বুঝতেই পারছেন খেলাফত আওর মুলুকিয়াত কিতাবটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ !
একজন জানতে চেয়েছেন, খেলাফত আওর মুলুকিয়াত ( খেলাফত ও রাজতন্ত্র) কিতাব লিখে মাওলানা মওদূদী রাহিমাহুল্লাহ উম্মাহর কি এমন উপকার করলেন। তিনি কিছু লোককে শত্রু বানালেন, নিজের সম্পর্কে কিছু অপবাদ দেওয়ার পথ তৈরি করে দিলেন। এ কারণেই উপমহাদেশে মুসলিমদের বিশাল একটি গোষ্টি আজ বিক্ষিপ্ত। এটা না করলেই মনে হয় ভালো হতো।
আমার উত্তরঃ
মাওলানার দ্বীনি খেদমতগুলোর মধ্যে সবার আগে উল্লেখ্য করার মতো যদি কিছু থেকে থাকে বা আমাকে মাওলানার কিতাবগুলোর মধ্যে যদি টপটেন তৈরি করতে বলা হয় তাহলে আমি তাফহীমের পরেই খেলাফত আওর মুলুকিয়াতকে রাখবো। তারপরে আল জিহাদ, কোরআন কি চার বুনিয়াদী ইসতেল্যাহে, হুক্কুয যাওযাইন, দ্বীনিয়াত, পর্দা, সুদ ও ব্যাংকিং সহ অন্যান কিতাব আসবে। বুঝতেই পারছেন খেলাফত আওর মুলুকিয়াত কিতাবটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ !
আপনি বিরোধীতা আর উম্মাহর ঐক্যের কথা বলেছেন যেটা আপনার ইসলামের অতিত ইতিহাস, উম্মাহের জ্ঞানী, মুজতাহিদ পর্যায়ে অভিসিক্ত লোকদের জীবনি না পড়ার কারণে বলেছেন। পৃথিবীতে আল্লাহর এমন কোনো গোলাম জন্ম নেয়নি যার কোন না কোন লেখা, বক্তব্যে কুচক্রিরা অপবাদ দেয়নি। এমন সময় যায়নি যে, কোনো আহলে হক ইমামের ইলমী বয়ান, বিবৃতির সমালোচনা করে তার শত্রু, মিত্রতা কলম না ধরেছেন। তাহলে মাওলানা বাদ যাবেন কেনো ? তিনি এটা জানতেন বলেই কারো কথায় কর্ণপাত না করে নিজের কাজ করে গেছেন।
এবার আসা যাক খেলাফত আওর মুলুকিয়াত গ্রন্থের মোটামোটি রিভিউতে। প্রথম আপনি দুনিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মুসলিম, তালেবে ইলম এবং পরিচিত ওলামাদের কাছে প্রশ্ন রাখুন যে, আল্লাহ ও তার রসূল স মুসলিমদের ঐক্য, সংহতী এবং সমৃদ্ধির যে ধারা প্রবাহমান করেছেন সেই খেলাফত ব্যবস্থা হারিয়ে যাওয়ার ফলাফল কি ছিলো ? খেলাফত বিলুপ্তির কারণে মুসলিমরা কি নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং তদস্থলে কি কি জাহালাত, বেদায়ত, কুফরি স্থান করে নিয়েছে ? আমার বিশ্বাস অধীকাংশের এ বিষয়ে অজ্ঞ পাবেন। তাদের কাছে এর কোনো গুরুত্ব নেই।
এসব গবেষনা, তত্ব, কথা আপনি কেনো জানবেন ? জ্বী, আপনি যদি উম্মাহ প্রেমী হন, সত্যিকারের খেলাফত ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হন তাহলে আপনাকে এর গোড়ার ইতিহাস জানতে হবে। জানতে হবে খেলাফত ব্যবস্থা আদতে কি এবং এর উপকারীতা কী ছিলো। জানতে হবে এই খেলাফত ব্যবস্থা কোন কোন বুনিয়াদী ভিত্তির ওপরে দন্ডায়মান ছিলো। এটা জানার পরে আপনার উৎসুক মন জানতে চাইবে কি কি কারণে এ খেলাফত বিলুপ্ত হয়ে বংশীয় রাজত্ব তথা মুলুকিয়াত সৃষ্টি হয়েছে। জানার এই আগ্রহ থেকে কেউ বাদ যায় না। তাহলে আপনি চান মুসলিমরা অমুসলিম গবেষকদের বিভ্রান্ত তথ্যে আরো বিভ্রান্ত হোক ?
সেই সময়ের বিপর্যয় কেবল কুফরের ষরযন্ত্রের ফল ছিলো এরকম এক চোখা অধ্যয়ন থেকে বের হয়ে তখনকার শাষক, দায়িত্বশীল লোকদের ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলোও খুজেঁ বের করতে সচেষ্ট হবেন। এরকম জটিল অধয়ন কাউকে দোষারোপ করা বা হেয় করার জন্য নয়, বরং সেই ভুলগুলো যেন পুনরায় মুসলিম শাসকদের মধ্যে অনুপ্রবেশ না করতে পারে, খেলাফত পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট গ্রুপগুলো যেনো এসব ভুল ভ্রান্তি নিয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারে সে জন্যে।
আমরা ধরে নিয়েছি ঐসব ইতিহাস আমাদের জানার দরকার নেই। মূলত এই গলদের কাফফারা দিচ্ছে মুসলিমরা। তাদের মধ্যে খেলাফত উদ্ধারের প্রচেষ্টা স্তমিত হয়েছে, সাথে সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের যে হুকুম তাদের দেওয়া হয়েছে সেটাও ভুলে গেছে। ফলশ্রুতিতে মুসলিম দুনিয়ায় ফাসেক ফাজেররা তাদের প্রভূত্ব কায়েম করে মানুষদের নিজেদের গোলাম বানিয়ে নিয়েছে। কিছু লোক মনে করেন যেহেতু খেলাফত বিলুপ্তিতে, ততকালিন বিপর্যয়ের পেছনে দু একজন সাহাবীর হাত রয়েছে সেহেতু এসব ইতিহাস থেকে কেবলমাত্র পলায়নপরই হবো না, সাথে সাথে সার্ফ এক্সেল দিয়ে সেই ইতিহাসকে নাসেবি হাতে ধৌত করে ছাড়বো। এভাবেই আমরা সাহাবাদের রা ইজ্জত ধরে রাখতে পারবো। এর দ্বারা যে মুসলিমদের ঐতিহ্যপূর্ণ গোটা ইতিহাসকেই প্রশ্নবিদ্ব করা হচ্ছে সেই খবর তাদের নেই।
কিছু লোক দাবি করেন এসব ইতিহাস তো সাহাবাদের অস্মান করার জন্য শীয়াদের আবিস্কার। আমি বলি, আহলে ইলমের অধিকাংশ ইমামরা কি তাহলে শীয়াদের রেফারেন্সেই তারিখের কিতাব লিখতেন ? সহীহ মুসলিম সহ একাধিক হাদিস গ্রন্থে সাহাবাদের মধ্যকার বিপর্যয়কালীন সময়ের যেসব তথ্য সন্নিবেশিত আছে- যেখানে কোনো কোনো সাহাবা সম্পর্কে অত্যান্ত গুরুতর অভিযোগ আসে- সেগুলো কি শীয়াদের রেওয়াত ছিলো? এরকম মন্তব্য মূলত ঐ সকল লোকের নাদানীর ফল। ইসলামের ইতিহাস লিখতে গিয়ে মুসলিম ঐতিহাসিকরা, সম্মানিত ইমামরা সব ধরনের রেওযাত লিপিবদ্ধ করেছেন। বিভিন্ন ঘটনায় একাধিক রেওয়াত পেলে সেখান থেকে (একাধিক রেওয়াতকে) ক্রস চেক করে তারা নিজ কিতাবে স্থান দিয়েছেন। একটি ঘটনার শীয়া সুন্নী দু তরফ থেকেই বর্ণনা আসার পরে সেটাকে গায়ের জোরে শীয়াদের রেওয়াত প্রমাণ করা বাতূলতা
এসব ইতিহাস দ্বারা সাহাবাদের অস্মান হওয়া তাদের সম্পর্কে নেতীবাচক ধারণা তৈরি হওয়ার অভিযোগ যারা করেন তারা হয়তো ভুলে যান যে, যুগের এমন একটি সময় যায়নি যখন কোনো না কোন ইমাম,গবেষক, আহলে ইলমের জবানে, কলমে এসব ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি। যেসব দেওবন্দী নয়া মুফতিরা এরকম দাবি করেন তারা সম্ভবত তাদের আকাবীরদের তারিখের কিতাবগুলো না পড়ে নাসেবীদের ফিল্টার করা জগা খিচুরী মার্কা ইতিহাসস অধ্যয়ন করেছেন। এই কারণে তারা মাওলানার লিখিত তারিখের কিতাব পড়ে লাইভে এসে সাহাবাদের শান নিয়ে ফাও আলাপ পারেন।
আরে মিয়া সাহাবাদের শান মান কি তোমরাই বুঝলা ? পূর্ববতী ইমামরা, এমনকি তোমাদের তারিখের শায়েখরাও বুঝলো না ? খেলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এর ঐতিহ্যবাহী ফায়দাগুলো তুলে ধরলে এর পতন নিয়েও কথা উঠে এবং একজন দুজন সাহাবার রা ভুলত্রুটি সম্মুখে চলে আসে। এটা নিয়ে গোটা সাহাবাদের রা জামায়াতের বিষয়ে দেওয়া আহলে সুন্নাতের মতামত দিয়ে ভেরিফাই করো কোন আক্কলে ? সাহাবাদের শান যদি এর নাম হয় তাহলে পূর্ববতী একজন লোকও সুন্নী নেই, সব শীয়া হয়ে কবরে গেছেন। সাহাবা প্রেমের এরকম আজগুবী তথ্য, আবেগী বক্তব্য পাবলিক প্লেসে বর্ণনা করে খেলাফত আওর মুলুকিয়াত কিতাবের শান কমানো যাবে না। বরং দুনিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে খেলাফতের স্বপ্ন বুকে লালন করা প্রত্যেকটি হৃদয় এই কিতাব থেকে ফায়দা নেবে। তুমিই পিছিয়েই থাকবে আর বাবার বংশীয় রাজত্ব প্রতিষ্টায় এলেমের জোর ব্যবহার করবে।
0 Comments