Recent Tube

আল্লাহর ওলি কারা?আল্লাহর ওলিগণ কি কবরে জীবিত? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।


 
প্রশ্ন;
আল্লাহর ওলি কারা?
আল্লাহর ওলিগণ কি কবরে জীবিত?
------------ ❖❖❖------------ 

ত্তর:
নিম্নে উক্ত দুটি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল:

◈ ক. আল্লাহর ওলি কারা?

আল্লাহর ওলি অর্থ, আল্লাহর প্রিয়পাত্র বা বন্ধু।
আর তারাই আল্লাহর প্রিয়পাত্র বা বন্ধু, যারা সত্যিকার ভাবে আল্লাহকে ভয় করে জীবন পরিচালনা করে, সৎ আমল করে, তাঁর আদেশগুলো বাস্তবায়ন করে, নিষেধ কৃত বিষয়গুলো থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّـهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ- الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ - لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۚ-لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّـهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
“মনে রেখো, আল্লাহর ওলি বা বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দু:শ্চিন্তাগ্রস্থ হবে না। (তারা হল ঐ সকল লোক ) যারা ঈমান এনেছে এবং (আল্লাহকে) ভয় করে। তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হেরফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।” (সূরা ইউনুস: ৬২, ৬৩ ও ৬৪)

তিনি আরও বলেন:
إِنْ أَوْلِيَاؤُهُ إِلَّا الْمُتَّقُونَ
“তাঁর ওলি বা বন্ধু কেউ নয় একমাত্র মুত্তাকী-পরহেজগার ব্যক্তিগণ ছাড়া।” (সূরা আনফাল: ৩৪)

 ইমাম ইবনে কাসির রহঃ উল্লেখিত প্রথম দুটি আয়াতের তাফসিরে বলেন:

“এখানে আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, ঐ সকল লোক তাঁর ওলি (বন্ধু) যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়া  (আল্লাহ ভীতি) অবলম্বন করে-যেমনটি আল্লাহ  নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং যেই তাকওয়াবান হবে সেই আল্লাহর ওলি হবে। কিয়ামতের আসন্ন বিপর্যয় ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে তাদের কোন ভয় ও আশঙ্কা নেই এবং দুনিয়ার ফেলে আসা কোন বিষয়ে তাদের দু:শ্চিন্তার কোনও কারণ নাই।” (তাফসিরুল কুরআনিল আযীম, সূরা সূরা ইউনুস এর ৬৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা)

মোটকথা:

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বেলায়াত বা বন্ধুত্ব পাওয়ার দুটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। যথা:

● ১. ঈমান আনয়ন করা।
● ২. তাকওয়া অবলম্বন করা অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে তাঁর আদেশগুলো মেনে চলা এবং নিষিদ্ধ ও হারাম কর্ম থেকে দূরে থাকা।

সুতরাং এ দুটি‌ শর্ত যার মধ্যে যত বেশি পরিমাণে থাকবে অর্থাৎ যার মধ্যে ঈমানি দৃঢ়তা, তেজস্বিকতা ও প্রখরতা যত বেশি থাকবে এবং তাকওয়া-পরহেজাগরিতা ও আল্লাহর অনুগত্য যত নিখাদ ও গভীর হবে সে তত আল্লাহর বেলায়াত তথা বন্ধুত্ব ও ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হবে। 
এ সকল গুণাবলী অর্জন করার চেষ্টা করা প্রত্যেক ইমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। এটি সকল যুগে সকল স্থানে সর্বশ্রেণীর মুমিন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। 

কিন্তু সাধারণ মুসলিমদের মাঝে একটা ভুল ধারণা খুব প্রবল যে, আল্লাহর ওলি বলতে বুঝায় বিশেষ একশ্রেণীর মানুষকে, যারা বিভিন্ন কেরামতি বা অলৌকিক ক্ষমতা দেখাতে পারে, যাদের বিশাল খানকা, জাঁকজমকপূর্ণ দরবার এবং অনেক ভক্ত ও ‍মুরিদান আছে। এগুলো কখনো ওলি হওয়ার আলামত নয়। কেননা অনেক সময় যাদু বিদ্যা এবং জিন ও শয়তানের সাহায্যে অদ্ভুত ও মতিভ্রষ্ট করার মত কিছু দেখানো হয়। যেগুলো দেখে সাধারণ মানুষ তাদেরকে ভক্তি-শ্রদ্ধা-সেজদা এবং মানত ও পূজা দিতে শুরু করে। অথচ সে সব কথিত আল্লাহর ওলিরা বা নেংটা পীর ও নেকড়া বাবারা শিরক-বিদআত, নানা রকম বেশরিয়তি কাজ ও আল্লাহর নাফরমানীতে হাবুডুবু খায়।

আরেকটি মারাত্মক ভুল কাজ যে, কোন ব্যক্তির বাহ্যিক চেহারা-সুরাত, আলখেল্লা-পাগড়ী, আর পরহেজগারিতা দেখে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া যে, ওমুক ব্যক্তি বা উমুক পীর/বুজুর্গ আল্লাহর ওলি। এটি মোটেও উচিৎ নয়। কারণ, কে কতটুকু ইমানদার ও তাকওয়াবান তা একমাত্র আল্লাহ তাআলা জনেন। কারো  
ভিতরের অবস্থা, অন্তরের তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কারো দ্বারাই সম্ভব নয়। অবশ্য যদি তার দিকে তাকালে অন্তরে আল্লাহর কথা স্বরণ হয় এবং তার বাহ্যিক আচরণ ও ইবাদত-বন্দেগী সুন্নাহ মোতাবেক হয় তাহলে আমরা তার ব্যাপারে অবশ্যই সৎ, দ্বীনদার এবং আল্লাহর ওলি বলে সু ধারণা পোষণ করতে পারি।

আল্লাহ আমাদেরকে তার ওলি বা বন্ধু হওয়ার যে সকল গুণাবলী অর্জন করা প্রয়োজন সেগুলো অর্জন করার তওফিক দান করুন। আমীন।

-------------------------------------------------------

◈ খ. আল্লাহর ওলিগণ কি কবরে জীবিত?

উত্তর:

কবরে জীবিত থাকার ব্যাপারে সংক্ষেপে কথা হল, প্রতিটি মানুষ কবরে জীবিত থাকে- চাই সে মুসলিম হোক অথবা কাফের হোক, নেককার হোক অথবা বদকার হোক কিন্তু সে জীবন হল, বরজখী জীবন-যা দুনিয়ার জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন যা ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ জানেন। এ জীবনকে পার্থিব জীবনের সাথে সামঞ্জস্য দেয়া বৈধ নয়।
দলিল হল, প্রতিটি মানুষকে ফেরেশতা মণ্ডলী কবরে উঠিয়ে বসাবেন এবং তিনটি প্রশ্ন করবেন। কেউ সঠিক উত্তর দিবে আর কেউ সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর উত্তর দানের উপর ভিত্তি করে হয় সেখানে তারা জান্নাতি সুখ এবং আল্লাহর নিয়ামত-সম্ভারে অবস্থান করবে অথবা সাপ-বিচ্ছুর দংশন, ফেরেশতাদের হাতুড়ি দ্বারা নির্মম প্রহার এবং জাহান্নামের আগুনের বিছানা ও লেলিহান আগুনের শাস্তি মধ্যে থাকবে। এ অবস্থা চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন) তবে আল্লাহর নবী, শহিদ ও আল্লাহর প্রিয়ভাজন ওলিগণ নি:সন্দেহে সেখানে অন্যান্য সাধারণ ইমানদারদের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ জীবন লাভ করবে।
এ বিষয়টি বিভিন্ন সহিহ হাদিস দ্বারা সুপ্রমাণিত। আল হামদুলিল্লাহ।
সুতরাং এ কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, কবরের মধ্যে প্রতিটি মানুষই বরজখী জীবন লাভ করবে।
আল্লাহু আলাম।
------------ ❖❖❖------------ 
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments