Recent Tube

আমার একটা প্রশ্ন ছিল- জিয়াউল হক।




  
   আমার টা প্রশ্ন ছিল-


   
    প্রখ্যাত ইংলিশ ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি (Arnold Toynbee) চমৎকার একটা মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন তার A Study of History বইয়ে;

   The downfall of a civilization comes when the ‘creative minority’ simply stops producing good ideas and becomes satisfied to rule in an unjust manner. At that point the ‘creative minority’ becomes merely a ‘dominant minority’ and precipitates the decline of that culture’s dominance.  

    ভাবানূবাদ: একটি সমাজের চিন্তাশীল ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটি যখন স্বাধীন চিন্তা ভাবনা ও নিত্য নতনু ধারনা প্রস্তুত বন্ধ করে দেন, তখনই উক্ত সমজের পতন শুরু হয়। এ পর্যায়ে তারা (এই চিন্তাশীল গোষ্ঠী) নিছক প্রভাবপ্রতিপত্তিহীন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়, এবং এভাবেই ঐ সাংস্কৃতির অবলুপ্তির ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যায়। (সুত্র: A Study of History, Arnold Toynbee)

    একটি শক্তিশালী ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখা প্রতিটি শিক্ষিত ও সচেতন মানব সন্তানের স্বাভাবিক ও মানবিক প্রবৃত্তি হলেও সে সমাজ আপনাতেই গড়ে উঠে না। যদিও যেন তেন একটি সমাজ কোনরকম কার্যকর প্রচেষ্টা ছাড়াই গড়ে উঠে। 

একটা গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান কিছু কমন বৈশিষ্ঠকে কেন্দ্র করে কোন একটি নির্দিষ্ঠ ভূখন্ডে বসবাস ও জীবন পরিচালিত করতে লাগলেই সেখানে ক্রমে একটা সমাজের বিকাশ হয়। নিজেদের অলক্ষ্যেই, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কিছু কমন রুলস, মেনে চলার মতো নিয়ম নীতি বানিয়ে অধিকাংশ সদস্যই সে সবের উপরে ঐক্যমত পোষণ করে, সরবে বা নীরবে। 

  এভাবেই অলক্ষ্যে অগোচরে গড়ে উঠে একটা সামাজিক মনস্তÍত্ত (Social Psychology), এবং তা গড়ে উঠার পেছনে ঐ সমাজে বসবাসরত প্রতিটি সদস্য ও সদস্যাদের একক (Individual Psychology) এবং সম্মিলিত মনস্তত্তও ÍËI (Collective Psychology) অবশ্যই বিরাট ভূমিকা পালন করে।

     পৃথিবীর সূচনাকাল থেকে এভাবেই সমাজ তৈরি হয়েছে। আদম আ: ও বিবি হাওয়া মিলে যে সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই সমাজের জন্য যুগ বিবেচনায় সর্বোত্তম নিয়ম নীতি তারা চালু করেছিলেন। আর সে সবের মৌলিক বুনিয়াদ হিসেবে কাজ করেছিল উভয়ের ব্যক্তি মনস্তত্ত (Individual Psychology)।

    এর পরের প্রজন্ম সময়ের বিবর্তনে সেই সব নিয়ম ও প্রথা হতে বিচ্যুত হয়ে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তাবস্থায় নানা জনপদে ছড়িয়ে পড়ে সেখানে নিজেদের মতো করে সমাজ গড়ে তোলে। সেই সব সমাজের রীতি নীতি কতটা বর্বর বা কতটা উন্নত, সে বিতর্ক এখানে অনর্থক। সমাজ গঠন ও বিকাশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তা যেমন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তেমনই বিকশিতও হয়েছে। আবার ঐ সমাজের আশে পাশে বা তার ভেতরেই যখন কোন উন্নত রীতিবিশিষ্ঠ নতুন কোন গোষ্ঠী বা সমাজের বিকাশ হতে দেখেছে, তখন তারা হয় নিজেদেরকে সেই উন্নত সমাজের ধাঁচে সাঁজিয়ে নিয়েছে, নতুবা নিজেরাই সেই উন্নত সমাজে বিলিন হয়ে গেছে। 

  এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। একটা প্রতিষ্ঠিত সমাজ, ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন, বদলে যায়, বদলে দেয়া যায় যদি সেই সমাজের গণমনস্তÍ বা সোশ্যাল সাইকোলোজিটাকে পরিবর্তন করা যায়। সমাজের নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কোন প্রচেষ্টা না করলেও চলে। অনেকটা সদ্য ধোয়া কাপড়ের মতো, ব্যবহার না করে ঘরে টানিয়ে রাখলেই ময়লা হয়ে যায়, নোংরা করার প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ঐ কাপড়টাই কোনরকম প্রচেষ্টা, পরিকল্পনা ও পরিশ্রম ছাড়া পরিস্কার করা সম্ভবপর নয়। 
ঠিক তেমনই একটা সমাজকে সঠিক ধাঁচে রক্ষার চেষ্টা না করাটাই সেই সমাজে বিপর্যয় শুরু এবং ধ্বংস হবার জন্য যথেষ্ঠ। আর একটি সমাজ ধ্বংসের চুড়ান্ত রুপ হচ্ছে, সেটা নিকটতম কোন শক্তিশালী আদর্শের মধ্যে বিলিন হয়ে যায়। একটি সভ্য সমাজ গড়তে অন্তত ছয়টি ক্ষেত্রের সুসামঞ্জস্য বিকাশ প্রয়োজন। সেগুলো; 

  এক: ভাষা (Language),  
দুই: ধর্ম (Religion),,
তিন: সংস্কৃতি (Culture),
চার: ঐতিহ্য ও সামাজিক প্রথা (Customs & Traditions)
পাঁচ: সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান (Institution) এবং 
ছয়: গণমনস্তত্ত (Communal Psychology/ Social Psychology)

   উপাদানগুলোর গঠন ও বিকাশ রাতারাতি হয় না, গড়ে উঠে একটা দীর্ঘ সময় ও প্রক্রিয়ার সুত্র ধরে, অনেকের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমে। উপাদানগুলোকে দু’টো ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমভাগে ভাষা, ধর্ম, সাংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সামাজিক প্রথা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এই পাঁচটি। আর দ্বিতীয়ভাগে রয়েছে একটি; গণমনস্তত্ত (Social Psychology)। 

   একটি শক্তিশালী সমাজ গঠনে প্রথমভাগের ঐ পাঁচটি ক্ষেত্রে একদল বিশিষ্ঠ, দক্ষ এক্সপার্ট বিশেষজ্ঞ থাকতেই হবে। এরাই হলেন ঐ সমাজের ক্রিয়েটিভ মাইনরিটি Creative Minority বা সুশিল সমাজ। এদের দক্ষ কর্মকান্ডেই তৈরি হয় দ্বিতীয় উপাদান; গণমনস্ত। 

   এই গণমনস্তত্তই চুড়ান্ত পর্যায়ে একটি সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তন ঘটায়। বস্তুত বিশ্বের যে কোন সমাজে একটি গণমনস্তত্ত বা সোস্যাল সাইকোলোজি তৈরিতে সুশিল সমাজই হলেন মূল কারিগর। মুসলিম সমাজে একটি সুশিল সমাজ বা ক্রিয়েটিভ মাইনরিটি গোষ্ঠী তৈরির জন্য বলা হয়েছে যেন বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তার জগতে শুন্যতার সৃষ্টি না হয়। ইসলাম আমাদের সামনে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে (সুরা তাওবা : ১২২)। 
   সুস্পষ্ট নির্দেশ; ব্যক্তি বা সামাজিক জীবন পরিচালনার জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু লোককে পারদর্শীতা, পান্ডিত্য ও দক্ষতা অর্জন করে বিশেষজ্ঞ হতেই হবে। একটি শক্তিশালী সুশীল সমাজের উদ্ভব হতেই হবে। যারা সমাজ বদলের চেষ্টারত, তারা কি বলতে পারবেন যে, এ লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ঠ কাজ হয়েছে বা হচ্ছে?
---------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ইতিহাস বিশ্লেষক গবেষক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments