Recent Tube

কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্যএবং বিবেক নাড়া দেয়ার মত কিছু প্রশ্ন? সম্পাদনায়ঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি





কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য এবং বিবেক নাড়া দেয়ার মত কিছু প্রশ্ন?
------------ ●◈●------------ 

মূল: 
মুখতার আহমদ নাদভি রাহ. (ভারত);
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি

 আল্লাহ তা'আলা কী উদ্দেশ্যে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন? 
এ জন্য কি যে, এর দ্বারা তাবিজের ঘণ্টা বানিয়ে শিশু এবং রোগীদের গলায় ঝুলানো হবে? 

 নাকি এ জন্য যে, গোরস্থানে মৃতদের উদ্দেশ্যে পড়ে তার মাধ্যমে কাঠ মোল্লাদের অর্থ লুটের মাধ্যম বানানো হবে?

 না এ উদ্দেশ্যে যে, ধান্দাবাজরা পাত্রের গায়ে লিখে তা ধুয়ে ধুয়ে রোগী এবং যাদুগ্রস্থদের পান করাবে? 

 না এ উদ্দেশ্যে যে, ফাঁকিবাজ এবং অলস লোকেরা  কুরআনের মাধ্যমে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করবে?

 না এ লক্ষ্যে যে, পুরো কুরআন এক পৃষ্ঠায় ছেপে শোভা  বর্ধনের উদ্দেশ্যে ঘরের দেয়ালে এবং বরকত লাভের উদ্দেশ্যে তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখা হবে?

 না এ উদ্দেশ্যে যে, মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে আয়াতুল কুরসি এবং সূরা নাস-ফালাকের তাবিজ পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করা হবে?

 আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কি এ উদ্দেশ্যে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন যে, কাওয়ালী পাঠকারী এবং গায়করা শুধু সুললিত কণ্ঠে তা পাঠ করবে আর শ্রোতারা তাদের বাদ্যযন্ত্র ও সুরের মূর্ছনায় পাগলপারা হয়ে নাচ-গানের বাজার বসাবে।

 এ উদ্দেশ্যে কি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে যে, যার মাধ্যমে আমাদের পূর্বসূরিরা বিশ্ব জয় করেছিলেন সেই কুরআনকে ঘরের এক কোনে গিলাফ বদ্ধ করে রেখে দেয়া হবে এবং ধুলো-বালি ও ময়লার আস্তরণের নিচে চাপা পড়ে থাকবে? 

 আল্লাহ তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর। 

 এই মহা গ্রন্থ তুমি এ সব উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ করনি। অবতীর্ণ করেছো এ জন্যে যে, মানব জাতি এই কুরআনের আয়াত সমূহ গবেষণা করবে। এটা তো মানবতার জন্য উজ্জ্বল আলোক বর্তিকা। তুমি এই গ্রন্থ নাযিল করেছ বিশ্ব মানবতার জন্যে সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ক কারী হিসেবে।
 তুমি কুরআন অবতীর্ণ করেছ প্রাণ স্পন্দিত জীবিত মানুষের জন্যে। নির্জীব মৃত মানুষের জন্যে নয়। তুমি কুরআন অবতীর্ণ করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, মুসলমানরা একে তাদের পরিবার, সমাজ তথা জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করবে।

 আমরা কুরআন পরিত্যাগ করেছি। জীবনের পথ পরিক্রমায় কুরআনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী থেকে সরে গেছি অনেক দূরে। কুরআনের বিরুদ্ধে আমাদের পদচারণা সীমালঙ্ঘন করেছে। যার ফলে আমরা নিপতিত হয়েছি পশ্চাদপদতা, দুর্ভাগ্য ও লাঞ্ছনা-গঞ্চনার গহীন খাদে।

 কুরআনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও মর্মবাণীকে আমরা এমন বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায় পাল্টে ফেলেছি যার নজীর পূর্ববর্তী জাতি সমূহে পাওয়া যায় না। পূর্ববর্তী উম্মতগণ আসমানি গ্রন্থসমূহকে অস্বীকার করেছিল বটে, কিন্তু কোন উম্মতের ব্যাপারে একথা শোনা যায়নি যে, তারা আসমানি গ্রন্থসমূহকে মৃত মানুষের পুঁজি হিসাবে গ্রহণ করেছিল।
 
 আমরা কোটি কোটি মানুষকে লাগামহীন ভাবে ছেড়ে দিয়েছি যাদের দিক নির্দেশনা এবং তাবলিগের দায়িত্ব আমাদেরকে দেয়া হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে তারা তৈরি করেছে যুদ্ধ এবং ধ্বংসের এমন অসংখ্য মারণাস্ত্র যা তাদের নিজেদের এবং আমাদের সকলের বিনাশ সাধন ও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 প্রায় চৌদ্দ শতাব্দী পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের এই সুসংবাদ প্রদান করেছিলেন:
تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ
“আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে গেলাম যে দুটিকে তোমরা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি জিনিস হল আল্লাহর কিতাব  এবং তার রাসূলের সুন্নত।” 

 আমাদের পূর্ব পুরুষগণ কুরআনের প্রকৃত মর্ম ও অর্থকে অত্যন্ত নিবিড় ও দৃঢ় হস্থে ধারণ করেছিলেন এবং নিজেদের জীবন ও কর্মের সংবিধান হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন বলেই তারা অতি অল্প সময়ে সারা বিশ্বের নেতৃত্ব ও বিশ্ব মানবতার পথ প্রদর্শকে পরিণত হয়েছিলেন। 

 কুরআন তো আমরা প্রতিদিনই তেলাওয়াত করি কিন্তু সে তেলাওয়াত আমাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। আমরা তো সালাফে-সালেহিনের চেয়ে বেশি কুরআন পাঠ করি কিন্তু আমরা শুধু পাঠই করি; বুঝার চেষ্টা করি না গবেষণাও করি না এবং তা কর্ম ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের কোন আগ্রহও আমাদের নাই। বরং আমাদের এই অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে জনৈক মনিষীর এই উক্তিটিই প্রযোজ্য: 
رب تال للقرآن والقرآن يلعنه
“এমন অনেক কুরআন পাঠক রয়েছে কুরআন যাদের উপর অভিসম্পাত করে।”

  উদাহরণ স্বরূপ, মুসলমানেরা কুরআনের এই আয়াতটি পড়ছে:
أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
“সাবধান! আল্লাহর অভিশাপ যালিমদের উপর।” [সূরা হুদ: ১১] অথচ সে কখনো কখনো নিজে নিজেই জুলুম-অত্যাচার করে। নিজের জবানের দ্বারাই নিজের উপর আল্লাহর অভিশাপ পতিত হচ্ছে কিন্তু এ ব্যাপারে তার কোন অনুভূতি নেই।

 হে মুসলিম জনগোষ্ঠী, এখনো কি তোমাদের গাফলতির ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সময় হয়নি? 
সকল গোমরাহি ও ভ্রষ্টতার পঙ্কিলতা থেকে নিজেদের আচল মুক্ত করার সুযোগ আসেনি? 

 আমাদের আলেম সমাজ এসকল বিদআতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কখন করবে?
 
 এসব বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সূচনার সাহস যদি তাদের না থাকে তাহলে তাদের ‘দস্তারে ফজিলত’ মাথা থেকে নামিয়ে রাখা উচিত অথবা কমপক্ষে ঐ সকল মানুষের সমর্থন দেয়া কর্তব্য যারা বিদ’আতের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু আফসোস তো এখানেই যে, স্বয়ং ঐ সকল আলেমে দ্বীন নিজেরাই এ সব বিদ’আতকে নিজেদের রুটি-রুজির মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বসেছে। বরং এসব কাজের বিরোধিতা কারীদেরকে বিভিন্ন অপমানজনক ও ঘৃণ্য অভিযোগে অভিযুক্ত করতে ও পিছুপা হন না।

  এ নাযুক পরিস্থিতিতে যখন আমরা বংশীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইত্যাদি চর্তুমূখী সমস্যা ও বিপদে পরিব্যাপ্ত তখন আমাদের কর্তব্য হবে গভীর নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়া। কিতাবুল্লাহকে অবিচল ও দৃঢ় হস্তে ধারণ করা। সে সাথে তা গভীরভাবে গবেষণার মানসিকতা নিয়ে অধ্যয়ন করা এবং জীবন ও জগতের একমাত্র কর্মসূচী ও সংবিধান হিসাবে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা।

[উৎস: কুরআনখানি আওর ঈসালে সাওয়াব]

Post a Comment

0 Comments