দান করার ক্ষেত্রে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে অগ্রাধিকার প্রদান করার সওয়াব দ্বিগুণ
আর তাদের খোঁজ-খবর না নেয়া বা তাদেরকে সুপরামর্শ না দেয়া তাদের অধিকার নষ্ট করার শামিল।
------------ ●◈●------------
প্রশ্ন:
অনেকেই আছে বেশি বেশি নফল দান করে অথচ তার নিজের আপন ভাইয়ের বিপদে আর্থিক সাহায্য দূরের কথা মুখে সান্তনা বা ভালো পরামর্শ দেয় না এবং একবার জিজ্ঞাসাও করে না যে তার আপন ভাইয়ের সংসার কিভাবে চলছে? যারা সামর্থ্য থাকার পরও নিকটাত্মীয় বা আপন ভাই-বোনদের খোঁজ নেয় না তারা কি আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবে?
উত্তর:
ইসলাম দান-সদকা করার ক্ষেত্রে নিজের রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দিতে উৎসাহিত করেছে এবং এ জন্য এতে দ্বিগুণ সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছে। যেমন হাদীস বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ وَهِىَ عَلَى ذِى الْقَرَابَةِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ
‘দরিদ্রকে দান করলে কেবল সদকার সওয়াব মেলে। আর আত্মীয়কে দান করলে সদকার সওয়াব ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার সওয়াব উভয়ই পাওয়া যায়’। (তিরমিযী, হা/৬৫৮ ও ইবনে মাজাহ, হা/১৮৪৪, সনদ সহীহ) এ মর্মে আরও একাধিক হাদীস রয়েছে।
সুতরাং দানশীল ব্যক্তির উচিৎ বাইরে দান করার আগে নিজের ভাই, বোন বা নিকটাত্মীয়দের খোঁজ-খবর নেয়া। তাদের অভাব থাকলে তাদেরকে যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা করা। তারপর প্রতিবেশি তারপর ক্রমান্বয়ে দূরে যাওয়া।
🔸 কোন ব্যক্তি যদি নিজের রক্ত সম্পর্কীয় ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে বাইরে দান করে তাহলে তা নি:সন্দেহে উত্তমতার পরিপন্থী। এ জন্য সে গুনাহগার না হলেও নিকটাত্মীয়কে দান করার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।
🔸 আর সে যদি তাদের কোন খোঁজ-খবরই না নেয়, বিপদাপদে তাদের পাশে না দাঁড়ায়, তাদের প্রতি সান্তনাবাণী ও সুপরামর্শ না দেয় তাহলে নি:সন্দেহে সে রক্ত সম্পর্ককে যথাযথাভাবে বজায় রাখল না বরং সে তাদের হক নষ্টকারী হিসেবে আল্লাহর নিকট পাকড়াও হতে পারে। কারণ এগুলো সাধারণ মুসলিমের পারস্পারিক হক। নিজের নিকটাত্মীয়রা এ ক্ষেত্রে আরও বেশি হকদার।
হাদীসে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখাকে জান্নাতের যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন
عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلاَمٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الأَرْحَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ
আব্দুল্লাহ বিন সালাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “হে মানুষ! তোমরা সালাম প্রচার কর, অন্নদান কর, রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখো এবং লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা (তাহাজ্জুদের) নামায পড়। এতে তোমরা নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (আহমাদ ২৩৭৮৪, তিরমিযী ২৪৮৫, ইবনে মাজাহ ১৩৩৪, ৩২৫১, হাকেম ৪২৮৩, সহীহ তারগীব ৬১৬)
🔸 ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্টকারী হিসেবেও জিজ্ঞাসিত হতে পারে। কেননা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা নষ্ট করা ইসলামের দৃষ্টিতে কাবীরা গুনাহ। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
لايدخل الجنة قاطع رحم.
‘‘আত্মীয়তার (সম্পর্ক) ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’’ ( মুসলিম: ৪৬৩৩) এ বিষয়ে হাদীসে আরও বহু বক্তব্য এসেছে। আল্লাহু আলাম।
------------ ●◈●-------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
#abdullahilhadi
0 Comments