Recent Tube

আহা! মা খাদিজা রা: এর সেই বাড়িটা !! জিয়াউল হক।



আহা! মা খাদিজা রা: এর সেই বাড়িটা !!
 ---------------------------------- 

  এখানেই বিবি খাদিজা রা: বসবাস করেছেন আমৃত্যু। এখানেই প্রিয় মুহাম্মদ সা: বিয়ের পরে এসে উঠেন এবং তাঁর জীবনের দীর্ঘ ২৮/২৯ বসর কাটিয়েছেন। বিবি খাদিজা এখানেই ইসলাম গ্রহণ করেন, ইসলাম গ্রহণ করেন তাঁরই মুক্ত দাস হযরত যায়েদ বিন হারেসা রা: এবং হযরত আলি রা:। এই বাড়িতেই বিবি জয়নাব. রুকাইয়া, বিবি ফাতিমা রা: এঁদের জন্ম হয়। এই বাড়িতেই হযরত জিবরাইল আ: অহী নিয়ে এসেছেন। তিনি সালাম দিয়েছেন বিবি খাদিজা রা:’কে, স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আ‘লামিনের সালাম পৌছে দিয়েছেন।
  প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: প্রাণ নিয়ে মদিনায় হিজরত করার পরে প্রতিবেশি মুতাব বিন আবি লাহাব (আবু লাহাবের পুত্র) শুন্য এ বাড়িটা দখল করেন। মক্কা বিজয়ের পরে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: মক্কায় এলেও বাড়িটা মুতাবের দখলেই ছিল। পরবর্তিতে এই মুতাব বিন আবি লাহাব ইসলাম গ্রহণ করেন। 

  মুতাব বিন আবি লাহাবের কাছ থেকে হযরত মুয়াবিয়া রা: তাঁর খেলাফতকালে এক লক্ষ দিরহামে বাড়িটা কিনে নেন। এই বাড়ির পশ্চিমের বাড়িটাই ছিল হযরত আবু সুফিয়ান রা: এর বাড়ি। হযরত মুয়াবিয়া রা: বাড়িটা তাঁর পিতার ওয়ারিস সম্পত্তি হিসেবে পান। বিবি খাদিজার বাড়িটা কিনে হযরত মুয়াবিয়া রা: দুই বাড়ির মধ্যে একটা দরজা লাগিয়ে দেন এবং পাশেই একটা মসজিদ তৈরি করেন। এ ছাড়া তিনি বাড়িটার কোনরকম পরিবর্তন ঘটান নি। 

  নেদারল্যান্ড এর ওরিয়েন্টালিস্ট  ও পর্যটক প্রফেসর Christiaan Snouck Hurgronje  (মৃত্যু ১৯৩৬) হাজি আব্দুল গাফফার নাম ধারন করে একজন নওমুসলিমের ছদ্মবেশে মক্কায় এক নাগাড়ে ছয়মাস (১৮৮৫) অবস্থান করেন আল কুরআন ও হাদিসের একজন একনিষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে।  তিনিই তার লেখনীর মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ঐ সময়ে মক্কার প্রশাসকরা বিবি খাদিজার বাড়ি সরেজমিন ঘুরে দেখার জন্য দর্শনার্থীদের নিকট থেকে বিশেষ ফিস আদায় করতো।  প্রখ্যাত মিশরীয় লেখক মুহাম্মদ লাবিব আল বাতনুনি বিগত ১৯০৮/৯ সালে সরেজমিনে বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখেছেন এবং তিনিই (সম্ভবত) সর্বপ্রথম তার একটি বিস্তারিত স্কেচ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন।
  ওসমানিয় সুলতান আব্দুল মজিদ সর্বশেষ ১৯২৩ সালে বাড়িটা সংস্কার করেন। সউদি আরব প্রতিষ্ঠার পর বাড়িটা খুব দ্রুতই ধ্বংস হয়ে যায়। তখনকার ওলামারা সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন এই মর্মে যে, বিবি খাদিজার বাড়িটা মক্কায় আগত দর্শনার্থীদের নিকট ইবাদাতের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে এবং এভাবে বহু মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। সরকার তা ভেঙ্গে ফেলেন। বিগত ১৯৫০ সালে মিশরীয় আঈনজীবি মুহাম্মদ লুতফি জুমা মক্কা সফর করেন এবং বিবি খাদিজার বাড়ির সেই জায়গায় তিনি কোন স্থাপনা দেখতে পাননি, তখন সেটা পতিত ও পরিত্যক্ত একখন্ড জমি মাত্র। 

  মক্কার তৎকালিন মেয়র শেখ আব্বাস ইউসুফ কাত্তান অনেক দেন দরবার করে সউদি সরকারের কাছ থেকে জমিটা রক্ষণাবেক্ষণের অনুমতি পান এবং তিনি সেখানে ‘সাঈদ আব্বাস মাদ্রাসা’ নামে একটি হেফজখানা ও মাদ্রাসা চালু করেন। এর প্রায় চল্লিশ বসর পরে ১৯৮৯ সালের দিকে সউদি সরকার মক্কা ও কাবা প্রাঙ্গনের উন্নয়নের এক মহাপরিকল্পনা হাতে নেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঐ বসরেই নভেম্বর  মাসের শেষ দিক থেকে পুরো ডিসেম্বর মাস, একনাগাড়ে প্রায় মাসাধিককাল ধরে সেই ‘সাঈদ আব্বাস মাদ্রাসা’টি ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং সেখানে বালু ও মাটি ফেলা হয়।

  সউদি সরকার এই বাড়িটা ভাঙ্গার পরে অন্যন্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকেও এক এক করে ভেঙ্গে ফেলার কার্যক্রম চলছিল যখন তখন কিছু মুসলমান ব্রিটিন সরকারের নিকট সরকারীভাবে একটা পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন করে। নিয়মানুযায়ী এরকম কোন আবেদনে কমপক্ষে দশ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক স্বাক্ষর করলে সরকার বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবে এবং কমপক্ষে এক লক্ষ নাগরিকের স্বাক্ষর পড়লে বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনের সংসদ, তথা, হাউজ অব কমন্সে আলোচনার জন্য তোলা হয়। 

  নিদারুণ দু:খ ও লজ্জার বিষয় হলো, মুসলমানদের পক্ষ হতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদনটির পক্ষে মাত্র ৮৫টি স্বাক্ষর পড়ে। যদিও এক নাগাড়ে ছয় মাস ধরে উক্ত আবদেনপত্রটি অনলাইনে উন্মুক্ত ছিল পাবলিকের জন্য তারা যেন সেই আবেদনে স্বাক্ষর করতে পাওে, কিন্তু তেমন সাড়া পড়েনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে এখনও উক্ত আবেদনটি রয়েছে, যদিও তাতে আর স্বাক্ষর করার কোন সুযোগ নেই, কেননা উক্ত আবেদনটি শেষ পর্যন্ত ৩রা নভেম্বর, ২০১৪ সালে ক্লোজ করে দেয়া হয়। বিশ্ব মুসলমানদের এই অবহেলা আর নির্লিপ্ততা ক্ষমার অযোগ্য।

   এই নির্লিপ্ততার ফল¤্রুতি হিসেবেই হযরত আবু বকর রা: এর বাড়ির উপরে আজ দাঁড়িয়ে আছে মক্কার অন্যতম পাঁচ তারকা হিলটন হোাটেল!  বিগত ২০১২ সালে সমাপ্ত হয়েছে কাসরে আযিয়াদ বা আযিয়াদ দূর্গের উপরে মক্কা রয়্যাল ক্লক টাওয়ার! নানা হোটেল, পাঁচ তলা শপিং মল, অত্যাধুনিক বিপনির নিচে চাপা পড়েছে মক্কা ও কাবা রক্ষার্থে ১৭৮০ সালে তুর্কিদের দ্বারা নির্মিত ঐতিহাসিক দূর্গটি। এই দুর্গের উপরেই ১৯৯৬ সালে উঠেছিলাম, সেখানে, পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত সেই দূর্গের কিনারে নীচে ছোট্ট কাবার দিকে অপলক চেয়ে থেকেছি!

  তবে সবাই চুপ থাকেনি।বিগত ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস এ বিষয়ে নিবন্ধ ছেপেছে, কাজ হয়নি। তারও অনেক আগে বিগত ২০০৯ সালে ১লা এপ্রিল ইংল্যান্ডের ইন্ডেপিন্ডেন্ট পত্রিকাতেও ডানিয়েল হোউডেন (Daniel Howden) লিখিত এ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। ওদিকে আমেরিকার টাইম পত্রিকা বিগত ২০১৪ সালের ১৪ই নভেম্বর কার্লা পাওয়ারের (Carla Power ) একটি নিবন্ধ লেখেন বিশদ বিবরণ’সহ। বিশ্ব প্রতœত্তবীদদের বৈশ্বিক সংগঠনWorld Architecture News  তাদের নিউজলেটরে বিগত ২০১২ সালের ৩০ শে অক্টোবর তারিখে Michael Hammond লিখিত একটি নিবন্ধ ছাপে। সকলেই সউদি সরকারকে বিশ্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাসের এ অংশগুলোকে রক্ষার আবেদন জানান. কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সউদি সরকার ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণ প্রকল্পের মধ্যে কোন পরিবর্তন আনেনি।
---------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থ প্রণেতা প্রবন্ধ লেখক কলামিস্ট দাঈ ও গবেষক। 

Post a Comment

0 Comments