Recent Tube

মরুভুমির হাতছানি -৩৮ মুহিউল ইসলাম মাহিম চৌধুরী।




        
              
   মরুভুমির হাছানি.
                         পর্ব-৩৮;



  হজ্জ, ভ্রণ'১৭;

জাবালে নূরের চূড়ায় গারে হেরার পাশে দাঁড়িয়ে ''অাল্লাহু অাকবার'' বলেছি.....


  রিয়াদ থেকে  আমাদের বড় ভাই আমাদেরকে দেখতে এসেছেন । আপাততঃ আমরা চার ভাইবোন মিলে অবস্থান করছি আল্লাহর ঘরের সান্নিধ্যে, পবিত্র মক্কা আল মুকাররামায় ।। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম সেই ''গারে হেরা'' দেখতে যাব যেখানে ধ্যানমগ্ন থেকে প্রিয় নবী (স.) অশান্ত পৃথিবীর মানুষগুলির জন্য মুক্তির পথ খুঁজেছিলেন । অতঃপর ফিরে এসেছিলেন এক অালোকিত চেরাগ হাতে নিয়ে । যা সারা দুনিয়াবাসীকে পথ দেখাবে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত। । 

   সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ভোরেই রওয়ানা করি কাংখিত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে । আমাদের টেক্সি মসজীদে হারাম সংলগ্ন আজইয়াদ রোড থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌছে যায় জাবালে নূর এ ।
হারাম শরীফ থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে জাবালে নূরের অবস্থান। এর উচ্চতা প্রায় ১০০০ ফিট । 

  গাড়ী থেকে নেমে অামরা সমতল থেকে উঁচুতে উঠতে থাকি ।  জাবালে নূরে যাওয়ার জন্য যেখানে গাড়ি দাঁড়ায়, সেই স্থানটিও সমতল থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ফুট ওপরে। সমতল থেকে এটুকু পথ গাড়িতে ওঠা যায়।
   আমার মেঝবোন সিদ্ধান্ত নিলেন আমার সাথে তিনি ও একদম উপরে উঠবেনই । আমি তাতে কিছুটা বিব্রতবোধ করলেও তাঁর সাফ কথা আমাদের মা হযরত খাদীজা (রাঃ) কাফেরদের চোখ এড়িয়ে প্রতিদিন নবীজি (সঃ) কে খাবার পৌছে দেওয়ার জন্য এ পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারলে আমরা কেন পারবোনা?  আমরাতো আমাদের উম্মত জননীদের উত্তরসূরী । যাক আমি আর বাঁধ সাধতে পারলামনা । শুরু হল আমাদের হিল ট্রেকিং । উপরে উঠতে উঠতে হাঁপিয়ে উঠেছি তবুও পথ ফুরোয়না । উঠার পথে বর্তমানে কিছু ছোটছোট সিঁড়ি বিদ্যমান রয়েছে।  ভয়ংকর জয়গাগুলোতে কিছু কিছু রেলিং দেওয়াও আছে ।

   আঁকাবাঁকা ঝুকিপূর্ন পাথুরে পাহাড় অতিক্রম করা খুব সহজ নয় ।  নীচের দিকে তাকালে মনে ত যেন মাথা ঘুরে এখনই পড়ে যাব । তারপরও কোরআনে কারীমের কয়েকটি সূরা তেলাওয়াত করতে করতে উঠতে থাকলাম । সবসময় মনের অলিন্দে সদা জাগ্রত রাখলাম এ কথাটি যে,আমিতো সেদিকেই ধাবমান হচ্ছি যে জায়গা থেকে কোরআনে হাকিম অবতীর্ণ হতে শুরু করেছিল । পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য আমাকে তাঁর প্রিয় হাবীবের নির্জনবাসের জায়গা পর্যন্ত পৌছে দিল  । জাবালে নূরের একদম চূড়ায় উঠে ইচ্ছে হল শরীরের সবটুকু শক্তি একত্রিত করে আজান দেই কিন্তু অনেকে সেখানে নামাজ পড়ছে তাতে বিঘ্ন ঘটতে পারে মনে করে আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার আল্লাহু  আকবার বলেছি ।। দু'রাকাত নামাজ আদায়া করে মুনাজাত করলাম।। অতঃপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম সেদিকে যেই জায়গাটায় বসে এক এবং অদ্বিতীয় স্বত্বার ধ্যানে মশগুল থাকতেন আমাদের প্রিয়নবী (স)। জাবালেে নূরের চূড়া থেকে খানিকটা নিচের দিকে তাকালেই দেখা যায় সেই জান্নাতি গুহা যেই গুহার প্রবেশ পথে লিখা রয়েছে '' ইক্বরা বিছমি রাববিকাল্লাজি খালাক্ক,খালাক্বাল ইনসানা মিন আলাক্ক'' ।।
এখানেই নাজিল হয়েছিল সূরা আলাক্ব এর প্রথম প্রথম পাঁচ আয়াত ।

  
  পাহাড়ের প্রায় চূড়া সংলগ্ন হেরা গুহায় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করেন। যদিও এরআগে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক সত্য স্বপ্ন দেখতেন যা ওহির সমতুল্য। 
 হেরা গুহায় ধন্যমগ্ন থাকা অবস্থায় সর্ব প্রথম হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম কুরআনের ওহি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। 
এক রাতে তাহাজ্জুদের সময় মানুষের আকৃতিতে একজন ফেরেশতা প্রিয়নবীর কাছে আসেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, পড়ুন। উত্তরে রাসুল বলেছেন, আমি পড়তে জানি না। তারপরও ফেরশতা তাকে আরও দুইবার পড়ার অনুরোধ করেন, সে দুইবারও প্রিয় নবী জানালেন আমি পড়তে জানি না।অতঃপর ফেরেশতা হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম কুরআনের ৯৬নং সুরার প্রথম ৫ আয়াত পড়লেন। 
-اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَخَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍاقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُالَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِعَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ>> পড়ুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।  >> সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।  >> পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু।  >> যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।>> শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।

   কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, হুজুর (স) যখন ওহি নিয়ে হেরা গুহা থেকে পাহাড়ের অর্ধেক নিচে নেমে আসলেন, তখন তাঁর কানে একটি কণ্ঠের আওয়াজ আসে-

‘হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর নবী আর আমি ( আল্লাহর ফেরেশতা)  জিব্রাঈল।’। 

  এই পৃথিবীতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষ্ময়কর মহামানব মুহাম্মাদ মুস্তফা (স) এর কাছে প্রথম ওহীর স্বাক্ষী পবিত্র গুহা ''গারে হেরা'' দর্শনে আপন চক্ষুকে শিক্ত করে নেমে আসি জাবালে নূর থেকে । ক্বিয়ামাত পর্যন্ত ওহী নাজিলের নিদর্শনকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে থাকবে এই জান্নাতি পাহাড় ।
------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক প্রবন্ধ লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments