْبَقَرِ‏.‏
(হজ্জের সময়) আমরা যখন মিনায় ছিলাম, তখন আমার কাছে গরুর গোশত নিয়ে আসা হল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কী? লোকজন উত্তর করলঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছেন। (সহীহ বুখারী হাঃ ১৭০৯, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, সহীহ মুসলিম হাঃ ১২১১, নাসায়ী হাঃ ২৯০, আবু দাউদ হাঃ ১৭৮২; ইবনে মাজাহ হাঃ ২৯৬৩, ২৯৮১, আহমাদ হাঃ ২৩৫৮৯, ২৫০৯১, ২৫৮১২, মুয়াত্তা মালেক হাঃ ৮৯৬, দারেমী হাঃ ১৯০৪) 
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরু কুরবানী করে তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা) নিকট পাঠিয়ে দিলেন। আর আয়েশা (রা) গরুর গোশত রান্না করে কি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া খেয়েছিলেন?

  ৪. আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
وَأُتِيَ النَّبِيُّ، صلى الله عليه وسلم بِلَحْمِ بَقَرٍ فَقِيلَ هَذَا مَا تُصُدِّقَ بِهِ عَلَى بَرِيرَةَ ‏.‏ فَقَالَ ‏ "‏ هُوَ لَهَا صَدَقَةٌ وَلَنَا هَدِيَّةٌ ‏"‏ ‏
একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু গরুর গোশ্‌ত আনা হলো। অতঃপর বলা হলো এ গোশ্‌ত বারীরাকে সদাক্বাহ্‌ হিসেবে দান করা হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা তার জন্য সদাক্বাহ্‌ কিন্তু আমাদের জন্য হাদিয়্যাহ্‌।” (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০৭৫; ই.ফা. হাঃ ২৩৫৪, ই.সে. হাঃ ২৩৫৪)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরুর গোশত হাদিয়্যাহ্‌ হিসাবে গ্রহণ করলেন, নিশ্চয় তা খাওয়ার জন্য।

  ৫. জাবির (রা) কর্তৃক বর্ণিত বুখারী মুসলিমের অপর এক হাদীসে এসেছে-
فَلَمَّا قَدِمَ صِرَارًا أَمَرَ بِبَقَرَةٍ فَذُبِحَتْ فَأَكَلُوا مِنْهَا.
"রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সিরার নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন একটি গরু জবাহ করার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা জবাহ করা হয় এবং সকলে তার গোশত আহার করে।" (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৮৯; সহীহ মুসলিম  হাদীস নং ৭১৫)

  উপরে বর্ণিত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জামানায় আরব দেশে গরু ছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরুর গোশত খেয়েছেন। সুতরাং মতিউর রহমান মাদানী আল-কাজ্জাব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উপর মিথ্যারোপ করেছেন; যার পরিণাম জাহান্নাম। (সহীহ বুখারী হাঃ ১০৬, ১০৭, ১০৮, ৩৪৬১; সহীহ মুসলিম হাঃ ০২, ০৩, ০৪, তিরমিযী হাঃ ২২৫৭, ২৬৫৯, আবু দাউদ হাঃ ৩৬৫১, ইবনে মাজাহ হাঃ ৩০, ৩৬, ৩৭, আহমদ হাঃ ৫৮৫, ১০৭৮, ৬৪৫০, ৬৫৫৬, দারেমী হাঃ ২৩০, ২৩৫)।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও দাঈ। 

Post a Comment

1 Comments

  1. মতিউর রহমান মাদানী কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে মিথ্যাচার: আমাদের দলিল ভিত্তিক জবাবঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

    প্রমান হিসাবে উপরোক্ত বক্তব্যের ভিডিওটির লিংক দেয়ার অনুরোধ রইলো
    উনি কবে কোথায় এই কথা বলেছেন ?
    বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইলো
    ধন্যবাদ

    ReplyDelete