Recent Tube

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে স্বপ্নের মানঃ মুহাম্মদ তানজিল।





 
 ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে স্বপ্নের মানঃ
----------------------------------------------
  ইদানিং চরমোনাই পীরের এক আবাল মুরীদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি না কি স্বপ্নে কিয়ামত দেখেছেন। সেখানে চরমোনাই পীর ও মুরীদদের বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করানো হচ্ছে। আর অন্যান্য ইসলামী - অনৈসলামিক দল ও ব্যক্তি সবাইকে হিসাবের জন্য দাড় করিয়ে রেখেছেন। সেই মুরীদ নিজেই নাকি সেসব তামশা দেখেছেন। তিনি এ স্বপ্ন দ্বারা দলিল পেশ করলেন যে, চরমোনাই এর মুরীদ হতে পারলে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া যাবে। এছাড়া বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করার আর কোনো পথ নেই।

এর জবাব আমি নিজের ভাষায় না দিয়ে কওমী অঙ্গনের প্রসিদ্ধ আলিম মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের কিছু কথা তুলে ধরাকে উত্তম মনে করছি। তিনি বলেন, 
কিছু লোকের মধ্যে এমন রোগও রয়েছে যে, খাব-স্বপ্নের প্রতি তারা খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে।... অথচ শরীয়তে স্বপ্নের এমন কোনো মর্যাদা নেই। আরো আফসোসের কথা এই যে, কতক মানুষ অজ্ঞতাবশত স্বপ্নকে শরীয়তের দলিলের মর্যাদা দিয়ে থাকে। নিজের স্বপ্ন, পীর সাহেবের স্বপ্ন বা কোন ব্যক্তির স্বপ্নকে নির্দিষ্ট আমল, অভিমত ইত্যাদির স্বপক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ রূপে পেশ করে থাকে। স্বপ্নের ভিত্তিতে কাউকে (জান্নাতের ডিলার হক্কপন্থী) পীর মনোনীত করে থাকে। অথচ দ্বীনের কোন মাসয়ালাতেই শরীয়ত স্বপ্নকে দলিলের মর্যাদা দেয়নি। (প্রচলিত জাল হাদীস, পৃঃ ৫৫-৫৬)

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
الرُّؤْيَا ثَلَاثَةٌ فَرُؤْيَا الصَّالِحَةِ بُشْرَى مِنْ اللَّهِ وَرُؤْيَا تَحْزِينٌ مِنْ الشَّيْطَانِ وَرُؤْيَا مِمَّا يُحَدِّثُ الْمَرْءُ نَفْسَهُ فَإِنْ رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يَكْرَهُ فَلْيَقُمْ فَلْيُصَلِّ وَلَا يُحَدِّثْ بِهَا النَّاسَ. 
"স্বপ্ন তিন প্রকার। ১. ভাল স্বপ্ন- এটি আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে সুসংবাদস্বরূপ। ২. শয়তানের পক্ষ থেকে উদ্বেগসৃষ্টকারী (মন্দ) স্বপ্ন। ৩. কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি স্বপ্নে অপ্রীতিকর কোনো কিছু দেখে তাহলে সে যেন উঠে সালাত আদায় করে এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা না করে।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ২২৬৩; জামে তিরমিযী হাঃ ২২৭০; মুসনাদে আহমদ হাঃ ৭৫৮৬) 

এ হাদীসের আলোকে স্বপ্নের বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, ভাল স্বপ্নও সুসংবাদ মাত্র, কোন দলিল নয়। আর এ কথাও পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, স্বপ্ন শরীয়তের কোন দলিল হওয়া সম্ভব নয়। কেননা যদি কোন প্রকারের স্বপ্ন দলিল হতে পারত, তাহলে শুধু প্রথম প্রকারটিই হত, যা আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তবে কোন স্বপ্নটি আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে, শরীয়ত তার কোন পরিচয় দেয়নি। শুধু এতটুকুই বলেছে যে, ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর এ কথা সবাই জানে যে, পার্থিব ব্যাপারে মানুষ যদিও ভাল মন্দ বিবেক বুদ্ধি দ্বারা বুঝতে পারে; কিন্তু দ্বীনী ব্যাপারে ভাল-মন্দ (জান্নাতি বা জাহান্নামি) নির্ধারণ শরীয়তের কোন দলিল ব্যতীত সম্ভব নয়। এ জন্য কোন স্বপ্নকে ভাল বা আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে হয়েছে বলতে গেলে শরীয়তের কোন না কোন দলিলের আশ্রয় নিতে হবে। কাজেই স্বপ্ন কোন স্বতন্ত্র দলিল হতে পারে না।
মন্দ স্বপ্ন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য যে, শরীয়ত পরিপন্থী কোন কথা বা শরীয়ত বিষয় দলিলবিহীন কথা (যেমন চরমোনাই ও তার মুরীদ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর কোন দল বা ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবে না) নিশ্চয় মন্দ। এ প্রকার স্বপ্ন হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নিশ্চিত ভাবে শয়তানের দিকে সম্পৃক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি এর দ্বারা প্রমাণ পেশ করল, সে যেন প্রকারান্তরে শয়তানের কথা দ্বারাই প্রমাণ পেশ করল। (প্রচলিত জাল হাদীস, পৃঃ ৫৬-৫৭)
 
শায়েখ আবদুল মালেক সাহেবের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, চরমোনাই এর আবাল মুরীদ শয়তানের খপ্পরে পড়েছে। তাই শয়তানের কথা দ্বারাই দলিল পেশ করেছেন। তা না হলে সকল ইসলামী দল ও ব্যক্তিকে বর্জন করে শুধু চরমোনাই ও তাদের মুরীদদের বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করার গল্প শুনাতেন না। মুরীদদের বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া তো দূরের কথা স্বয়ং পীরসাব চরমোনাই জান্নাতে হিসাব দিয়েও প্রবেশ করতে পারবে কি না - তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কেননা পীরসাব চরমোনাই বোকা মুরীদদের ধোঁকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমন কি সাবেক পীরসাব তার পুত্র (বর্তমান পীর) দের নিয়ে সৎ মা, সৎ ভাই, ভাতিজা কারো হক আদায় করেননি। বরং গুণ্ডা বাহিনী দ্বারা তাদের সম্পদ জবরদখল করে নিয়েছে। যার কারণে বর্তমান পীরদের চাচা ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য মালমা করেছেন। সেই মাললা এখনো চলছে। তাহলে এমন ভণ্ডপীর চোরমোনাই তার মুরীদদের নিয়ে কিভাবে বিনা হিসাবে জান্নাতে যায়?

৬ষ্ঠ শতকের অন্যতম হানাফী আলিম উমার ইবনু মুহাম্মাদ আন-নাসাফী (৫৩৭ হি) তাঁর ‘‘আল-আকাইদ আন নাসাফিয়্যাহ’’ ও ৮ম শতকের প্রখ্যাত আলিম সা’দ উদ্দীন মাসঊদ ইবনু উমার আত-তাফতাযানী (৭৯১ হি.) তাঁর ‘‘শারহুল আকাইদ আন নাসাফিয়্যাহ’’ -তে লিখেছেন :
اَلإِلْهَامُ الْمُفَسَّرُ بِإِلْقَاءِ مَعْنًى فِيْ الْقَلْبِ بِطَرِيْقِ الْفَيْضِ لَيْسَ مِنْ أَسْبَابِ الْمَعْرِفَةِ بِصِحَّةِ الشَّيْءِ عِنْدَ أَهْلِ الْحَقِّ.
‘‘হক্কপন্থীগণের কাছে ‘ইলহাম’ (জাগ্রত অবস্থায় ফিকির করে অর্জন করা হোক বা স্বপ্নে লাভ করা হোক) যা ‘ফয়েযরূপে প্রদত্ত ইলকা’ নামে পরিচিত তা কোনো কিছুর সঠিকত্ব জানার কোনো মাধ্যম নয়।’’ (সা’দ উদ্দীন তাফতাযানী, শারহুল আকাইদ আন নাসাফিয়্যাহ, পৃ: ২২)
আল্লামা তাফতাযানী (রাহঃ) এর কাওল দ্বারাও প্রমাণিত হল যে, স্বপ্ন, কাশফ, ইলহামকে যারা শরীয়তের দলিল হিসাবে পেশ করে কারা হক্কপন্থী নয় বরং বাতিলপন্থী। সুতরাং চরমোনাই হক্কপন্থী নয় বরং বাতিলপন্থী।
----------------- 
লেখক ঃ ইসলামি চিন্তাবিদ প্রবন্ধ লেখক গ্রন্থ প্রণেতা ও দাঈ।

Post a Comment

0 Comments