Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৮০ নুর মুহাম্মদ চৌধূরী মুবিন।





                       বিতি কিচ্ছা;
                         পর্ব-৮০;


সিণ্ডিকেট ষড়যন্ত্রের কবলে সরিষার তেল:
--------------------------------

         বিশ্বজুড়ে কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা খদ্দেরের চাহিদা বা প্রয়োজন বিবেচনা করে স্বীয় ব্যবসায় পরিকল্পনা রচনা করে থাকেন। আবার কিছু কিছু ব্যবসায়ী পরিকল্পনা নেন স্বীয় ব্যবসায়ীক স্বার্থ বা মুনাফার আধিক্যের দৃষ্টিকোণ বিবেচনায়। ১ম দলের কর্ম তৎপরতা শতভাগ জনসেবামুলক বলে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু ২য় দলের সদস্যরা ব্যবসার জন্য ব্যবসা করে থাকেন, জনকল্যাণের জন্য নয়। অথচ ব্যবসার মধ্যে জনকল্যাণ ও মুনাফা লাভ দুটোর ভারসাম্য  থাকলে তা হত উভয়পক্ষের জন্যই কল্যানকর।

        উল্লেখ প্রয়োজন যে, আমি যদি কোন ব্যবসায়ীর দরজায় এসে দাঁড়াই, তখন সাধারণত আমি কি চাই?  আমি চাই, প্রথমত: সে আমাকে ভাল মানে অভিবাদন জানাবে। দ্বীতিয়ত: সে মনযোগ সহকারে আমার চাহিদা বা প্রয়োজন বুজে নিবে, তৃতীয়ত : সে আমার প্রতি আন্তরিক  কল্যানকামী হয়ে আমার চাহিদার যোগান দিবে, চতুর্থত: সে আমাকে যে সেবা প্রদান করবে তার উপযুক্ত বিনিময় মূল্যের অতিরিক্ত সে নেবে না,  পঞ্চমত: গ্রহন কৃত সেবায় কোন প্রকার ভেজাল সংমিশ্রণ করবে না। এই সবকটি বিষয় প্রাপ্তির নিশ্চয়তা যেখানে পাওয়ার সভাবনা বেশী আছে বলে আমার মন সায় দেবে আমি কেবল সেখান থেকেই উপরিউক্ত বিষয় গুলো প্রাপ্তির আকাংখা পোষন করব, অন্যতায়  আমি কখনও সেখানে যাবই না।

         ঠিক একইরুপে আমার কাছে যখন কোন ব্যক্তি আসবে সদাইপাতির উদ্দেশ্য বা বিনিময় যোগ্য সেবা নেবার উদ্দেশ্যে - তখন সে ও আমার কাছ থেকেও ততটুকু সুবিধা পাওয়ার হকদার বা পাওয়া উচিৎ হবে যতটুকু আমার ক্ষেত্রে প্রাপ্য ছিল বলে আমি মনে করি।

       কিন্তু অ-সাধু ব্যবসায়ীরা স্বীয় মুনাফার দিক বিবেচনায় চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে রাখেন- যা কখনই নৈতিকতার ধারে কাছেও ঘেষে না। এই রুপ এক মহা চক্রান্তের জালে আবদ্ধ আজ সরিষার তেল। বাহ্যত: নানাবিধ কল্যানের রাজপথ এড়িয়ে চলে হাজারও অকল্যাণের হাতছানি আমদানি করার পেছনে আমাদের ব্যবসায়ীরা বরাবরই সক্রিয়। সরিষার তেল আজ এই স্থানেই ধরা খেয়ে বিলীন হতে থাকলো কালের গর্ভে।

         বিশুদ্ধ সোয়াবিন তেল থেকে আমরা কি কল্যাণ লাভ করি তা আমাদের কারোরই মনে হয় জানা নাই। তার উপর আবার সোয়াবিন তেলে ভেজাল থাকলেতো কথাই নাই। ইদানিং সোয়াবিনের স্থানে পাম ওয়েল সহ কতনা জীবন বিধ্বংসী তেল আমরা  ভোজ্য তেলের নামে চালিয়ে দিচ্ছি -যা মূলত: ভোজ্য তেল হিসাবে আমদানিই হয়নি, বরং আমদানি হয় বিভিন্ন ব্যবহার্য্য সামগ্রীর (Lubricant) পিচ্ছিলকারক বা তৈলাক্তকারক হিসাবে। এবং উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে যা ভোজ্য তেল হিসাবে আদৌ  গ্রহনযোগ্য নয়। এছাড়া শোকরের চর্বি মিশ্রন করে বোতলজাত কারী একটি কোম্পানীর বিষয়ে গুগুলের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। এতএব চিন্তার বিষয় নিশ্চয়ই এটি যে, দিনকে দিন নানা প্রকার অখাদ্য ভক্ষণের ফলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। 

        ইতিপূর্বে সরিষার তেলের উপকারীতা নিয়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বিস্তর লেখালেখি করেছেন। যা ঘাটাঘাটি করলেই দৃশ্যমান হয়। অথচ ভোজ্য তেল হিসাবে সোয়াবিন অথবা পাম ওয়েলের ব্যবহার আর তার উপকারিতা নিয়ে দূ'কলম রচনা হয়নি, হয়নি  দু,একটি নিবন্ধ । অবশ্য যেখানে যার ব্যবহার মানানসই, সেখান তা ব্যবহৃত হবে - এতে কারো কোন অসুবিধা নাই।

    ভেবে দেখার বিষয় এটা যে, ভোজ্য তেলের নামে এই অখাদ্য ভক্ষণ করে আমরা আজ কোথায় গিয়ে হাজির হচ্ছি? আমাদের জীবনের বেশীরভাগ সময় আজ হাসপাতালের বারান্দায় কাঁটছে, অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাতে হচ্ছে, উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে, সর্বোপরি আমি সহ আমার পরিবার পরিজন সকলের জন্য আমদানি করছি দূরারোগ্য ব্যধী, যথা হৃদ রোগ, পাকস্থালীর সমস্যা, যকৃতের সমস্যা, কিডনীর অকার্যকারিতা ও অকাল বার্ধক্য। এই অবস্থায় উপনীত হবার পরও কি একটি ইউ টার্ন  একান্ত জরুরী নয়? সুতরাং নতুন দিনের সুর হোক,
" আর নয় পাম ওয়েল,
 আর নয় সোয়াবিন-
আজ থেকে সবার জন্য
 সরিষার তেল প্রতিদিন।"

Post a Comment

0 Comments